লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
বিলিয়ন ডলারের মোবাইল গেম বাজারে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা
মোবাইল কিংবা কমপিউটার যা-ই বলি না কেনো, গেম একটি জনপ্রিয় ফিচার। আর স্মার্টফোনের প্রসারে গেমিং সেক্টরটি অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি হয়েছে বিলিয়ন ডলারের মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্ট বাজার। আর এই বাজারে বাংলাদেশী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সফলভাবে কাজ করছে। পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে গেম ডেভেলপমেন্ট সেক্টর অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশে মোবাইল গেমের অতীত, বর্তমান বাজার ও আগামীতে করণীয় বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে এ লেখায়।
স্মার্টফোন, ট্যাবলেটের মতো বহনযোগ্য ডিভাইসের বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে জনপ্রিয় হচ্ছে নানা ধরনের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। বিশ্বব্যাপী অ্যাপ্লিকেশনের বাজার আজ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। দেশে এখন শতাধিক অ্যাপস ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ‘টিপ ট্যাপ অ্যান্ট’ গেমটি খেলেননি এমন আইফোন ব্যবহারকারী খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। আঙুলে টিপে পিঁপড়া মারার মতো মজার কাহিনী নিয়ে তৈরি গেমটির গ্রাফিক্সের মান এত উন্নত যে, একে সিলিকন ভ্যালির তৈরি গেম বলেই মনে হয়। মজার খবর, গেমটি তৈরি করেছে দেশী প্রতিষ্ঠান রাইজ আপ ল্যাবস। বিশ্বের অনেক দেশেই এ গেমটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছেছে। রাইজ আপ ল্যাবসের মতো বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন জনপ্রিয় গেম তৈরি করছে। অনেক গেমের বিক্রি ছাড়িয়ে গেছে প্রত্যাশাও।
দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৯৫ শতাংশই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি পাওয়া তথ্য মতে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গড়ে ন্যূনতম একটি অ্যাপস ব্যবহার করেন। প্রতিদিন গড়ে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেন অ্যাপস ব্যবহারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ৮৬ শতাংশ সময় ব্যয় করেন অ্যাপস ব্যবহারে। আর এসব অ্যাপের বেশিরভাগই বিভিন্ন গেম। তাই মজার ও প্রয়োজনীয় গেম ডেভেলপমেন্ট করতে পারলে বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মার্কেট রিসার্চে’র মতে, ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৩ বিলিয়ন বার অ্যাপস ডাউনলোড হয়েছে। ২০১১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৭ মিলিয়ন। ২০১৩ সালে এটি ১৬৫ বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। ২০১২ সালে অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। গত বছর এটি ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী শুধু গেম ইন্ডাস্ট্রির বাজার ২৩.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে।
এদিকে হাতে বহনযোগ্য ভিডিও গেম ডিভাইসগুলো ধীরে ধীরে বাজার হারাচ্ছে। চলতি পথে যখন-তখন ভিডিও গেমের জন্য এখন হালের স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেটকে বেছে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। একদিকে হার্ডকোর ভিডিও গেমার, অন্যদিকে চলতি পথের শৌখিন খেলুড়ে। কমপিউটার বা ভিডিও গেম বাজারের কর্তারা কোন গ্রাহককুলের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেবেন? সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন অনেকে। ইলেকট্রনিক এন্টারটেইনমেন্ট এক্সপো বা ইথ্রি থেকে সবসময় প্লেস্টেশন কিংবা এক্সবক্স ৩৬০-এর জন্য বড় মাপের ভিডিও প্রকাশের খবর আসত। কিন্তু এবার বিষয়টি একটু ভিন্ন।
বর্তমান বাজার শুধুই হার্ডকোর ভিডিও গেমারদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং আইফোন বা ট্যাবলেটের মতো ডিভাইস ব্যবহারকারীদের দিকে নজর এখন ব্যবসায়ীদের। চলতি পথে ট্রেনে কিংবা দাঁতের ডাক্তারের জন্য অপেক্ষার মাঝে সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ক্ষুদে মুঠোফোনে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলছেন। এই নতুন খেলুড়েদের জন্য বড়মাপের গেম তৈরির দিকে ঝুঁকছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
গেম প্রকাশক সংস্থা বাল্কিপিক্সের কর্ণধার অলিভার পিয়ের মনে করেন, দুই ধরনের গেমারের নিয়েই এই শিল্প এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, মোবাইল এক নতুন প্ল্যাটফর্ম। যেমনটা ফেসবুকও। এসব নতুন প্ল্যাটফর্ম কন্সোল গেমারদেরকে কাছে টানতে সক্ষম হবে না।
অলিভার অবশ্য স্মার্টফোন ও কন্সোল গেমারদের মধ্যে এই মুহূর্তে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুঁজে পাচ্ছেন না। বরং প্রতিযোগিতার বিষয়টিকে তিনি রাখতে চান ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকেরা ইতোমধ্যেই অশনিসঙ্কেত দিতে শুরু করেছেন। তাদের মতে, স্মার্টফোনের কারণে গ্রাহক হারাতে শুরু করেছে নিনটেন্ডো থ্রিডি এবং সনি ভিসতা। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভিডিও গেমের জন্য স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেটের চাহিদা বাড়ছে। এবিআই বিশ্লেষক মাইকেল ইনুয়ি এ বিষয়ে বলেন, হাতে বহনযোগ্য গেমিং ডিভাইসের সাথে মোবাইল ফোনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলবে। কিন্তু একনিষ্ঠ গেমার অথবা যারা স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট পছন্দ করেন না বা যাদের এসব নেই, তাদের কাছে গেমিং ডিভাইসের চাহিদা একই থাকবে।
উপরের বিষয়গুলো থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মোবাইল গেম আমাদের জীবনে কেমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে।
ট্যাপিং গেমে শীর্ষে ট্যাপ টু আনলক থ্রিডি
রিয়েল গেম ইন ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড (আরটিসি) হাব লিমিটেডের তৈরি ট্যাপ টু আনলক থ্রিডি গেমটি এখন ট্যাপিং গেমের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। গত এপ্রিলের ১৪ তারিখে অ্যাপ স্টোর ও আইটিউনে আসা এ গেমটি ইতোমধ্যেই ইউজার রেটিংয়ে ৪ পেয়েছে। ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা আরটিসির তৈরি করা আরও গেমের মধ্যে রয়েছে শেক-ব্রেক-মেক প্রো, হাংরি ফ্রগি ইত্যাদি। এ ছাড়া আইফোন ও অ্যান্ড্রয়িডের জন্য বিভিন্ন গেম ও অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
যেভাবে বাংলাদেশে শুরু
২০০৫ সালের দিকে দেশে গেম তৈরির কাজ শুরু হয়। এ বছর যাত্রা শুরু করে আইটিআইডব্লিউ। তবে এই প্রতিষ্ঠানকে সফলতা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ কিছুদিন। শুরুর দুর্দিন কাটিয়ে এই প্রতিষ্ঠানে এখন অর্ধশতাধিক নির্মাতা কাজ করছেন। আইফোন অ্যাপ্লিকেশন, গ্রাফিক ডিজাইন ও ওয়েবসাইট উন্নয়নের কাজও হচ্ছে এখানে। এসব কাজের ৮০ শতাংশেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া বলে জানা গেছে। শাপলা অনলাইনও যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালে। মোবাইল গেমের পাশাপাশি ব্রাউজার ও ওয়েবভিত্তিক গেম তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। রিভালিটি, ব্যান্ডিটকুইন ও কমান্ড স্টার তাদের তৈরি আলোচিত গেম। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আলো ভেঞ্চারও ভালো মানের গেম নির্মাতা। এ প্রতিষ্ঠানের তৈরি গ্রিড পাজল, অ্যানিমেল রাশ ইত্যাদি কম জনপ্রিয় নয়। ব্রাউজারভিত্তিক গেম (মোবাইল, কমপিউটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে খেলা সম্ভব) তৈরি করে এগিয়ে যাচ্ছে ফান রক মিডিয়া। তাদের তৈরি করা গেমের মধ্যে রয়েছে কমান্ড স্টার, রাইভালটি ও ব্যান্ডটাইকুন। এ ছাড়া পিক্সেল ১২, নর্থ বেঙ্গল আইটি, রেলিসোর্স টেকনোলজিস, সালেহা আইটি, অ্যালবাট্রস টেকনোলজিসসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান দেশেই আন্তর্জাতিক মানের গেম তৈরি করছে। তবে ২০০৯ সালের অক্টোবরে শুরু রাইজআপ ল্যাবের তৈরি গেম টিপ ট্যাপ অ্যান্টের সফলতা ছাড়িয়ে গেছে সবাইকে।
টিপ ট্যাপ অ্যান্ট : একটি সাফল্যের গল্প
টিপ ট্যাপ অ্যান্ট গেমের সাফল্য নিয়ে রাইজআপ ল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরশাদুল হকের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘একে একে বিভিন্ন প্রাণী আসতে থাকবে এবং আঙুল দিয়ে টিপে সেগুলো মারতে হবে।’ শুরুতে এমন কাহিনী নিয়ে টিপ ট্যাপ অ্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও পরে শুধু পিঁপড়া নিয়ে গেমটি তৈরি হয়। প্রথমে চারুকলার বন্ধুদের নিয়ে পিঁপড়ার নকশা করা হয়। এরপর কমপিউটারে প্রোগ্রামিংয়ে একে গেমের রূপ দেয়া হয়। অনেক বিনিদ্র রাতের ফসল গেমটি অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে দেয়ার সাথে সাথে যেন ভেলকি লেগে গেল! শুরু থেকেই প্রচুর ডাউনলোড। কয়েক দিনের মধ্যেই রেটিংয়ে দশের ঘরে চলে আসে। বেশি ডাউনেলোড হয় ইউরোপের দেশগুলো থেকে। এশিয়ার মধ্যে প্রথম জনপ্রিয়তা পায় সিঙ্গাপুরে। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তালিকায় দুই নম্বরে উঠে আসে। এই গেমটি থেকেই রাইজআপ ল্যাবের আয় হয় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। মাত্র ১ লাখ টাকা নিয়ে শুরু ছোট্ট একটি কামরা থেকে রাইজআপ ল্যাবের এখন উত্তরায় ১৬ হাজার বর্গফুটের অফিস। এখানে কাজ করেন ৬০ জন ডেভেলপার। তাদের তৈরি অ্যাপ্লিকেশনের সংখ্যাও এখন শতাধিক। এগুলোর মধ্যে- ট্যাপ ট্যাপ ট্যাপ মার্বেল, লাভার ফ্রগ, ঘোস্ট সুইপারফল রেইনি, আইওয়্যারহাউস, গস্নবার, শুট দ্য মাঙ্কি, ফ্রুইটিটো ও বাবল অ্যাটাক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন ফেসবুকের জন্য এখানে তৈরি হচ্ছে ফ্যাক্টরি প্রজেক্ট।
টন্টি আর মন্টির গেম ‘ফ্রুট ব্যান্ডিট’
সম্প্রতি টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে যমজ দুই ভাইয়ের এক বিজ্ঞাপন। সব জায়গায় তাদের মিল থাকলেও স্বাদের বেলায় পছন্দ ছিল আলাদা। ট্যাং পাউডার ড্রিঙ্কসের এ বিজ্ঞাপনের চরিত্র এবার চলে এসেছে মোবাইল ফোনের গেমে। ‘ফ্রুট ব্যান্ডিট’ নামে অ্যাডভেঞ্চার ভর্তি এ গেমটি ট্যাংয়ের সহায়তায় ভাবনা ও গল্প তৈরি করেছে ওগিলভি অ্যান্ড মেথর বাংলাদেশ। সম্প্রতি রাজধানীর বেসিস মিলনায়তনে গেমটির উদ্বোধন করা হয়। গেমটিতে দেখা যায়, টন্টি আর মন্টি নামে এই দুই ভাই গভীর বনের ভেতরে বেড়াতে যায়। যেখানে মন্টি শিম্পাঞ্জির হাতে কিডন্যাপ হয়। আর টন্টি তাকে বাঁচাতে লড়াই করতে থাকে বনের পশুদের সাথে। আম, আনারস, লেবু, কমলা ইত্যাদি ফলমূল দিয়ে পশুরা টন্টিকে আক্রমণ করতে থাকে। টন্টি তার হাতের একমাত্র শক্তি গুলতি দিয়ে প্রতিহত করে। প্রতিহত এসব ফল থেকে জুস তৈরি করে গ্লাস ভরতে থাকে। এভাবেই একেকটি ধাপ অতিক্রম করে টন্টি সামনে এগিয়ে যায় মন্টিকে বাঁচাতে। মোট পাঁচটি ধাপে গেমটি সম্পন্ন করা যাবে। প্রতিটি ধাপেই রয়েছে দারুণ সব চ্যালেঞ্জ। গুগল অ্যান্ড্রয়িড ও অ্যাপল আইওএস ডিভাইসে খেলা যাবে এটি। গেমটি তৈরি করেছে স্পিনঅফ স্টুডিও বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানি। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এএসএম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গেমটি অবশ্যই গেমারদের চাহিদা মেটাবে বলে আমার বিশ্বাস। ইতোমধ্যেই গেমটি সাড়া ফেলেছে।’ ওগিলভি অ্যান্ড মেথরের অ্যাসোসিয়েট অ্যাকাউন্ট ডিরেক্টর সাবিহ আহমেদ বলেন, ‘যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে এমন গেম তৈরি সত্যিই আলাদা একটি মিডিয়ার কথা জানিয়ে দেয়, যেখানে প্রযুক্তি পণ্যের মাধ্যমে গেমারদের কাছে পৌঁছে যাবে ট্যাংয়ের নতুন পাঁচটি ফ্লেভার ড্রিঙ্কসের কথা।’
বেঙ্গল রাইড
স্মার্টফোনে খেলার গেম ‘বেঙ্গল রাইড’। সাধারণ গেমের সাথে এর পার্থক্য হলো, এ গেমটি বেশ তথ্যসমৃদ্ধ। খেলার সময় গেমটি ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন তথ্য দেবে। এসব তথ্যের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যও আছে। গেমটি তৈরি করেছে আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল এইউএসটি ড্রিমার্স। সম্প্রতি ইএটিএল আয়োজিত স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরির প্রতিযোগিতার শীর্ষ দশে ঠাঁই পেয়েছে গেমটি।
দেশে তৈরি আরও গেম
দেশী আরেক প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালনা প্রধান সাঈদুল ইসলাম জানান, তারা সাধারণত গ্রাহকদের চাহিদার ভিত্তিতে গেম তৈরি করেন। যেমন- চ্যাম্পস২১-এর জন্য তারা লিটল তন্ময়, ম্যাডমেটিক্স ও মাঙ্কি জাম্প তৈরি করেছেন। নকিয়ার অভি স্টোরের টিক ট্যাক টয় ও গো গো টাইগারও তাদের তৈরি। শুরুর দিকের প্রতিষ্ঠান আইটিআইডব্লিউর তৈরি আলোচিত গেমগুলোর মধ্যে রয়েছে- ডুডল ডিনো ফার্ম, ডুডল ফিশ ফার্ম, গ্লো ডুডল ফল, গ্লো ফিশি, গ্লো জাম্প, ডুডল মনস্টার ফার্ম, মনস্টার জাম্প ও ক্রিসমাস ফার্ম। আরেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান জেনুইটি সিস্টেম থেকে এ পর্যন্ত চার শতাধিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গেমও আছে। ড্রিফট ম্যানিয়া, হকি ফাইট, মাইক ভি’র মতো জনপ্রিয় গেমগুলোও বাংলাদেশে তৈরি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে বছরে আয় হওয়া প্রায় ২৩ কোটি মার্কিন ডলারের বেশিরভাগই এসব গেম বিক্রি থেকে আসা।
রয়েছে ফ্রিল্যান্স গেম নির্মাতাও
অল্প সময়ের মধ্যেই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির কাজ বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গেম ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেই শুধু গেম ডেভেলপারদের চাহিদা এমনটি নয়। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিদিনই গেম ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রচুর প্রজেক্ট জমা পড়ছে। ইল্যান্স-ওডেস্ক জব ট্রেন্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একজন ওয়েব ডিজাইনার কিংবা সার্চইঞ্জিন অপটিমাইজার যেখানে গড়ে ১০ থেকে ১২ ডলার মূল্যে প্রতিঘণ্টা কাজ করেন, সেখানে একজন গেম কিংবা মোবাইল অ্যাপস অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপারের ঘণ্টাপ্রতি গড় আয় ২৫ থেকে ৫০ ডলার। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও গেম ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন মাহমুদ হাসান সানি। তিনি বলেন, বর্তমানে বিলিয়ন ডলারের এই সেক্টরে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। সাধারণ ফ্রিল্যান্সিং কাজের তুলনায় গেম ডেভেলপমেন্টে অনেক বেশি আয় করা যায়। অনেকেই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গেম ডেভেলপমেন্ট করে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঠিক এই মুহূর্তে কতজন এই সেক্টরে কাজ করছেন, তার সঠিক তথ্য নেই।
