লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সোজা প্রশ্ন কঠিন উত্তর
গণিতের অলিগলি পর্ব-১০৯
সোজা প্রশ্ন কঠিন উত্তর
গণিতের একটি কৌতূহলী ও ব্যাখ্যাতীত বিষয় হচ্ছে কিছু গাণিতিক সমস্যার বর্ণনা করা যায় খুবই সহজে, কিন্তু এ সমস্যার সমাধান করা অবিশ্বাস্য ধরনের কঠিন। তবে কঠিন হলেও এর সমাধান অসম্ভব নয়। এখানে তেমনই কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা পাঠক সাধারণকে এর সত্যতা উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। বুঝতে সাহায্য করবে এই রহস্যময় পরিস্থিতি।
ফার্মেটের লাস্ট থিওরেম হচ্ছে এমনি ধরনের একটি অতিপরিচিত গাণিতিক সমস্যা। সমস্যাটি বোঝা খুব সহজ। কিন্তু এর সমাধান তেমন সহজ ছিল না। এর সমাধান করতে গণিতবিদদের সময় লেগেছে সাড়ে তিনশ’ বছর। এর সূচনা হয়েছিল ১৬৩৭ সালে। সমস্যাটির বর্ণনা তুলে ধরা যায় খুবই সহজে। এই সমীকরণটি লক্ষ করুন : z2 = x2 + y2। অনেক পাঠকই সহজেই বুঝতে পারছেন, এই সমীকরণটি পিথাগোরাসের বিখ্যাত সেই উপপাদ্যসংশ্লিষ্ট। এই উপপাদ্য মতে, সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের বর্গ এর অপর দুই বাহুর বর্গের সমষ্টির সমান। এই উপপাদ্য স্কুলের জ্যামিতিতে আমরা সবাই পড়েছি। সহজেই অনুমেয়, একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের দৈর্ঘ্য যদি ৫ ইঞ্চি হয়, তবে এর অপর দুই বাহুর দৈর্ঘ্য হবে যথাক্রমে ৩ ও ৪ ইঞ্চি। কারণ, ৫২ = ৩২ + ৪২। যেহেতু সমকোণী ত্রিভুজের সংখ্যা অসংখ্য, অতএব এভাবে আমরা এমন অসংখ্য তিনটি পূর্ণ সংখ্যার সেট পাব, যা z2 = x2 + y2 সমীকরণটি মেনে চলে।
কিন্তু আমরা যদি এই সমীকরণটির আকার বদলে z3 = x3 + y3 করি, তবে কি আমরা এমন তিনটি x, y ও z সংখ্যা সেট পাব, যা z3 = x3 + y3 সমীকরণ মেনে চলবে। আমরা যদি সংখ্যা তিনটির ঘাত বা পাওয়ার বাড়িয়ে zn = xn + yn করি, যেখান n হচ্ছে 2-এর চেয়ে বড় যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যা এবং z, x, y যেকোনো তিনটি পূর্ণ সংখ্যা। তখন দেখা যাবে এমন কোনো তিনটি ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা x, y, z পাওয়া যাবে না, যা এই zn = xn + yn সমীকরণ মেনে চলে।
তিনি এই থিওরেম কীভাবে প্রমাণ করেছিলেন, তা আমাদের জানা নেই। তবে তিনি একটি বই পড়ার সময়, বইয়ের একটি পৃষ্ঠার একপাশে শুধু এ কথাই লিখেছিলেন : ‘I have discovered a truly marvelous proof of this fact, which, unfortunately, this margin is too small to contain?’
অর্থাৎ তিনি বলতে চাচ্ছেন, এই থিওরেমটি প্রমানের একটি চমৎকার প্রমান তার কাছে আছে। তবে বইয়ের কিনারায়া বা মার্জিনে যে যে জায়গা তাতে এরই প্রমান উপস্থাপনের জন্য খুবই ছোট্ট জায়গা। তাই এর প্রমান এখানে উপস্থাপন করা যাচ্ছে না।
ফারমেটের এই সাহসী দাবির যথার্থ প্রমাণ পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। ফারমেট এ তত্ত্ব দিলেন ১৬৩৭ সালে। এর সাড়ে তিনশ’ বছর পর ১৯৯৫ সালে গণিতবিদেরা এ তত্ত্বের প্রমাণ হাজির করেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ অ্যান্ড্রু উইলস তা প্রমাণ করেন। এটি প্রমাণ করতে তাকে বেশ কিছু অত্যাধুনিক গাণিতিক ধারণা ও গাণিতিক তত্ত্ব ব্যবহার করতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এসব ধারণা ও তত্ত্ব ফারমেটের সময়ে আবিষ্কারই হয়নি। হয়তো সেজন্য তার পক্ষে তার দেয়া তত্ত্ব প্রমাণ করে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এর প্রমাণও বেশ কঠিন। আজকের দিনের মাত্র কয়েকশ’ গণিতবিদ অ্যান্ড্রু উইলসের দেয়া এই প্রমাণ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। অতএব ফারমেটের কাছে এ তত্ত্বের প্রমাণ জানা ছিল কি না, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ বিচিত্র কিছু নয়।
এমনই আরেক সমস্যার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়, যারা গণিত জানেন না এমন একজন সাধারণ মানুষও সমস্যাটি বুঝতে পারবেন। কিন্তু এর প্রমাণ ছিল সমভাবে কঠিন। এর প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই এর নাম দেয়া হয় গোল্ডবাক কনজেকচার বা গোল্ডবাক অনুমান। এতে বলা হয়, ২-এর চেয়ে বড় যেকোনো জোড় সংখ্যাকে দুইটি মৌলিক সংখ্যার সমষ্টি হিসেবে প্রকাশ করা যায়। উল্লেখ্য, যে সংখ্যাকে ওই সংখ্যা ও ১ ছাড়া অন্য কোনো পৃর্ণসংখা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না, তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন জোর সংখ্যা ১২-কে আমরা প্রকাশ করতে পারি মৌলিক সংখ্যা ৫ ও ৭-এর যোগফলের আকারে। অর্থাৎ ১২ = ৫ + ৭। তেমনি ১২৪ = ৫৩ + ৭১ এবং ১২৪৮ = ৬১৭ + ৬৩১। উল্লেখ্য, এখানে ৫, ৭, ৫৩, ৭১, ৬১৭ ও ৬৩১ মৌলিক সংখ্যা। এভাবে ২-এর চেয়ে বড় আমাদের সচরাচর ব্যবহারের অনেক জোড় সংখ্যাকে আমরা দুইটি মৌলিক সংখ্যার সমষ্টির আকারে প্রকাশ করতে পারি। এভাবে সুনির্দিষ্ট উদাহরণ দিয়ে এর সত্যতা আমরা সহজেই প্রমাণ করে দেখাতে পারব। কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে অতি বড় বড় সংখ্যাসহ সব সংখ্যার জন্য এ তত্ত্ব কার্যকর, এর প্রমাণ ছাড়া বিশ্বের অসংখ্য জোড় সংখ্যার জন্যও তা সত্য, তা জোর দিয়ে বলা যায় না। অতএব এর তাত্ত্বিক প্রমাণ থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। গোল্ডবাক কনজেকচার যে সত্য, এর প্রমাণ ১০১৪ পর্যন্ত সংখ্যার জন্য কমপিউটার টেস্ট দিয়ে প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে, কিন্তু সম্ভাব্য প্রতিটি জোড় সংখ্যার জন্য কেউ তা দেখাতে পারেননি।
পাটিগণিতের কিছু কিছু প্রশ্ন খুবই সরল। কিন্তু সেগুলো থেকে গেছে প্রমাণের অপেক্ষায়। যেমন ‘হেইল স্টোন নাম্বার’। উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন N একটি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা। ঘ যদি জোড় হয় তবে N-এর জায়গায় লিখুন N/২; আর ঘ বিজোড় হলে N-এর জায়গায় লিখুন ৩N + ১। এই ধাপগুলো অব্যাহতভাবে চালিয়ে যান যতক্ষণ না N = ১ হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা ১২ সংখ্যাটি নিয়ে শুরু করতে পারি। তবে সিকুয়েন্স বা ধারাটি দাঁড়ায় ১২, ৬, ৩, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১। যদি ৭ দিয়ে শুরু করি, তবে ধারাটি দাঁড়ায় ২২, ১১, ৩৪, ১৭, ৫২, ২৬, ১৩, ৪০, ২০, ১০, ৫, ১৬, ৮, ৪, ২, ১। যেকোনো সংখ্যা নিয়েই শুরু করি না কেনো, আমরা এভাবে সবশেষে ১-এ পৌঁছতে পারব। তবে বিভিন্ন সংখ্যার জন্য ধাপ সংখ্যা বিভিন্ন হতে পারে। স্টিফেন উলফ্রাম উইন্ডোজ ৯৫-এ একটি প্রোগ্রাম লিখেছেন, যা আপনাকে এই হেইল স্টোন সংখ্যাকে ইন্টারেকটিভভাবে জানিয়ে দেবে। N = ২৬ হলে এর জন্য ১০টি ধাপ প্রয়োজন হবে ১-এ পৌঁছতে। কিন্তু কেউ আজ পর্যন্ত তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করে দেখাতে পারেননি যে, প্রতিটি নম্বর নিয়ে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কম বেশি কয়েকটি ধাপ শেষে ১-এ পৌঁছানো যাবে কি না।
১৯১৩ সালে উদ্ভাবিত Gobel’s Incompleteness Theorem বলে যেকোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থায় এমন কিছু ফ্যাক্ট রয়েছে, যা এর নিজস্ব রুল ও কনভেনশনে সত্য, কিন্তু তা সত্যি প্রমাণ করা যায় না এর সিস্টেমের রুলের আওতায়।
সংখ্যার মজা
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ১ = ০ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ২ = ১ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৮
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৩ = ২ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৭
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৪ = ৩ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৬
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৫ = ৪ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৫
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৬ = ৫ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৪
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৭ = ৬ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৩
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৮ = ৭ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ২
৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ = ৮ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ৯ ১
গণিতদাদু