লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গণিতের অলিগলি
গণিতের অলিগলি (পর্ব-১০৩)
কয়টি মজার গুণ
আমরা এখানে আটটি মজার গুণ করে দেখাব। এগুলোর মধ্যে একটা মজার সম্পর্ক রয়েছে। দেখা যাবে আমরা যে সংখ্যাকে গুণ করছি, এর একদম ডানের অঙ্কটি তুলে নিয়ে একদম বামে বসিয়ে দিলেই গুণফল পেয়ে যাচ্ছি। নিচের গুণফলগুলো এর প্রমাণ।
এক : ১০৫২৬৩১৫৭৮৯৪৭৩৬৮৪২
ক্ম ২
২১০৫২৬৩১৫৭৮৯৪৩৭৬৮৪
দুই : ১০৩৪৪৮২৭৫৮৬২০৬৮৯৬৫৫১৭২৪১৭৯৩
ক্ম ৩
৩১০৩৪৪৮২৭৫৮৬২০৬৮৯৫৫১৭ ২৪১৭৯
তিন : ১০২৫৬৪
ক্ম ৪
৪১০২৫৬
চার : ১০২০৪০৮১৬৩২৬৫৩০৬১২২৪৪৮৯৭৯৫৯১৮৩৬৭৩৪৬৯৩৯৭৭৫৫
ক্ম ৫
৫১০২০৪০৮১৬৩২৬৫৩০৬১২২৪৪৮৯৭৯৫৯১৮৩৬৭৩৪৬৯৩৯৭৭৫
পাঁচ : ১০১৬৯৪৯১৫২৫৪২৩৭২৮৮১৩৩৫৯৩২২০৩৩৮৯৮৩০৫০৮৪৭৪৫৭৬২৭১১৮৬৪৪০৬৭৭৯৬৬
ক্ম ৬
৬১০১৬৯৪৯১৫২৫৪২৩৭২৮৮১৩৩৫৯৩২২০৩৩৮৯৮৩০৫০৮৪৭৪৫৭৬২৭১১৮৬৪৪০৬৭৭৯৬
ছয় : ১০১৪৪৯২৫৩৬২৩১৮৮৪০৫৭৯৭
ক্ম ৭
৭১০১৪৪৯২৫৩৬২৩১৮৮৪০৫৭৯
সাত : ১০১২৬৫৮২২৭৮৪৮
ক্ম ৮
৮১০১২৬৫৮২২৭৮৪
আট : ১০১১২৩৫৯৫৫০৫৬১৭৯৭৭৫২৯০৮৯৮৮৭৬৪০৪৪৯৪৩৯২০২২৪৭১৯
ক্ম ৯
৯১০১১২৩৫৯৫৫০৫৬১৭৯৭৭৫২৯০৮৯৮৮৭৬৪০৪৪৯৪৩৯২০২২৪৭১
এই গুণফলগুলোকে আমরা এভাবেও সংজ্ঞায়িত করতে পারি :
কখগঘঙ ক্ম ঙ = ঙকখগঘ কিংবা
ঈউঊঋএ ক্ম এ = এঈউঊঋ ।
গোল্ডেন প্রিডিকশন
এখানে গণিতের একটি মজার সম্পর্ক জানব। তবে এর জন্য একটু সময় লাগবে। প্রথমেই একজনের কাছে এক টুকরো কাগজ ও একটি পেন্সিল দিয়ে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে বলুন।
এক : তাকে বলুন কাগজটিতে ১, ২, ৩, ... ইত্যাদি নম্বর দিয়ে ২৫টি লাইন টানতে।
দুই : প্রথম দুই লাইনে ইচ্ছেমতো যেকোনো দুইটি পূর্ণ সংখ্যা লিখতে বলুন।
তিন : প্রথম দুই লাইনে লেখা সংখ্যা দুইটির যোগফল তৃতীয় লাইনে বসাতে বলুন।
চার : দ্বিতীয় ও তৃতীয় লাইনের সংখ্যা দুইটির যোগফল চতুর্থ লাইনে বসাতে বলুন।
পাঁচ : তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনের সংখ্যা দুইটির যোগফল পঞ্চম লাইনে বসাতে বলুন।
ছয় : এভাবে পূর্ববর্তী দুই লাইনের সংখ্যা দুইটির যোগফল পরবর্তী লাইনে বসাতে থাকুন।
সাত : এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে সংশ্লিষ্ট যোগফল দিয়ে উল্লিখিত ২৫টি লাইন পুরো করুন।
এখন দেখা যাক, এর মধ্যে গণিতের কী মজা লুকিয়ে আছে।
এবার তাকে স্মরণ করিয়ে দিন, প্রথম দুই লাইনে তার বসানো সংখ্যা দুইটি কী ছিল, তা আপনার জানা ছিল না। লোকটি তার পছন্দ মতো যেকোনো দুইটি পূর্ণ সংখ্যা নিয়েছিলেন। অতএব, এই ২৫ লাইনের কোনটিতে কোন সংখ্যা লেখা আছে, তাও আপনার জানার কথা নয়।
এবার আপনি আলাদা কাগজ ও পেন্সিল নিয়ে এ কাগজে গভীর মনোযোগ দিয়ে লিখুন আপনার আগে থেকে মুখস্থ কার সংখ্যা ১.৬১৮০৩৩৯৮৯...। একটু সময় নিয়ে এমন ভাব নিয়ে একটা একটা করে অঙ্কগুলো লিখুন, যেনো লোকটি মনে করেন আপনি চিন্তা করে করে সংখ্যাটির অঙ্কগুলো লিখছেন।
এখন তাকে বলুন উল্লিখিত ২৫টি লাইনের শেষ পাঁচ লাইনের অর্থাৎ ২১ নম্বর লাইন থেকে শুরু করে ২৫ নম্বর পর্যন্ত লাইনের সংখ্যাগুলোর দিকে নজর দিতে। তাকে বলুন এই পাঁচ লাইনের সংখ্যাগুলোর যেকোনো একটি নিয়ে এর আগের লাইনের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে সবসময় ভাগফল হবে আপনার লেখা সংখ্যা ১.৬১৮০৩৩৯৮৯...। আসলে গণিতের ছাত্ররা জানেন এই সংখ্যাটিকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও। সেজন্যই আমরা উপরে উল্লিখিত গণিতের মজার ব্যাপারটির নাম দিয়েছি গোল্ডেন প্রিডিকশন।
গণিতের ফাঁকিবাজি
গণিতে কেউ যদি বলেন ২ = ৩, তা কি কেউ মেনে নেবেন? মেনে নেবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, আমরা যদি বলি ২ = ৩, এবং এমনটি মেনে নেই, তবে গণিতের সব শেখা ওলটপালট হয়ে যাবে। গণিত আর গণিত থাকবে না। পুরো গণিতই মিথ্যে হয়ে যাবে।
এরপরও আমি প্রমাণ করে দেখাব ২ = ৩।
কীভাবে, তাই দেখুন। আর খেয়াল রাখুন কোথায় আমি ভুল লিখছি।
প্রথমে অবশ্যই আমি লিখতে পারি
১২ = ১২
বা, ১২ + ১৮ = ১২ + ১৮
বা, ১২ - ১২ = ১৮ - ১৮
বা, ১২ - ৮ - ৪ = ১৮ - ১২ - ৬
বা, ২ (৬ - ৪ - ২) = ৩ ( ৬ - ৪ - ২)
এখন উভয় পক্ষকে (৬ - ৪ - ২) দিয়ে ভাগ করে আমরা সহজেই পাই ২ = ৩।
সহজবোধ্য কারণেই বলব, এখানে গণিতের যেসব অপারেশন আমরা করলাম তাতে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ভুল আছে। তা না হলে ২ সমান ৩ কখনই হতো না। আসলে এখানে আমরা উভয় পক্ষকে (৬ - ৪ - ২) দিয়ে ভাগ করাটাই ছিল একটি গাণিতিক ভুল। কারণ এর মান শূন্য, আর শূন্য দিয়ে কোনো কিছুকে ভাগ করা যায় না। তবে এই ভুলটা সবার চোখে ধরা পড়ে না বলেই গণিতর এই ফাঁকিবাজি করে আমার মতো অনেকেই দেখাতে চায় ২ = ৩, কিংবা ২ = ৪ ইত্যাদি। আসলে তা কখনই হওয়ার নয়, এবং মেনে নেয়া যায় না।