কুকুর আদিকাল থেকেই মানুষের সঙ্গী হিসেবে বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিশেষ করে যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তাদের জন্য আদর্শ গাইড হচ্ছে কুকুর। কিন্তু সেই কুকুরের নিজেরও প্রয়োজন হয় নানা যত্নআত্মির। আর এটা নিঃসন্দেহে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয়ের একটি ব্যাপার বটে। তাই জাপানি গবেষকরা জীবন্ত কুকুরের ওপর আস্থা সরিয়ে তৈরি করেছেন রোবট কুকুর। এর কাজ হবে বিশেষ করে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের গাইড হিসেবে ব্যবহার হওয়া। বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে সে তার মনিবকে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বলে দেবে আশপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতি। শপিং সেন্টার বা অন্য কোনোখানে গেলে পণ্য কিংবা সেবা সম্পর্কে ধারণা দেবে। রোবোডগ যেনো হবে সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর চোখ এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যম।
জাপানের এনএসকে করপোরেশন এবং ইলেকট্রো কমিউনিকেশনস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের একটি দল বহু গবেষণার পর উদ্ভাবন করেছে চার পাবিশিষ্ট এই যান্ত্রিক কুকুর তথা রোবোডগ, যে কি না তার আট চাকা দিয়ে দৌড়াতে এবং প্রয়োজনে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে সক্ষম।
এনএসকের ইমার্জিং টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারের কাতসুকি সাগাইয়ামা বলেছেন, তারা যখন বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেন তখন তাদের লক্ষ্যই ছিল যথাযথ একটি গাইড কুকুর তৈরি করা। বিশেষ করে যাদের চোখে সমস্যা রয়েছে তারা যেনো এটি ব্যবহার করে সুফল পায়। তাই রোবোডগে মাইক্রোসফটসহ নানা ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এ কারণেই রোবটটির পক্ষে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করার সময় পা উঁচু-নিচু করা এবং প্রতি পদক্ষেপে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়। রোবটের পা এবং হাতে সন্নিবেশিত করা হয়েছে বহুমাত্রিক সেন্সর। এসব সেন্সর ব্যবহার করেই ঠিক কি করতে হবে তা বুঝতে পারে। মাথায় যে সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে কুকুরটি বুঝতে পারে যে সামনে কি রয়েছে। কিন্তু সেই সেন্সর দিয়ে নিজের পাগুলো দেখতে পারে না। তাই কুকুরটি যাতে নিজের স্টেপিং বা পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে পারে সে জন্য গবেষকরা তার মাথায় বসিয়ে দিয়েছেন একটি ডিসটেন্স ইমেজ সেন্সর। একই সাথে অন্যান্য সেন্সরের মাধ্যমে পাওয়া যায় পায়ের আশপাশে থাকা নানা প্রয়োজনীয় তথ্য। ব্যবহারকারী যাতে রোবটটি ভালোভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবহার করতে পারেন এবং সিঁড়িতে ওঠার সময় কল্পনা শক্তির ওপর নির্ভর করতে না হয় সেজন্য রোবট কুকুরটির সাথে যে হ্যান্ডেল বা হাতল রয়েছে উঁচু-নিচু স্থানে চলার সময় সেটি কম-বেশি এবং অ্যাঙ্গেল বা কোণ নির্দেশ করে। কুকুরটির একটি বিশেষ ধরনের সেন্সর রয়েছে, যার মাধ্যমে এটির গতিবিধি পরিচালনা করা যায়। সেই সেন্সর সামনের দিকে ঠেলে দিলে কুকুরটি সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আর মোচর দিলে সে ঘুরে যাবে। তাই এটি পরিচালনা করা মোটেই শ্রমসাধ্য কোনো ব্যাপার নয়। যেকেউ সহজেই ব্যবহার করতে পারবে রোবোডগকে।
রোবট কুকুরটি নারী কণ্ঠে কথা বলতে পারে। সে তার আশপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি ক্রমাগতভাবে ব্যবহারকারীকে অবহিত করতে থাকে এবং প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে চলার পথ বাতলে দেয়। কেবল সেন্সরে চাপ দিয়েই নয়, রোবোডগটি ভয়েস কমান্ডেও কাজ করতে সক্ষম। গবেষকরা এ যন্ত্রে কোনো ত্রুটি রাখতে চাইছেন না। কেননা ত্রুটি থাকলে তা ব্যবহারকারীদের জন্য সহায়ক তো নয়ই, বরং বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
