বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তৈরি প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষকতা চাই
তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর আগস্ট ২০১১ সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাময় দেশী প্রকল্প’ সময়োপযোগী তাগিদধর্মী এক প্রচ্ছদ প্রতিবেদন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি বিভিন্ন প্রকল্প আমাদের জন্য উৎস্য ও প্রেরণাদায়ক। কিন্তু আমাদের দেশে মেধাবী এসব তরুণ ছাত্রদের তৈরি প্রকল্পগুলো দেশের জন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ হলেও উৎসাহ ও প্রেরণাদায়কের পরিবর্তে হয়েছে দুঃখ ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ শুধু যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কারণে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের শেষ পর্যায়ে ছাত্রদেরকে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় আইসিটিবিষয়ক নানা ধরনের প্রকল্প করতে দেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে এমন কিছু প্রকল্প বেরিয়ে আসে যেগুলো মানদন্ডের বিবেচনায় সফল বলে চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এসব প্রকল্পের বাণিজ্যিকায়নের তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকায় তা সফলতার মুখ দেখতে পায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা এসব প্রকল্প উন্নয়নে যেমন সচেষ্ট হন না, তেমনি অন্যরা পরবর্তী পর্যায়ে অন্য কোনো প্রকল্পে উৎসাহ বোধও করেন না। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের তৈরি বিভিন্ন প্রকল্প বাণিজ্যিকায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকরা প্রায় সময় এ ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকেন।
অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কোর্সে বিভিন্ন প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপুল অর্থ খরচ করে থাকে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সম্পূর্ণ কোর্সের জন্য অর্থাৎ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ছাত্রদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে, যারা পরবর্তী পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে সেসব প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত হন সুনির্দিষ্ট কয়েক বছরের জন্য। অবশ্য এক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থী অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবে না এমন শর্ত আরোপিত থাকে, যা মানতে সেসব শিক্ষার্থীরা বাধ্য। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে তাদের বেতনও অনেক কম হয়ে থাকে, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওইসব ছাত্র মূলত ওইসব প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের তৈরি প্রকল্পগুলোর বাণিজ্যিকায়নের দায়িত্ব নিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশ। ফলে সেসব দেশে প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রকল্পের ভিত্তিতে তৈরি হয় নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য।
কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কোর্সের জন্য স্পন্সরশিপের রেওয়াজ যেমন চালু হয়নি, তেমনি চালু হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রদের তৈরি প্রকল্পগুলোর বাণিজ্যিকায়নের কোনো কালচার বা রেওয়াজ, যা পরবর্তী পর্যায়ে আরো নতুন নতুন প্রকল্প সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। অবশ্য এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে যাদের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পগুলো তৈরি হয় তাদের এক বিরাট ভূমিকা থাকার কথা, যা আমাদের দেশে খুব একটা দেখা যায় না দুয়েকটা ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া।
আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্রীড়া, সংগীত ইত্যাদিতে ব্যাপকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে, যেখানে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা থাকে ব্যাপকভাবে। এর ফলে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়, সংগীত শিল্পী বের হয়ে এসেছেন। এরা এখন নিজেদেরকে আরো প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হতে পারছেন। এ ধারা যদি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রদের ওপর প্রয়োগ করা হতো তাহলে এদের আইসিটি খাতসহ অন্যান্য বিষয়ের বর্তমান দৈন্য কিছুটা দূর হতো।
সুতরাং আমরা চাই আগামীতে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক না হলেও অন্তত যেনো স্নাতকোত্তর শেষ পর্যায়ে কোর্সের বিভিন্ন প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে উন্নত বিশ্বের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। এতে ছাত্র, শিক্ষক, জাতি ও বিনিয়োগকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সবারই লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না।
পারুল
গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ
............................................................................................................................................................................
ফ্রিল্যান্সারদের আয়ের ওপর করারোপ ও প্রত্যাহার প্রসঙ্গে
বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টর খুব ছোট এবং অবহেলিত এক সেক্টর হলেও সম্প্রতি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে শুরু করেছে। সম্প্রতি আইসিটি খাতে ফ্রিল্যান্সাররাও দেশের অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখতে শুরু করেছেন, যা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, যেখানে সরকারি বা বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কোনো অবদান বা সহযোগিতার ছোঁয়া নেই। অর্থাৎ আমাদের দেশে যারা ফ্রিল্যান্সিং করছেন, তারা এ কাজটি করছেন সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে, যাদের সংখ্যা এদেশে প্রতিবছরই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্রিল্যান্সারদের যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় সরকারি পর্যায়ে। তবে আমাদের দেশে নয়।
আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সারদের অঙ্কুরেই নষ্ট করার পাঁয়তারা বেশ চলছে বলে মনে হয়। এমনটি মনে হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণও আছে যা সবাই জানেন, বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সাররা। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তেমন কোনো স্বচ্ছ ধারণাও রাখেন না সরকারি নীতিনির্ধারণী মহলের কেউ। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, চলতি অর্থবছরের শুরুতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের কষ্টার্জিত আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর সংযোজন করে। ফলে জুলাইয়ের শুরুতে ব্যাংকওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে যারা বিদেশ থেকে টাকা পেয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে শতকরা ১০ ভাগ অর্থ সাথে সাথে কেটে নেয়া হয়, যা দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ব্লগে ও ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জুলাই অর্থমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর সাথে এক উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়। পরিশেষে এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে তা প্রত্যাহার করতে গেজেট প্রকাশ করা হয়। ফ্রিল্যান্সারদের ওপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে যেসব তরুণ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন তারা দেশে অনেক মাধ্যম ঘুরে, কমিশন দিয়ে তারপর টাকা হাতে পান। আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেসে ১০০ ডলারের কাজে পুরো টাকা ফ্রিল্যান্সারদের হাতে থাকে না, কেননা এক্ষেত্রে তাদেরকে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের ফি দিতে হয়। তারপর বিভিন্ন পরিশোধ পদ্ধতি ব্যবহার করে সে টাকা দেশে আনতে আরো কিছু টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে প্রতি ১০০ ডলারে ৮০-৮৫ ডলারের মতো টাকা হাতে পাওয়া যায়। যদি শতকরা ১০ ভাগ কর দিতে হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সারদের ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
সরকার ফ্রিল্যান্সারদের ওপর কর প্রত্যাহার করে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঠিকই। তবে কিছু বাড়তি প্রশংসা সরকার পেতে পারে তা হলো- ইন্টারনেটের খরচ কমানো এবং ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের প্রধান মাধ্যম পেপাল সার্ভিসকে আমাদের দেশে নিয়ে আসতে যথাযথ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো। অর্থাৎ আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে ফ্রিল্যান্সাররা যাতে কম ঝামেলায় দ্রুতগতিতে তাদের শ্রমলব্ধ অর্থ তুলতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো উন্নয়ন বা তৈরি করা। ফলে প্রতিনিয়ত যোগ হবে নিত্যনতুন ফ্রিল্যান্সার। এতে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে ফ্রিল্যান্সাররা যে প্রতিনিয়ত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছেন তা একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে, তেমনি দেশের বেকার সমস্যা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
কজ ওয়েব