সময়ের সাথে সাথে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে গুরম্নত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটনির্ভর নানা অ্যাপ আর সেবা বদলে দিচ্ছে আমাদের কাজের ধরন। ইন্টারনেটনির্ভর নানা সেবার মধ্যে অনলাইন স্টোরেজ অন্যতম একটি সেবা। আর এই সেবাতে শুরু থেকেই অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে গুগল ড্রাইভ। নানান সব আধুনিক ফিচার দিয়ে সাজানো গুগলড্রাইভের অবস্থান এখনও শীর্ষে। গুগলড্রাইভ ও অনলাইন স্টোরেজের অন্যান্য সেবা এবং এর নিত্যনতুন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে এ লেখায়।
গুগলড্রাইভ সংরক্ষণ ও শেয়ারিং
গুগলড্রাইভে নিরাপদে রাখা যায় সব ধরনের ফাইল। পাশাপাশি গুগলড্রাইভে রাখা ফাইলগুলোকে শেয়ারও করা যায় যে কারও সাথেই। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো ফাইল বা ফোল্ডারকে নির্বাচন করে এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সুবিধামতো শেয়ার করা যাবে।
একসাথে ফাইল তৈরি করা
গুগলডকসের মতো গুগলড্রাইভেও অনলাইনে রাখা বিভিন্ন ফাইলকে একাধিক ব্যক্তি মিলে সম্পাদনা করতে পারেন। একাধিক ব্যক্তি একসাথে নতুন ওয়ার্ড ফাইল, স্প্রেডশিট বা প্রেজেন্টেশন ফাইল তৈরি বা সম্পাদনা করার সময় যেকেউ যেকোনো পরিবর্তন করলে তা সাথে সাথেই দেখতে পারবেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
সব ধরনের ফাইল দেখার সুবিধা
গুগলড্রাইভে যেমন সুবিধা রয়েছে সব ধরনের ফাইল রাখার, তেমনি যেকোনো ফরম্যাটের ফাইলই ওপেন করা যায়। এ বিষয়ে নির্ধারিত ফাইলটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপটি আপনার পিসিতে ইনস্টল করা না থাকলেও চলবে। যেমন : গুগলড্রাইভে একটি ইলাস্ট্রেটর ফাইল আছে, কিন্তু আপনার পিসিতে ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যারটি ইনস্টল করা নেই। সেখানে আপনি গুগলড্রাইভ থেকে ফাইলটি সরাসরি ওপেন করে দেখতে পারবেন। প্রথমে গুগলড্রাইভ ৫ গিগাবাইট স্টোরেজ দেয়ার সুবিধা নিয়ে এই সেবাটি চালু করে। বর্তমানে গুগলড্রাইভের ১০০ গিগাবাইটের ফি প্রতিমাসে ৪.৯৯ থেকে কমিয়ে ১.৯৯ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। অপরদিকে ১ টেরাবাইটের ফি ৪৯.৯৯ থেকে কমিয়ে প্রতিমাসে ৯.৯৯ মার্কিন ডলার করা হয়েছে। ১০ টেরাবাইট অথবা এরচেয়েও বেশি স্টোরেজের সুবিধা নিতে চাইলে একজন গ্রাহককে প্রতিমাসে ৯৯.৯৯ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। তবে এই প্যাকেজটিতে গ্রাহক বিনামূল্যে ১৫ গিগাবাইট স্টোরেজ সুবিধা পাবেন।
শেয়ার করুন জি-মেইল ও গুগলপ্লাসে
গুগলড্রাইভ থেকেই যেকোনো ফাইল সরাসরি জি-মেইল ও গুগলপস্নাসে শেয়ার করা যাবে। জি-মেইলে বড় বড় কোনো ফাইল অ্যাটাচ না করে সরাসরি গুগলড্রাইভ থেকেই ফাইলটি শেয়ার করা যাবে। একইভাবে গুগলপস্নাসেও ছবি বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট আপলোড না করে গুগলড্রাইভের লিঙ্কটি শেয়ার করে দিলেই চলবে।
শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন
গুগলড্রাইভে যুক্ত আছে শক্তিশালী সার্চ ইঞ্জিন। ফলে গুগলড্রাইভ থেকে যেকোনো ডকুমেন্ট সহজেই খুঁজে বের করা যাবে। শুধু তাই নয়, গুগলড্রাইভের সার্চ ইঞ্জিন অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন ব্যবহার করে স্ক্যান করা ডকুমেন্ট থেকেও টেক্সট খুঁজে বের করে নিতে পারবে। আবার ছবি থেকেও ছবি সার্চ করার সুবিধা আছে এতে।
যেকোনো ডিভাইসে গুগলড্রাইভ
