লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির বিশ্বপরিস্থিতি এবং আমাদের পিছিয়ে থাকা
ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির বিশ্বপরিস্থিতি এবং আমাদের পিছিয়ে থাকা
কী বলছে আঙ্কটাডের ‘টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন রিপোর্ট ২০২১’
গোলাপ মুনীর
অতি সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের বিশেষায়িত সংস্থা আঙ্কটাড প্রকাশ করেছে এর ‘টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন রিপোর্ট ২০২১’। এতে বিশেষত ১১টি ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তারই আলোকে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিরবর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিশ্বপরিস্থিতি ও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেই তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।
ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির একক কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে সাধারণভাবে তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। এগুলো হচ্ছে নতুন ও দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি, যা ডিজিটাইজেশন ও কানেকটিভিটিকে সুকৌশলে কাজে লাগায়। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভবের পরবর্তী পর্যায়। আমরা অনেকেই হয়তো এরই সমার্থক ‘ইমার্জিং টেকনোলজি’ শব্দবাচ্যটি শুনেছি, যা আমাদের ভাষায় ‘বিকাশমান প্রযুক্তি’। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বলতে আমরা বুঝি প্রযুক্তির গভীরতর ক্ষেত্রকে। এগুলোর বিকাশ বা উদ্ভব ঘটছে গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে, তবে এখনো বাজারে এগুলোর ব্যাপক প্রচলন ঘটেনি। এগুলোকে আমরা ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি কিংবা ইমার্জিং টেকনোলজি কিংবা আমাদের ভাষায় বিকাশমান প্রযুক্তি এর যেকোনো একটি নামে অভিহিত করতে পারি। এ টেকনোলজি হচ্ছে একটি পারস্পরিক মিলনবিন্দু, যেখানে বৈপ্লবিক অগ্রসর চিন্তা ও বাস্তব-জগতের বাস্তবায়ন একসাথে মিলিত হয়। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সব সময় পরিবর্তনশীল। আজকের এই দিনে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির একদম সামনের সারিতে রয়েছে রোবটিকস, ড্রোন, অটোনোমাস ভেহিকল, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, মেশিন ইন্টেলিজেন্স, স্পেস ২.০ ও ডিজিটাল ম্যানুফেকচারিংয়ের নানা ক্ষেত্র। কিন্তু এক সময় দেখা যাবে এগুলোকে পেছনে ঠেলে সামনের সারির স্থান দখল করে নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নতুন ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাযুক্তিক অগ্রগতি অপরিহার্য। কিন্তু এর পাশাপাশি এমন আশঙ্কাও আছেÑ প্রাযুক্তিক অগ্রগতি বাড়িয়ে তুলতে পারে মানুষের মধ্যে বৈষম্য কিংবা সৃষ্টি করতে পারে নতুন কোনো সমস্যা। ঘটতে পারে হয় অগ্রসর সমাজ বা দেশে প্রযুক্তি প্রবেশের সুযোগ সীমিত রেখে কিংবা বিল্ট-ইন বায়াসের মাধ্যমে। সরকারগুলোর করণীয় হচ্ছে: ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির সমূহ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং একই সাথে এর ক্ষতিকর প্রভাব যথাসম্ভব কমিয়ে আনা। পাশাপাশি ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে সবার প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি দেশকে উন্নয়নের সব পর্যায়ে এ টেকনোলজির ব্যবহার করতে হবে। ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির গ্রহণ ও মানিয়ে নিতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগামী সব প্রাযুক্তিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির নাটকীয় প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতি ও সমাজের ওপর। একই সাথে এ প্রযুক্তি প্রভাব ফেলতে পারে অন্যান্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ওপরও।
আঙ্কটাডের ‘টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন রিপোর্ট ২০২১’এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এ ধরনের ১১টি ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ইন্টারনেট অব থিংস (আওটি), বিগ ডাটা, বøকচেইন, ফাইভজি, থ্রিডি প্রিন্টিং, রোবটিকস, ড্রোনস, জিন এডিটিং, ন্যানোটেকনোলজি এবং সোলার ফটোভোল্টায়িক (সোলার পিভি)। এসব প্রযুক্তির বেশির ভাগেরই উদ্ভব ঘটেছে ডাটা স্টোরেজ ও সোলার এনার্জির দাম নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার সময়টায়। ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাড়িয়ে তুলতে পারে উৎপাদনশীলতা এবং উন্নয়ন ঘটাতে পারে আমাদেরজীবনমানের। উদাহরণত, এআই প্রযুক্তি রোবট প্রযুক্তির সাথে মিলে রূপান্তর ঘটাতে পারে উৎপাদন ও ব্যবসায়ে। থ্রিডি প্রিন্টিং সুযোগ করে দিতে পারে কম পরিমাণের উৎপাদনের কাজ দ্রæততর ও সস্তাতর উপায়ে সম্পাদনের। এসব এবং অন্যান্য উদ্ভাবন ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রæত সামনে এগিয়ে যেতে পারে। কম সম্পদ ও কম সক্ষমতা থাকা সত্তে¡ও অনেক প্রতিষ্ঠান তা করতে পারছে এবং করছে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, নাইজেরিয়ায় ইন্টারনেট অব থিংস ব্যবহার হচ্ছে কৃষিকাজের কৌশল সম্পর্কিত পরামর্শের কাজে। আর কলম্বিয়ায় থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার হচ্ছে ফ্যাশনপণ্য তৈরিতে। যেমন: এর মাধ্যমে এরা তৈরি করছে টুপি, ব্রাসলেট ও পোশাক।