মোবাইল গেম ডেভেলপার হতে হলে
মোবাইল গেম ডেভেলপ করতে হলে আপনাকে জাভা বা অবজেক্টিভ সি, সি++ ও অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং অ্যানালাইসিস জানতে হবে। বেছে নিতে হবে পরিকাঠামো। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি পরিকাঠামো হচ্ছে অ্যান্ড্রয়িড ও আইওএস। অ্যান্ড্রয়িডের প্রোগ্রামিং ভাষা হলো জাভা। যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার পর আরও কিছু বিষয় জানতে হবে। যেমন- ভেরিয়েবল, অপারেটর, স্টেটমেন্ট, কন্ডিশন, ইটারেটর, মেমরি ম্যানেজমেন্ট, অ্যারে ও ফাইল অপারেশন। অ্যান্ড্রয়িড ও আইওএস- এ দুটিতেই এমসিভি পদ্ধতিতে কাজ করতে হয়। ইভেন্ট হ্যান্ডলিং ছাড়া আরও কিছু ব্যাপার আছে, যা অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং, অ্যানালাইসিস, ডিজাইন, ডেভেলপমেন্টের কৌশল রপ্ত না করলে বুঝতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে।
দরকার বাড়তি নজর
সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস সূত্রে জানা গেছে, শুধু মোবাইল গেমিং নিয়ে কাজ করছে বেসিসের তালিকাভুক্ত ১৩টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো মোবাইল গেম, অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছে। দেশের মেধাবী ও দক্ষ জনবল কাজে লাগিয়ে বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করছেন এসব উদ্যোক্তা। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার বা নীতিনির্ধারকদের কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দক্ষ জনবল তৈরি করতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গেমিংসংশ্লিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলেও মত দেন অনেকে। ওডেস্কের সাবেক কান্ট্রি অ্যাম্বাসাডর ও বিজনেস অ্যাপ স্টেশনের অ্যাপ আর্কিটেক্ট মাহমুদ হাসান সানি বলেন, প্রাথমিকভাবে গেম তৈরি করে বাজারে ছাড়ার জন্য সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কিট (এসডিকে) কিনতে ন্যূনতম ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে শুরু করে প্রায় ৫ হাজার ডলারের প্রয়োজন হয়। একজন ফ্রিল্যান্সার বা নতুন প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি অনেক ব্যয়বহুল। তাই ইচ্ছা ও কাজ জানলেও অনেকে গেম ডেভেলপমেন্টে এগিয়ে যেতে পারছেন না। বাইরের দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মোবাইল গেম ডেভেলপমেন্টের চার বছর মেয়াদী ডিপেস্নামা প্রশিক্ষণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এ ধরনের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যদি এ ধরনের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়, তাহলে বাংলাদেশে গেম ডেভেলপমেন্ট সেক্টরটি অনেকাংশে এগিয়ে যাবে।
ডেভেলপারদের জন্য অনুমোদন পেল ভার্চুয়াল কার্ড
বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ভার্চুয়াল কার্ড। এর মাধ্যমে অনলাইনে যেকোনো ধরনের পেমেন্ট করা যাবে। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি অনলাইনে লেনদেনের সুযোগ না থাকায় মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারস, ফ্রিল্যান্সার বা গেম নির্মাণকারীদের আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি বাজারের সাথে যুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এ অসুবিধার কথা চিমত্মা করেই প্রযুক্তি খাতকে আরও বেশি সমৃদ্ধশালী করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রচেষ্টায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে অনুমোদন পেল ভার্চুয়াল কার্ড। গত ২ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের অন্তর্ভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও গেম নির্মাণকারীদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেনের জন্য ‘ভার্চুয়াল কার্ড’ ইস্যু করার সুবিধা দেবে। এ কার্ড দিয়ে গুগল, আইটিউনস, ফায়ারফক্স, উইন্ডোজ, বস্ন্যাকবেরিসহ এ ধরনের অন্যান্য মোবাইল মার্কেটপ্লেসের নিবন্ধন/লাইসেন্স ফি দেয়া যাবে। পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও গেম ডেভেলপমেন্টের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহারের লাইসেন্স ফি দেয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় ডোমেইন/হোস্টিং কেনা বা পুনর্বহাল, ক্লাউড সেবা কেনার অর্থ দিতেও এ কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া অনলাইনে আয়োজিত নানা ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অর্থ দেয়া যাবে এ কার্ড দিয়ে। জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপস উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচির আওতায় অংশগ্রহণকারী ডেভেলপার, বেসিস বা এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এবং অন্যান্য স্বীকৃত একাডেমিক বা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নানা ধরনের বুট ক্যাম্প, প্রশিক্ষণ কর্মশালা ইত্যাদিতে সনদপ্রাপ্ত ডেভেলপার ও ফ্রিল্যান্সারেরা অনুমোদিত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এই কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। এই উদ্যোগের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সংযুক্ত হওয়ার পথে বাংলাদেশী ডেভেলপারদের প্রধান বাধা দূর হলো। কিন্তু এ কার্ড দিয়ে এক বছরে ৩০০ মার্কিন ডলার বা তার সমমূল্যের বেশি অর্থ লেনদেন করা সম্ভব হবে না। তবে বিভিন্ন বছরে ৩০০ ডলার লেনদেন খুবই সামান্য বলে জানান সিনিয়র অ্যাপ ডেভেলপারেরা।
দেশব্যাপী ‘উই মেক গেমস’ প্রকল্প
দেশের তরুণ গেমারদের গেম ডেভেলপমেন্টে উৎসাহ দেয়ার জন্য ও বাংলাদেশকে একটি গেম ডেভেলপার দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করার লক্ষ্যে ‘উই মেক গেমস’ নামে এক কর্মসূচি শুরু করে ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেড। সম্প্রতি ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেড স্কলাসটিকা স্কুলে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করে। ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী এসএম মাহাবুব আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উই মেক গেমস প্রকল্প পরিচালক ড. ওয়াং। উপস্থিত ছিলেন ম্যাসিভস্টার স্টুডিও লিমিটেডের লিড গেম ডেভেলপার ফারহান মাহমুদ, লিড লেভেল ডিজাইনার নুর এ আরাফাত ও ত্রিমাত্রিক মডেল ডিজাইনার আতিউল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে গেম তৈরি করে আসছে ম্যাসিভস্টার স্টুডিও। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গেম তৈরিতে আগ্রহী করার জন্য এ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই দেশের ৪০০ স্কুল ও কলেজে ৮০ হাজার ছাত্রছাত্রীদেরকে গেম তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ শুরু করেছে। এক বছর ধরে এ প্রকল্প চলবে। ইতোমধ্যে ধানম-- সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ডারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, আর্ক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, লোরেটো ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ ঢাকার বেশ কয়েকটি স্কুলে ‘উই মেক গেমস’ প্রোগ্রামটি চলেছে।
