স্ট্র্যাটেজি গেমগুলোর মাঝে কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার সিরিজের গেমগুলো বেশ নন্দিত। কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার সিরিজের গেমগুলোর মাঝে তিনটি ভাগ রয়েছে। জেনারেলস, টাইবেরিয়ান ও রেড অ্যালার্ট। এ তিন ধরনের ভাগে স্ট্র্যাটেজি গেমগুলো খেলার মাঝে রয়েছে ভিন্ন স্বাদ ও বেশ পার্থক্য। জেনারেলস সিরিজের গেমগুলোর পটভূমি গড়ে উঠেছে বর্তমান বিশ্বকে কেন্দ্র করে এবং এ সিরিজের ফ্রাকশনগুলো (জাতি) হচ্ছে- ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা, পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না ও গ্লোবাল লিবারেশন আর্মি। টাইবেরিয়ান সিরিজের কাহিনী গড়ে উঠেছে কাল্পনিক ভবিষ্যতের পটভূমিতে, যেখানে ব্রাদারহুড অব নড ও গ্লোবাল ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভস নামের দুই জাতি টাইবেরিয়াম নামের মহামূল্যবান এক আকরিক সংগ্রহ নিয়ে লড়াইয়ে মেতে ওঠে। তাদের লড়াইতে নাক গলাতে ও টাইবেরিয়ামের ভান্ডারে দখলদারি করার জন্য আবির্ভাব ঘটে ভিনগ্রহবাসী আরেকটি জাতির, যাদের নাম স্ক্রিন। রেড অ্যালার্ট সিরিজের গেমের জাতিগুলো হচ্ছে-অ্যালাইড নেশনস, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও এম্পায়ার অব দ্য রাইজিং সান। রেড অ্যালার্ট সিরিজের পটভূমি হচ্ছে দিবতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তবে তাতে একটু ভিন্ন রূপ দেয়া হয়েছে। এখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন টাইম মেশিনের সাহায্যে অতীতে গিয়ে আলবার্ট আইনস্টাইনকে সরিয়ে দেয়, কারণ তার কারণেই জন্ম নেয় পারমাণবিক মারণাস্ত্র। তাকে সরিয়ে দেয়ায় জার্মানি, আমেরিকা ও অন্যান্য শক্তিশালী কিছু দেশের ক্ষমতা কমে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়, কিন্তু তাদের পথে বাদ সাধে কয়েকটি দেশের জোট অ্যালাইড নেশন এবং জাপানের এম্পায়ার অব দ্য রাইজিং সান। টেকনোলজির এক অন্য রূপ তুলে ধরা হয়েছে এই গেম সিরিজের মাঝে। পারমাণবিক বোমার পরিবর্তে আনা হয়েছে অসংখ্য নতুন ধরনের ইউনিট, যা অন্য গেমের ইউনিটগুলোর চেয়ে আলাদা।
কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার সিরিজের গেমগুলোর জন্মদাতা প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ওয়েস্টউড স্টুডিও। ১৯৯২-২০০২ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ বছর ধরে খুব সাফল্যের সাথে তারা এ সিরিজের গেম সবাইকে উপহার দিয়েছে। এ সিরিজের গেম বের হওয়া শুরু করে ইলেকট্রনিক আর্টস প্যাসিফিকের ব্যানারে এবং তা স্থায়ী হয় মাত্র এক বছর। ২০০৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ সিরিজের গেমের স্বত্ব রয়েছে ইলেকট্রনিক আর্টস লস অ্যাঞ্জেলেসের হাতে। তারা গেমারদের হাতে তুলে দিয়েছেন জেনারেলস-জিরো আওয়ার, টাইবেরিয়াম ওয়ারস, কেইনস রেথ, রেড অ্যালার্ট ৩ ও তার এক্সপানশন আপরাইজিং এবং ২০১০ সালে বের করতে যাচ্ছে কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার ৪-টাইবেরিয়ান টুইলাইট। আজকে আমাদের আলোচনার মূল গেমটি হচ্ছে রেড অ্যালার্ট ৩-এর এক্সপানশন প্যাক আপরাইজিং। ২০০৮ সালে বের হওয়া রেড অ্যালার্ট ৩ গেমারদের মন জয় করতে পারেনি। রেড অ্যালার্ট ২-এর মতো দারুণ গেমের পরে সবাই তৃতীয় পর্ব থেকে অনেক কিছু আশা করেছিলো, যা তারা পায়নি। দুর্বল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), পুরনো গেমের ইউনিট ও একঘেয়ে গেমপ্লের কারণে গেমটি তেমন একটা নাম কামাতে পারেনি, যতটা তার পাওনা ছিলো। উল্টো তা চলে আসে সমালোচনায়, সবাই তার ত্রুটি বের করার কাজে লেগে পড়ে। এ ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইলেকট্রনিক আর্টস বের করেছে নতুন এ এক্সপানশন প্যাক। এ এক্সপানশন প্যাকে আগের পর্বের যেসব ব্যাপারে গেমারদের অসন্তোষ ছিলো তা দূর করা হয়েছে শক্ত হাতে। দারুণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও অনেক নতুন ইউনিটের সমাগম গেমের মূল্যমান অনেক গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। আগের সব ইউনিটের পাশাপাশি সম্পূর্ণ নতুন ও বিচিত্র সব ইউনিট আনা হয়েছে, যা এককথায় অসাধারণ। গেম খেলার সময় বিপরীত পক্ষকে নিজ পথ থেকে সরিয়ে দেয়াটা এবার ছেলের হাতের মোয়া মনে হবে না। শত্রুকে হারাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে গেমারকে। ভালো দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তা না থাকলে গেমটি খেলার সময় পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হবে। তাই কঠিন মোডে খেলার জন্য গেমারকে হতে হবে তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন। গেমের একটি দুর্বল দিকের মধ্যে রয়েছে এর মালটিপ্লেয়ার অপশনের অনুপস্থিতি। কিন্তু কমান্ডারস চ্যালেঞ্জ গেমারের খেলার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য ভালো একটি অপশন, যেখানে কত দ্রুততার সাথে গেমার যুদ্ধ শেষ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা করতে হবে।
গেমের গ্রাফিক্সের মান আগের চেয়ে কিছুটা উন্নত করা হয়েছে। আগের তিনটি জাতি নিয়েই খেলার সুযোগ রয়েছে। এতে যুক্ত করা হয়েছে প্রায় ৩০টির মতো নতুন স্কিরমিশ ম্যাপ এবং তা ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বানানো হয়েছে। গেমটিকে ভাগ করা হয়েছে চারটি ভিন্ন মিনি ক্যাম্পেইনে, এদের মধ্যে আগের তিনটির সাথে যুক্ত করা হয়েছে এম্পায়ার অব দ্য রাইজিং সানের কমান্ডো ইয়ুরিকো ওমেগার উৎপত্তি নিয়ে আলাদা একটি ক্যাম্পেইন। এটি আকারে তেমন একটা বড় নয়। এতে কিভাবে ইয়ুরিকো অস্বাভাবিক মানসিক শক্তির অধিকারী হলো এবং কি করে তার এ শক্তি রাইজিং সান কাজে লাগালো তার বিশদ বর্ণনা দেয়া আছে। এ ক্যাম্পেইনের পুরোটা এককভাবে ইয়ুরিকোকে নিয়ে খেলতে হবে। প্রথমে সোভিয়েত ও ইয়ুরিকোর ক্যাম্পেইন দিয়ে খেলা শুরু করতে হবে, তারপর বাকি দুটি ক্যাম্পেইন আনলক হবে। গেমের কাহিনীতে অ্যালাইড নেশনের পক্ষে থাকা এক সংস্থা ফিউচারটেকের কাজে বাদ সাধবে সোভিয়েতরা। কারণ তারা সিগমা হারমোনাইজার নামের এক যন্ত্র আবিষ্কার করার চেষ্টায় রত, যা দিয়ে সময়কে থামিয়ে দেয়া যায়। সোভিয়েত ক্যাম্পেইনে গেমারকে ফিউচারটেকের সব আস্তানা খুঁজে তা ধুলোয় মিশিয়ে দিতে হবে এবং অ্যালাইড নেশনের ক্যাম্পেইনে রাইজিং সানের বিস্তার রোধ করার কাজ করতে হবে। আর রাইজিং সান ক্যাম্পেইনে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে পুরো পৃথিবীর বুকে তাদের রাজত্ব কায়েম করার সংগ্রামে যোগ দিতে হবে। এতে ইয়ুরিকো ক্যাম্পেইনটিই বেশি চমকপ্রদ করে বানানো হয়েছে।
নতুন ইউনিটগুলোর মধ্যে অ্যালাইড নেশনের পক্ষে রয়েছে- ভারি অ্যান্টি-সারফেস প্লেন হারবিনজার গানশিপ, শক্তিশালী দূরপাল্লার উভচর অস্ত্রবাহী যান প্যাসিফিক এফএভি, সাইরো লেজিওনারি নামের উভচর পদাতিক বাহিনী ও ফিউচার ট্যাঙ্ক এক্স-১ নামের অ্যান্টি-সারফেস রোবটিক ট্যাঙ্ক। নতুন ইউনিটে রাইজিং সানের সৈন্যবহরকে সমৃদ্ধ করেছে-স্টিল রোনিন নামের ভারি অ্যান্টি-সারফেস পাইলটযুক্ত রোবট, আর্চার মেইডেন নামের অত্যাধুনিক তীরন্দাজ বাহিনী ও গিগাফোর্ট্রিস নামের উভচর শক্তিশালী ও সব রকমের শত্রুর সাথে মোকাবেলায় পারদর্শী ইউনিট। সোভিয়েত ইউনিয়নের পাল্লা ভারি করার জন্য তাদের দলে যুক্ত করা হয়েছে রিপার নামের শক্তিশালী বাহিনী, গ্রিন্ডার নামের ভারি অ্যান্টি-সারফেস যুদ্ধযান, যা নিমেষেই যে কোনো স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে পারে, পদাতিক বাহিনী ছত্রভঙ্গ করার জন্য দেয়া হয়েছে ডেসোলেটর নামের বিষাক্ত রাসায়নিক তরল ছিটিয়ে দিতে সক্ষম এক অসাধারণ বাহিনী, দ্রুত চলাচলে সক্ষম মর্টার সাইকেল দেয়া হয়েছে, যা স্থলযুদ্ধে বেশ উপযোগী।
কমান্ডারস চ্যালেঞ্জ ফিচারটি গেমের মূল আকর্ষণ, কারণ ক্যাম্পেইন মোডে মাত্র ৩টি করে মোট ১২টি মিশন রয়েছে। তাই তা শেষ করতে বেশ একটা বেগ পেতে হবে না। জেনারেলস সিরিজের গেমে দেয়া জেনারেলস চ্যালেঞ্জের আদলে বানানো কমান্ডারস চ্যালেঞ্জে বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেনস, তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জেনারেলদের সাথে গেমারকে মোকাবেলা করতে হবে। এভাবে মোট ৫০টি কঠিন মিশন গেমারকে শেষ করতে হবে। প্রতি মিশনে গেমার তার পছন্দের যেকোনো একটি দল (সোভিয়েত ইউনিয়ন, অ্যালাইড নেশন ও রাইজিং সান) নিয়ে খেলতে পারবেন। এছাড়া প্রতি মিশন শেষ করলে নির্দিষ্ট একটি দলের নতুন প্রযুক্তি বা ইউনিট আনলক হবে এবং পরবর্তী মিশনে গেমার সেই ইউনিট বা টেকনোলজি ব্যবহার করে খেলতে পারবেন।
গেমটি চালাতে পেন্টিয়াম ৪, ২ গিগাহার্টজের প্রসেসর বা এএমডি এথলন ২০০০+ বা তার চেয়ে বেশি, ১ গিগাবাইট র্যা ম, ৬ গিগাবাইট ফাঁকা স্থান, গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে এনভিডিয়া জিফোর্স ৬৮০০ বা এটিআই রাডেওন এক্স ১৮০০ সিরিজের কার্ড হলেই চলবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com