লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - সেপ্টেম্বর
সূর্যের আলোয় স্মার্টফোন চার্জ
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোন ছাড়া একটি মুহূর্ত থাকা যেনো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে প্রিয়জন বা পরিচিতজনদের খবর জানার ও জানানোর বহুল প্রচলিত মাধ্যম হলো এই মোবাইল ফোন। আর বর্তমানে এই মোবাইল ফোন নানা ফিচারে সমৃদ্ধ হওয়ায় স্মার্টফোনের কদর একটু বেশিই। তবে সাধারণ ফিচার-ফোনের তুলনায় স্মার্টফোনের চার্জ কম সময় থাকে। প্রয়োজনের সময় যদি এই স্মার্টফোনে চার্জ না থাকে, তাহলে ভোগামিত্মর শেষ থাকে না। তাই গবেষকেরা প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছেন কীভাবে স্মার্টফোনের চার্জ বেশি ধরে রাখা যায় কিংবা ভিন্ন কোনো উপায়ে চার্জের ব্যবস্থা করা যায় কি না।
সম্প্রতি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তেমনই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এরা চেষ্টা করছেন স্বচ্ছ একটি সোলার পাওয়ার কালেক্টর তৈরির। যার মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টফোনে আর দেয়ালে প্লাগ লাগিয়ে চার্জ দিতে হবে না। স্মার্টফোনের স্ক্রিনটা কিছুক্ষণ সূর্যের আলোতে ধরলেই চার্জ হয়ে যাবে এর ব্যাটারি!
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের শিক্ষার্থী ইমু জাও এবং একই বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক রিচার্ড লান্ট নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আর এখানেই তৈরি হয়েছে নতুন এই প্রযুক্তি।
উল্লেখ্য, এলএসসি বা লুমিনিসেন্ট সোলার কালেক্টিং ম্যাটেরিয়াল একটি প্লাস্টিকের পাত, যা আলো শোষণ করতে সক্ষম। এলএসসি আলো শোষণ করে শক্তিরূপে সেই আলো নির্গত করতে পারে। এলএসসির এই ক্ষমতাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকেরা। তাদের মতে, স্মার্টফোনের স্ক্রিন যদি এলআইসি দিয়ে তৈরি করা যায়, তাহলে এটি সহজেই সৌরশক্তি শোষণ করে তাকে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবে, যে শক্তি ফোনের ব্যাটারি চার্জ দিতে কাজে লাগবে।
তবে গবেষক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চেষ্টা করছেন প্রায় স্বচ্ছ একটি সোলার পাওয়ার কালেক্টর তৈরি করতে, যা ভবিষ্যতে স্মার্টফোন চার্জ দিতে ব্যবহার হবে। কেননা, প্রচলিত কালো এলএসসি সৌর প্যানেল স্মার্টফোনের স্ক্রিনে লাগানো যাবে না। তাই একটি স্বচ্ছ এলএসসি ব্যবহার করে সৌরশক্তিকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছেন এরা।
গবেষকেরা বলছেন, স্বচ্ছ এই সোলার কোষ জানালা, ভবন কিংবা স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে লাগানো যাবে এবং সৌরশক্তি উৎপন্ন করা যাবে। এরা বলেন, এটি পরিষ্কার ও সমতল পৃষ্ঠে ব্যবহার করা যাবে। এর আগে কয়েকবার স্বচ্ছ সোলার সেল টেকনোলজি তৈরির চেষ্টা করা হলেও তখন সেল থেকে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ ছিল কম। এই ম্যাটেরিয়ালটি উচ্চ রংয়ের ছিল। ফলে কাচের মতো স্বচ্ছ করা সম্ভব হয়নি। এই নতুন প্রযুক্তির গবেষণার সঙ্গে জড়িত রসায়ন প্রকৌশলী রিচার্ড লান্ট বলেন, কেউই রঙিন কাচের পেছনে থাকতে চায় না। আগের আবিষ্কারগুলো রঙিন পরিবেশের সঙ্গে মানাত। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি লুমিনিসেন্ট লেয়ারকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বচ্ছ রাখার জন্য। এই নতুন স্বচ্ছ সোলার সেলটি ক্ষুদ্র অর্গানিক মলিকিউলেস দিয়ে তৈরি, যা অদৃশ্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিসহ আশপাশের আলোকে শোষণ করতে পারে। এখন এই অদৃশ্য আলো সোলার প্যানেলের প্রান্তে পাঠানো হয়, যা একটি বাল্বের মাধ্যমে শক্তিতে রূপান্তর করা হয়।
লান্ট বলেন, যেহেতু এই ম্যাটেরিয়াল বা উপাদানটি দৃশ্যত আলো কমিয়ে দেয় না, তাই এটি মানুষের চোখে দেখতে স্বচ্ছ লাগে। তবে এটি শুধু স্বচ্ছই নয়, এই সৌরকোষটি বাঁকানোও সম্ভব। এটি সৌরশক্তির ব্যবহার অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
গবেষকেরা জানান, তারা এই সোলার সেল ফিল্মে দু’টি সৌরকোষ ব্যবহার করেছেন। এর কারণ হিসেবে এরা বলেন, একটি সৌরকোষ সূর্যালোকের শুধু শতকরা ৪০ ভাগ শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু সে তুলনায় দুটি সৌরকোষ একত্রে এর মধ্য দিয়ে অতিবাহিত সূর্যালোকের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশি শক্তি সংগ্রহ বা শোষণ করতে সক্ষম। নতুন এই প্রযুক্তির বহুল ব্যবহারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ্যুৎশক্তির চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গবেষকেরা এই প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনতে চাচ্ছেন, যা আবাসিক এবং অফিস ভবনের জানালা, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট পর্দা, ইলেকট্রিক সাইন এবং গাড়ির জানালায় ব্যবহার করা যাবে। আর এ থেকে উৎপন্ন শক্তি কাজে লাগানো যাবে
ফিডব্যাক : sabrina.nuzhat.borsha@gmail.com