চীনের দৃষ্টান্তত অনুসরণ করে বিনিয়োগে উৎসাহ দেয়া হোক
বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে দেশে এক ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে অনেকেই মনে করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে ঠিকই, তবে সেগুলো প্রত্যাশিত মাত্রায় গতি পায়নি বলা যায়। অবশ্য এর জন্য অনেক কারণও আছে। সেগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লেখাও প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তাই সে প্রসঙ্গে আলোচনা না করে আলোকপাত করতে চাই এদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রসঙ্গে কেননা বিনিয়োগবান্ধব এক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে এদেশে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠবে। ফলে এদেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত বেকার যুবকের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি দেশের অর্থনীতির ভিতও মজবুত হবে।
এখন প্রশ্ন হলো- কেন বিদেশীরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এদেশে বিনিয়োগ করবে? এর জবাবে হয়তো অনেকেই বলবেন এদেশের শ্রমমূল্য বিশ্বের অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু শ্রমমূল্য কম হলেই কী বিদেশীরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এদেশে বিনিয়োগে উৎসাহী হবে? প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য সস্তা শ্রমমূল্য অনেক অনুষঙ্গের মধ্যে একটি হতে পারে, কিন্তু প্রধান অনুষঙ্গ হতে পারে না। সত্যি কথা বলতে কি তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য সস্তা শ্রমমূল্য ছাড়া বিদেশীদের জানা আর অন্য কোনো তথ্য বা উপকরণ বা অনুষঙ্গ আমাদের দেশে নেই। বিদেশীদের জানা এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল তা বোঝানোর উদ্যোগও আমাদের নেই অথচ তথ্যপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ প্রত্যাশা করার ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশীদের বিনিয়োগে উৎসাহী করার জন্য আমাদেরকে চীনের উদ্যোগকে অনুসরণ করতে হবে। এক সময় চীন ছিল সবচেয়ে সস্তা শ্রমমূল্যের দেশ। কিন্তু এখন তা নয়। এখন তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চীনের শ্রমমূল্য এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। চীনের শ্রমমূল্য দিন দিন বেড়ে গেলেও বিনিয়োগকারী দেশগুলো সেখানে রয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এর পেছনে আছে চীন সরকারের কিছু কার্যকর উদ্যোগ। যেমন চীন সরকার প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে গ্রিন এনার্জি, টেলিকম, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে। সড়ক, রেলওয়ে, বিমানবন্দর, ব্রিজ ইত্যাদি সবকিছু উন্নয়নে চীন সরকার মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে যাতে আইটিসহ বিপুলসংখ্যক ইন্ডাস্ট্রি এখানে লেগে থাকে।
তাই আমাদের দেশের কম শ্রমমূল্যকে উপজীব্য করে প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে প্রথমে সৃষ্টি করতে হবে বিনিয়োগবান্ধব পরিশেষ। অর্থাৎ বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে যে ধরনের অবকাঠামো দরকার তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। সেই সাথে দূর করতে হবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কমিশনভোগীদের। অন্যথায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের সবকিছু যতই অনুকূলে থাকুক না কেনো বিনিয়োগকারী এদেশে বিনিয়োগ করবে না।
সাইফুর রহমান
পাঠানতুলী, নারায়ণগঞ্জ
....................................................................................................................................................................................................................................
বাংলাদেশী মেধাবী তরুণদের সাফল্যের ওপর প্রতিবেদন চাই
আমি কমপিউটার জগৎ-এর অনেক পুরনো পাঠক। আগস্ট ২০১২ সংখ্যায় ‘বিশ্বজয়ী বাংলাদেশী পাঁচ তরুণ’ শীর্ষক এক লেখা ছাপা হয়, যার বিষয় ছিল সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাউডসোর্সিং মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডটকম আয়োজিত কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশী পাঁচ তরুণের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে এক প্রতিবেদন। বাংলাদেশী পাঁচ তরুণের প্রতিষ্ঠান ডেভসটিম বিশ্বের বাঘা বাঘা দলকে হারিয়ে সেরা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজার হিসেবে নির্বাচিত হয়।
ইতোমধ্যে অনলাইনে কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ওডেক্সের শীর্ষ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারেরা। ওডেস্কের ১২ শতাংশ কাজ করছেন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারেরা। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারেরা তথ্যপ্রযুক্তিতে বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করে দেশের জন্য বয়ে এনেছেন সুনাম ও মর্যাদা। এসব মেধাবী তরুণেরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক উঁচু মাত্রায় যে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে নেই কোনো ব্র্যান্ডিং ইমেজ, নেই কোনো ইতিবাচক ধারণা। সেই বাংলাদেশী তরুণেরাই তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ায় নিঃসন্দেহে আমরা গর্ববোধ করতে পারি। এ কৃতিত্ব সম্পূর্ণরূপে এসব কৃতী মেধাবীদের যেখানে সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অবদান বা ভূমিকাই নেই বলা যায়।
কমপিউটার জগৎ-এর কাছে আমার অনুরোধ-এ পত্রিকাটি নিয়মিতভাবে তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনের বাংলাদেশী ছেলেমেয়েদের আন্তর্জাতিক সাফল্যের কথা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করবে যাতে অন্যরা উৎসাহ ও প্রেরণা পায়। আমি মনে করি, কমিপউটার জগৎই তার লেখনীর মাধ্যমে এসব কৃতী সন্তানদের সাফল্যের কথা জাতির সামনে তুলে ধরে কিছুটা হলেও সম্মানিত করতে পারবে। কেননা এক্ষেত্রটি অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় কিছুটা হলেও অবহেলিত।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রেরণা দেয়ার জন্য যেভাবে ট্যালেন্ট হান্ট করার জন্য ঢাকঢোল বিপুল অর্থ খরচ করা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সে ধরনের কোনো কর্মকান্ড সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে দেখা যায় না। বিভিন্ন খাতে ব্যর্থতার বোঝা দিন যেখানে ভারি থেকে ভারি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দিন দিন সাফল্যের পালা ভারি হচ্ছে তেমন পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই।
তাই কমপিউটার জগৎ-এর কাছে আমার অনুরোধ, এক্ষেত্রেও যেনো অগ্রণী ভূমিকা পালন করে অন্যদেরকে এ খাতে প্রেরণা ও উৎসাহ দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
কিবরিয়া
রুহিতপুর, কেরানীগঞ্জ