লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: আরিফুল হাই রাজীব
মোট লেখা:১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
গ্রামে ই-কমার্স
বাংলাদেশে ই-কমার্স দেরিতে শুরু হলেও ই-কমার্স এখন আর নতুন কোনো বিষয় নয়। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ই-কমার্স খাত দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচশ’র মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রি করছে। এছাড়া এক হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান ও ছোট উদ্যোক্তা ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। তবে ই-কমার্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ই-কমার্সকে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান একটি ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। আমাদের দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ লোক গ্রামে বাস করে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। এমনকি অন্য যেসব খাত রয়েছে, সেগুলোও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- গ্রামের মানুষের জীবনে ই-কমার্স কেন দরকার এবং ই-কমার্স গ্রামের মানুষের জীবনকে অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে সমৃদ্ধ করবে? গ্রামে ই-কমার্স ছড়িয়ে দিতে হলে সবার আগে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে।
ধরুন, আরজ আলীর একটি ছোট মুদির দোকান আছে। ঘরে মেয়ে আসমা আর তার বউ। ছোট দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনজনের একরকম চলে যায়। খুব ভালো নয়, কিন্তু আবার খারাপও নয়। একদিন আসমার হঠাৎ ভীষণ জ্বর হলো। আরজ আলী প্রথমে তাকে গ্রামের স্থানীয় ডাক্তার দেখালেন। ডাক্তার ওষুধ দিলেন। দুই দিন গেল, তিন দিন গেল- জ্বর তবু নামে না। আরজ আলী জেলা হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে গেলেন, কিন্তু সেখানে গিয়েও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। তখন ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিলেন ঢাকায় বড় ডাক্তার দেখাতে। আরজ আলীর মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ঢাকায় কোথায়, কোন হাসপাতালে, কোন ডাক্তারের কাছে যাবেন? কী ওষুধপত্র লাগবে। ঢাকায় মেয়েকে নিয়ে যাওয়া, থাকা-খাওয়ার খরচ তার মতো ছোট দোকানদারের জন্য বিশাল ব্যাপার। ঘটনাটি কাল্পনিক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে অনেক লোক রয়েছেন যারা আরজ আলীর মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। গল্পটি কাল্পনিক হলেও এ সমস্যা চিরাচরিত। আমাদের গ্রামের মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসা পান না। কারণ গ্রামে ভালো ডাক্তার নেই, নেই ভালো হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা। এমনকি ভালো ওষুধের দোকানও নেই। এ কারণে গ্রাম থেকে অনেক লোক ঢাকায় আসেন চিকিৎসার জন্য। যদি অনলাইনে এ ধরনের মেডিক্যাল সেবা দেয়া যেত, তাহলে আরজ আলীর মতো অনেক লোকই উপকৃত হতেন। শুধু চিকিৎসা নয়, অনলাইনে কম দামে ভালো ওষুধ পাওয়া গেলে এসব সাধারণ মানুষকে টাকা খরচ করে ঢাকায় আসতে হবে না। গ্রামে বসে অল্প টাকার বিনিময়ে তারা ওষুধ ও সেবা পাবেন। এটা তো একটা উদাহরণ। এরকম অনেক পণ্য ও সেবা আছে, যেগুলো গ্রামের মানুষ কিনতে চাইলেও কিনতে পারেন না। যেমন- বই, কাপড়, ইলেকট্রনিক্স পণ্য- এরকম আরও নানা ধরনের পণ্য। অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজেই গ্রামের ঘরে বসেই এসব পণ্য কিনতে পারেন। তাই প্রথম প্রশ্নের উত্তর পাঠক পেয়ে গেছেন- গ্রামের মানুষের জন্য ই-কমার্স খাত খুব দরকারি।
এখন আসা যাক দ্বিতীয় প্রশ্ন ই-কমার্স গ্রামের মানুষের জীবনকে অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে সমৃদ্ধ করবে? আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রামে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না। অনেক সময় আমরা পত্রিকায় খবর দেখতে পাই- অমুক গ্রামে এত মেট্রিক টন টমেটো উৎপাদিত হয়েছে, কিন্তু কেনার লোক নেই। কৃষকরা তখন উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে তাদের ফসল খুব কম দামে বিক্রি করে দেন। এদিকে শহরের লোকেরা তাজা শাক-সবজি খেতে চেয়েও পান না। অনেক সময় অতিরিক্ত দামের জন্য তারা কিনতে পারেন না। বাংলাদেশের জমি উর্বর। আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারা বছর বিভিন্ন ফসল, ফলমূল, মাছ উৎপাদিত হয়। শহরে এসব জিনিস পাওয়া যায় না। অনেকের ইচ্ছে থাকলেও তারা দুষ্প্রাপ্যতার কারণে কিনতে পারেন না। যেমন- কক্সবাজারে গেলেই অনেকে শুঁটকি মাছ কিনে নিয়ে যান। বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের পারুলিয়া, সাতক্ষীরা জেলায় প্রচুর মাছ চাষ হয়। চিংড়ি চাষের জন্য এ এলাকা বিখ্যাত। নাপাশাক উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি শাক। কিন্তু কয়জন জানেন এ শাকের কথা?
এ ধরনের পণ্যের দেশের মধ্যে বিশাল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এসব পণ্য বিক্রি করার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই। ই-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে এ ধরনের পণ্য দেশজুড়ে বিক্রি করা সম্ভব। একটি ছোট উদাহরণ- এবার আমের মৌসুম চলে গেল। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ জানান, রাজশাহী আমের জন্য বিখ্যাত। এ বছর ঢাকার অনেক লোকই ফেসবুকে বা অনলাইনে রাজশাহীর আমের অর্ডার দিয়েছেন। অনেক ওয়েবসাইট ও উদ্যোক্তা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আম বিক্রি করেছে। এরকমভাবে অনলাইনে অন্যান্য অনেক কৃষিপণ্য বিক্রি করা সম্ভব। এতে কৃষকদের লাভ হবে। তারা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন। তাদেরকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের হয়রানির শিকার হতে হবে না।
শেষ কথা, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ই-কমার্স ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ কখনই সম্পূর্ণ হতে পারে না। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অগ্রগতি সাধন করা। ই-কমার্সই হচ্ছে এ অগ্রগতির প্রধান শর্ত। ইতোমধ্যেই সরকার দেশের চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। এসব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশে খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। এজন্য দরকার সবার সদিচ্ছা
লেখক : পরিচালক (সরকার বিষয়ক)
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)