কমপিউটার জগৎ রিপোর্ট -
দেশে ও বিদেশে বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায়ই রোবট তৈরির কার্যক্রম দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোবটের মূল গণনা ও কার্যক্রম পরিচালনা করে একটি সম্পূর্ণ কমপিউটার। রোবট পরিচালনার ভারি কাজগুলো শক্তিশালী কমপিউটার দিয়ে করা হয়। এই রোবট পরিচালনার ভারি কাজগুলো একটি মোবাইল ফোন দিয়ে সম্পন্ন করার উদাহরণ কমই আছে। হয়ত আপনি মোবাইল দিয়ে রোবট চালাতে দেখেছেন, কিন্তু মোবাইল নিজেই একটি রোবট? এই কাজটিই করতে সক্ষম হয়েছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)-এর সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চার শিক্ষার্থী ফাহাদ বিন ওয়াহিদ, তাহসিনুল আলম সরকার, সাকিফ আহমেদ এবং খালেদ জিলানী। স্নাতক ডিগ্রির থিসিস ও প্রজেক্টের অংশ হিসেবে তারা তৈরি করেছেন রোবটটি। রোবটটি তৈরির তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মো: অভিষেক আহমেদ।
উন্নত বিশ্বে মোবাইল রোবটের ওপর কাজ শুরু হয়েছে বেশ আগেই। কিন্তু আমাদের দেশে সম্ভবত এটিই প্রথম। বর্তমানে এ ধরনের মোবাইল ফোন চালিত রোবটের নতুন নাম দেয়া হয়েছে ‘সেলবট’।
নির্মাতাদের কাছ থেকে জানা যায়, শুধু একটি রোবট তৈরিই মূল উদ্দেশ্য ছিল না তাদের। প্রথমত রোবটটির বহনযোগ্যতা বাড়ানো ছিল খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ কমপিউটার এমনকি একটি ল্যাপটপও বহনযোগ্যতা কমিয়ে আনতে পারে। তাই আকারে ছোট মোবাইল ফোন ব্যবহারই ছিল লক্ষ্য। স্বভাবতই মোবাইল ফোন ব্যবহার করায় রোবটটি আকারে হবে ছোট ও বহনযোগ্য। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের এজ/জিপিআরএস ইন্টারনেট ব্যবহার হয়েছে যেখানে অন্যান্য রোবটে ব্লুটুথ বা অন্য কোনো ইন্টারনেট এনাবল্ড ডিভাইস ব্যবহার করা হয় যার জন্য অতিরিক্ত জায়গা ও খরচের প্রয়োজন হয়। মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে এসব সুবিধা একটি যন্ত্রেই পাওয়া যাচ্ছে। ইন্টারনেটকে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রাখায় রোবটটিকে বাইরের কোনো তারের সংস্পর্শ ছাড়াই তারহীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রোবটটি যে স্থানে থাকবে তার আশপাশের চিত্র দেখার জন্য মোবাইলের ক্যামেরাই যথেষ্ট, কোনো আলাদা ক্যামেরা বা যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়নি।
আমাদের দেশে রোবট তৈরির সরঞ্জাম খুব একটা কিনতে পাওয়া যায় না, তাই প্রাথমিকভাবে একটি খেলনা গাড়িকে ভেঙ্গে তার মধ্যে মাইক্রোপ্রসেসর স্থাপন করে রোবটটির ডিজাইন করা হয়েছে। মোবাইল ও মাইক্রোপ্রসেসর পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে রোবটটিকে চলাচলের নির্দেশ দেয়। চারটি চাকার সাহায্যে রোবটটি চারদিকে চলাচল করতে পারে এবং সামনের একটি অংশ উপর ও নিচে ওঠানামা করতে পারে, যার কারণে ক্যামেরা দিয়ে পূর্ণ দৃশ্য দেখা যায়। মোবাইল ফোনটির জিপিএস ব্যবহার করে রোবটটি সেই মুহূর্তে কোথায় অবস্থান করছে তা গুগল ম্যাপে দেখা যায়।
ANDBOT নামটি নেয়া হয়েছে Android I Robot শব্দ দুটি থেকে। রোবটটি তৈরিতে গুগলের মুক্ত সোর্সের অপারেটিং সিস্টেম অ্যানড্রয়িড ব্যবহার করা হয়েছে। একটি চালক মোবাইল চালকের হাতে থাকে এবং অপর একটি মোবাইল রোবটটিতে বসানো রয়েছে। চালক মোবাইলটি দিয়ে সম্পূর্ণ রোবটটিকে চালানো যায়। মোবাইল ও রোবট ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারহীনভাবে যোগাযোগ করে বলে একে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই চালানো যাবে। রোবটটি চাকার সাহায্যে চারদিকে চলাচল করতে পারে। এটি জিপিএস ব্যবহার করে নিজের সঠিক অবস্থান গুগল ম্যাপে দেখাতে পারে এবং এর ক্যামেরার সাহায্যে সেই স্থানের চিত্র সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব। এর কম্পাস দিয়ে এটি কোন দিকে মুখোমুখি হয়ে আছে তাও জানা যায়।
ভবিষ্যতে রোবটটিতে ভয়েস কমান্ড, ইমেজ প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং আরও কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করার ইচ্ছে আছে নির্মাতাদের। তাদের মতে দুর্গম অথবা বিপজ্জনক স্থানে এই রোবটকে কাজে লাগানো যাবে। ভবিষ্যতে এর নির্মাণ খরচ আরও কমিয়ে এবং এর সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ অথবা সেনাবাহিনীর কাজে রোবটটি ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে দলটির।
কজ ওয়েব