লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
যে ভুলগুলো উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা
আজ থেকে ১৫ বছর আগে বাংলাদেশে ই-কমার্সের সূচনা হলেও আজ অবধি তা প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ানোর কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এমনকি স্বাভাবিক একটা গতিও এ ব্যবসায় আসেনি। অথচ প্রায় ২ শতাধিক ই-কমার্স সাইট রয়েছে। এর মধ্যে শ’খানেক প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যবসায়ের ই-কমার্স ভার্সন রয়েছে।
বাংলাদেশে এখনও অনেক ব্যবসায় ও পেশা রয়েছে। এগুলোর চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি কাজও করছেন অনেকে। কিন্তু সেগুলো পেশাদারিত্বের একটা অবস্থানে এসে এখনও পৌঁছেনি। উদাহরণ দিতে গেলে দিয়ে শেষ করা যাবে না। হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল ছাড়া বাকি বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের প্রতিটি মাস নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে শুরু হয়। অথচ আমরা কথায় কথায় বলি আমাদের মিডিয়া অনেক অগ্রসর। রিয়েল স্টেট সেক্টর আমার জানা মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিত একটি খাত। শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি কোম্পানি এবং আরও কিছু কোম্পানি আছে, যাদের নিজস্ব কাস্টমার আছে, তারা ছাড়া বাকিদের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। আমরা জানি, এই সেক্টরে প্রাইভেটে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। আর শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। একজন হোটেল শ্রমিক বা নির্মাণ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দিলে তার এমন কোনো সঞ্চয় থাকে না, যা দিয়ে সে কয়েক মাস চলবে।
সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আজকের অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলোও একদিন এসব অনিশ্চয়তার মধ্য থেকে আজ বেরিয়ে এসেছে। আমাদের সব ক্ষেত্রেই কিছু কমন ফ্যাক্ট তো আছেই। আর আছে সাপোর্ট বিজনেসের জটিলতা, ব্যাংক লোন, মানুষের সচেতনতার অভাব আর প্রতারকদের প্রতারণা। তার ওপর আছে নিজেদেরও নানা ধরনের সমস্যা।
ই-কমার্সের গতিটা ত্বরান্বিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কেই আজ এ লেখার অবতারণা।
না জেনেই শুরু করা
ই-কমার্সে ঘরে বসে ব্যবসায় করা যায়, একথা শুনেই সবাই উৎসাহী হন। বিস্তারিত না জেনে অথবা ই-কমার্স সম্পর্কে ভালো না বুঝে বা সমস্যা-সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়ে অনেকেই ওয়েবসাইট খুলে ব্যবসায় শুরু করছেন। অথচ এর আগে বাজার ও ক্রেতা সম্পর্কে যে একটা স্টাডি করা দরকার, সেটা কেউ বুঝতে রাজি নন। ফলে একটা পর্যায়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে অথবা ভালো ফল না পেয়ে রণেভঙ্গ দিয়ে বসেন।
সিদ্ধান্তহীনতা
যারা ই-কমার্স করতে আসছেন তাদের অনেকেই ব্যবসায়ের অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছেন। যেমন কাস্টমার কারা হবে, তিনি কোন পণ্য বিক্রি করবেন, কেন করবেন, কত লাভ করবেন, কত লাভ করা যক্তিযুক্ত, কত লাভ করলে মার্কেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, কোন এলাকা টার্গেট করবেন, তার প্রচার-কৌশল কী হবে, কীভাবে পণ্য গ্রাহকের হাতে যাবে, কীভাবে দাম পরিশোধ হবে, কীভাবে মান নির্ধারণ হবে, কীভাবে প্যাকিং ও পরিবহন হবে- এসব বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ব্যবসায় শুরু করেছেন। এ অবস্থায় ই-কমার্সের সাগরে একজন দিশাহীন মাঝির মতো বৈঠা বাইলে গন্তব্যের দেখা পাওয়া তো কঠিন হবেই।
দৃঢ়চিত্ত না হওয়া
আর একটা ব্যাপার হলো হেলাফেলা করা। অনেকেরই মনোভাব এরকম- দেখি না কী হয়। হলে তো হলো, না হলে অন্য কিছু করব। এই মনোভাবে কাজ করলে কখনই ব্যবসায় দাঁড়াবে না। এটা আহছানিয়া মিশনের লটারির টিকেট নয় যে কিনে ফেলে রাখলাম। যদি লাইগা যায়। এখানে দৃঢ়চেতা হতে হবে। অন্তত এটা মনে করুন- যতদিন ই-কমার্স নিয়ে কাজ করব, ততদিন ভালোভাবেই করব। সফল হওয়ার জন্য যা যা দরকার সবই করব। এতটুকু মনোভাবে এবং কাজ আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
নানা ধরনের ভুল ধারণা
যেহেতু ই-কমার্স মানেই ঘরে বসে ব্যবসায়। সুতরাং অনেকেই একটি সাইট বা পেজ খুলে বসে থাকেন। তারা মনে করেন, পেজ থেকে এমনি এমনি সব প্রোডাক্ট বিক্রি হয়ে যাবে। ফলে তারা ব্যবসায় উন্নয়নের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেন না। আজ রকমারি ডটকমকে যদি দেখেন, তারা কিন্তু পোস্টার আর রাস্তায় ব্যানার দিয়ে পরিচিতি পেয়েছে। যদিও ব্যবসায়টা অনলাইনে। বিক্রয় ডটকম সম্পর্কে একই কথা প্রযোজ্য। তারা টিভিকে বেছে নিয়েছিল। আপনার অতটা না হোক, ফেসবুক কিংবা আরও স্বল্প পরিসরেও প্রচারণা চালানো যায়। মোট কথা, আপনার সাইট ও পণ্যের খবর কাস্টমারকে জানাতে হবে।
সিরিয়াস না হওয়া
যারা এটাকে পার্ট টাইম বা সময় কাটানোর কাজ মনে করেছেন, তারা পিছিয়ে রয়েছেন। আর যারা সিরিয়াস হয়েছেন, তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনার ব্যবসায় ঘরে বসে হবে, এটা সত্য। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে ব্যবসায়টা দাঁড়াবে না। ব্যবসায় দাঁড়ানোর আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। সোজা কথায় লেগে থাকতে হবে। যেমন, একটা গ্রামীণ ব্যাংকের পেছনে একজন ইউনূসের জীবনপণ যুদ্ধ ছিল। একটা ব্র্যাকের পেছনে একজন ফজলে হাসান আবেদের সারাজীবন চলে গেছে। একটা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পেছনে নিবেদিত হয়েছেন একজন স্যার আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ। একটা বসুন্ধরা গ্রম্নপ, একটা অটবির পেছনে একজন মানুষ তার জীবন-যৌবন ক্ষয় করেছেন। এখন ব্যবসায়গুলো দাঁড়িয়ে গেছে। তারা শুধু এক জায়গায় বসে লক্ষ রাখছেন এর প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করছে কি না।
ঐক্যবদ্ধ না হওয়া
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প বিকাশের পেছনে ঐক্যবদ্ধ বিজেএমইএ’র বিশাল ভূমিকার কথা সবার জানা। আমাদের এখানে সবাই নিজে নিজে পয়সাওয়ালা হতে চায়। এ ধরনের একটা মানসিকতার কারণে নিজে নিজে সব করতে চায়। অথচ ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা যেমন ব্যবসায়িক জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে, তেমনি একজনের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার কারণে খরচ কমে যায়। যেমন, কখনও দেখা যায় একই কাউন্টারে ১০টি বাসের টিকেট পাওয়া যায়। ১০টি বাস কোম্পানি মিলে একটি কাউন্টার করার মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের খরচ কিন্তু ১০ শতাংশ কমে গেছে। আমরা জানি, দেশী ১০টি ফ্যাশন হাউস এক হয়ে দেশীদশ নামে অভিন্ন আউটলেট প্রতিষ্ঠা করেছে। এতে তাদের শুধু খরচ নয়, ব্যবস্থাপনা এবং গ্রাহক সমাগমে সহজ হয়েছে। আবার ক্রেতাদের জন্য এটা একটা উপকার। তারা একসাথে ১০টি ব্র্যান্ডকে পাচ্ছে।
অন্যান্য
এ ছাড়া আরও কিছু ভুল ব্যক্তিবিশেষে করে থাকেন। তা হলো অন্য কোম্পানির বদনাম করা, অন্যকে হিংসা করা এবং কাস্টমারের চাহিদার ব্যাপারে গাফিলতি করা। আপনি প্রোডাক্টস যে সময়ে পাঠানোর ওয়াদা করেছেন, কোনো কারণে দেরি হলে গ্রাহককে বিনয়ের সাথে সেটা জানানো উচিত। আবার অনেকেই জানেন না যে কুরিয়ার ও ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলো কী পরিমাণ টানাহেঁচড়া করে মাল ওঠানামা করায়। ফলে দুর্বল প্যাকিংয়ের কারণে পণ্য নষ্ট হয়। প্যাকিং মজবুত করার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
সুতরাং উপরের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে আমরা অতীতের ভুলগুলো সমাধান করে যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে সাফল্য অপেক্ষা করছে। কারণ বাজার এখনও ফাঁকা রয়েছে। এখনও কেউ এককভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। এখনই সময় আপনার উঠে দাঁড়ানোর। আপনার যদি কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা থাকে, তাহলে একটা নিবেদিতপ্রাণ টিম গঠন করে এগিয়ে যান। আর যদি তা না থাকে, তাহলে ১০ জনে মিলে কাজ ভাগাভাগি করে শুরু করুন। আপনাদের সাফল্য কামনা করছি
ফিডব্যাক : facebook.com/jshovon?fref=nf
সূত্র : www.facebook.com/groups/eeCAB