লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
৩য় মত
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিবান্ধব বাজেটসহ ইন্টারনেট ব্যবহারের দাম কমানো হোক
নববইয়ের দশকে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে প্রধান অন্তরায় ছিল তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট পণ্যকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে উচ্চহারে ট্যাক্স আরোপ করা। কিন্তু এখন সেই দিন আর নেই। বর্তমান সরকার তার আগের শাসনামলে তথ্যপ্রযুক্তিকে বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে ট্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করে এবং তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু পণ্যের ওপর ট্যাক্স মওফুক করে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সেই ধারা এখনও অনেক ক্ষেত্রে অব্যাহত আছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আবার অধিষ্ঠিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে, যা দেশের জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে আলোড়িত করে। যেহেতু বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে প্রযুক্তিবান্ধব সরকার হিসেবে খ্যাত হয়েছে, তাই তাদের প্রত্যাশা এ সরকারের কাছে একটু বেশিই বলা যায়।
সম্প্রতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটটি ছিল বর্তমান সরকারের শাসনামলের শেষ বাজেট। আগেই বলা হয়েছে, এ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু শুল্ক কিংবা কর রেয়াত সুবিধার বিষয়টি বারবার বাজেটে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সরকারের প্রতিটি খাতেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে আলাদা বরাদ্দ থাকার প্রতি নজর দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি হতে দেখা যায়নি আজ পর্যন্ত।
অবশ্য ২০১৩-১৪ বাজেট সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সব মহলে। প্রস্তাবিত বাজেটে ইন্টারনেট ও ই-বাণিজ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার না করায় একদিকে যেমন হতাশা ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস। অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম ট্রেড ভ্যাটকে চূড়ান্ত ভ্যাট হিসেবে বিবেচনা করা, অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফ করা ও খুচরা স্তরে দোকানপ্রতি ভ্যাট ৪২০০ টাকা রাখার দাবি পূরণ না হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি তথা বিসিএস।
বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে রূপকল্প তৈরি করেছে তা বাস্তবায়নে তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব একটি বাজেট খুবই অপরিহার্য ছিল। এছাড়া এটি বর্তমান সরকারের আমলে সর্বশেষ বাজেট হওয়ায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রবৃত্তি ত্বরান্বিত করার জন্য এ বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু সেটি হতে দেখা যায়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আইসিটি ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের জন্য ৭০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখার কথা থাকলেও এ বাজেটে তার প্রতিফলন নেই।
বাজেটে আইসিটির প্রতি এমন আচরণ আমাদের কারও কাম্য নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে উপরে উলিস্নখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন না হওয়ায় অনেকের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ শুধু মুখের বুলি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
এ কথা সত্য, সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাইলে দেশে আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দাবিগুলো সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য না করে যৌক্তিকভাবে পর্যায়ক্রমে তা মেনে নেয়া উচিত। আবার এ কথাও সত্য, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে আইসিটিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর দাবি সরকার শুধু মেনেই যাবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দাম কমিয়ে যাবে, কিন্তু সাধারণ ভোক্তারা কিছুই পাবে না, তা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু দুঃখজনক এমনটি আমাদের দেশে ঘটে যাচ্ছে বরাবর। যেমন গত কয়েক বছরের মধ্যে ব্যান্ডউইডথের দাম ৭২ হাজার থেকে কমিয়ে ৮ হাজার টাকায় করা হয়েছে। অথচ ভোক্তাসাধারণ কোনোভাবেই উপকৃত হয়নি বলা যায়।
আইএসপিগুলো শুধু মুনাফা করে যাবে আর ভোক্তাসাধারণ আর্থিকভাবে উপকৃত হবে না, তা মেনে নেয়া যায় না। এছাড়া কোনো কোনো আইএসপি তাদের ভোক্তাদেরকে প্রতিশ্রম্নত অনুযায়ী ব্যান্ডউইডথ দেয় না। এ ক্ষেত্রেও তারা ভোক্তাসাধারণকে ঠকাচ্ছে। সুতরাং আইএসপিগুলো দাম না কমানোর জন্য যে যুক্তিগুলো দেখিয়েছে তাও সর্বতোভাবে মেনে নেয়া যায় না। কেননা আইএসপিগুলো নতুন সংযোগের জন্য ভোক্তাসাধারণের কাছ থেকে আলাদাভাবে সংযোগ ফি হিসেবে বাড়তি টাকা নিয়ে থাকে, যা তারা কখনই প্রকাশ্যে উল্লেখ করে না। আইএসপিগুলোকে ভোক্তাদের জন্য নিশ্চয় প্রতিমাসে নতুন করে ক্যাবলসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ কিনতে হয় না।
আইএসপিগুলোর প্রতি আমার দাবি- ষবংং ঢ়ৎড়ভরঃ সধীরসঁস ংধষব নীতি অবলম্বন করুন। তাহলে মুনাফা অনেক বেড়ে যাবে। কেননা ইন্টারনেটের ব্যবহারমূল্য কম হলে ব্যবহারকারীর সংখ্যাও অনেক বেড়ে যাবে। তখন স্বাভাবিকভাবে মুনাফাও অনেক বেড়ে যাবে।
শরিফুজ্জামান শুভ
নটর ডেম কলেজ
....................................................................................................................................................................................................................................
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ : জটিলতা দূর হোক
বাংলাদেশের নিজস্ব স্যটেলাইটের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০০৩ সালের অক্টোবর সংখ্যায় কমপিউটার জগৎ প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করেছিল ‘বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট চাই’। সেই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য কেনো স্যাটেলাইট দরকার তার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন সরকার নিজস্ব স্যাটেলাইটের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি বলেই হয়তো এ যৌক্তিক দাবিটি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছে।
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বেশ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করে, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু, স্যাটেলাইট-১ নামে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘোষণাও ছিল। তখন আমরা আসা করেছিলাম সরকার তার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে, যার ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবি পূরণ হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের সেই বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কমপিউটার জগৎ-এর জুলাই ১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ এ সরকারের আমলে উৎক্ষেপণ হচ্ছে না লেখাটি পড়ে তাই মনে হলো। এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ না হওয়ার পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয় তা হলো- উৎক্ষেপণ জটিলতা, অর্থ সংস্থানের উৎস নিশ্চিত না হওয়াসহ অরবিটাল সস্নট বরাদ্দ না পাওয়া ও সামিটসংশ্লিষ্ট নানা জটিলতা। ফলে এটি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না তা নিয়েও সংশয় জেগেছে।
গত বছরের ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালকে (এসপিআই) ১ কোটি ডলারের বিনিময়ে তিন বছরের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা তথা বিটিআরসি। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মহাকাশে উপগ্রহ পাঠানোর কথা।
জানা গেছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পরামর্শক নিয়োগেই অনিয়ম করা হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআই গঠিত হয়েছে ২০০৯ সালে। কিন্তু পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত ছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে। অথচ মাত্র ২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বেশ অনিয়ম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদি পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো কোনো কিছু ঘটে থাকে, তাহলে জাতির জন্য নতুন করে আরেকটি কলঙ্কের জন্ম দেবে।
সুতরাং, আমরা চাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর উৎক্ষেপণ জটিলতা দূর করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ প্রকল্পের সব কাজ সম্পন্ন করা হোক। বাস্তবতার আলোকে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। সরকার মহলের সর্বোচ্চ সতর্কতা এখানে জরুরি।
রবিউজ্জামান শাওন
আহসান উলস্নাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়