লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - ফেব্রুয়ারী
৩য় মত
হাইটেক পার্ক কবে চালু হবে?
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গনে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলো মধ্যে সম্ভবত অন্যতম একটি হলো কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের প্রথম ফাইবার অপটিক সংযোগ স্থাপন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা হলেও তা বাসত্মবায়িত হয়েছে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে তেমন ঢাকঢোল পেটাতে দেখা যায়নি সরকারি মহলকে। হাইটেক পার্ক নিয়ে গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তিসংশিস্নষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পেশাজীবীসহ সবাইকে স্বপ্ন দেখিয়ে আসছে। অনেকটা গাদার সামনে মুলা ঝুলানোর মতো করে।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নানা ধরনের অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানো ও এ খাতের সমৃদ্ধিতে এ হাইটেক পার্কের বিকল্প নেই। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এ হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বেশ জোরে শোনা গেলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ এরচেয়ে অনেক কম সময়ের মধ্যে ভিয়েতনাম, ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশই নিজ নিজ দেশে সফলভাবে অনেক হাইটেক পার্ক গড়ে তুলে নিজ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর সেখানে আমাদের দেশের হাইটেক পার্কের প্রতিষ্ঠার কাজ করে নাগাদ শেষ তা কেউ বলতে পারে না। অথচ সরকারের উচ্চ মহলের অনেক কর্মকর্তা জেনে না জেনে নির্লজ্জের মতো হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলে থাকেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা যত্রতত্র দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরসহ জেলা শহরে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আসছে, যা প্রকারামত্মরে দেশের সাধারণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা করার মতো বলা যায়। এমনকি হাইটেক পার্ক গড়ার উদ্দেশ্যে জেলা শহরগুলোতে জায়গা খোঁজার জন্য নির্দেশও দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়। কেননা একটি হাইটেক পার্ক গড়তে যে সময় ও জটিলতা অতিক্রম করতে হচ্ছে অন্যগুলোর জন্য কেমন সময় ও জটিলতা পার করতে হবে তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। তবে এ কথা সত্য, বর্তমান ক্ষমতাসিন সরকার তার গতবারের শাসনামলে যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা ব্যক্ত করেছিল তখন সবাই মনে মনে ভেবেছিল কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক সত্যি সত্যিই বাসত্মবায়িত হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জনগণের সে আশা ছিল শুধুই মিথ্যা আশ্বাস।
বর্তমান সরকার তার আগের শাসনামলে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক চালু করার প্রতিশ্রুতি গত পাঁচ বছরের অনেকবারই দিয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিদায়ী বছরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক প্রকল্পে কোনো কাজই হয়নি। স্বজনপ্রীতি ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার দ্বন্দ্বে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে হাইটেক পার্ক তৈরির সফলতা দেখাতে গিয়ে সরকার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আইসিটি ইনকিউবেটরকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-১ ঘোষণা করেছে। কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক-২ (এসটিপি-২) ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যত ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বর্তমান সরকার এ দেশের প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে প্রযুক্তিবান্ধব সরকার হিসেবে খ্যাত হয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার মাধ্যমে। দেশের সর্বসাধারণ বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম নতুন করে আশার আলো দেখতে পারছিল। কিন্তু সরকারের ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো বিশেষ করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক গত পাঁচ বছরে সম্পন্ন না হওয়ায় সবাই হতাশা। একথা সত্য, সরকার দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক সময় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে অনেক প্রতিশ্রুতই দেয়, যা বাসত্মবায়নের লক্ষে কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করে না, কিন্তু কোনো প্রতিস্রুতি অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে যদি মাঝপথে থেমে যায় কিছু স্বার্থান্বেষী মহলকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য তা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।
সুতরাং হাইটেক পার্ক নিয়ে আর কোনো বাড়তি কথা আমরা শুনতে চাই না। চাই না হাইটেক পার্ক নিয়ে আর কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। দেশের ভেতরে আরও হাইটেক পার্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি যদি দিতে হয় তাহলে আগে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কের কাজ সম্পন্ন করে চালু করার পর। অনর্থক মিথ্যা প্রতিস্রুতি আমরা আর শুনতে চাই না অন্তত হাইটেক পার্ক নিয়ে। আবারও বলছি, আগে কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক চালু হোক, তারপর অন্যান্য হাইটেক পার্ক চালু করার কথা উচ্চারিত হোক এ সংশ্লিষ্ট সবার মুখে।
রইসুল ইসলাম
খাকডহর, ময়মনসিংহ