এগিয়ে এসেছে সরকার
দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি পাওয়া তথ্যমতে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা গড়ে ন্যূনতম একটি অ্যাপস ব্যবহার করেন। প্রতিদিন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যায় করেন অ্যাপস ব্যবহারে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের ৮৬ শতাংশ সময় ব্যয় করেন অ্যাপস ব্যবহারে। আর এসব অ্যাপসের বেশিরভাগই বিভিন্ন গেম। তাই মজার ও প্রয়োজনীয় গেম ডেভেলপমেন্ট করতে পারলে বিলিয়ন ডলারের বাজারে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়টি অনুধাবন করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশে অ্যাপস ডেভেলপ বাড়াতে মন্ত্রণালয় থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার করা হয়েছে। এতে হাতেকলমে মোবাইল অ্যাপস, গেম তৈরি ও সেগুলো থেকে আয়ের নানা দিক নিয়ে শেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মোবাইল গেম সর্বোপরি অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আমরা ভালো কিছু করতে চাই। তাই ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অ্যাপস ডেভেলপমেন্টবিষয়ক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করাসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের উপযোগী অ্যাপস তৈরি করতে পারলেই অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি হাজার হাজার ডলার আয় করতে পারবে। আর এই অ্যাপসগুলোর মধ্যে গেম প্রাধান্য পাবে।’
মোবাইল গেম বাজারের হালনাগাদ কিছু তথ্যকণিকা
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ভিডিও গেমের বাজারে ১.২ বিলিয়নের বেশি গেমার রয়েছেন। ২০১৪ সালের মধ্যে এই বাজারের রেভিনিউ হবে ১০১ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে ৯৬৬ মিলিয়নের বেশি মোবাইল গেমার রয়েছেন। বছর শেষে মোবাইল গেমের বাজারের রেভিনিউ ১৭.১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মোবাইল গেমের পেছনে গেমারেরা গড়ে মাসে অন্তত ২.৭ ডলার ব্যয় করেন।
কিনে মোবাইল গেম খেলেন এমন গেমারের সংখ্যা ৩৬৮ মিলিয়ন, যা ২০১৬ সাল নাগাদ ৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫১ শতাংশে পৌঁছবে।
২০১৩ সালে ফিচার ফোনের বাজার ছাড়িয়ে যায় স্মার্টফোনের বাজার। গত বছর বাজারে বিক্রি হওয়া সব ফোনের ৫৫ শতাংশই ছিল স্মার্টফোন, যার সংখ্যা ১ বিলিয়নের বেশি।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে তা ৫.৬ বিলিয়নে পৌঁছবে।
মোট ডাউনলোড হওয়া অ্যাপসের ৭০ শতাংশের বেশি হলো গেম।
স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ৫৩ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী প্রতিদিন অন্তত একবার গেম খেলেন। এদের অর্ধেকের বেশি দিনে এক ঘণ্টার বেশি গেম খেলেন।
বর্তমানে গেমারদের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি।
পুরুষদের চেয়ে নারীরা গেমের পেছনে ৩৫ শতাংশ বেশি সময় ও ৩১ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করেন।
২০১৩ সালে শুধু আমেরিকার ২৪৭ জন মোবাইল গেম ডেভেলপার ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেন।
