লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
কাঠগড়ায় মোবাইল সিম
প্রকৃতিতে এখন শীতের আবাহন। এরপরও আশ্বিনের এই গা শিন শিন সময়ে নগরবাসী আজ আর শীতের সবজি শিমকে নিয়ে ভাবার ফুরসত পাচ্ছেন না। রসনা তৃপ্তির সেই আহ্লাদ ছাপিয়ে দেশজুড়ে এখন ঝড় বইছে মোবাইল সিমের। সিম বা মোবাইল ফোন গ্রাহক শনাক্তকরণ মডিউল নিয়ে চলছে যত তুঘলকি কা-। এর মধ্যে সবার চোখ কপালে তুলেছে ‘শুধু একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অধীনে ১৪ হাজার ১১৭টি সিম নিবন্ধনের’ মতো ঘটনা। ভড়কে যেতে হয়েছে খোদ পুলিশ প্রধানের মোবাইল সিম নম্বর ