লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ই-কমার্স ব্যবসায়ে চাই কঠোর নজরদারি
যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে আমাদের জীবনযাত্রায় যেমন আমূল পরিবর্তন ঘটে, তেমনি ব্যবসায়ের ধারারও আমূল পরিবর্তন ঘটে। ব্যবসায়ের পরিবর্তনের ধারায় সারাবিশ্বে এখন চলছে ই-কমার্সের ব্যাপক বিস্তার। কর্মময় ব্যস্ত জীবনে অনেকেরই কাছে স্বসিত্ম এনেছে ই-কমার্স। আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-কমার্সের বিস্তার ঘটতে থাকলেও বাংলাদেশে এর বিস্তার ঘটতে থাকে গত কয়েক বছর ধরে। এ কথা সত্য, বাংলাদেশে ই-কমার্সের যাত্রা দেরিতেই শুরু হলেও এ সংশ্লিষ্ট ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা পেতে শুরু হয় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ কমপিউটার জগৎ-এর উদ্যোগে ও সহযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এবং দেশের বাইরে লন্ডনে ই-কমার্স মেলা আয়োজনের কারণে।
বলতে বাধা নেই, কমপিউটার জগৎ-এর কারণেই বাংলাদেশে ই-কমার্সের ব্যাপক বিস্তার ও সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে এবং দেশে ই-কমার্সের ওপর একটি সংগঠন ই-ক্যাবও গড়ে ওঠে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশে ই-কমার্স খাত দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ই-কমার্স ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কখনই সম্ভব হতে পারে না বা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে পারে না। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্পের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অগ্রগতি সাধন করা। ই-কমার্স হচ্ছে এ অগ্রগতির প্রধান শর্ত। ইতোমধ্যেই সরকার দেশের চার হাজারের বেশি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করেছে। এসব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সারাদেশে খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে পাঁচশ’র মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো গ্রাহকদের কাছে বিভিন্ন পণ্য ও সেবা বিক্রি করছে। এছাড়া এক হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান ও ছোট ছোট উদ্যোক্তা ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে। বাংলাদেশে ই-কমার্সের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। তবে ই-কমার্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ই-কমার্সকে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বসবাস গ্রামে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতের প্রধান ভিত্তি কৃষি। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এমনকি অন্যান্য যেসব খাত রয়েছে, সেগুলোও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- গ্রামের মানুষের জীবনে ই-কমার্স কেন দরকার এবং ই-কমার্স গ্রামের মানুষের জীবনকে অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে সমৃদ্ধ করবে? গ্রামে ই-কমার্স ছড়িয়ে দিতে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পেতে হবে।
এ কথা সত্য, এ দুটি প্রশ্নের উত্তর পেলেই যে ই-কমার্স সম্প্রসারণে বিদ্যমান সব বাধা দূর হয়ে যাবে, তেমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ই-কমার্স সম্প্রসারণের যেসব বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সততা ও প্রতিশ্রম্নতি রক্ষায় সেবা গ্রহণকারীর আস্থা অর্জন করা। বলা যায়, শুধু এ দুটি উপাদানের ঘাটতি হলেই ই-কমার্সের ব্যবসায় গুটিয়ে ফেলতে হবে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে। সুতরাং যেকোনো মূল্যে এ দুটি উপাদানকে ঠিক রাখতে হবে ই-কমার্স ব্যবসায়ের জন্য। ই-কমার্স ব্যবসায়ে প্রতিশ্রম্নতি রক্ষাও সততা নিশ্চিত করতে ই-কমার্সের ব্যবসায় পরিচালনা করতে যেমন থাকা দরকার সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা, তেমনই থাকা দরকার সেবা গ্রহণকারীর পক্ষে কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার।
ই-কমার্স ব্যবসায়ে ভোক্তা অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। ই-কমার্সের সংগঠন ই-ক্যাবের নীতিমালা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে যাতে কোনো অবস্থাতেই ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আস্থা না হারায়।
মোসলেম উদ্দিন
রুহিতপুর, কেরানীগঞ্জ
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন করা হোক
কমপিউটার জগৎ যারা নিয়মিতভাবে পড়েন বা যারা দেশের আইসিটি বিকাশে খুব সচেতন, তারা কমবেশি অনেকেই জানেন কমপিউটার জগৎ গত ১০-১৫ বছর ধরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে নিয়মিতভাবে লেখা প্রকাশ করে আসছে। আবার সরকারি মহলের কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে বেশ জ্বালাময়ী ভাষায় কথা বলে থাকেন, যা আমাদেরকে মাঝে-মধ্যে বেশ আশ^স্ত করে যে এখনই বুঝি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় বন্ধ করার কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে এবং যার ফলাফল আমরা অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাব। আসলে কিন্তু তা শুধুই কথামালার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই নয় বা নিছকই রাজনৈতিক বক্তব্য।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ের কারণে সরকার প্রতিদিন কী বিপুল পরিমাণে রাজস্ব হারাচ্ছে তা সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল অপারেটরদের তথ্য দেখে বুঝা যাচ্ছে।
বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের দেয়া তথ্যমতে, গত ২৪ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন বৈধ ৯ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল এসেছে। অথচ গত জুন পর্যন্ত দেশে গড়ে প্রতিদিন এই বৈধ কলের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি মিনিট। এই সময়ের মধ্যে এক পর্যায়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১২ কোটি মিনিট কল আসার রেকর্ডও রয়েছে। এই হিসেবে প্রায় দুই মাসের ব্যবধানে বৈধ আন্তর্জাতিক কল আসা ২৮ শতাংশ বা তিন কোটি মিনিট কল কমে গেছে। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের মতে, বৈধ পথে আসা কল কমে সেটি এখন অবৈধ ভিওআইপি হয়ে দেশে ঢুকছে। অর্থাৎ বৈধ কলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখন ভিওআইপি কলে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, অপরদিকে আইজিডব্লিউ অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আয় কমেছে। হঠাৎ করে বৈধ পথে কল আসা কমে যাওয়ার ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন- সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কলরেট দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে দুই সেন্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশী কল আসার নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়। এ কারণেই মূল বৈধ আন্তর্জাতিক কল কমে গেছে।
অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ের অবসান ঘটানোর বদলে স্বার্থান্বেষী মহল টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে বলেছে প্রাইস ম্যানিপুলেশন পলিসি অবলম্বন করতে, যা সরকারের রাজস্ব আয় বছরে ১০০ কোটি ডলারের মতো কমাবে। জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা স্বার্থান্বেষী একটি মহলের সাথে মিলে পরিকল্পনা করছে আইজিডব্লিউ অপারেটরস ফোরামের ওপর চাপ সৃষ্টি করে মিনিটপ্রতি বর্তমান কলরেট কমাতে, যা এ অঞ্চলের সবচেয়ে কম রেটগুলোর একটি। কিন্তু এ শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অবৈধ কলরেটের বিপরীতে কলরেট কমানো নৈতিক ও আর্থিক দিক থেকে হবে আত্মঘাতী। আমরা মনে করি, স্বার্থান্বেষী মহলের মূলোৎপাঠন করতে সরকারকে নির্মোহভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নইলে অদম্য অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায় থামানো যাবে না।
আশীষ কুমার
শ্যামলী, ঢাকা