• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বাংলাদেশী তরুণ আইটি উদ্যোক্তা নাজমুল হক
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মৃণাল কান্তি রায় দীপ
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
উদ্যোক্তা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বাংলাদেশী তরুণ আইটি উদ্যোক্তা নাজমুল হক
দীর্ঘ বিরতির পর বাংলাদেশের তরুণ আইটি উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্প বিভাগে এবারের পর্বে আলোচনা করা রয়েছে নাজমুল হকের কথা। বাংলাদেশী তরুণ আইটি উদ্যোক্তা হিসেবে সিলহোস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক পড়ালেখা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে তিনি সিলেট আইটি অ্যাকাডেমির সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। দক্ষতার দিক দিয়ে তিনি একজন সার্ভার অ্যডমিনিস্ট্রেটর ও ওয়েব প্রোগ্রামার।

নাজমুল হক তার নিজের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে এ সার্ভিসগুলোর বাইরে থিম ডেভেলপমেন্ট ও এফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন। সিলেট আইটি একাডেমিতে আউটসোর্সিং কাজে দক্ষতা অর্জনে সহায়ক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

সিলহোস্টের যাত্রার শুরু কীভাবে হয়, মূলধন কেমন ও কতজন পেশাদার নিয়ে শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে নাজমুল হক বলেন, ‘২০১০ সালের ডিসেম্বরে কিছু দেশী প্রকল্পের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং সার্ভার নিয়ে সিলহোস্টের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই সার্ভারে দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। প্রায়ই সার্ভার ডাউন থাকে। এদিক থেকে গ্রাহকেরা বারবার ফোন দিয়ে সার্ভার ডাউনের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তারপর থেকেই চিন্তা করি, গ্রাহকদের ভালো মানের সার্ভার সহায়তা দেয়ার কথা এবং সেই চিন্তা থেকেই ২০১১ সালের ২৩ জুন সিলহোস্টের জন্ম।

সিলহোস্ট ২০১১ সালে আউটসোর্সিং প্রজেক্টের পাশাপাশি দেশীয় প্রজেক্টের কাজ করত এবং এক সময় গ্রাহক আশানুরূপভাবে বাড়তে থাকে। তখন সার্ভার সাপোর্টসহ অন্য সব ধরনের আইটি সহায়তা দেয়া শুরু করে সিলহোস্ট।

বর্তমানে কী ধরনের কাজ করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘আমরা ২০১১ ও ২০১২ সালের পুরোটাই আউটসোর্সিং করি এবং হোস্টিং সার্ভিসসহ সব ধরনের আইটি সার্ভিস দেশী-বিদেশী গ্রাহকদের দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু টানা দুই বছর আউটসোর্সিংয়ের পর আমরা দেখলাম, আউটসোর্সিং একটি কোম্পানির জন্য যথেষ্ট ভালো পেশা নয়। একটি আউটসোর্সিং আইটি কোম্পানিতে ১০ জনের বেশি লোক নিয়ে কাজ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে আপনি যদি কোম্পানি বড় করতে চান, তখন আপনাকে অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই ২০১৩ সালে সিলহোস্টের আরও নতুন দুটি প্রোডাক্ট বিজনেস সিলহোস্ট থিমিং ও সিলহোস্ট এফিলিয়েশন নিয়ে কাজ শুরু করি। সিলহোস্ট থিমিংয়ের কাজ একটু ধীরগতিতে চললেও গত কয়েক মাসেই আমরা সিলহোস্ট এফিলিয়েশনে আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছি। অদূর ভবিষ্যতে আমরা আউটসোর্সিং পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে শুধু সিলহোস্ট সার্ভার সার্ভিস, সিলহোস্ট থিমিং ও সিলহোস্ট এফিলিয়েশন নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষে চাকরি খুঁজতে ব্যসত্ম থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনি ভিন্ন হলেন কেনো- এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আইটির প্রতি আমার অনেক ঝোঁক ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে লোকাল মার্কেটের দুর্বলতা থেকেই মূলত আমার প্রতিষ্ঠানের শুরু। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে সহপাঠীদের চাকরির জন্য ছুটতে দেখেছি এবং তখন দেখলাম, বাংলাদেশে চাকরির মার্কেটের কী করুণ অবস্থা। একে তো চাকরি পাওয়া অনেক কঠিন, তারপরও একজন গ্র্যাজুয়েট প্রায় সময়ই যথেষ্ট ভালো সম্মানী পায় না। সর্বোপরি চাকরির এ অনিশ্চয়তা থেকেও আমি চাকরি করার চিমত্মা ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ার চিন্তা করি। সিলেটে খুব বেশি চাকরির প্রতিষ্ঠান নেই। বন্ধুদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে। এ বিষয়টিও প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে কাজ করেছে। তখনই চিন্তা করি সিলেটে আরও চাকরির সুযোগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১০ জন কাজ করে। আগামী ৫-৭ বছরে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৫০ থেকে ৮০ জন লোকের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’

