• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের খুঁটিনাটি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: রাফিদ ওয়াহিদ ইয়াদ
মোট লেখা:১
লেখকের নাম: নূরবাহার ঈয়াশা
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মোবাইল
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের খুঁটিনাটি


এক সময় মোবাইল ফোন ছিল শুধু যোগাযোগের মাধ্যম। এরপর সময়ের সাথে এটি হয়ে ওঠে আমাদের জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখন মোবাইল ফোন যেন আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। বিশ্বজুড়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাই বদলে দিয়েছে স্মার্টফোন! স্মার্টফোন এখন আর শুধু ফোন নয়, পারসোনাল ডিজিটাল অ্যাসিসট্যান্ট তথা পিডিএ। আর কী নেই এই স্মার্টফোনে : পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার, হাই রেজ্যুলেশন টাচস্ক্রিন ক্যামেরা ফোন, জিপিএস নেভিগেশন, এক্সেলারোমিটারের মতো সেন্সর, ওয়াই-ফাই আর মোবাইল ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেসসহ, সর্বপোরি আছে অ্যাপ্লিকেশন স্টোর ও মার্কেট থেকে শুরু করে ইচ্ছেমতো অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের সুযোগ। এটাই স্মার্টফোন ব্যবহারের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক।

স্মার্টফোনগুলোকে স্মার্ট বলার কারণ হলো আগের ফিচার ফোনগুলোর তুলনায় এর অগ্রসর পর্যায়ের কমপিউটিং ক্ষমতা এবং কানেক্টিভিটি। আরো রয়েছে এর ফাস্টার প্রসেসিং স্পিড আর বেশ বড় মাপের স্টোরেজ সুবিধা।

এ লেখায় স্মার্টফোনের নানা দিক তুলে ধরার প্রয়াস পাব, তবে শুধু ব্যবহারকারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং অনেকটাই ডেভেলপারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

স্মার্ট স্মার্টফোন

স্মার্টফোনে রয়েছে উন্নত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তথা ওএস। যত ধরনের মোবাইল ওএস এখন বাজারে রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অ্যাপল আইওএস, গুগল অ্যান্ড্রয়িড, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ফোন ৭, নোকিয়া সিম্বিয়ান, রিসার্চ ইন মোশন ব্ল্যাকবেরি ওএস এবং পাম ওয়েব ওএস।



এসব অপারেটিং সিস্টেম খুব সহজেই বিভিন্ন স্মার্টফোনে ইনস্টল করা যায়। আর এর মাধ্যমে একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহার করে বিভিন্ন থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন রান করা যায়। তবে বাজারে বিভিন্ন ওএস থাকলেও গ্রাহকদের পছন্দের মাত্রা সবগুলোর সমান নয়। সেক্ষেত্রে আইওএস আর গুগল অ্যান্ড্রয়িড সবচেয়ে এগিয়ে আছে। প্রায় ৭০ শতাংশ বাজার এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে আলোচনার সুবিধার জন্য বিষয়বস্ত্ত অ্যাপল আইওএস, গুগল অ্যান্ড্রয়িড, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ফোন ৭- এই প্রধান তিনটি অপারেটিং সিস্টেমকে কেন্দ্র করেই সঞ্চালিত হবে।

বাজারের ধারা

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে বাজার সময়ের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান এতে যোগ হচ্ছে। আর এই বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য সবাই সবার সেরা অ্যাপ্লিকেশনটি নিয়ে হাজির হচ্ছে। এতে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টি হচ্ছে। ‘রিসার্চ টু গাইডেন্স’-এর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী ২০১৫ সাল নাগাদ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উদ্ভাবন, সরবরাহ ও সম্প্রসারণ সেবার এই বাজার ১০ হাজার কোটি ডলারের ঘরে গিয়ে ঠেকবে! গ্রাহকদের আগ্রহের সাথে তাল মিলিয়ে চাহিদার জোগান দেয়াই তখন হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আগে যেমনটা বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এই বাজারের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে আইওএস আর অ্যান্ড্রয়িডের মাধ্যমে। এ বছরের ২৭ এপ্রিল সানফ্রান্সিসকোতে হয়ে যাওয়া ‘অ্যাপনেশন’ সম্মেলনে ‘নিলসেন’ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জোনাথান কারসন বর্তমান সময়ে ইউএসএ মোবাইল গ্রাহকদের মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, মোবাইল অ্যাপের বাজার ইকোসিস্টেমের পুরোটাই প্রায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অ্যাপল আইওএস আর গুগলের অ্যান্ড্রয়িডের মাধ্যমে। আরো যেসব তথ্য উঠে আসে, তার মধ্যে আছে : ০১. মোটামুটি ৩৬ শতাংশ ইউএস মোবাইল গ্রাহক বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহার করেন, ০২. অ্যাপল আইওএস (আইফোন) এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীরাই বেশি এবং টোটাল ডাউনলোডারদের ৭৪ শতাংশ এর প্রতিনিধিত্ব করে, ০৩. অ্যাপল আইওএস (আইফোন) এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীদের মোবাইলে অন্যান্য ব্যবাহারকারীর তুলনায় বেশি সংখ্যক অ্যাপ থাকে, অ্যাপল আইওএস ব্যবহারকারীদের গড়ে ৪৫টি, অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীদের গড়ে ৩৫টি এবং ব্ল্যাকবেরি রিম ব্যবহারকারীদের জন্য এই সংখ্যাটি গড়ে ১৫টি, ০৪. আইফোন ও অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীরা তুলনামূলক বেশি সময় তাদের অ্যাপ ব্যবহার করেন; ৬৮ শতাংশ আইফোন ও ৬০ শতাংশ অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারী দিনে একাধিক সময় মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন, যেখানে ব্ল্যাকবেরি রিম ব্যবহারকারীদের জন্য এই সংখ্যাটি ৪৫ শতাংশ।

পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বাজারে এখনো খানিকটা এগিয়ে আছে অ্যাপল। বাজারে অন্য যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা অনেক বেশি। অ্যাপলের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রয়িডের অ্যাপস্টোরে অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যা মাত্র ২০০,০০০; যেখানে অ্যাপলের রয়েছে ৪২৫,০০০! তাছাড়া গত বছরের তুলনায় অ্যাপলের গড় অ্যাপ রেট ১৪ শতাংশ বেড়ে ১.৪৪-এ উঠলেও Gene Munste-র বিশ্লেষক Piper Jaffray-র মতে, অ্যাপ বিক্রির হার বেড়েছে ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছর একজন ব্যবহারকারী যেখানে ৬৩টি অ্যাপ ডাউনলোড করেছিলেন, এ বছর তিনি করছেন ৮৩টি।

তবে শ্রেষ্টত্বের প্রতিযোগিতায় অ্যান্ড্রয়িডও কিন্তু পিছিয়ে নেই। গত সেপ্টেম্বরে এক রিপোর্টে ‘রিসার্চ টু গাইডেন্স’ আগস্ট মাসের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলে : আগস্টের শেষের দিকে অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশনগুলো গড়ে ২৫০০ ডলার আয় করে তাদের পাবলিশিংয়ের পর থেকে; আবহাওয়া সম্পর্কিত অ্যাপগুলোই ডাউনলোড থেকে সবচেয়ে বেশি বাজার আয় করে; অ্যান্ড্রয়িড বাজারের অ্যাপ ডাউনলোড ৬০০ কোটিতে পৌঁছেছে; আগস্টের শেষে অ্যান্ড্রয়িড বাজারে অ্যাপ ছিল ২৭৭,২৫২টি এবং অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপের গড় বিক্রিমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩.১৩ ডলারে।

অ্যাপস্টোর বিশ্লেষক ‘Distimo’ তাদের সর্বশেষ রিপোর্টে দামের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মোবাইল প্লাটফর্মের তুলনামূলক চিত্র প্রকাশ করেছে। ‘Distimo’-র পর্যবেক্ষণ অনুসারে অ্যান্ড্রয়িড বাজারে বর্তমানে যেখানে ১৩৪,৩৪২ সংখ্যক ফ্রি অ্যাপ আছে, অ্যাপলের আইফোন স্টোরে সেখানে আছে ১২১,৮৪৫টি। অন্যদিকে অ্যান্ড্রয়িডের পেইড অ্যাপের সংখ্যা অ্যাপলের আইফোনের তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।



তবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, উইন্ডোজ মার্কেটপ্লেসই হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা অ্যাপস্টোর। কারণ, বাস্তবেই উইন্ডোজ মার্কেটপ্লেসের বাড়ার হার মার্চ ২০১১-তে রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ শতাংশ, যা অ্যাপল কমপিউটারের ব্র্যান্ড নিউ ম্যাক স্টোরকেও ছাড়িয়ে গেছে!

অ্যাপলের অ্যাপস্টোর যদিও এখনো অ্যাপের সংখ্যার ভিত্তিতে সবচেয়ে বড়, তুলনামূলক বাড়ার হার অনুযায়ী এর বেড়ে ওঠার তুলনামূলক হার সবচেয়ে কম। সবিশেষে উল্লেখ্য, Distimo মনে করে এই প্রবৃদ্ধি হার অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ মাসের মধ্যে অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপের সংখ্যায় আইফোনকেও ছাড়িয়ে যাবে!

অ্যাপ্লিকেশন ট্রেন্ড

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ লোকই দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি কাটাবার উপায় হিসেবেই মোবাইল/স্মার্টফোনকে বেছে নেয়। জানা গেছে, একজন মানুষ যদি গড়ে ৫৬ মিনিট মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন, তবে তার ৬৭ শতাংশই হয় নেটিভ অ্যাপ্লিকেশন তথা প্লাটফর্ম স্পেসিফিক এবং শীর্ষ ৫০টি অ্যাপেই তাদের ৬০ ভাগ সময় ব্যয় করেন। সমীক্ষা থেকে আরো জানা গেছে, গেম ও এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপগুলোই এখন বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ‘অ্যাংগ্রি বার্ডস’, ‘কাট দ্য রোপ’-এর মতো গেমগুলোর অকল্পনীয় ব্যবসায়িক সাফল্যের পর এ নিয়ে আর সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

তুমুল জনপ্রিয় ‘অ্যাংগ্রি বার্ডস’ ফিনিশ গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান Rovio Mobile-এর তৈরি করা। প্রাথমিকভাবে আইফোনের জন্য এটি তৈরি করা হলেও বর্তমানে মোটামুটি সব মোবাইল প্লাটফর্মে পাওয়া যায়। অ্যাপলের স্টোরে গেমটির এ পর্যন্ত ১ কোটি ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে! অ্যান্ড্রয়িডের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডাউনলোড হয়েছে ১০ লাখ বার। সব ধরনের প্লাটফর্মে এ গেমটি ডাউনলোড করার পরিমাণ ৩৫ কোটি।

রাশিয়ান গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ZeptoLab নিয়ে আসে ‘কাট দ্য রোপ’ নামের গেম, যা আইফোন ও অ্যান্ড্রয়িড দুই ভার্সনেই পাওয়া যায়। সাড়া জাগানো এই গেম রিলিজ হওয়ার পর মাত্র ৯ দিনে বিক্রি হয় ১০ লাখ কপি। আইফোনের অ্যাপ স্টোরে এটি সবচেয়ে দ্রুত এ মাইলফলক স্পর্শ করে।

গত জুলাইয়ে প্রকাশিত নিলসেনের সমীক্ষা অনুযায়ী ৯৩ শতাংশ অ্যাপ ডাউনলোডার তাদের গেমের জন্য অর্থ খরচ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নিউজ অ্যাপের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ৭৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, ডাউনলোড করা অ্যাপের মাঝে গেমের সংখ্যা যেমন তুলনামূলক বেশি, তেমনি গেমের পেছনে গড়ে সময়ও অধিক ব্যয় হয়েছে। তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য মোবাইল অ্যাপগুলোকে আগামী দিনগুলোতে আরো বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হতে হবে। গার্টনারের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে ২০১২ সালের প্রত্যাশিত অ্যাপের ধরন সম্পর্কে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে যেসব অ্যাপ গ্রাহকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- লোকেশন ভিত্তিক সার্ভিস, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, মোবাইল ভিডিও, অবজেক্ট রিকগনিশনেও মোবাইল পেমেন্ট।

লোকেশনভিত্তিক সার্ভিস : আগামী দিনের অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে লোকেশনভিত্তিক সার্ভিসের একটি প্রভাব দেখা যাবে। এমনকি গ্রাহকের বয়স, লিঙ্গ, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, পেশা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে অ্যাপ্লিকেশন কাজ করবে!

গার্টনারের মতে, ২০১৪ সালের মধ্যে লোকেশনভিত্তিক সার্ভিস ব্যবহার করেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং :

মোবাইলের মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দিন দিন বাড়ছে। আগামীতেও এ ধারা বজায় থাকবে। তাই স্যোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশনের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল।

মোবাইল ভিডিও :

স্মার্টফোনের সাথে থাকা ক্যামেরা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। এই ক্যামেরা ব্যবহার করে আগামী দিনগুলোতে নিত্যনতুন অ্যাপ্লিকেশন দেখা যাবে।

অবজেক্ট রিকগনিশন :

গ্রাহকের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে পারবে, এমন হ্যান্ডসেট এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই অবজেক্ট রিকগনিশন সুবিধাসম্বলিত অ্যাপ্লিকেশন সামনের দিনগুলোতে চলে আসবে।

মোবাইল পেমেন্ট :

মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ অতীতে যেকোনো সময়ের তুলনায় দিন দিন বাড়ছে। এ সম্পর্কিত বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহারও বেড়ে যাবে বহুগুণ।

হ্যালো ওয়ার্ল্ড

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কিভাবে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করা যায়। তবে এজন্য চিন্তার কোনো কারণ নেই, কেননা এখন সেলফ লার্নিংয়ের যুগ। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় সব বিষয় সম্পর্কে জানতে পারা যায়। তারপরও এখানে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কিভাবে কাজ শুরু করতে হবে, তা জানার জন্য কিছু টিউটরিয়াল সাইটের উল্লেখ করা হলো।

আইফোন

প্রাথমিকভাবে আইওএস (iOS) শেখার জন্য অ্যাপলের ডেভেলপার ওয়েবসাইট (http://developer.apple.com/) পছন্দ করেন অনেকেই। এখানে রেজিস্ট্রেশনের পর এর ডকুমেন্টগুলো যেকেউ ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সব সুবিধা পেতে হলে আপনাকে প্রতি বছর ১০০ ডলার ফি দিতে হবে।

ইন্টারনেটে আইফোনের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার বেশ কিছু বই পাওয়া যায়। বিনামূল্যে টিউটরিয়াল সংগ্রহের জন্য আরো কয়েকটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট রয়েছে :

• iPhone Dev Forums (www.iphonedev forums.com/forum/)
• iPhone Dev SDK (www.iphonedevsdk. com/forum/)
• iPhone-Developers.com (http://iphone-developers.com/)
আইফোনের অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার জন্য আপনার থাকতে হবে অ্যাপল কমপিউটার।

অ্যান্ড্রয়িড

গুগলের Android Developers portal (http://developer.android.com/index.html) ওয়েবসাইটে ডেভেলপারদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রচুর পরিমাণে টিউটরিয়াল, ই-বুক, ইমুলেটর এবং সব কিছুই বিনামূল্যে।

আগামী বছরগুলোতে অ্যান্ড্রয়িডের ওপর লেখা বেশ কিছু বই প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। ডেভেলপারদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি খুশির সংবাদ।

আরো কয়েকটি প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট হলো :

• XDA Developers (www.xda-developers.com/)
• http://www.anddev.org/
• http://thesixdegree.com/appcon/ resources.html
• http://developer.android.com/ guide/index.html
• http://www.androidpeople.com/
• http://www.vogella.de/android.html

এ ছাড়া বেসিসের অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ট্রেইনার আহসানুল করিম ব্যক্তিগতভাবে বেসিসের অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের প্রশিক্ষণে গিয়ে ক্লাসের বিভিন্ন সেশনের যেসব ভিডিও ও পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড তৈরি করেছেন সেগুলো পাওয়া যাবে নিচের লিঙ্কটিতে : http://androidstream. wordpress.com/

উইন্ডোজ ফোন

উইন্ডোজ ফোনের বয়স খুব বেশি না হলেও অনেক সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে ডেভেলপারদের সামনে। অন্য যেকোনো সফটওয়্যার কোম্পানির চেয়ে মাইক্রোসফট বর্তমান আর ভবিষ্যৎ ডেভেলপারদের অনেক বেশি উপকরণ জোগান দেয়। যতই হাস্যকর হোক বা না হোক, স্টিভ বলমারের বিখ্যাত বক্তৃতা ‘Developers, Developers, Developers’ সত্যি হতে খুব একটা দেরি নেই।

উইন্ডোজ ফোন ৭ এখনো শিশু অবস্থায় আছে। আর এর প্রসারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো সমন্বিত করা হচ্ছে। এজন্য নতুন প্রোগ্রামারদের এটি নিয়ে কাজ করার আগে ভালো প্রস্ত্ততি দরকার। তবে যদি C#, .NET, সিলভারলাইট কিংবা WPF নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকে, তবে উইন্ডোজ ফোন ৭-এর জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করাটা খুবই সহজ হবে।

• App Hub (http://create.msdn.com/en-US/)
• Getting Started with Windows Phone (http://msdn.microsoft.com/enus/wp7trainingcourse_wp7gettingstarted_unit.aspx)
• Silver light for Windows Phone (http://channel9.msdn.com/Learn/Courses/WP7TrainingKit/WP7Silverlight)

কনসেপ্ট ডিজাইনিং

কনসেপ্ট ডিজাইনার হতে গেলে প্রথমেই দরকার, যাবতীয় কমপিউটারের ইলাস্ট্রেশন সফটওয়্যার প্যাকেজ সম্পর্কে আপ-টু-ডেট থাকতে হবে। ফিল্ম ইমেজারি বোঝার সাথে সাথে প্রোডাক্টের রিকোয়ারমেন্ট ভালোভাবে বুঝতে হবে। এজন্য প্রধান প্রধান যেসব দক্ষতা থাকা দরকার, সেগুলা হলো :

• চমৎকার ইলাস্ট্রেশন স্কিল।
• কার্যকর কমিউনিকেশন স্কিল।
• থ্রি-ডাইমেনশনাল স্পেস এবং পারস্পেক্টিভ ভালো করে বোঝার দক্ষতা।
• অন্যদের আইডিয়াকে ইন্টারপ্রেট করার ক্ষমতা।
• কাজের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে, প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
• টিমের সবার সাথে কাজ করার মানসিকতা।

আজকাল ইন্টারনেটে প্রায় সব বিষয়েই অনেক চমৎকার টিউটরিয়াল পাওয়া যায়। কনসেপ্ট ডিজাইন সম্পর্কে জানার জন্য এমন ভালো কিছু সাইটের লিঙ্ক হলো :

• http://www.deviantart.com
• http://wiki.gamedev.net/index.php /Main_Page
• http://www.gamedev.net/
• http://layersmagazine.com/category/ indesign
• http://desktoppub.about.com/od/ indesigntutorials/Adobe_InDesign_Tutorials.htm
• http://www.gamecareerguide.com/ features/455/becoming_a_game_concept_.php

অ্যাপ্লিকেশন সাবমিশন

অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সফলভাবে অ্যাপ্লিকেশনটিকে বাজার নিয়ে যাওয়া। অ্যাপ্লিকেশন বাজারে তোলার সময় বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এখানে শুধু আইওএস আর অ্যান্ড্রয়িডের ক্ষেত্রের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো :

আইটিউনস

• অ্যাপস্টোরের মাধ্যমে অ্যাপ অনুমোদিত হওয়ার প্রাথমিক সময় ১-৪ সপ্তাহ, পরবর্তী আপডেটের তুলনায় প্রাথমিক সাবমিশন প্রসিডিউর একটু ধীরে।
• সাধারণত অ্যাপ আপডেটগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনুমোদন পেয়ে যায়।
• তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলা অ্যাপ আপডেট সাবমিট করলে অনুমোদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই একটু ধীর হয়ে পড়ে।
• কোনো কারণে যদি অ্যাপ রিজেক্ট হয়, তাহলেও ভেঙে পড়ার কিছু নেই। কেননা, অ্যাপলের রিজেকশন লেটারে খুব ভালোভাবে উল্লেখ করা থাকে, কোথায় কী ঠিক করতে হবে।
• অ্যাপলের ইন্টারফেস গাইডলাইন খুব ভালো করে পড়তে হবে। কারণ, এ ব্যাপারে অ্যাপল বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে থাকে।
• অ্যাপ সাবমিট করার আগে খুব ভালো করে নিশ্চিত হতে হবে অ্যাপ্লিকেশনে কোনো বাগ নেই, নাহলে রিজেকশন নিশ্চিত।
• কখনই আনপাবলিশড কোনো এপিআই ব্যবহার করা যাবে না।
• যদি ইন্টারনেট পেজ লোড করার জন্য কোনো ‘UIWebView’ ব্যবহার করা হয়, তবে অ্যাপকে ১২+ রেট করতে হবে।
• স্বাভাবিক ক্ষেত্রে অ্যাপে কোনো ধরনের অফেন্সিভ কিছু থাকা যাবে না।

থার্ড-পার্টি অ্যান্ড্রয়িড স্টোর

এক্ষেত্রে ওই স্টোরের (GetJar, Handango, Carrier, ইত্যাদি) বিজনেস ডেভেলপমেন্টের সাথে সম্পর্কিত লোকজনের সাথে কথা বলার সুযোগ থাকলে কাজে লাগানো যেতে পারে, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই তা অল্টারনেটিভ রেভিনিউ মডেল বা কোনো প্রমোশনাল সুবিধা পেতে সাহায্য করে।



অফিসিয়াল অ্যান্ড্রয়িড মার্কেট

• অ্যান্ড্রয়িড মার্কেট দ্রুত কমপিউটারাইজড ভেলিডেশনের পর তা প্রকাশের ব্যবস্থা করে।
• তবে অ্যান্ড্রয়িড মার্কেটে টার্গেট ডিভাইস সিলেক্ট করার কোনো উপায় নেই। এক্ষেত্রে ডিভাইস ভিসিবিলিটি ওএস ভার্সন আর এপিআই এক্সটেনশনের ওপর নির্ভর করে।
• ইউসার অ্যাপ কেনার আগে তা যাচাই করে দেখতে পারেন।
• গুগল ‘রিমোট কিল’-এর মাধ্যমে অ্যাপ ডিভাইস থেকে মুছে ফেলতে পারে।

মার্কেট, চাহিদা, কিভাবে শুরু করতে হবে সবকিছু সম্পর্কেই যখন জানা হলো, তাহলে আর অপেক্ষা কেন? এখন থেকেই শুরু হয়ে যাক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে আমাদের নতুন দিনের পথচলা।

সাক্ষাৎকার

‘মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে উজ্জ্বল’


আল-মামুন সোহাগ, প্রধান নির্বাহী, র্যাভট্রড স্টুডিও

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। কারণ, মানুষ দিন দিন স্মার্টফোনের দিকে আগ্রহী হচ্ছে! মোবাইল এখন একই সাথে কমিউনিকেটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এবং এন্টারটেইনমেন্ট ডিভাইস! মোবাইল গেমের জনপ্রিয়তা এখন অনেকাংশে ডেস্কটপ গেমকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরে এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়বে। সেদিক বিবেচনায় মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট নিঃসন্দেহে খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত।

বাংলাদেশে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সারা বিশ্বেই এখন বেশ সম্ভাবনাময়! আমাদের দেশেও তাই! আউটসোর্সিংয়ের জগতে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এখন বেশ জনপ্রিয়! বাংলাদেশের তরুণেরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। অ্যান্ড্রয়িডের উন্মুক্ত বাজারে বাংলাদেশের ডেভেলপারেরা সহজেই অংশ নিতে পারেন! অ্যাপল স্টোর এখনও আমাদের দেশে চালু হয়নি। তবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ গ্রাহক পেলেও অ্যাপল নিজ উদ্যোগেই তা চালু করবে। আমাদের দেশে যেহেতু অনলাইনে লেনদেন এখনও সুবিধাজনক পর্যায়ে যেতে পারেনি, তাই আঞ্চলিক বাজারের বর্তমান অবস্থা তেমন ভালো নয়। আশা করি, এই সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান হবে।

পেশাদারিত্ব

বর্তমান বাজার প্রতিযোগিতামূলক। তাই সব সময় বাজারে গতিধারা বা প্রবণতা বুঝতে হবে। গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অ্যাপ্লিকেশন, গেমের কথা ভাবতে হবে।

প্রোডাক্টের আউটলুক, গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যেন ভালো হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। একেক রকম ডিভাইসে একেক ধরনের রেজ্যুলেশন থাকে, তাই এসব টেকনিক্যাল দিক মাথায় রাখলে সে অ্যাপ্লিকেশন সহজেই গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে।

দেশে মোবাইল ডেভেলপমেন্টের জনপ্রিয়করণ

প্রথমত, যারা এখন ডেভেলপার আছেন, তারা এগিয়ে আসতে পারেন। তরুণ ও শিক্ষার্থী ডেভেলপারদের সাথে নিয়মিত আড্ডা, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে একটি সুসম্পর্ক তৈরি করা যায়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা নিজেরা বিভিন্ন টিম গঠন করে মত বিনিময় করতে পারেন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ব্লগ, ফোরামে মতামত প্রকাশ করেও অনেক কিছু জানা সম্ভব।

তৃতীয়ত, বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানি নিয়মিত সফটওয়্যার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে একটি শক্তিশালী মোবাইল ডেভেলপার কমিউনিটি তৈরিতে ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে সময়োপযোগী কারিক্যুলাম আপডেট করাটাই হবে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বড় ধরনের সাহায্য। বিশ্বের প্রথম সারির বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে এ ধরনের কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দেশে বিশ্বমানের গ্রাফিক ডিজাইনারের অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আর্ট ইনস্টিটিউটগুলো আধুনিক কারিক্যুলাম অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারে।

নতুনদের জন্য পরিকল্পনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের কোর্স করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। প্রাথমিকভাবে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক্সপার্টদের মাধ্যমে ৩-৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত ৪০ জনকে বাছাই করে তাদের তৈরি পণ্যকে বাজারজাত করা হবে। অর্থাৎ এটা একটা ইনকিউবেটরের মতো কাজ করবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা পেলে এ কাজটি ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে কোর্স পরিচালনার এবং একে চালিয়ে নেয়ার জন্য তহবিলের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা কাম্য। পাশাপাশি আমাদের দুর্বলতাগুলোকেও সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেগুলোর সমাধানের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকার জন্য ভালো প্রোগ্রামিং যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন ভালো আউটলুক। ‘লুক অ্যান্ড ফিল’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার পণ্যের জন্য। এক্ষেত্রে আমরা বাইরের দেশগুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের কনসেপ্ট ডিজাইনার ও টেকনিক্যাল আর্টিস্টের বেশ অভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেকখানি উন্নতির প্রয়োজন। নামিদামি অনেক কোম্পানিই একজন ভালো কনসেপ্ট ডিজাইনারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের সবার পরিচিত ‘অ্যাংগ্রি বার্ডস’-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ

....................................................................................................................................................................................................................................

‘অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে’


আহসানুল করিম,
প্রধান নির্বাহী ও চেয়ারম্যান, সেন্টিনেল সলিউশন্স

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশে পেশা হিসেবে যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছে। বিগত চার বছরে আমরা দেখেছি বেশ কিছু নতুন মোবাইল/স্মার্টফোন প্লাটফরম মোবাইল মার্কেটের বেশিরভাগ অল্প সময়ে দখল করে ফেলেছে। যেমন আইফোন, অ্যান্ড্রয়িড ইত্যাদি। বিভিন্ন আকর্ষণীয় ফিচার যেমন- জিপিএস, সেন্সর, চমৎকার টাচস্ক্রিন, সহজে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদির কারণে এই প্ল্যাটফরমগুলোতে একদিকে ডেভেলপারেরা পাচ্ছেন তাদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ, অন্যদিকে ব্যবহারকারীরাও নতুন নতুন মোবাইল গেম, অ্যাপ্লিকেশন আর ফোনের ফিচার দেখে আকৃষ্ট হচ্ছেন। অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে থাকছে সোশ্যাল ইন্টারেকশনের সুবিধা। ফলে অ্যাপ্লিকেশন বা গেমগুলো ছড়িয়ে পড়ছে একটি ভাইটাল ইফেক্ট নিয়ে। নতুন মোবাইল প্লাটফরমগুলোর সাফল্য দেখে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ব্ল্যাকবেরি, নোকিয়া বা উইন্ডোজ নিয়ে আসছে নতুন নতুন ডিভাইস। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার আর ইউজারদের এই ব্যাপক সমাবেশ তৈরি করছে নতুন নতুন বিজনেস মডেলের সুযোগ। আইফোন, অ্যান্ড্রয়িড, ব্ল্যাকবেরি, উইন্ডোজ মোবাইল বা নোকিয়া ইত্যাদি কোম্পানির নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট বা ডিস্ট্রিবিউশনের সুযোগ থাকায় অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং বা প্রচারের সুবিধাও তৈরি হয়েছে। এ কথা ঠিক অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নানা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছিনিয়ে আনছে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

তরুণ প্রজন্মের প্রস্ত্ততি

আমাদের তরুণ প্রজন্ম যোগ্যতার দিক দিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্ত্তত। যেকোনো বিষয়ে অল্প সময়ে এরা দক্ষতা অর্জন করে নিতে পারে। এর সাথে শুধু যেটা যোগ হওয়া প্রয়োজন তা হলো লেগে থাকার প্রবণতা বা লক্ষ্যে স্থির থেকে চেষ্টা করে যাওয়া। এখানে প্রস্ত্ততি বলতে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো সৃজনশীলভাবে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস গড়ে তোলা আর কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, এ ধরনের মানসিকতা তৈরি করা। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামিংসংশ্লিষ্ট কোর্সগুলোতে অল্প অল্প করে ব্যক্তিগত দক্ষতা তৈরি করা যা তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবে।

অ্যান্ড্রয়িড, আইফোন না উইন্ডোজ

যেকোনো মোবাইল প্লাটফর্মই হতে পারে শুরু করার জায়গা। যদিও স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে আইফোনের শীর্ষস্থান এখনো অক্ষুণ্ণ, কিন্তু আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখতে পাই অ্যান্ড্রয়িড ও উইন্ডোজ ফোন খুব দ্রুত হারে বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে।

প্রবৃদ্ধি হার চিন্তা করলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যান্ড্রয়িডের কথাই বলব। কিন্তু সব দিক থেকে এখন পর্যন্ত আইফোন ডেভেলপাররাই চাহিদা আর অর্জনের দিক থেকে এগিয়ে। সেই সাথে আরেকটি মতামত হলো শুধু এক প্লাটফর্মে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে বেশ কয়েকটি প্লাটফর্মে দক্ষতা অর্জন করা উচিত। অ্যান্ড্রয়িড প্লাটফর্ম হতে পারে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট শুরু করার জন্য আদর্শ। এর কারণ এই প্লাটফর্মে খুব দ্রুত একজন নিজেকে প্রস্ত্তত করে নিতে পারে। তাছাড়া বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যের ডিভাইস পাওয়া যায় বলে শুরু থেকেই অ্যান্ড্রয়িড ডেভেলপারেরা নিজেদের অ্যাপ্লিকেশনগুলো মোবাইলে পরীক্ষা করতে পারেন, যা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের জন্য খুব জরুরি। এছাড়া প্রচুর ওপেনসোর্স রিসোর্সও অ্যান্ড্রয়িডের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। এটি একটি বাড়তি সুবিধা।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

নতুন যারা এই পেশায় আসতে চান, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মানসিকতা আর কাজকে ভালোবাসা- এই দুটি ব্যাপার খুব জরুরি। ভালোলাগা না থাকলে বাজারের চাহিদা দেখে কাজে নেমে পড়লেই যে সাফল্য আসবে তা নয়। আর সবসময়ই নতুন কিছু করা এবং প্রতিবন্ধকতাকে সুযোগ হিসেবে দেখার দিৃষ্টভঙ্গি অর্জন করতে হবে। পরিশ্রম করলে তার ফল পাওয়া যাবেই।

টিমওয়ার্ক

টিমওয়ার্ক ছাড়া খুব বড় কোনো কাজ করা কঠিন। একটি টিমে একেকজন একেকটা ভূমিকা পালন করেন। কেউ প্রজেক্ট ম্যানেজ করেন, কেউ সল্যুশন আর্কিটেক্টের কাজ করেন, কেউ শুধু কোডিং করেন, আবার কেউ কেউ যেকোনো ব্লকিং ইস্যু সমাধান করে ফেলেন। বিভিন্নজনের সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি আদর্শ টিম। কিন্তু সেখানে থাকতে হবে একের প্রতি অন্যের শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, সততা আর আন্তরিকতা। কাউকে নেতৃত্ব দিতে হয় টিম যেন সমষ্টিগত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়। চমৎকার ইন্টার-পারসোনাল কমিউনিকেশন আর নেতৃত্ব থাকলে একটি টিমকে কেউই আটকে রাখতে পারে না
বাংলাদেশ : সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই একে ফ্রিল্যান্সিং পেশা হিসেবে নিয়েছেন। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট শুরু করার জন্য তেমন কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না বলে এটি উদ্যোক্তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে খুব সহজেই। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে বাংলাদেশকে আদৌ এর বাজারে পরিণত করা যাবে কি না, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশ এখনো এর বাজার হিসেবে তৈরি নয়। এর কারণ হিসেবে এরা বলেন, বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য যে পরিমাণ গ্রাহক প্রয়োজন, আমাদের দেশে এখনো সে পরিমাণ গ্রাহক সৃষ্টি হয়নি। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্মার্টফোন এখনো পৌঁছায়নি। তবে দেরিতে হলেও অবশেষে বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোন আসছে। ‘সিক্স ডিগ্রি কমিউনিকেশন্স লিমিটেড’ বাজারে নিয়ে আসছে নতুন অ্যান্ড্রয়িড ফোন এনিগমা। অ্যান্ড্রয়িড ওএস ২.২সহ রয়েছে সিডিএমএ ও জিএসএমের ডুয়াল মোড সুবিধা। শুধু তাই নয়, শিগগির অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপস্টোরও শুরু করতে যাচ্ছে ‘সিক্স ডিগ্রি কমিউনিকেশন্স লিমিটেড’। এ ব্যাপারে ‘সিক্স ডিগ্রি কমিউনিকেশন্স লিমিটেড’-এর পরিচালক হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, ‘সিক্স ডিগ্রি অ্যাপস্টোর হবে শুধু দেশীয় ডেভেলপারদের তৈরি একটি অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন স্টোর। সারা বিশ্বে অ্যান্ড্রয়িডের চাহিদা মাথায় রেখে আমাদের দেশের মানুষকে অ্যান্ড্রয়িডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অ্যান্ড্রয়িড প্ল্যাটফর্মে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টকে জনপ্রিয় করাও এর লক্ষ্য। এছাড়াও অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সিক্স ডিগ্রি দেশব্যাপী আয়োজন করছে দেশের সর্বপ্রথম অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রতিযোগিতা। তবে ‘আইকোড বাংলাদেশ’-এর কর্ণধার গোলাম মোহাম্মাদ মুক্তাদিরের মতো অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মেধা অনুযায়ী যোগ্যতা গড়ে উঠছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন- প্রথমত, এই ক্ষেত্রে কী কী করা সম্ভব, তা বেশিরভাগ তরুণ জানে না। এরা নিজেরা শুরু করতে ভয় পায়। মূল কারণ শিক্ষকদের অদূরদর্শিতা এবং কাজ ও ব্যবসায় অনাগ্রহ। দ্বিতীয়ত, যারা এসব কাজে জড়িত, তাদের খবর ছড়িয়ে দেয়া হয় না। এই দুটো বাধা অতিক্রম করতে পারলে বাকিগুলো তরুণ প্রজন্ম নিজেরাই সমাধান করে নেবে। তাদের শুধু দুনিয়াকে দেখানো দরকার, বাংলাদেশ থেকেও এখন বিশ্বমানে কাজ হচ্ছে। অনেক বিদেশি কোম্পানিরই ডেভেলপমেন্ট টিম রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকেই তৈরি হচ্ছে ‘ড্রিফট ম্যানিয়া’, ‘হকি ফাইট’, ‘মাইক ভি’র মতো জনপ্রিয় সব গেম এবং এরা ‘অ্যাংগ্রি বার্ডস’, ‘টিনি উইংস’, ‘কাট দ্য রোপ’-এর মতো তারকাখ্যাতিসম্পন্ন গেমের সাথে পাল্লা দিয়ে জায়গাও করে নিচ্ছে টপ চার্টে!

সাফল্যের এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের নিজেদেরও কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। নিয়মিতভাবে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে উত্তরসূরি ও পূর্বসূরিদের মাঝে মেলবন্ধন গড়ে দিতে হবে, ডেভেলপারদের দিতে হবে তাদের কাজের উপযুক্ত স্বীকৃতি; তবেই মিলবে অনুপ্রেরণা, আর তৈরি হবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা।



কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : nurbaharyeasha@yahoo.com, rafidwahid@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস