লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধির পেছনে দেশের যুবসমাজ
যেকোনো দেশেই যুবসমাজ হচ্ছে একটি দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম প্রধান শক্তি। দেশের ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি প্রসারণে বাংলাদেশের যুবসমাজের ভূমিকা এ সত্যেরই প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়েসী লোকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের বাজার করা সম্পাদন করেন। সেই সাথে সুখের বিষয়, এদের বেশিরভাগই স্থানীয় ই-কমার্স সাইটগুলো এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন। ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়েসী এবং ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়েসীরা এ ক্ষেত্রে রয়েছেন যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে। এ তথ্য সম্প্রতি জানা গেছে কায়মো বাংলাদেশ (কধুসঁ ইধহমষধফবংয) পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী জুলকারনাইন বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ই-কমার্স দ্রুত প্রসার লাভ করছে। আমরা আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের পর বাংলাদেশ বিশ্ব ই-কমার্স বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবে।’
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ই-কমার্সের এই বিষয়টি বছর দুয়েক আগেও সাধারণ মানুষের কাছে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষে ‘কমপিউটার জগৎ’ সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এবং লন্ডনের মতো স্থানে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি ই-কমার্স ফেয়ার সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করার ফলে ই-কমার্স বাংলাদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ই-কমার্সকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগ এখনও অব্যাহত রয়েছে। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ৭-৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাইরে লন্ডনে আমরা প্রথমবারের মতো ই-কমার্স ফেয়ারের আয়োজন করি। আগামী ১৩-১৪ নভেম্বর ২০১৫ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ডিভিশন ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আমরা লন্ডনে আয়োজন করতে যাচ্ছি আমাদের দ্বিতীয় ই-কমার্স ফেয়ার। আশা করি, এই ই-কমার্স মেলা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে বাংলাদেশি ই-কমার্স সাইটগুলোকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আমাদের বিশ্বাস, ই-কমার্স বাণিজ্য আরও দ্রুত প্রসার লাভ করবে যদি সারাদেশকে থ্রিজি কভারেজের আওতায় নিয়ে আসা যায় এবং একই সাথে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি আরও বাড়িয়ে তোলা যায়। ই-কমার্স সম্পর্কিত উল্লিখিত সমীক্ষাথেকে অনলাইন শপিংয়ের ব্যাপারে আমাদের প্রবণতার একটি গভীর চিত্র পাই। সমীক্ষামতে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়েসীদের ১৪ শতাংশ অনলাইনে শপিং করে, ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়েসীদের ১৬ শতাংশ, ৪৫ থেকে ৫৪ বছর বয়েসীদের ৫ শতাংশ, ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়েসীদের ২.৫ শতাংশ এবং ৬৫ বছরের চেয়ে বেশি বয়েসীদের ১.৫ শতাংশ অনলাইনে শপিং করে।
উল্লেখ্য, কধুসঁ হচ্ছে একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এটি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এর ব্যবসায় পরিচালনা শুরু করে। এর মাধ্যমে বেশ কিছু পণ্য অনলাইনে কেনা যায়। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- কাপড়, জুতা, মোবাইল ফোন, কমপিউটার, জুয়েলারি, ঘড়ি, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, বই এবং খাদ্য ও পানীয়। স্পষ্টতই মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক্স সবচেয়ে চালু জনপ্রিয় পণ্য।
সমীক্ষামতে, প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার ডিজিটর ই-কমার্স সাইটগুলো ভিজিট করেন। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ ডিজিটরই ঢাকার। ২৯ শতাংশ চট্টগ্রামের এবং ১৫ শতাংশ গাজীপুরের। ই-কমার্স প্রসারের যথার্থ স্থান হচ্ছে ঢাকা। কারণ, যানজটের কারণে এখানে মানুষ অনলাইন শপিংকেই বেছে নেয়।
ক্যাশ-অন-ডেলিভারি হচ্ছে বাংলাদেশে ই-কমার্স পেমেন্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেমেন্ট মেথড। ই-কমার্স লেনদেনের ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয় এই মেথডে। মাত্র ১ শতাংশ ই-কমার্স লেনদেন হয় ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, ২ শতাংশ লেনদেন চলে বিকাশের মাধ্যমে, বাকি ২ শতাংশ লেনদেন চলে মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে। ক্যাশ-অন-ডেলিভারি মেথড জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে দেশের ই-কমার্স ব্যবস্থাটি এখনও সূচনাপর্বেই রয়ে গেছে। তবে আশা করা হচ্ছে, অচিরেই এ ব্যবস্থার অবসান হবে। বাংলাদেশে ই-কমার্স সর্বব্যাপী হয়ে উঠবে। আমরা আশাবাদী আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ই-কমার্স সে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছবে। ভুললে চলবে না, ই-কমার্স আজকের ডিজিটাল যুগের এক চরম বাস্তবতা। আর বাংলাদেশের ই-কমার্সকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এ দেশের যুবসমাজ হবে অন্যতম প্রধান শক্তি। আর এরই আভাস রয়েছে উল্লিখিত সমীক্ষায়।