পিসি, ম্যাকসহ প্রায় সব ধরনের ডিভাইস থেকেই অ্যাক্সেস করা যাবে গুগলড্রাইভে। অ্যান্ড্রয়িড ট্যাবলেট ও স্মার্টফোন থেকেও ব্যবহার করা যাবে এটি। আর এতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিনক্রোনাইজেশনের সুবিধা থাকায় যেকোনো ডিভাইস থেকে কোনো পরিবর্তন ঘটালে অন্য ডিভাইসগুলোতেও তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
অনলাইন স্টোরেজের অন্যান্য সার্ভিস
গুগলড্রাইভের মাধ্যমে অনলাইন স্টোরেজ সার্ভিসে গুগল প্রবেশ করলেও অনেক জনপ্রিয় কিছু সার্ভিসের যাত্রা শুরু করেছিল অনেক আগেই। সেই সময়ে মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যামাজনের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানও চালু করেছে অনলাইন স্টোরেজ। গুগলের প্রতিদ্বন্দ্বী কয়েকটি সার্ভিসের কথা এখানে তুলে ধরা হলো :
ড্রপবক্স : অনলাইন স্টোরেজ হিসেবে একেবারে শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করে ড্রপবক্স। খুব সহজেই ড্রপবক্সের মাধ্যমে পিসিতে রাখা ফাইলকে অনলাইনে শেয়ার করা ও ব্যাকআপ রাখা যায়। এই সার্ভিসেরও নানা ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ও ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করার সুবিধা রয়েছে। এতে অবশ্য বিনামূল্যে স্টোরেজ পাওয়া যায় অনেক কম, মাত্র ২ গিগাবাইট। উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনআক্স, আইফোন, আইপ্যাড, অ্যান্ড্রয়িড ও ব্ল্যাকবেরিতেও ব্যবহার করা যায় ড্রপবক্স। www.dropbox.com এই ওয়েবসাইট থেকে ড্রপবক্স থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে এর সেবাগুলো পেতে পারবেন। সম্প্রতি ১০০ গিগাবাইট স্টোরেজের জন্য প্রতিমাসে ড্রপবক্স ৯.৯৯ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করেছে।
স্কাইড্রাইভ : অনলাইন ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে মাইক্রোসফট চালু করে স্কাইড্রাইভ সার্ভিসটি। শুরুতে ২৫ গিগাবাইট স্টোরেজ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও স্কাইড্রাইভ এখন ৭ গিগাবাইট বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। এখানেও যেকোনো ফাইল শেয়ার করার সুবিধা রয়েছে আর ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে প্রায় সবই সমর্থন করে। আর এতে মাইক্রোসফট অফিস সংযুক্ত রয়েছে। ফলে অফিস ফাইলগুলো এতে ব্যবহার অনেক সুবিধাজনক। windows.microsoft.com/ en-HK/skydrive/home এই ঠিকানা থেকে অ্যাকাউন্ট খুলে এর সেবাগুলো পেতে পারেন।
আইক্লাউড : টেক জায়ান্ট অ্যাপল তাদের ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে চালু করেছিল ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। তবে এটি কাজ করে শুধু অ্যাপল ডিভাইসের জন্যই। এখানেও রয়েছে বিনামূল্যে ৫ গিগাবাইট স্টোরেজ ব্যবহারের সুবিধা । এখানেই অ্যাপল ডিভাইসগুলোর জন্য গান, ছবিসহ সব ধরনের ফাইল রাখা যাবে। আইওএস ডিভাইসগুলোর জন্য ব্যাকআপও রাখা যাবে এতে। www.apple.com/icloud ঠিকানা থেকে আইডিভাইসের জন্য চালু করতে পারেন এই সার্ভিসটি।
ক্লাউডড্রাইভ : অনলাইন জায়ান্ট অ্যামাজানও ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস হিসেবে চালু করেছে ক্লাউডড্রাইভ। প্রথমে এর মাধ্যমেও বিনামূল্যে ৫ গিগাবাইট অনলাইন ক্লাউড স্টোরেজ পাওয়া যাবে। এর বড় সুবিধা হলো অ্যামাজান থেকে গান কিনলে তা এই ড্রাইভে স্টোর করা যাবে বিনামূল্যের ৫ গিগাবাইট স্টোরেজের বাইরেই। অর্থাৎ অ্যামাজন থেকে কেনা গান স্টোরের জন্য বাড়তি অর্থ খরচ করতে হবে না। অনলাইনে গান স্টোরের জন্য এটি খুব ভালো একটি সার্ভিস। তবে বর্তমানে অ্যামাজান তাদের পণ্য কেনাবেচার জন্য আলাদা একটি নিজস্ব অ্যাপ ব্যবহার করছে। amazon.com/clouddrive ঠিকানা থেকে চালু করা যাবে এটি