লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
স্ক্রিনপুট : শরীর কাজ করবে টার্চস্ক্রিনের মতো
কমপিউটারে ইনপুট ডিভাইস হিসেবে কিবোর্ড ও মাউসের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আর যে ইনপুট প্রযুক্তি এই তালিকায় যুক্ত হয়ে আধুনিক বিজ্ঞান বিকাশে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে তা হলো টাচস্ক্রিন। এই প্রযুক্তি সায়েন্স ফিকেশন ও বাস্তব জীবন উভয় ক্ষেত্রেই খুব জনপ্রিয়। একে আগামী প্রজন্মের প্রযুক্তির বিবর্তনের প্রতীক বলা যায়। সম্প্রতি ইনপুট টেকনোলজির এই ধারাকে আরো আধুনিক ও ত্বরান্বিত করতে নতুন প্রযুক্তির নাম যোগ হয়েছে, যা স্কিনপুট নামে পরিচিত। এর সাহায্যে মানুষের শরীরকে টাচস্ক্রিনের মতো ব্যবহার করে ইনপুট দেয়া সম্ভব হবে। এমনকি যেকোনো স্ক্রিন বা পৃষ্ঠকেও টাচস্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এটি আমাদের জন্য ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সত্যিকারের একটি প্রতিচ্ছবি।
স্কিনপুটকে মূলত বলা যায় বহনযোগ্য পকেট প্রজেক্টসদৃশ একটি ডিভাইস। এতে ব্যবহার করা হয়েছে বায়ো-অ্যাকোস্টিক সেন্সিং প্রযুক্তি। এর অতি উন্নত ও ব্যতিক্রমী প্রযুক্তি শরীরের যেকোনো স্থানে আঙ্গুলের স্পর্শে সৃষ্ট অতি সামান্য কম্পাঙ্ক পর্যবেক্ষণে সক্ষম।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শে ভিন্ন ভিন্ন কম্পাঙ্ক সৃষ্টি হয়। আর এই ভিন্নতা বেশ কয়টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যেমন- হাড়ের আকার, পেশী এবং ওই কতটুকু জায়গায় কিভাবে স্পর্শ করা হয়েছে। আর এই কম্পাঙ্ক শনাক্ত করার জন্য স্কিনপুটের যে সেন্সর ডিভাইস বিশেষভাবে কাজ করে তার নাম আর্মব্যান্ড সহায়তা। উল্লেখ্য, একগুচ্ছ সেন্সর দিয়ে তৈরি আর্মব্যান্ড স্কিনপুটের সহায়তাকারী একটি যন্ত্র এবং এটি বাহুর কনুইয়ের ওপরের দিকের পেশীতে ব্যবহার করা হয়। এটি অনেকটা হাতঘড়ির মতো। তবে এই মুহূর্তে যে আর্মব্যান্ডটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখতে ততটা সুদৃশ্য নয়। তবে পরবর্তীতে এর আকৃতি হতে পারে একটি সুদৃশ্য ব্রেসলেট বা হাতঘড়ির মতো।
ক্রিস হ্যারিসন। কারনেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান-কমপিউটার ইন্টারেকশন বিভাগের স্নাতকের ছাত্র। অত্যাধুনিক স্কিনপুটপ্রযুক্তি উন্নয়নে তার মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ্য, তিনি মাইক্রোসফটের রিসার্চ বিভাগে ইন্টার্নি হিসেবে কাজ করেন। স্কিনপুটপ্রযুক্তি উন্নয়নের পুরো কাজ শেষ হয় মাইক্রোসফটের গবেষণাগারে। তবে পুরো কাজটি শেষ করতে তাকে সহযোগিতা করেন ডিজনি ট্যান ও ড্যান মরিস। এই দু’জনই মাইক্রোসফটের কমপিউটেশন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স তথা সিইউএ বিভাগের গবেষক। সুতরাং পুরো কাজটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট, কারনেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজনি ট্যান, ড্যান মরিস, ক্রিস হ্যারিসন সবার নিরলস প্রচেষ্টা কাজ করেছে।
ক্রিস হ্যারিসনের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ছিল অনেকটা এমন- মোবাইল ডিভাইস হতে পারে একটি ম্যাচ বক্সের মতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর থাকতে হবে একটি পরিপূর্ণ কিবোর্ড। এর সাহায্যে সহজেই ভিডিও দেখা যাবে, ইন্টারনেট ব্রাউজ করাও যাবে স্বাচ্ছন্দ্যে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব করতে কখনো স্পর্শ করা যাবে না মোবাইল সেটটি। এসব চিন্তাভাবনা থেকেই তিনি স্কিনপুটের মতো প্রযুক্তি উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি মনে করেন, আইপডকে মানুষ পছন্দ করেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর কি-প্যাড বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর অপছন্দ, কারণ এটি ছোট। যদি এমন হতো, এর কি-প্যাড একটি হাতের মতো বড়, তবে এর জনপ্রিয়তা সন্দেহাতীতভাবে আরো অনেকগুণ বেশি হতো।
