• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সম্পাদকীয়
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সম্পাদকীয়
একটা সময় ছিল যখন তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের অনেকের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করত। অনেকেই মনে করত কমপিউটার এলে মানুষ তার কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু সময়ের সাথে সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে- তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে মানুষের সামনে খুলে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন দুয়ার। একদিকে তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের কাজকে অভাবনীয়ভাবে সহজ ও নিখুঁত করে তুলেছে, অন্যদিকে তা সৃষ্টি করছে কর্মসংস্থানের ব্যাপক ক্ষেত্র। ফলে মানুষ এখন তথ্যপ্রযুক্তিকে বন্ধু ভাবতে শুরু করেছে। মানুষ এখন চেষ্টা করছে কী করে প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। তাদের মধ্যে সুদৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছে- প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে আজকের এই পৃথিবীর কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই এরা সচেতনভাবেই সচেষ্ট নিজেদেরকে বেশি থেকে বেশি হারে প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট করতে। আমরাও সে উপলব্ধি থেকে আজ থেকে তেইশ বছর আগে ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ স্লোগান নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর প্রকাশনার অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম। এ তেইশটি বছর আমাদেরকে এ খাতকে এগিয়ে নিতে যখন যা মনে করেছি, নির্মোহভাবে বলার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে আমাদের অর্জন কতটুকু হয়েছে, সে বিবেচনার ভার আমাদের সম্মানিত পাঠকদেও ওপর। তবে আমরা গর্বের সাথে বলব, এ ব্যাপারে আমরা ছিলাম বরাবর একান্তই আন্তরিক। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহতভাবে চলবে; ইনশাল্লাহ সে নিশ্চয়তা এই ২৩তম বর্ষপূর্তির ক্ষণে আপনাদের দিতে পারি।

একই ধারাবাহিকতায় চলতি সংখ্যার এই সম্পাদকীয়তে এই সময়ের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কয়েকটি তাগিদ দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। প্রথমত, ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর প্রসঙ্গ। সম্প্রতি সরকার ব্যান্ডউইডথের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে দিয়েছে। কমিয়ে দেয়া নতুন দাম ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়েছে। অতএব স্বাভাবিক দাবি, ব্যবহারকারী পর্যায়েও ব্যান্ডউইডথের দাম কমবে। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সরকার কয়েক দফা ব্যান্ডউইডথের দাম কমালেও গ্রাহক বা ব্যবহারকারী পর্যায়ে নানা অজুহাতে কমানো হয়নি। তাই আমাদের আশঙ্কা রয়েই গেল, এবারও বিটিসিএলের ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর সুফল হিসেবে ব্যবহারকারী পর্যায়ে ইন্টারনেট প্রোভাইডারেরা ব্যান্ডউইডথের দাম কমাবে কি না। জানা গেছে, বিটিসিএল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম ৪২ শতাংশ কমিয়ে ১ মেগাবাইট ডেডিকেটেড ব্যান্ডউইডথের দাম ২৮০০ টাকায় নামিয়ে এনেছে। এর আগে ১ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল ৪৮০০ টাকা। বলা হয়েছে, এই নতুন দাম বিটিসিএল ইন্টারনেট গ্রাহক, পাইকারি ক্রেতা ও বাসাবাড়িতে ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে, প্রযোজ্য হবে। আমাদের তাগিদ দ্রুত সাধারণ ব্যবহারকারীরা এই দাম কমানোর উপকারভোগী হোক।

গত ৮ মার্চ পালিত হলো বিশ্ব নারী দিবস। নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যই বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশে পালিত হয় এই বিশ্ব নারী দিবস। বাংলাদেশে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ দিবসটি পালিত হলো এবারও। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যেখানে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, সেই ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়েও নারী-পুরুষের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য কাজ করছে। এই বৈষম্য বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে অধিকতর গরিব দেশগুলোতে। কারণ, এসব দেশে তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষেরা। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, নিমণ ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে একজন পুরুষের তুলনায় একজন নারীর মোবাইল ফোনের মালিক হওয়ার সম্ভাবনা ২১ শতাংশ কম। মধ্যপ্রাচ্যে এ হার ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় ৩৭ শতাংশ। এই বৈষম্য দূর না করলে নারীর যথাযথ ক্ষমতায়ন অপূর্ণই থেকে যাবে। শুধু মোবাইল ফোন নয়, ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তি ব্যবহারে নারী-পুরুষের জন্য সমসুযোগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আমাদের এ দেশেও। আমাদের উপলব্ধিতে রাখতে হবে- প্রযুক্তি যেমন নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে পারে, তেমনি সমসুযোগ সৃষ্টি না করলে সে ব্যবধান বা বৈষম আরও বেড়ে যেতেও পারে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ নম্বর ফ্লাইটের বিমানটি রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। এটি বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে একটি অভাবনীয় ঘটনা। এখন পর্যন্ত বিশ্ববাসী জানতে পারল না এর নিখোঁজ হওয়ার রহস্য। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গুগল সার্চের মাধ্যমে যেখানে প্রতিটি মানুষের চলাচলের ওপর লক্ষ্য রাখা সম্ভব, রাডার ও স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেমে যেখানে প্রতিটি বিমানের অবস্থান জানা সম্ভব, সেখানে কী করে এত বড় একটি বিমান সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে কোথায় চলে গেল? মহাকাশ সংস্থা নাসার কত ধরনের নিরাপত্তার অবাক করা কাহিনী আমরা শুনলাম। সে নাসাও আমাদের কিছুই জানাতে পারল না। বলা হয় রাশিয়ায় এমন রাডার ব্যবস্থা কার্যকর, যেখানে একটি মাছিও যদি রুশ সীমানা অতিক্রম করে তবে রাডারে নিমিষে তা ধরা পড়বে। সবকিছুকে বোকা বানিয়ে যেনো হারিয়ে গেল এমএইচ৩৭০ ফ্লাইটের মালয়েশীয় যাত্রীবাহী বিমানটি। এ ঘটনা বিমানের নিরাপত্তা নিয়ে আজ নতুন প্রশ্ন উঠেছে : কোন মেকানিক্যাল ত্রুটির কারণে এমনটি ঘটল? সেই ত্রুটি সারিয়ে বিমানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। আর এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা হবে সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য। নইলে মানুষ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করবে, আর তা তথ্যপ্রযুক্তির জন্য বয়ে আনবে এক বড় ধরনের ক্ষতি।

সবশেষে কমপিউটার জগৎ-এর ২৩তম বর্ষপূর্তিতে আমাদের সম্মানিত লেখক, পাঠক, গ্রাহক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই ফুলেল শুভেচ্ছা। সেই সাথে কামনা করি, আগামী দিনের কমপিউটার জগৎ আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় হয়ে উঠুক আরও জনপ্রিয় একটি আইটি ম্যাগাজিন, হয়ে উঠুক তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন আন্দোলনের শানিত হাতিয়ার।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা