১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে আইসিটির সূচনা হয় গভর্নেন্সের একটি হাতিয়ার হিসেবে। দেশে ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে এটা ছিল একধাপ এগিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যে সরকার তখন কমপিউটার ও কমপিউটার সামগ্রীর ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়। সেটি ছিল আইসিটি খাতের পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে সরকার ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ নেয়। বাংলাদেশ সরকারের নেয়া ই-গভর্নেন্স পদক্ষেপগুলোর মূল্যায়নে ২০০৩ সালে এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। সে জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোটামুটিভাবে কিছু কিছু সরকারি সংস্থার সহনীয় মাত্রার কমপিউটারায়ন ও নেটওয়ার্কিং বিদ্যমান রয়েছে। এখন কমপিউটার ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন কাজে : কম্পোজ থেকে শুরু করে উন্নতমানের তথ্যব্যবস্থা ব্যবস্থাপনায়ও।
২০০১ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত হয় ‘জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্স’। প্রধানমন্ত্রী এ কমিটির প্রধান। এ কমিটির প্রথম বৈঠক বসে ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। সে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহীত হয় ‘সাপোর্ট টু আইসিটি টাস্কফোর্স (এসআইসিটি) প্রোগ্রাম প্রজেক্ট’। লক্ষ্য আইসিটি টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলোর বান্তবায়ন করা। এসআইসিটির প্রাথমিক দায়িত্ব দাঁড়ায় বিভিন্ন সরকারি অফিসের ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্পগুলোর বান্তবায়ন করা। সে লক্ষ্যেই এসআইসিটি ২০০৩ সালে উদ্যোগ নেয় ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি’র সহায়তায় একটি জরিপের মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের। ২০০৩ সালের জরিপের ফলের ওপর ভিত্তি করে একটি ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ তথা ‘বিবেচ্য বিষয়’ নির্ধারণ করা হয়, যাতে করে বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্ট উদ্যোগসমূহের অগ্রগতি হালনাগাদ করা যায়। এই টার্মস অব রেফারেন্স অনুযায়ী এসআইসিটি প্রকল্পের অর্থ সহায়তায় সরকার ২০০৮ সালে ‘ই-গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি জরিপের উদ্যোগ নেয়। এসআইসিটি ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক সার্ভিসেস’কে (সিইজিআইএস) নিয়োজিত করে এর ফিল্ড ডাটা সংগ্রহের জন্য। সিইজিআইএস স্যাম্পল সার্ভের মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করে। সে জরিপের ওপর ভিত্তি করেই এ লেখায় প্রয়াস পাবো বাংলাদেশে ই-গভর্নমেন্টের পর্যায় জানার।
জরিপের লক্ষ্য
এ জরিপের মূল লক্ষ্য ছিল কমপিউটিং, কানেকটিভিটি ও হিউম্যান ক্যাপাসিটিসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্টের অবস্থান নির্ধারণ। তা সত্ত্বেও এই মূল লক্ষ্য অর্জনের পাশাপাশি ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ অনুযায়ী কিছু মাধ্যমিক লক্ষ্য অর্জনও এ জরিপের উদ্দেশ্য ছিল: ০১. কার্যকর কমপিউটার, প্রিন্টার ও অন্যান্য আইসিটি যন্ত্রপাতির সংখ্যার একটি তালিকা তৈরিসহ নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট কানেকটিভিটি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা। ০২. সরকারি অফিস-আদালতে আইসিটি ব্যবহারের পর্যায় ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর আইসিটি ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ। ০৩. সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা, আইসিটি রিসোর্সের প্রাপ্যতা, ওয়েবসাইট ও সুযোগের প্রাপ্যতা বর্ণনা করা।
কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও পেরিফেরাল পরিস্থিতি
আইসিটি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে কমপিউটার হার্ডওয়্যার ও সাধারণ পেরিফেরাল গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ইনপুট, আউটপুট স্টোরেজ ডাটার জন্য বহুল ব্যবহৃত পেরিফেরাল হচ্ছে প্রিন্টার, স্ক্যানার ও সিডি রাইটার। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ওয়েবকেমও পেরিফেরাল। এগুলো সাধারণত ব্যবহার হয় প্রেজেন্টেশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য। এসবের সম্মিলিত পরিচিতি ‘কমপিউটার পেরিফেরালস’ নামে। আর পিসির কমপিউটার হার্ডওয়্যারের সম্মিলিত পরিচিতি ‘পিসি হার্ডওয়্যার’ নামে। জরিপে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কমপিউটার হার্ডওয়্যার রিসোর্সের যে চিত্রটি পাওয়া গেছে তা নিচের ছকে তুলে ধরা হলো :
ছকে দেখা যায়, জরিপে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন সরকারি অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনে আইসিটির পরিব্যাপ্তি জরিপে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সবচেয়ে কম। যদিও ওপরের এই ছকে উপস্থাপিত পরিসংখ্যান নিয়ে একটা বিভ্রামিত্ম সৃষ্টি হতে পারে, কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি। যেহেতু অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোতে কর্মরতদের সংখ্যা বেশি, অতএব মাথাপিছু আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ অন্যান্য অফিসের তুলনায় এগুলোতে সর্বনিম্ন। জরিপে দেখা গেছে, ২৪ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের অফিসে কোনো পিসি নেই। তা সত্ত্বেও ৩২ শতাংশের বেশি মন্ত্রাণালয় ও বিভাগ এবং ২০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধিকমাত্রায় অর্থাৎ ৫০টির বেশি করে পিসি রয়েছে।
ক. পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত
পিসি হার্ডওয়্যারের পর্যাপ্ততা জরিপে নির্ধারিত হয়েছে পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাতের ওপর ভিত্তি করে। পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত অথবা পিসি-কর্মচারীর অনুপাত যত বেশি হবে, ই-গভর্নেন্স সক্ষমতাও সে অফিসের তত জোরালো হবে। আদর্শ মান হিসেবে এ অনুপাতের মান হওয়া উচিত ১। অর্থাৎ প্রত্যেক চাকুরে তার প্রতিদিনের কর্মকান্ডে ১টি করে পিসি ব্যবহার করবেন। কিন্তু আমাদের জরিপমতে, সার্বিক সরকারি অফিসগুলোতে পিসি-চাকুরে অনুপাত মাত্র ০.২৮। এর অর্থ প্রতি ১০০ জন চাকুরের মধ্যে ২৮টি পিসি রয়েছে। অর্থাৎ আমাদের সরকারি অফিসগুলোয় পিসি প্রবেশের মাত্রাটা এখনো অনেক কম। জরিপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোচ্চমাত্রায় পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত লক্ষ করা গেছে। এই অনুপাত যথাক্রমে ০.৪৬ এবং ০.৬৯। অপরদিকে অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোতে রয়েছে নিম্নতর এক অনুপাত, যা যথাক্রমে ০.১৬ ও ০.৫৫।
দেখা গেছে, পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত সর্বোচ্চ সেসব অফিসে, যেগুলোর অবস্থান ঢাকা জেলার ভেতরে (যথাক্রমে ০.৩৬ ও ০.৬৮)। এরপর এ হার বেশি বৃহত্তর জেলাগুলোর অফিসগুলোতে (যথাক্রমে ০.২৭ ও ০.৬০)। নতুন সৃষ্ট জেলাগুলোয় তা সবচেয়ে কম (যথাক্রমে ০.১৯ ও ০.৫৮)।
মন্ত্রণালয়গুলো ও ডিভিশনগুলোতে পিসি-কর্মচারী অনুপাতের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ক্যাবিনেট ডিভিশন, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে উচ্চতর অনুপাত বিদ্যমান। এ অনুপাতের সর্বনিম্ন হার পরিলক্ষিত হয়েছে অর্থ বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত গড়ে যথাক্রমে ০.৪৬ ও ০.৬৫।
অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের ক্ষেত্রে জরিপে দেখা গেছে, পিসি-চাকুরে অনুপাত উল্লেখযোগ্য নয়। পিসি-কর্মকর্তা ও পিসি-কর্মচারী অনুপাত এক্ষেত্রে যথাক্রমে ০.৫৪ এবং ০.১৬। লক্ষ করা গেছে, ৪০ শতাংশ অধিদপ্তর, কর্পোরেশন ও কমিশনে রয়েছে নিম্ন হারের (০.০১-০.২) পিসি-চাকুরে অনুপাত এবং ২৪ শতাংশের কোনো পিসিই নেই। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনে কমপিউটারের প্রবেশ ঘটেছে খুব কমমাত্রায়। ১১ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনে একটার বেশি পিসি নেই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত তুলনামূলকভাবে সর্বোচ্চ। দেখা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সার্বিকভাবে পিসি-কর্মচারী ও পিসি-কর্মকর্তা অনুপাত যথাক্রমে ০.৪৬ এবং ০.৬৯। ৭৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ জনের জন্য ৪টি পিসির কম রয়েছে। পিসি-কর্মকর্তা অনুপাতের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপাত ০.৬১-১.০-এর মধ্যে। ১৯ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি কর্মকর্তার জন্য রয়েছে একাধিক পিসি।
খ. কমপিউটার পেরিফেরাল
কমপিউটার পেরিফেরাল সাধারণত সংযুক্ত থাকে একটি পিসির সাথে কিংবা দূরবর্তী কোনো স্থানের সাথে নেটওয়ার্ক কানেকশনের মাধ্যমে। প্রত্যেক পিসিতে পেরিফেরাল সংযুক্ত হওয়া অপরিহার্য নয়। তাই এ বিষয়টির মূল্যায়ন এ জরিপে করা হয়েছে প্রতি ১০০ জনের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে। জরিপমতে, সর্বাধিকসংখ্যক প্রিন্টার, স্ক্যানার ও ওয়েবক্যাম পাওয়া গেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে। অপরদিকে এগুলো সবচেয়ে কম পাওয়া গেছে অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোতে। সিডি রাইটার ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর সবেচেয়ে বেশি রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, কর্পোরেশন, কমিশন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হার্ডওয়্যার এক্সেসরিজ গড়ে কমমাত্রায় পাওয়া গেছে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে প্রতি ১০০ জনের জন্য রয়েছে একটি সিডি-রাইটার। জরিপমতে, ঢাকা জেলার অফিসগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে সর্বাধিকসংখ্যক প্রিন্টার, স্ক্যানার ও সিডি-রাইটার। প্রতিজনে যথাক্রমে ০.২, ০.০২ ও ০.০৯টি। আর এই হার বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলাগুলোর বেলায় মোটামুটিভাবে একই। জনপ্রিত যথাক্রমে ০.১, ০.০১ এবং ০.০৬টি।
প্রিন্টার :
জরিপমতে, ৭০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ১-১০টি প্রিন্টার, ৩৬ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের রয়েছে ১১-২০টি প্রিন্টার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ৫০টিরও বেশি প্রিন্টার। অপরদিকে অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের মাত্র ০.৭ শতাংশ অফিসের রয়েছে ৫০টির বেশি প্রিন্টার এবং ২৫ শতাংশ অফিসে কোনো প্রিন্টার নেই। অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোর অফিসে রয়েছে সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রিন্টার। জরিপমতে, প্রিন্টার-এমপ্লয়ীর অনুপাত উল্লেযোগ্যভাবে বিভিন্ন- ৯.৮ থেকে ২৮.৫। সার্বিকভাবে প্রতি ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য রয়েছে ১৫টি। সবেচেয়ে বেশি অনুপাত লক্ষ করা গেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে। এর পরেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সরকারি অফিসগুলোর প্রিন্টার-পিসি অনুপাত থেকে দেখা গেছে, প্রতি ১০টি পিসির জন্য রয়েছে ১টি প্রিন্টার।
স্ক্যানার :
বেশিরভাগ সরকারি অফিসে স্ক্যানার রয়েছে ১ থেকে ১০টি। ১৪ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোনো স্ক্যানার নেই। ৮৪ শতাংশ অফিসে স্ক্যানার রয়েছে ১ থেকে ১০টি। বিভাগ, কর্পোরেশন ও কমিশনের অফিসগুলোর প্রায় ৮২ শতাংশের কোনো স্ক্যানার নেই। ১৭ শতাংশের রয়েছে ১টি থেকে ১০টি করে স্ক্যানার। স্ক্যানার-চাকুরে অনুপাত বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন- ০.৯ থেকে ২.২। প্রতি ১০০ জন চাকুরের জন্য রয়েছে ১৫টি স্ক্যানার। সর্বোচ্চ স্ক্যানার-চাকুরে অনুপাত পরিলক্ষিত হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে। এর পরেই রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থান। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রতি ১০০ জনের জন্য রয়েছে ৫টি স্ক্যানার।
সিডি-রাইটার :
সিডি-রাইটার সাধারণত ব্যবহার হয় ছোট আকারের আর্কাইভ কিংবা ডাটা বিনিময়ের উদ্দেশ্যে। সিডি-রাইটার থাকলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেটওয়ার্কবহির্ভূত অফিসগুলো ইলেকট্রনিক ডাটা স্থানান্তর করতে পারে। ৪০ শতাংশেরও বেশি অফিসে রয়েছে ১ থেকে ১০টি সিডি-রাইটার। মোটামুটি ২৯ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ২৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৫৩ শতাংশ অধিদফতর কর্পোরেশন ও কমিশনের কোনো সিডি-রাইটার নেই। সিডি-রাইটার-চাকুরে অনুপাত সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। প্রতি ১০০ জনের জন্য রয়েছে ৪টি সিডি-রাইটার। একইভাবে সার্বিক সিডি-রাইটার-পিসি অনুপাত থেকে দেখা গেছে প্রতি ১০০ পিসির বিপরীতে রয়েছে ২৮টি সিডি-রাইটার।
ওয়েবক্যাম :
সবচেয়ে বড় ওয়েবক্যাম-পিসি অনুপাত পরিলক্ষিত হয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে, যেখানে প্রতি ১০০০ জন চাকুরের জন্য রয়েছে ১১টি ওয়েবক্যাম। সার্বিকভাবে প্রতি হাজার জনের জন্য রয়েছে ৮টি। একইভাবে প্রতি হাজার পিসির বিপরীতে আছে ২৭টি ওয়েবক্যাম। এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, সরকারি অফিসগুলোতে ওয়েবক্যামের প্রাপ্যতা খুবই কম। লক্ষ করা গেছে, ৩৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৭ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনে এবং ২০ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ওয়েবক্যাম আছে। বিপুলসংখ্যক সরকারি অফিসে কোনো ওয়েবক্যাম নেই।
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর :
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয় বিপুলসংখ্যক শ্রোতার কাছে সরাসরি তথ্য উপস্থাপনের জন্য। সর্বোচ্চ প্রজেক্টর-চাকুরে অনুপাত পরিলক্ষিত হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতি ১০০০ চাকুরের জন্য রয়েছে ১৮টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। সার্বিক ক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ চাকুরের জন্য আছে ৮টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। একইভাবে প্রতি ১০০০ পিসির বিপরীতে রয়েছে ২৮টি প্রজেক্টর। ৫২ শতাংশ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, ৪২ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৯ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর রয়েছে।
সফটওয়্যার
ক. অপারেটিং সিস্টেম
প্রতিটি কমপিউটিং যন্ত্র চালানোর জন্য প্রয়োজন একটি অপারেটিং সিস্টেম (ওএস)। বিভিন্ন সংস্করণ ও ধরনের ওএস ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন সরকারি অফিসের ব্যবহৃত বিভিন্ন সংস্করণ ও ধরনের অপারেটিং সিস্টেম সংক্রান্ত ডাটা ডেস্কটপ পিসি ও সার্ভারের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
পিসিতে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম :
জরিপে দেখা গেছে, প্রধানত ব্যবহার হচ্ছে মাইক্রোসফটের বিভিন্ন সংস্করণের ওএস। ৬৭ শতাংশে ব্যবহার হচ্ছে উইন্ডোজ এক্সপি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ৯.৬ শতাংশ অফিস ব্যবহার করছে অন্যান্য ওএস, যেমন উইন্ডোজ ৯৫, উইন্ডোজ এনটি, উইন্ডোজ মি, উইন্ডোজ ৩.১ এবং এমএস-ডস বিভিন্ন সংস্থার অফিসে সামান্য ব্যবহার হচ্ছে। ডেস্কটপ পিসিতে লিনআক্স ও ইউনিক্স (এআইএক্স, সেলিবিস, এইচপি ইউএক্স) ব্যবহার তেমন নেই। লক্ষ করা গেছে, ঢাকা জেলার ৯৩ শতাংশ অফিস ডেস্কটপ ওএস হিসেবে ব্যবহার করছে উইন্ডোজ এক্সপি। বৃহত্তর জেলার ৭.৩ শতাংশ অফিসে ডেস্কটপ পিসিতে ব্যবহার হয় উইন্ডোজ এক্সপি। নতুন জেলাগুলোয় এ হার ৫৬ শতাংশ।
সার্ভারে ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম :
উইন্ডোজ ২০০০ সার্ভার, উইন্ডোজ ২০০৩ সার্ভার ও লিনআক্স বিভিন্ন অফিসে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ওএস। ২৮ শতাংশেরও বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ব্যবহার করে উইন্ডোজ এনটি সার্ভার ও ইউনিক্স সার্ভারে ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য ওএস নয়। জরিপমতে, ঢাকা জেলার ২৩ শতাংশ অফিসে ব্যবহার হয় উইন্ডোজ ২০০০ সার্ভার এবং সার্ভার ওএস হিসেবে লিনআক্স। বৃহত্তর জেলাগুলোর ৭ শতাংশ অফিস এবং নতুন জেলাগুলোর ৫ শতাংশ অফিসও সার্ভারের ওএস হিসেবে ব্যবহার করে উইন্ডোজ ২০০০ সার্ভার।
খ. অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার
অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার সাধারণত ব্যবহার হয় ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট অ্যানালাইসিস ও প্রেজেন্টেশনের কাজে। দেখা গেছে, প্রায় সব অফিসই প্রতিদিনের কাজে ব্যবহার করছে মাইক্রোসফট অফিস স্যুট (এমএস ওয়ার্ড, এমএস এক্সেল, এমএস পাওয়ার পয়েন্ট) ও ওয়েব ব্রাউজার। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব অফিসকেই এমএস অফিস স্যুট ব্যবহার করতে দেখে গেছে। লক্ষ করা গেছে, ঢাকা জেলার ৯৮ শতাংশ অফিস, বৃহত্তর জেলাগুলোর ৪৬ শতাংশ অফিস এবং নতুন জেলাগুলোর ৭০ শতাংশেরও বেশি তাদের অফিসের কাজে এমএস অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
গ. ডাটাবেজ সফটওয়্যার
জরিপ পরিচালনার সময় বিভিন্ন অফিসে ব্যবহৃত ডাটাবেজের তথ্য ধারণ করা হয়। লক্ষ করা গেছে, সরকারি অফিসে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে এমএস এক্সেল। মাইএসকিউএলের মতো ওপেন ডাটাবেজের ব্যবহার প্রধানত পাওয়া গেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। সামান্য পরিমাণে এর ব্যবহার রয়েছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। জরিপ থেকে আরো জানা যায়, বেশিরভাগ সরকারি অফিস ব্যবহার করে এমএস এক্সেল। ঢাকা জেলা, বৃহত্তর জেলা, নতুন জেলাগুলোতে এর ব্যবহারের হার যথাক্রমে ৩৫, ২৪ ও ১৫ শতাংশ।
ঘ. কাস্টমাইজ সফটওয়্যার
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা জেলার ৩৭ শতাংশ অফিস কাস্টমাইজ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। অপরদিকে বৃহত্তর ও নতুন উভয় জেলায় এই হার ১৯ শতাংশ। বিভিন্ন অফিসে ব্যবহৃত এসব কাস্টমাইজ সফটওয়্যার স্থানীয় ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের তৈরি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ কাস্টমাইজ সফটওয়্যার স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি। বাকিগুলো বিদেশী প্রতিষ্ঠানের, যা তৈরি যৌথ উদ্যোগে। জরিপে ১২ ধরনের কাস্টমাইজ সফটওয়্যার ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে এবং এগুলো ব্যবহারের শতাংশ হারও দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ৩১ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস), ২৭ শতাংশ ফিন্যান্সিয়াল, ৯.২ শতাংশ শিক্ষা, ৮ শতাংশ ওয়েবসাইট, ৫ শতাংশ মানবসম্পদ উন্নয়ন (এইচআরডি), ৪.১ শতাংশ স্টোর ম্যানেজমেন্ট, ৪.১ শতাংশ লাইব্রেরি, ৪.১ শতাংশ বিবিধ ধরনের কাস্টমাইজ সফটওয়্যার ব্যবহার হয়। এর চেয়ে কম হারে ব্যবহার হয় ট্যাক্স/টিন, ঋণ ও হেলথসংক্রান্ত কাস্টমাইজ সফটওয়্যার।
তথ্য ও যোগাযোগ পরিস্থিতি
ক. নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি
সরকারি অফিসগুলোর নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির প্রাপ্যতা মূল্যায়ন করা হয়েছে নেটওয়ার্কের আওতায় কতসংখ্যক পিসি সংযুক্ত, তার ওপর ভিত্তি করে। জরিপে দেখা গেছে, ২১ শতাংশ সরকারি অফিসের রয়েছে ল্যান এবং ৬৮ শতাংশ পিসি ল্যানের সাথে সংযুক্ত। মন্ত্রণালয়ে ও বিভাগের ক্ষেত্রে ৭৩ শতাংশেরও বেশি অফিসে রয়েছে ল্যান সংযোগ এবং ৮১ শতাংশ পিসি সংযুক্ত ল্যানের সাথে। ল্যানের সাথে সংযুক্ত পিসির সংখ্যা অন্যান্য সংস্থার তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম। এতে মনে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অফিসগুলোর মধ্যে রিসোর্স শেয়ারিং হচ্ছে কম। জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা জেলার ৬৭ শতাংশ অফিসে ল্যান রয়েছে। বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলাগুলোর অফিসের মধ্যে যথাক্রমে ১৯ শতাংশ ও ৯ শতাংশের রয়েছে ল্যান সংযুক্তি।
সার্ভার :
ল্যানের মাধ্যমে আমত্মঃসংযুক্ত পিসিগুলোর নেটওয়ার্ক রিসোর্স ব্যবস্থাপনার জন্য সাধারণত সার্ভার ব্যবহার হয়। লক্ষ করা গেছে, ৮৬ শতাংশ সরকারি অফিসে কোনো সার্ভার নেই মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫৭ শতাংশেরও বেশি অফিসে সার্ভার আছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম হারে সার্ভার পাওয়া যায় অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোতে। ঢাকা জেলার ৫০ শতাংশ অফিসে কমপক্ষে ১টি সার্ভার রয়েছে। বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলার ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ৬ শতাংশ।
ইন্টারনেট সংযোগ :
সাধারণত ইন্টারনেটে প্রবেশ ঘটে ডায়ালআপ, রেডিও লিঙ্ক ও ব্রডব্যান্ড সংযোগের মাধ্যমে। অফিসগুলোর ইন্টারনেট সংযোগ সংযোজিত হয়েছে বেশি কিছু পিসির সাথে, যেগুলো ইন্টারনেটের সাথে নানা ধরনের সংযোগের মাধ্যমে। জরিপমতে, ৪৩ শতাংশ অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ৫০ শতাংশ পিসি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। ঢাকা জেলার ৯১ শতাংশ অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলাগুলোর ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৫০ শতাংশের নিচে : বৃহত্তর জেলা ৪১ শতাংশ, নতুন জেলা ৩১ শতাংশ।
মডেম :
সাধারণত টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডায়ালআপের মাধ্যমে ইন্টারনেট প্রবেশের জন্য মডেম ব্যবহার হয়। দেখা গেছে, ৪১ শতাংশেরও বেশি সরকারি অফিসে ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য মডেম রয়েছে। মোটামুটি হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫২ শতাংশ অফিসে মডেম রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় বৃহত্তম হারে মডেম ব্যবহার হচ্ছে। ঢাকা জেলা, বৃহত্তর জেলাগুলো ও নতুন সৃষ্ট জেলাগুলোর যথাক্রমে ৫৭ শতাংশ, ৪২ শতাংশ ও ৩০ শতাংশ অফিসে মডেম রয়েছে।
খ. মন্ত্রণালয় ও বিভাগ
মোটামুটিভাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ৯৬ শতাংশ অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ৬৫ শতাংশের মতো পিসি সংযুক্ত ইন্টারনেটের সাথে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অফিসগুলো ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ডায়ালআপের মাধ্যমে ২৮ শতাংশ, ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে ৬৪ শতাংশ ও রেডিও লিঙ্কের মাধ্যমে ৮ শতাংশ।
গ. অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশন
জরিপমতে, অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোর ৩৭ শতাংশ অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। মোট পিসির ৪৪ শতাংশ পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোয় ৩ ধরনের ইন্টারনেট সংযোগই রয়েছে। বেশিরভাগ সংযোগ অর্থাৎ ৮৬ শতাংশ সংযোগই ডায়ালআপ সংযোগ। ১৩ শতাংশ ব্রডব্যান্ড। রেডিও লিঙ্ক ১ শতাংশ।
ঘ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট পিসির ৪০ শতাংশ পিসি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ ডায়ালআপ কানেকশন এবং ৩২ শতাংশ ব্রডব্যান্ড কানেকশন।
ঙ. ওয়েবসাইট
অন্যান্য অফিসের তুলনায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতেই রয়েছে সর্বাধিক হারে ওয়েবসাইট। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোর অফিস। এসআইসিটি প্রকল্পের অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে সব সরকারি অফিসকে আইসিটি ব্যবহারে সচেতন করে তোলা। এসআইসিটি প্রকল্প উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রণালয়, কর্পোরেশন ও অফিসের ওয়েবসাইট তৈরি করে ই-গভর্নমেন্টের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের জন্য। ১০০ শতাংশ মন্ত্রণালয়, ৭২.১ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশন এবং ৫৯.৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। ঢাকার ভেতরে ৯১ শতাংশ সরকারি অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সারাদেশের ৭০ শতাংশ জেলাগুলোর সরকারি অফিসেরও নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে।
মানবসম্পদ
ক. মানবসম্পদ সক্ষমতা
আইসিটি প্রয়োগে অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত-প্রশিক্ষিত-দক্ষ মানবসম্পদ। আজকের দিনে প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ পরিকল্পনা ক্রমবর্ধমান হারে স্বীকৃত হচ্ছে আইসিটি খাতের পেশাজীবীদের কর্মসাফল্য উন্নয়নের জন্য। আলোচ্য জরিপের সময় বিভিন্ন শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মানবসম্পদ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
আইসিটি ক্ষেত্রে পেশাজীবীদের দুটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: আইসিটি পেশাজীবী ও কমপিউটার অপারেটর। আইসিটি পেশাজীবীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- প্রোগ্রামার, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ওয়েব ডেভেলপার, ডাটাবেজ বিশেষজ্ঞ, ওয়েব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও কমপিউটার প্রশিক্ষক।
জরিপমতে, ৬০ শতাংশেরও বেশি সরকারি অফিসে আইসিটি মানবসম্পদ নেই। এ পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোতে। এগুলোর অধীন ৯০ শতাংশ অফিসে আইসিটি পেশাজীবী নেই। কমপিউটার অপারেটর ও সার্বিক আইসিটি মানবসম্পদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭০ শতাংশ ও ৬৮ শতাংশ অফিসে এদের উপস্থিতি রয়েছে। অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনগুলোর ৩০ শতাংশ অফিসে কমপক্ষে ১ জন কমপিউটার অপারেটর রয়েছে। মোট আইসিটি মানবসম্পদের ৭৩ শতাংশ কমপিউটার অপারেটর, আর বাকি ২৭ শতাংশ আইসিটি পেশাজীবী।
খ. পিসি ব্যবহারকারী
ই-গভর্নমেন্ট সম্পর্কিত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে পিসি ব্যবহারকারীর সংখ্যা একটি জরুরি সূচক। জরিপে দেখা গেছে, সরকারি অফিসের মোট কর্মকর্তাদের ৪৩ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৩১ শতাংশ পিসি ব্যবহার করেন। অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের মোট লোকবলের ২০ শতাংশ পিসি ব্যবহার করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের অফিসে এ হার আরো বেশি। ঢাকা জেলার সরকারি অফিসগুলাতে এ হার ৪৬ শতাংশ। বৃহত্তর জেলায় ২০ শতাংশ। নতুন জেলাসমূহে ২২ শতাংশ।
গ. ই-মেইল ব্যবহারকারী
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যোগাযোগে ই-মেইল ব্যবহার অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। সরকারি অফিসে ই-মেইল ব্যবহারকারী হিসেব করা হয়েছে দু’ভাবে :
০১. সরাসরি ই-মেইল ব্যবহারকারী, যিনি সরাসরি ই-মেইল চেক করেন
০২. অপ্রত্যক্ষ ই-মেইল ব্যবহারকারী, যিনি ই-মেইল চেক করেন কমপিউটার অপারেটরের মাধ্যমে।
দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ কর্মকর্তা ই-মেইল ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে ২৭ শতাংশ সরাসরি ব্যবহারকারী আর ৯ শতাংশ অপ্রত্যক্ষ বা ইনডাইরেক্ট ই-মেইল ইউজার। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সর্বোচ্চ হারে ই-মেইল ব্যবহারকারী রয়েছেন এবং সর্বনিম্ন অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশন অফিসগুলোতে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৪৭ শতাংশ অফিসার ই-মেইল ব্যবহার করেন প্রত্যক্ষ কিংবা অপ্রত্যক্ষভাবে। অপরিদকে অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ হার ২২ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। ঢাকা জেলা, বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলাগুলোর ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৪২, ৩৩ ও ২৬ শতাংশ।
প্রশিক্ষণ ও আইসিটি প্রকল্প
ক. প্রশিক্ষণ সুবিধা
ই-গভর্নমেন্টের জন্য আইসিটিসচেতন মানবসম্পদ তৈরি প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। দেখা গেছে, ৩১ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ কর্মসূচী আয়োজনের সুবিধা রয়েছে। ২৩ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং ১০ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশনের এ সুবিধা রয়েছে। বেশিরভাগ অফিসই জানিয়েছে, তারা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ৪২ শতাংশের বেশি সরকারি অফিস তাদের লোকদের জন্য আইসিটি ট্রেনিং কর্মসূচির আয়োজন করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশন অফিসের বেলায় এ হার যথাক্রমে ৪৮ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ। ১০ শতাংশ অফিস প্রশিক্ষণ কর্মসূচী আয়োজন করে শুধু কর্মকর্তাদের জন্য। ঢাকা জেলা, বৃহত্তর জেলা ও নতুন জেলাসমূহের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৮০, ৪২ ও ৩২ শতাংশ।
খ. আইসিটি প্রকল্পসমূহ
বাংলাদেশে আইসিটিবিষয়ক প্রকল্প খুবই সীমিত। এসব প্রকল্প বান্তবায়ন যথাযথভাবে হলে বাংলাদেশে আইসিটি খাতের উন্নয়নের সুযোগ বাড়বে। ১১ শতাংশ সরকারি অফিসের রয়েছে আইসিটিসংশ্লিষ্ট প্রকল্প। দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ৮ শতাংশ অধিদফতর, কর্পোরেশন ও কমিশন এবং ১৪ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এধরনের আইসিটি প্রকল্প রয়েছে। জরিপমতে, ঢাকা জেলার ৩১ শতাংশ অফিসের আইসিটিবিষয়ক প্রকল্প রয়েছে। ঢাকার বাইরের অফিসগুলোর জন্য এ হার ১৫ শতাংশের নিচে।
গ. আইসিটি প্রকল্পের সুফল
সরকারি প্রতিষ্ঠানের আইসিটি প্রকল্পের বান্তবায়নের বহুমুখী সুফল রয়েছে। আইসিটি প্রকল্পের বান্তবায়নের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসফলতার সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে। জরিপমতে, বেশিরভাগ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বেড়েছে প্রশংসনীয়ভাবে। আইসিটি ব্যবহারের প্রভাব সম্পর্কে নানা মত পাওয়া গেছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আইসিটি যোগাযোগ সুবিধার কারণে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। জরিপমতে, সফল ই-গভর্নমেন্ট বান্তবায়নে আইসিটি প্রকল্প সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
শেষ কথা
এসআইসিটির এই জরিপ থেকে বাংলাদেশের ই-গভর্নমেন্টের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু প্রস্ত্তত সে সম্পর্কে একটা চিত্র পাওয়া যাবে। এ জরিপদৃষ্টে সরকার এখন নির্ধারণ করতে পারবে ই-গভর্নমেন্ট পদক্ষেপ ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে পরবর্তী করণীয়। সরকার নির্ধারণ করবে আমাদের ‘জাতীয় আইসিটি নীতিমালা’ বান্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়সমূহও। এ ধরনের নিজস্ব জরিপ আগামী দিনেও আরো প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের একটি জরিপ আমাদের আরো ব্যাপকধর্মী জরিপ পরিচালনায় ভবিষ্যতে সাহস যোগাবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : golapmunir@yahoo.com