অ্যালফামেটিক : প্রথম কিস্তি
অ্যালফামেটিকস। গণিত আর শব্দের এক মজার খেলা। ছোট-বড় সবার কাছে সমান প্রিয় এ খেলা। অ্যালফামেটিক এক ধরনের গাণিতিক ধাঁধা। এতে পর পর কয়েকটি শব্দ লেখা হয়। এরপর এসব শব্দের যোগফলও লেখা হয় একটা অর্থবোধক শব্দ দিয়ে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শব্দে যে অক্ষর ব্যবহার হয়, এগুলোর সুনির্দিষ্ট সংখ্যামান থাকে। এই সংখ্যামান মাথায় রেখে যোগ করলে যোগফলটি সঠিক হতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কোন অক্ষরের সংখ্যামান কত, তা নির্ধারণ করাই অ্যালফামেটিকের ধাঁধা। বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য এখানে তুলে ধরছি প্রথম আধুনিক অ্যালফামেটিকের উদাহরণটি। এই উদাহরণটি বিশ্ববিখ্যাত জাদুকর ও ধাঁধাকার এইচ. ই. ডুডিনির সৃষ্টি। তিনি এটি ১৯২৪ সালে প্রকাশ করেন ‘স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন’-এ। এতে তিনি দেখান SEND আর MORE শব্দ দুটি যোগ করলে যোগফল দাঁড়ায় MONEY :
SEND
MORE
MONEY
এই অ্যালফামেটিক ধাঁধার একমাত্র সমাধান হচ্ছে :
৯৫৬৭
১০৮৫
১০৬৫২
এখানে স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে শব্দ তিনটির ব্যবহার করা অ্যালফাবেট বা অক্ষরগুলোর সংখ্যামান হচ্ছে,
S = 9, E = 5, N = 6, D = 7, M = 1, 0 = 0, R = 9, Y = 2 ।
প্রতিটি অ্যালফামেটিকে দুটি সহজবোধ্য নিয়ম মেনে চলতে হয় : ০১ অ্যালফামেটিকে ব্যবহার করা প্রতিটি শব্দের প্রতিটি অক্ষরের সংখ্যামান একই হতে হবে। ০২. কোনো শব্দের প্রথমে যে অক্ষরটি বসে, এর মান ০ কখনই হতে পারবে না।
কেনো এই খেলা এত মজাদার। হতে পারে এর ইকোনমির জন্য। কারণ, এ ধাঁধায় ব্যবহার হয় মাত্র সামান্য কটি শব্দ। আর ধাঁধাটির সমাধান করে আধঘণ্টার মধ্যে তা লিখে ফেলা সম্ভব। আর অ্যালফামেটিক সমাধানের প্রক্রিয়াটিও খুব আকর্ষণীয়। ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতি ব্যবহার করে যুক্তির মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে সমাধানের মাঝে রয়েছে অন্য ধরনের বিজয় উপলব্ধি। উপরে উল্লিখিত SEND + MORE = MONEY অ্যালফামেটিকটি এক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সামান্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে এর সমাধান বের করা সম্ভব।
এর প্রতি আকর্ষণের আরেকটি সহজবোধ্য কারণ হচ্ছে, অ্যালফামেটিকগুলো গঠন করা খুবই কঠিন। আর কঠিন কাজ সমাধা করার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দাভূতি আছে বৈকি। প্রথমত, একটি অ্যালফামেটিকে ব্যবহার করা প্রতিটি অক্ষরের সংখ্যামান একটি ও সুনির্দিষ্ট, দশমিকভিত্তিক সংখ্যা ব্যবস্থায় আমাদের রয়েছে মাত্র দশটি অঙ্কমান ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯। অতএব একটি অ্যালফামেটিকে দশটির বেশি আলাদা আলাদা অক্ষর ব্যবহার করা যাবে না। এতে সর্বোচ্চ দশটি অক্ষর ব্যবহার করা যাবে। তবে এর চেয়ে কমসংখ্যক অক্ষরও ব্যবহার করা যাবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে এর মাধ্যমে কোনো বাক্যাংশ কিংবা পুরো বাক্য লেখা কঠিন। তাছাড়া এর আরেকটি বিশেষ দিক হলো, সত্যিকারের একটি উৎকৃষ্ট অ্যালফামেটিকে এর সমাধান হয় অনন্য। অর্থাৎ এর সমাধান মাত্র একটি। যদিও এই অনন্য বৈশিষ্ট্য অ্যালফামেটিক গঠনকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় না। তবে এরা কিছু ‘সাইড কন্ডিশন’ বা ‘অতিরিক্ত শর্ত’ জুড়ে দেয়। যেমন- যোগফলটি হতে হবে একটি মৌলিক সংখ্যা, কিংবা হতে হবে জোড়সংখ্যা, কিংবা হবে বিজোড় সংখ্যা। তবে এমনি শর্ত না দেয়াই উত্তম। বরং একটি অনন্য সমাধান পাওয়াই শ্রেয়।
অ্যালফামেটিক গঠনের সমস্যাকে অপরিহার্যভাবে ভাবা যায় অতি জটিল ধরনের কনস্ট্রেইন রাইটিং। এর লক্ষ্য একটি বাগধারা বা বাক্য লেখা, যা হবে সুপাঠ্য এবং যখন একে অ্যালফামেটিক ধরে নেয়া হবে, তখন এটি হবে সমাধানযোগ্য। অগ্রাধিকারভাবে এর থাকবে একটি অনন্য সমাধান। এ কাজটিকে কেউ কেউ বর্ণনা করেছে একটি ‘মেটা প্রবলেম’ নামে।
কয়েকটি সুপরিচিত অ্যালফামেটিক এখানে উল্লেখ করছি :
FIFTY + STATES = AMERICA
TERRIBLE + NUMBER = THIRTEEN
EARTH + AIR + FIRE + WATER = NATURE
SATURN + URANUS + NEPTUNE + PLUTO = PLANETS
GEORGIA + OREGON + VERMONT = VIRGINIA
SEVEN + SEVEN + SIX = TWENTY
SIX + SIX + SIX + BEAST = SATAN
উপরের অ্যালফামেটিকগুলোর যোগ চিহ্ন ও সমান চিহ্ন তুলে দিয়ে পাশাপাশি উচ্চারণ করলে মোটামুটি একেকটি অর্থবোধক বাক্যাংশ পাই। বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে এসব মজার অ্যালফামেটিক গঠন করেছেন। এভাবে অনেক অ্যালফামেটিক আসলে একেকটি বাক্যের জন্ম দেয়। যেমন-
Winter breeze bred bitter freeze
Winter is windier, summer is sunnier
No snow in view on roofs in Venice
Martin Gardner retires
Nathan ate green peppers
Amelia peeled a banana
Who is this Ediot?
Roman also more or less added letters
Gee, I see a rare magic square
Scientific American master creates frenetic interest in IMF metric (tens) state; fantastica।
সর্বশেষ বাক্যটি অনেক দীর্ঘ হলে এতে রয়েছে মাত্র ১০টি অক্ষরের ব্যবহার, যেগুলোর প্রত্যেকটির একেকটি অনন্য সংখ্যামান রয়েছে।
অ্যালফামেটিক ধাঁধার জগতে doubly-true অ্যালফামেটিক হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধরনের অ্যালফামেটিক। এটি প্রথম দেখা যায় ১৯৬৯ সালের দিকে। এ পর্যন্ত এ ধরনের অ্যালফামেটিকের উদ্ভাবক স্টিভেন কাহাল শতাধিক ডাবলি-ট্রু অ্যালফামেটিক প্রকাশ করেছেন। তিনি এই ডাবলি-ট্রু অ্যালফামেটিককে এক ধরনের শিল্পের পর্যায়ে এনে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। একটি ডাবলি-ট্রু অ্যালফামেটিক হচ্ছে সেগুলো, যেগুলোর নিচের উল্লেখযোগ্য নিয়ম মেনে চলেবে; এতে ব্যবহৃত শব্দগুলো হবে সংখ্যাশব্দ। এবং এগুলো যোগ করা হবে, তখন যোগফলটিও হবে সত্যিকারের যোগফল। একটি সরল উদাহরণ দেয়া যাক :
THREE
THREE
TWO
TWO
ONE
ELEVEN
আসলে এটি হচ্ছে সবচেয়ে ছোট আকারের ডাবলি-ট্রু ইংরেজি অ্যালফামেটিক। এর রয়েছে একটি অনন্য সমাধান। সবচেয়ে ছোট আকার বলতে বুঝানো হয়েছে এর যোগফল সবচেয়ে ছোট, মাত্র ১১। ১৯৯৮ সালে জনৈক মাইক কিথ ১, ৬৪২, ৯৯২, ৪৬৭টি ডাবলি-ট্রু অ্যালফামেটিকের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছেন, যাদের যোগফল TWO থেকে ONE HUNDRED এবং তিনি দেখেছেন ঠিক ৪৭৭৬৬টির রয়েছে অনন্য সমাধান। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো :
SEVEN + SEVEN + SIX = TWENTY
EIGHT + EIGHT + TWO + ONE + ONE = TWENTY
ELEVENT + NINE + FIVE + FIVE = THIRTY
NINE + SEVEN + SEVEN + SEVEN = THIRTY
TEN + SEVEN + SEVEN + SEVEN + FOUR + FOUR + ONE = FORTY
FOURTEEN + TEN + TEN + SEVEN = FOURTY ONE
NINETEEN + THIRTEEN + THREE + TWO + TWO + ONE + ONE = FORTYTWO
আরো কয়েকটি দীর্ঘ উদাহরণ উপস্থাপন করা হচ্ছে এখানে। সবশেষটি সবচেয়ে লম্বা যোগফলের মান বিবেচনায়। সেই সাথে যে কয়টি সংখ্যাকে যোগ করা হয়েছে তার সংখ্যা বিবেচনায় মোট ৮৮৮টি সংখ্যা যোগ করে যোগফল পাওয়া গেছে ১০০০।
FOUR + THREE + THREE + THREE + ONE + ONE (24 times) = FORTY
FOURTEEN + THREE + TWO + ONE (22 times) = FORTY ONE
কজ ওয়েব