আমেরিকায় গেমের পেছনে ২৪২ মিলিয়ন গেমার বছরে ৩.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। চীনে ২৬৬ মিলিয়ন গেমার ব্যয় করেন ৩ বিলিয়ন ডলার। এই দুটি দেশে গড়ে একজন গেমার যথাক্রমে ২১.৭ ডলার ও ৩২.৪৬ ডলার ব্যয় করে।
সূত্র : talkingdata.net I superdataresarch.com
বেসিসে মোবাইল গেমবিষয়ক সেমিনার
বিলিয়ন ডলারের গেমের বাজার ধরতে যৌথভাবে কাজ করতে হবে
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭৪ কোটি ৭০ লাখ গেমার রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু মোবাইল ডিভাইসে গেম খেলেন ১২০ কোটি মানুষ। এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, বিশ্বব্যাপী মোবাইল গেম ঝড় তুলেছে। বিশ্বে যে পরিমাণ গেম আছে, তার প্রায় ৭০ শতাংশ স্মার্টফোনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার নতুন গেম এসব ডিভাইসে ডাউনলোড হচ্ছে।
মোবাইল গেমের এ জনপ্রিয়তায় দেশের গেম ইন্ডাস্ট্রিকে সামনে এগিয়ে নিতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে গত ১১ আগস্ট ‘মোবাইল গেম ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা জানানো হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস এদিন বিকেলে বেসিস মিলনায়তনে গুগল ডেভেলপার গ্রুপ (জিডিজি) সোনারগাঁ, আলো ভেঞ্চার ও মোবাইল মানডে ঢাকা চ্যাপ্টারের সাথে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে গেম ডেমো প্রদর্শন ও প্যানেল আলোচনা হয়। বেসিস পরিচালক ও এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম আশরাফ আবিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন গুগলের বাংলাদেশ কান্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট খান মো: আনোয়ারুস সালাম, পেচাস গেম স্টুডিওর প্রধান নির্বাহী মাইয়াজ এম রহমান, ভেক্সোলাইভ গেমসের প্রতিষ্ঠাতা আদনান ইসলাম, ট্যাপ স্টার অ্যাপসের প্রধান নির্বাহী একেএম মাসুদুজ্জামান, সূর্যমুখীর প্রধান নির্বাহী ফিদা হক, ১৪৩প্লের প্রতিষ্ঠাতা ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার এমএম হাসান, স্পিনঅফ স্টুডিওর মো: আসাদুজ্জামান, ড্রিমার ডানকির প্রধান নির্বাহী মসিউর রহমান চৌধুরী, ক্ষুদ্রল্যাবের বিপণন কর্মকর্তা ইফতেখার রাসেল, মোবিওঅ্যাপের চিফ অপারেটিং অফিসার আরেফিন প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ২০১৬ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী গেম ইন্ডাস্ট্রির বাজার ২ হাজার ৩৯০ কোটি ডলারে পৌঁছবে, সেখানে বাংলাদেশের অংশীদার খুবই সামান্য। বাংলাদেশে মোবাইল গেম তৈরি কয়েক বছর আগে শুরু হলেও সফলতার পরিমাণ খুবই কম। যদিও সম্প্রতি বাংলাদেশী গেমগুলো বিশ্ববাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে। বেশ কিছু গেম অ্যাপস স্টোরের শীর্ষেও উঠে এসেছে।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ অ্যাপস ডাউনলোড হয়, তার ৭০ শতাংশের বেশি গেম। তাই এ সেক্টরের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে গেম ডেভেলপমেন্ট ও আপলোডে যে প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করতে পারলে ও আগ্রহী করে তুলতে পারলে কয়েক হাজার কোটি ডলারের বাজারের একটি অংশ দখল করা সম্ভব হবে। শুধু লোকাল মার্কেটকে লক্ষ না করে আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে কাজ করতে হবে। আয়োজকেরা জানান, এ ধরনের সেমিনারের মাধ্যমে সবাই একত্রিত হলে আগামীতে বাংলাদেশের মোবাইল গেম ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তাই এ ধরনের সেমিনারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।