আমরাও এগিয়ে যেতে চাই
ছোটবেলায় অনেক উদ্ভট ও আজগুবি গল্প শুনেছি, যা তখন বিশ্বাসও করতাম৷ এমনই এক গল্প ছিল- ভূতের পা উল্টোদিকে৷ অর্থাৎ মুখ সামনের দিকে থাকলেও পায়ের পাতা পেছন দিকে এবং পায়ের পাতা দেখেই চেনা যেত কোনটি ভূত আর কোনটি মানুষ৷ যেহেতু পায়ের পাতা পেছন দিকে, তাই ভূত সামনের দিকে মুখ করে হাঁটলে পেছন দিকে যায় এবং পেছনে মুখ করে হাঁটলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়৷ ছোটবেলার এ গল্প মনে পড়ার কারণ হলো কমপিউটার জগৎ-এ আগস্ট ২০০৮ সংখ্যায় গোলাপ মুনীরের গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট এবং নাজুক বাংলাদেশ শিরোনারে লেখা৷
নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স বা নেটওয়ার্কিং সংক্রান্ত প্রস্তুতি সূচকে ১২৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম স্থানে৷ আমাদের নিচে অবস্থান করছে মাত্র তিনটি দেশ৷ অথচ গত বছরে আমাদের অবস্থান ছিল ১১৮তম স্থানে৷ এ রিপোর্টের বিবেচনায় আমাদের নেটওয়ার্ক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অবস্থানের অবনমন ঘটেছে৷ এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে হয়তো আমাদের অবস্থানের আরো অবনমন ঘটবে এবং উল্টোদিকের শীর্ষস্থানটি আমাদের দখলে চলে আসবে৷ এটি মোটেও আমাদের কাম্য নয়৷ যেখানে সারাবিশ্ব আইসিটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাতারাতি এগিয়ে যাচ্ছে৷ আর সেখানে আমরা দিনে দিনে পিছিয়ে যাচ্ছি৷ আমরা যতই এগুতে চাচ্ছি ততই যেন পিছিয়ে যাচ্ছি৷ ব্যাপারটি সেই ভূতড়ে কাণ্ডের মতো৷ তাদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে সেইসব সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ৷ দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের সরকার আইসিটির ব্যাপারে যেমন নির্বিকার, তেমনি নির্বিকার আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো৷ বিশেষ করে আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের জন্যই আমাদের এই অবনমন, যা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না৷ আমরা ভূত নই৷ আমাদের পা সামনের দিকে৷ আমরা সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে চাই৷ আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ৷ বিশেষ করে আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর কার্যকর ভূমিকা, যা অবশ্যই অতীতের মতো নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় রূপ নেবে না৷
আবু হানিফ
কালিহাতি, টাঙ্গাইল
..............................................................................
যার যা কৃতিত্ব তাকেই দেয়া হোক
আমি কমপিউটার জগৎ-এর সূচনালগ্ন থেকে এর পাঠক৷ শুধু তাই নয়, বরং বলতে পারেন একজন ভক্ত ও প্রেমী৷ তাই এই পত্রিকার প্রায় সব বিভাগই আমি নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করি৷ আমি বর্তমানে একজন আইটি পেশাজীবীও বটে৷ আর সেই সুবাদে আইসিটিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সভা-সেমিনারে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্যও আমার হয়৷
আমার স্মৃতি-মণিকোঠায় এখনো ভেসে ওঠে কমপিউটার জগৎ আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার কথা৷ মনে পরে ডাটা এন্ট্রি, সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি ও ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগের দাবিতে প্রেস কনফারেন্সের কথা৷ মনে পড়ে ইন্টারনেটের দাবিতে কমপিউটার জগৎ আয়োজিত বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সপ্তাহ পালনের কথা৷ মনে পড়ে দেশের হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার দাবিতে কমপিউটার জগৎ-এর সোচ্চার ভূমিকার কথা৷ মনে পড়ে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবিতে কমপিউটার জগৎ-এ প্রকাশিত প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের কথা৷ এ ধরনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেগুলো কমপিউটার জগৎ সর্বপ্রথম জাতির সামনে তুলে ধরে৷ এসব বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্ট মহল যদি সচেতন ও দায়িত্বশীল হতো, তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চেহারাটা পাল্টে যেত৷ দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবিতে ৪-৫ বছর আগে কমপিউটার জগৎ যখন প্রথম প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তখন অনেককেই এ নিয়ে ব্যঙ্গ করতে দেখেছি৷ অথচ এখন তাদের মুখে শুনি উল্টো কথা৷ বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন বলেন, আমরাই এসব বিষয়ের ওপর সর্বপ্রথম দাবি জানিয়ে আসছি৷ যেমন নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবির কথা বলা যাক৷ আমার যতটুকু মনে পড়ে, কমপিউটার জগৎ ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন আমাদের দেশে নিজস্ব স্যাটেলাইটের দাবি তুলেছে বা এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কোনো কথা বলেছে বলে মনে পড়ে না৷ এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার শুধু সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদদের মুখে মানায়, কোনো সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে শোভা পায় না৷
আমি বলতে চাই, যার যা কৃতিত্ব তাকে তা দেয়া উচিত৷ মিথ্যাচার দিয়ে কখনো কৃতিত্ব জাহির করা উচিত নয়৷ এতে করে অন্যের কাছে নিজেকে মিথ্যুক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ অন্যের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিতে না জানলে, নিজের কৃতিত্বের স্বীকৃতিও পাওয়া যাবে না অন্যের কাছ থেকে৷ এটি বাস্তব সত্য৷
মো: আফসার উদ্দিন
সুবল দাস রোড, ঢাকা
..................................................................................
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন সময়োপযোগী হয়েছে
কমপিউটার জগৎ আগস্ট সংখ্যার পরিবেশবান্ধব কমপিউটিং প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী৷ পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনাসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, শোভাযাত্রা হয়ে থাকে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য৷ যেমন গাছপালা নিধন, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা যানবাহনের নির্গত কালো ধোঁয়া, বর্জ্য, ভূগর্ভে বা গভীর সমুদ্রে পারমাণবিক বা রাসায়নিক বোমার বিস্ফোরণ ইত্যাদি কারণে যে পরিবেশ দূষিত হয় তা সাধারণ মানুষ জেনে আসছে৷ কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিও যে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে তা সাধারণ মানুষ খুব কমই জানতে পারে৷ শহুরে মানুষ এ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কিছুটা জানতে পারলেও গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে তা একেবারেই অজানা৷ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটিতে পরিবেশ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ এতে করে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন হয়, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করা অনেকাংশে সহজ হবে৷ প্রতিবেদনটিতে আমাদের দেশ সম্পর্কেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়া হয়েছে৷ যেমন জলবায়ুর পরিবর্তনে আমাদের ভূ-ভাগ ডুবে যাওয়া, ২০৫০ সালের মধ্যে ১৭-৩০ শতাংশ ফসলি জমি নষ্ট হওয়া, সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি৷ অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে বলতে হয়, গোটা বাংলাদেশই ডুবে যাবে৷ সুতরাং পরিবেশ সম্বন্ধে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে নতুবা এর ভয়াবহ আগ্রাসী বিপর্যয় থেকে আমরা রক্ষা পাবো না৷ পরিশেষে এমন একটি সময়োপযোগী প্রতিবেদন জনসাধারণের তথা দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য লেখকদ্বয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷
সরকার মো: মনিরুজ্জামান
ডেমরা, ঢাকা