২০০৬ সালে বের হওয়া জাস্ট কজ গেমের সিক্যুয়াল হিসেবে প্রায় চার বছর পর ২০১০-এ বের হলো জাস্ট কজ ২। স্যান্ডবক্স স্টাইলভিত্তিক এ গেমটি একটি থার্ড পারসন অ্যাকশন ও অ্যাডভেঞ্চার ধাঁচের। সুইডেনের বিখ্যাত গেম ডেভেলপার কোম্পানি অ্যাভাল্যানশ স্টুডিও এবং ইডিওস ইন্টারঅ্যাকটিভের যৌথ উদ্যোগে গেমটি বানানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি বাজারে ছেড়েছে স্কয়ার ইনিক্স নামের প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন গেম র্যাাঙ্কিং সাইটের জরিপে এর রেটিং বেশ ভালো।
প্লট
নতুন এ গেমের কাহিনী আগের গেমের চেয়ে পুরোপুরি আলাদা। গেমের প্রধান চরিত্রের ভূমিকায় আগের মতোই রয়েছে সিআইএ ব্ল্যাক অপসের অ্যাজেন্ট রিকো রডরিগেজ। গেম ডেভেলপাররা তাদের বানানো এ চরিত্রকে জেমস বন্ড, ম্যাড ম্যাক্স, জ্যাসন বর্ন, উলভরাইন, পানিশার, র্যা ম্বো, টনি মন্টানা, হ্যান সালো ও চে গুয়েভারাসহ আরো কয়েকটি চরিত্রের মিলিত রূপ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আগের গেমে রিকোকে বিচরণ করতে হয়েছিল ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সান এসপেরিতো নামের স্থান এবং লড়াই করতে হয়েছে সেখানকার শাসক সালভাদর মেনডোজা নামের খলনায়কের বিরুদ্ধে। এবার তাকে মুখোমুখি হতে হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পানাউ নামের ট্রপিক্যাল বা ক্রান্তীয় দবীপের দুষ্টচক্রী শাসক পানডাক ব্যাবি পানায়ের বিরুদ্ধে। জুয়ারি ও মদখোর পানডাক আগের শাসককে গুপ্তহত্যা করে তার আসন ছিনিয়ে নিয়ে পুরো দবীপ কব্জা করে নিয়েছে।
গেমপ্লে
গেমপ্লে অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। গেমের ম্যাপে প্লেয়ার যেকোনো স্থানে ঘুরে বেড়াতে পারবে, কারণ গেমটিতে রয়েছে ওপেন ওয়ার্ল্ড এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশ। এতে গেমারকে গেমের ঘটনা প্রবাহের দিকে তেমন একটা নজর দিতে হয় না। নজর দিতে হয় গেমের মিশন ও তা সম্পন্ন করার উপায়গুলোর দিকে। এটিই স্যান্ডবক্স স্টাইলের অ্যাকশন গেমের মূল বৈশিষ্ট্য।
নতুন ফিচার
গেমে প্লেয়ারের ডুয়াল গ্রাপলিং হুকের ব্যবহার বেশ চমকপ্রদ একটি ব্যাপার। এ গ্রাপলিং হুকটি টম্ব রাইডার লিজেন্ডে ব্যবহার করা হুকের মতোই, তবে এ গেমে তা দিয়ে অনেকরকম কাজ করা যায়। বিল্ডিংয়ের বা উঁচু কোনো স্থাপনায় ওঠার জন্য, উঁচু স্থান থেকে শত্রুকে টেনে ফেলে দিতে, হুকের দড়িকে চাবুকের মতো ব্যবহার করতে, হেলিকপ্টার বা ছুটন্ত কোনো গাড়ি বা বোটের সাথে যুক্ত করতে, ছোট আকারের যানবাহনের গতি কমাতে বা তা থামাতে এবং বেশি দূরত্বের পথ দ্রুত অতিক্রম করতে এ গ্রাপলিং হুক ব্যবহার করা যাবে। গেমের আরেকটি বিশেষ ফিচার হচ্ছে রিলোডেবল প্যারাসুট যা ইচ্ছেমতো খোলা বা বন্ধ করা যায়। প্যারাসুটটি অনেকটা গ্লাইডারের মতো ব্যবহার করা যায়।
সুবিধা
গেমে যোগ করা হয়েছে বেশ কিছু নতুন অস্ত্র, যার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-লেজার নিয়ন্ত্রিত রকেটবিশিষ্ট রকেট লঞ্চার, এক হাতে বহনযোগ্য গ্রেনেড লঞ্চার, রিমোট ট্রিগারবিশিষ্ট সি৪ নামের এক্সপ্লোসিভ, মাউন্টেড মিশিগান ইত্যাদি। জল-স্থল-আকাশপথ কোনো স্থানই বাদ দেয়া হয়নি এ গেমের বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে। স্থলপথে বিচরণের জন্য রয়েছে নানারকম গাড়ি, আর্মড কার ও বাইক। পানিপথে চলাচলের জন্য রয়েছে বেশ কয়েক ধরনের বোট। আকাশপথে প্লেয়ার নিয়ন্ত্রণ করবে হেলিকপ্টার ও প্লেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এবারে প্লেয়ারকে বিশাল আকৃতির বোয়িং ৭৩৭ বিমানে যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