স্কিনপুটে একটি অংশ রয়েছে, যার নাম পিকো-প্রজেক্টর। একে পকেট প্রজেক্টরও বলা যেতে পারে। এর সাহায্যে শরীরের যেকোনো অংশে খুব সুন্দর গ্রাফিক্যাল ডিসপ্লে দেখাতে সক্ষম। এখানে যেকোনো একটি বা দুটি আঙ্গুল একসাথে স্পর্শ করে মোবাইল ফোনকল রিসিভ করা ছাড়াও মিডিয়া প্লেয়ারের গান পরিবর্তন ও মেনুর উপাদান নির্বাচন করা, এসএমএস পাঠানো সম্ভব বড় আকৃতির ডিজিটাল কিবোর্ডের সাহায্যে। পছন্দমতো এসব জিনিস নিয়ন্ত্রণ করতে দরকার মোবাইলের সাথে একটি ব্লুটুথ সংযোগ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার স্মার্টফোনটিতে যে কি-প্যাড বা কিবোর্ড রয়েছে তার বোতামগুলোতে আঙ্গুল দিয়ে টাইপ করতে নিশ্চয়ই যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না, কারণ এটি খুবই ছোট। যদি এই কিবোর্ডটি যদি হাতের তালু, বাহু বা শরীরের অন্য কোনো স্থান জুড়ে হয়, তবে কোনো সমস্যা থাকবে না। স্কিনপুটের আর্মব্যান্ডটির সাথে স্মার্টফোনটি সংযুক্ত করলে পিকো-প্রজেক্ট ডিভাইসটি শরীরের যেকোনো অংশে বড় আকৃতির ডিসপ্লে দেখাতে সক্ষম হবে। এই ডিসপ্লেই কাজ করবে টাচস্ক্রিনের মতো। এর সাহায্যে নিশ্চয়ই খুব সহজে টাইপ করতে পারবেন। এমনকি এই বড় স্ক্রিনে সহজে ভিডিও দেখা সম্ভব হবে। এই ডিসপ্লেতে স্পর্শ করলেই আর্মব্যান্ডটিতে ব্যবহার করা একগুচ্ছ সেন্সর শনাক্ত করাসহ মোবাইলের সাথে সঠিকভাবে তথ্য দেয়া-নেয়া করতে সক্ষম হয়।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, স্কিনপুটপ্রযুক্তি শরীরে আঙ্গুলের স্পর্শকে শনাক্ত করে একে টাচস্ক্রিনের মতো ব্যবহার করতে পারে। ২০১০ সালের প্রথমদিকে এই স্কিনপুট প্রযুক্তির কথা ঘোষণা করে মাইক্রোসফট ও কারনেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়। অতি সম্প্রতি এই প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন এই প্রযুক্তি এখন যেকোনো পৃষ্ঠকেই টাচস্ক্রিনের মতো ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। ওমনি-টাচ নামের প্রযুক্তি এই ক্ষেত্রে হাতের স্পর্শ শনাক্ত করবে কিনেক্ট নামের এক ধরনের উন্নতমানের ক্যামেরার সাহায্যে।
তবে এ ধরনের একটি জটিল প্রযুক্তি সাধারণ ব্যবহারকারীদের উপযোগী করে তোলার জন্য দরকার নির্ভুল পরীক্ষালব্ধ ফলাফল। স্কিনপুটের উদ্ভাবকেরা এই দিকটিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা ১৩ জন ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত গবেষণায় ৯৫.৫ ভাগ নির্ভুল ফল পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তারা ৫টি বাটন প্রাথমিকভাবে ব্যবহার করেন। খুব তাড়াতাড়ি তারা পরিপূর্ণ কিবোর্ডের পরিচালিত গবেষণার ওপর ফল প্রকাশ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্কিনপুট হচ্ছে এমন একটি কাঠামো, ধারণা, পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ পণ্য যা টাচস্ক্রিনপ্রযুক্তিকে আরো সহজ ও সাবলীল করে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে নিয়ে আসবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : animesh@letbd.com