সাগাইয়ামা বলেন, আমরা এখন যেটা ভাবতে চাইছি সেটা হলো কিভাবে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, পড়ে গেলে কিভাবে উঠা যাবে এবং রোবটটি চলার সময় কিভাবে ব্যবহারকারীর আঙ্গুল রোবটের হ্যান্ডেলে আটকে থাকবে তা নিয়ে। আর এটি করা গেলেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা যাবে এই রোবোডগ।
নতুন প্রজন্মের টেপ :
জার্মানির কাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলোজিক্যাল ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী উদ্ভাবন করেছেন নতুন প্রজন্মের আঠা বা গ্লুর টেপ। ছাদের তথা সিলিংয়ের ওপর দিয়ে অনায়াসে হেঁটে চলা কীটপতঙ্গ এবং টিকটিকি দেখে তারা এ বিষয়ে গবেষণায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় উদ্ভাবন হয় শুকনো আঠার টেপ বা সিলিকন টেপ। নতুন এই টেপে রয়েছে উচ্চমাত্রার বন্ডিং স্ট্রেন্থ। এটি বহু সংখ্যকবার কোনো কিছুর সাথে আটকানো বা ছোটানো যায়, অথচ এর গ্লু বা আঠালো ক্ষমতা নষ্ট হয় না।
স্ট্যানিসলাভ গ্রোবের নেতৃত্বাধীন বিজ্ঞানী দল জানায়, বহু ধরনের কীটপতঙ্গ এবং টিকটিকির দেহে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চুল। এই চুল পরিচিত সেটে নামে। এই চুলের মধ্যেই রয়েছে তাদের সিলিং বেয়ে চলার সামর্থ্যের গোপন রহস্য। সিলিংয়ে উল্টোভাবে চললেও ওই চুলের রহস্যের কারণেই তারা ফ্লোরে পড়ে যায় না। নতুন প্রজন্মের টেপ উদ্ভাবনের সময় সে বিষয়টি মাথায় রাখা হয়েছে। তাই পতঙ্গের দেহে পাওয়া চুলের মতোই ক্ষুদ্র চুল ব্যবহার করে উদ্ভাবন করা হয়েছে সিলিকন টেপ। একই ধরনের কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ফ্ল্যাট টেপের তুলনায় দ্বিগুণ শক্তি ব্যবহার করে নতুন টেপ কোনো স্থান থেকে টেনে তুলতে হয়। এটি খুবই শক্তিশালী। পানির নিচেও এই টেপের কার্যক্ষমতা থাকে অটুট। উদ্ভাবকদের দাবি-তাদের টেপ হাজার হাজার বার পুনর্ব্যবহার করলেও টেপের আঠা অক্ষুণ্ণ থাকে। কাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দলের এই উদ্ভাবনা গত নভেম্বরে নাশভিলে অনুষ্ঠিত এভিএস সিম্পোজিয়ামে উন্মোচন করা হয়।
ভেন্ডিং মেশিন :
গত কয়েক বছরে ভেন্ডিং মেশিনের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এখন শুধু ওই মেশিনে কোমল পানীয় বা খাবারই নয়, পাওয়া যাচ্ছে সিনেমার টিকেট থেকে শুরু করে মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কারও। তেমনি এক সর্বাধুনিক ভেন্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করেছে জাপানের প্রতিষ্ঠান সানডেন। এতে রয়েছে ওকায়া ইলেকট্রনিক এবং ইন্টেলের নানা যন্ত্রপাতি। মেশিনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬৫ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে। এই ডিসপ্লে দিয়ে ব্যবহারকারী পণ্যের ছবি, নানা তথ্য এবং অন্যান্য উপাত্ত দেখতে পারবেন। নিতে পারবেন পণ্যটি কিনবেন কি না সে সিদ্ধান্ত। মেশিনটি যখন ব্যবহার হবে না তখন এটি নিজেকে আকর্ষণের জন্য তার হাই ডেফিনিশন স্ক্রিনে দেখাবে বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশন। সেই অ্যানিমেশন দেখে কেউ এগিয়ে এলে ডিসপ্লেতে উদ্ভাসিত হবে তার পণ্য এবং বিজ্ঞাপন। যাতে এগিয়ে আসা ব্যক্তি সেই পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ হয়। ভেন্ডিং মেশিনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ফেশিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি এবং ইন্টেলের অডিয়েন্স ইম্প্রেশন মেট্রিক্স তথা এআইএম সিস্টেম। তাই এই মেশিন তার সামনে থাকা বা তার দিকে এগিয়ে আসা ব্যক্তি বয়স্ক নাকি তরুণ, নারী নাকি পুরুষ তা নির্ণয় করতে পারে। ফেশিয়াল রিকগনিশন বিষয়টি সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলেও একটি বৃহৎ স্বচ্ছ ডিসপ্লের ভেন্ডিং মেশিনে তার ব্যবহার নিঃসন্দেহে নতুন। বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ভেন্ডিং মেশিন বাজারে পাওয়া গেলে সাড়া পড়ে যাবে। অনুন্নত বিশ্বেও এর ব্যবহার হয়তো বেড়ে যাবে। কারণ এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় কম হবে। দোকান ভাড়া কিংবা কর্মী রাখার ব্যয় সাশ্রয় হবে অবশ্যই।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com