গেমে টাকার বিনিময়ে ব্ল্যাক মার্কেট থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করার পাশাপাশি অস্ত্র ও যানবাহন আপগ্রেড করার সুবিধাও দেয়া হয়েছে। ব্ল্যাক মার্কেট থেকে মালামাল হেলিকপ্টারের সাহায্যে প্লেয়ারের অবস্থানের কাছাকাছি নামিয়ে দেয়া হবে যাতে প্লেয়ার সহজে তা সংগ্রহ করতে পারে। গেমে প্লেয়ার দুই হাতে দুটি আলাদা বা একই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে এবং তা দিয়ে আলাদাভাবে গুলিও ছুড়তে পারবে। মাউসের লেফট ও রাইট বাটনে ক্লিক করে দুই হাতের অস্ত্র আলাদাভাবে ফায়ার করা যাবে। গেমে যত বেশি এক্সপ্লোশন বা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানো যাবে তত ক্যাওস পয়েন্ট পাওয়া যাবে।
প্লে স্টেশন ৩-এ গেমটি খেলার সময় বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। গেমটি বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যাভাল্যানশ ইঞ্জিন ২.০, যা মূল জাস্ট কজ গেমে ব্যবহার করা গেম ইঞ্জিনের চেয়ে আরো উন্নত। গেমের গ্রাফিক্স ও শব্দশৈলী এককথায় অসাধারণ। গেমে এন্টিআলাইসিং ১৬এক্স পর্যন্ত বাড়ানো যাবে এবং টেক্সচার ডিটেইলসও অনেক সূক্ষ্ম করে তোলা হয়েছে। ডিরেক্টএক্স ১০ ব্যবহার করায় গেমটির গ্রাফিক্সে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা এবং এর ফলে গেমের পরিবেশ হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয়।
অসুবিধা
ডিরেক্টএক্স ৯ সাপোর্ট না করা, এক্সপি সাপোর্ট না করা, ডিরেক্টএক্স ৯ সমর্থিত সাউন্ড কার্ডে শব্দের ব্যাপক হেরফের হওয়া ও হাই কনফিগারেশনের পিসির প্রয়োজনীয়তা গেমটির দুর্বলতা। গেমটির হাই গ্রাফিক্স কোয়ালিটির কারণে তা ন্যূনতম কনফিগারেশনে খেলে তেমন একটা সুবিধা করা যাবে না। গেমটি ভালোভাবে খেলতে হলে ইন্টেলের কোর টু ডুয়ো বা এএমডির অথলন এক্সটু সিরিজের প্রসেসর লাগবে। গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে ডিরেক্টএক্স ১০ সমর্থিত ৫১২ মেগাবাইটের এনভিডিয়া জিফোর্স জিটিএস ২৫০ সিরিজ বা এটিআই রাডেওন এইচডি ৫৭৫০ সিরিজ ব্যবহার করলে গেমের পুরো স্বাদ উপভোগ করা সম্ভব হবে। গেমের কাহিনী বেশ দুর্বল, কিন্তু গেমপ্লেতে অবাক করা সব অ্যাকশনের উপস্থিতির কারণে কাহিনীর দুর্বলতা ঢাকা পড়ে গেছে। গেমটি শুধু উইন্ডোজ ভিসতা ও সেভেনে চলে। মূল গেমের পাশাপাশি এতে কোনো মিনি গেম বা মাল্টিপ্লেয়ার মোড নেই।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
গেমটি খেলার জন্য যে সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট চাওয়া হয়েছে তা অবাক করার মতো। গেমটি খেলার জন্য অনেককে তাদের পিসি আপগ্রেড করতে হতে পারে। গেমটি চালানোর জন্য ন্যূনতম পিসি কনফিগারেশনের তালিকায় থাকতে হবে পেন্টিয়াম ডুয়াল কোর ৩.০ গিগাহার্টজের প্রসেসর, গিগাবাইট মেমরির র্যা ম, ১০ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস, ডিরেক্টএক্স ১০ ও পিক্সেল শ্রেডার ৪.০ সাপোর্টেড ২৫৬ মেগাবাইট মেমরির গ্রাফিক্স কার্ড (এনভিডিয়া জিফোর্স ৮৮০০ সিরিজ/এটিআই রাডেওন এইচডি ২৬০০ প্রো) ও ডিরেক্টএক্স ১০ সাপোর্টেড সাউন্ড কার্ড। ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেমে গেমের পারফরমেন্স আরো ভালো পাওয়া সম্ভব, তবে সাথে র্যা মের পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে গেমটি বেশ ভালোমানের একটি গেম হয়েছে। অ্যাকশন ও অ্যাডভেঞ্চারের সমাহারে গেমটি সবার মনে দাগ কেটেছে ইতোমধ্যেই। তাই গেমটি সংগ্রহ করে মেতে উঠুন নতুন ধরনের এক অভিযানের স্বাদ নিতে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com