আপনার প্রতিষ্ঠান সিলহোস্ট থেকে কী ধরনের সার্ভিস দেয়া হয়ে থাকে বা কী ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে থাকেন- জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘বর্তমানে অনলাইন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বেশি সময় দিচ্ছি। এ সফটওয়্যারের গ্রাহক বেশিরভাগই বাইরের দেশের। দেশের গ্রাহকদের জন্য আমরা ওয়েব হোস্টিং এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস দিয়ে আসছি।’

সিলেট আইটি অ্যাকাডেমি সম্পর্কে নাজমুল হক এ প্রতিনিধিকে জানান, ‘সিলেট আইটি অ্যাকাডেমিতে আমরা আউটসোর্সিংভিত্তিক আইটি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। ২০১১ সালের বেসিস ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সার মো: জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে যৌথভাবে আমি এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করি। এখানে আমাদের মূল লক্ষ্য হলো- দেশের লোকজনকে আইটিতে দক্ষতা উন্নয়ন করে আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস উপযোগী করে গড়ে তোলা। আমরা ২০১০ সাল থেকে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে হাজারেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার গড়ে তুলেছি, যারা বর্তমানে অনলাইনে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে। সিলেট আইটি অ্যাকাডেমিতে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ও অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি, যার পুরোটাই বিভিন্ন আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস লক্ষ্য করে।

সরকারি সাহায্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে নাজমুল হক বলেন, ‘সরকারি কোনো সাহায্যই আমাদের কাজে আসে না। সরকার থেকে আমরা কোনো ধরনের সাহায্য পাইও না। সরকার যদি দেশের সব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য দামে উচ্চগতির ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করত তাহলে খুব ভালো হতো। নিমণগতির ইন্টারনেট আমাদের কাজের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। প্রতিষ্ঠান শুরুর দিকে একবার ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন হয়েছিল। পাঁচ-ছয়টি ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করেও ঋণ পাইনি। তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, প্রতিষ্ঠানকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাব যেনো ব্যাংক নিজে থেকেই ঋণ অফার নিয়ে আমাদের কাছে আসে। প্রতিষ্ঠান শুরুর আড়াই বছরের মাথায় এখন কয়েকটি ব্যাংক ঋণ দিতে আগ্রহী।

সিলহোস্টের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নাজমুল হক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য একটাই- নিজের প্রতিষ্ঠানকে একটি বড় সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং সিলেটে একটি বড় কর্মসংস্থান বাজার সৃষ্টি করা। আসলে আইটিনির্ভর প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রোডাক্টনির্ভর সার্ভিসের বিকল্প নেই।’

আইটি উদ্যোক্তা হতে কী কী প্রয়োজন, সে প্রসঙ্গে নাজমুল হক বলেন, ‘আইটি উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আইটির কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে এবং এর সাথে ব্যবস্থাপনার ওপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। আইটিতে ভালো করতে হলে প্রচুর পড়াশোনার অভ্যাস থাকতে হবে। এখানে নিজে সৎ থাকা ও কঠোর পরিশ্রমী হওয়াটা জরুরি। সবশেষে আপনাকে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখতে হবে।’
নাজমুল হক সম্বন্ধে আরও জানতে ভিজিট করতে পারেন তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট Getnajmul.com থেকে।
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস