অ্যাকশন গেমভক্তদের কাছে জনপ্রিয় এক চরিত্র হচ্ছে হিটম্যান। গেমে নায়কের চরিত্রে রয়েছে এক ঠান্ডা মাথার ও বেশ কৌশলী ভাড়াটে খুনী। গেমে নায়কের কোনো নাম নেই। রয়েছে একটি কোডনেম যা হচ্ছে ৪৭। টেকো মাথার এ খুনীর মাথার পেছনে রয়েছে বারকোডের ট্যাটু। কালো স্যুট, সাদা শার্ট, কালো সু ও লাল টাই পরিহিত এ চরিত্রটি গেমের জগতে বেশ পরিচিত। ২০০০ সালে হিটম্যান কোডনেম ৪৭ নামের গেমটি দিয়ে শুরু হয় এ গেম সিরিজের যাত্রা। মূলত গেমটির ধাঁচ হচ্ছে স্টিলথ অর্থাৎ গোপনে ও নিঃশব্দে শত্রুকে ঘায়েল করে নিজের মিশন পুরো করা। গেম সিরিজটির ডেভেলপার হচ্ছে আইও ইন্টার-অ্যাকটিভ। গেম সিরিজটি ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পাবলিশ করেছে এইডস ইন্টার-অ্যাকটিভ এবং ২০০৯ সালের পর থেকে তা পাবলিশের দায়ভার গ্রহণ করেছে স্কয়ার ইউনিক্স।
এ পর্যন্ত হিটম্যান সিরিজের গেম বের হয়েছে ৪টি। এগুলো হলো-হিটম্যান-কোডনেম ৪৭, হিটম্যান ২ সাইলেন্ট অ্যাসাসিন, হিটম্যান কনট্যাক্টস ও হিটম্যান ব্লাড মানি। ২০১৩ সালে বের হবে হিটম্যান সিরিজের পঞ্চম গেম অ্যাবসল্যুশন। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে স্নাইপার চ্যালেঞ্জ তাহলে কোন গেম? চতুর্থ গেম বের হয়েছে এবং পঞ্চম গেম এখনো বের হয়নি, তাহলে মাঝখান দিয়ে স্নাইপার চ্যালেঞ্জ গেমটি কোথা থেকে উদয় হলো? গেমটি অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। কারণ হিটম্যানভক্তদের সবার জানা আছে এ সিরিজের পরের গেমটি হচ্ছে অ্যাবসল্যুশন। তাই বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে স্নাইপার চ্যালেঞ্জ গেমটি বাজারে আসায় অনেকেই বুঝতে পারেননি কী ঘটেছে। অনেকেই মনে করেছেন গেমটি ভুয়া, কারণ ইন্টারনেটেও গেমটি সম্পর্কে তেমন ডিটেইল কোনো কিছু লেখা ছিল না। গেমটি আসলে ঠিকই আছে। স্নাইপার চ্যালেঞ্জ গেমটি হচ্ছে অ্যাবসল্যুশনের একটি অংশ। তাই একে হিটম্যান গেম সিরিজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গেমের প্রমোশনের জন্য অ্যাবসল্যুশনের কিছু স্টেজ ও মিশন নিয়ে বানানো স্নাইপার চ্যালেঞ্জ বাজারে ছাড়া হয়েছে।
যারা হিটম্যান সিরিজের গেম খেলেননি তাদের জন্য সংক্ষেপে হিটম্যান গেম সিরিজের পরিচয় তুলে ধরা হলো। বেশিরভাগ অ্যাকশন গেমে নায়ক ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল শত্রুর ওপর এবং দ্রুততার সাথে শত্রুপক্ষের খেল খতম করতে হয়। কিন্তু এ গেম সিরিজটি ব্যতিক্রমধর্মী। এ গেমে বেশিরভাগ মিশন শেষ করতে হবে চুপিসারে। শত্রুপক্ষের আস্তানায় ঢুকে তাদের একে একে খতম করতে হবে এমনভাবে যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। গলায় ফাঁস দিয়ে বা আরো কিছু কৌশলে নিঃশব্দে খুন করার পর লাশ গুম করতে হবে যাতে টহল দিতে আসা অন্য কেউ লাশ দেখে সতর্ক না হতে পারে। অনেক প্ল্যান করে গেমটি খেলতে হয় বলে অনেকের কাছে গেমটি চরম মজার। কিন্তু যারা ধুমধাড়াক্কা টাইপের অ্যাকশন গেম পছন্দ করেন তাদের কাছে গেমটি পানসে মনে হবে।
স্নাইপার চ্যালেঞ্জ গেমটির পটভূমি হচ্ছে শিকাগো। গেমে ৪৭-এর টার্গেট হচ্ছে রিচার্ড স্ট্রং জুনিয়র যে কি না স্ট্যালিয়ন আর্মামেন্টস কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র বানানোর এ বিশাল কোম্পানির মালিককে খতম করার কাজ দেয়া হবে হিটম্যান ৪৭-কে। গেমে স্নাইপিং কিলিং থাকায় গেমটির মজা বহুগুণে বেড়ে গেছে। গেমে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রাখা হয়েছে, যার একটির চেয়ে আরেকটি আলাদা, তাই গেমটি খেলে ভালো লাগবে। অ্যাবস্যুলশন বের হওয়ার আগ পর্যন্ত এ গেমটি খেলেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া কিছুই করার নেই।
গেমটির মূল সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। কিন্তু গেমটি চালানোর জন্য যে পিসি কনফিগারেশন লাগতে পারে তা অনুমান করা যায়। গেমটি চালাতে ডুয়াল কোর ২ গিগাহার্টজ গতির প্রসেসর, ২ গিগাবাইট র্যাম, ৫১২ মেগাবাইট মেমরির পিক্সেল শেডার ৩.০ সাপোর্টেড গ্রাফিক্স কার্ড এবং ২ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস লাগবে। গেমটির জন্য এত কম জায়গা লাগার কারণ গেমটি মূল গেমের একটি ছোট অংশ এবং গেমপ্লে মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
গেমটির রেটিং দেয়া হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য, কারণ গেমে রক্তারক্তি ও খুনাখুনির ব্যাপকতা রয়েছে। ছোটরা যাতে এসব গেমের দিকে হাত না বাড়ায় সেদিকে অভিভাবকদের নজর রাখা দরকার। অনেকেই মনে করেন গেম তো বাচ্চাদের জন্যই, তার আবার কিসের নজরদারি? গেম শুধু ছোটরাই খেলে না, গেম এখন সব বয়সের মানুষেই খেলে। তাই বয়স অনুযায়ী গেমে রেটিং দেয়া থাকে। ছোটদের গেম কিনে দেয়ার সময় অবশ্যই গেম রেটিংয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। ছোটরা আবদার করল আর তার জন্য যাচাই না করে গেম কিনে এনে না দিয়ে তার জন্য যেটি ভালো হবে সেটি কিনে দিন। দোকানিদের অনেকেই গেম রেটিংয়ের ব্যাপারে জানেন না বা জানলেও এ ব্যাপারে মাথা ঘামান না। আবার অনেক সময় দেখা যায় গেমের কভারে গেম রেটিংয়ের লোগো ছাপানো হয় না বা ভুল ছাপানো হয়। তাই গেম কেনার আগে ইন্টারনেটে গেমটির রেটিং দেখে নিলে ভালো হয়।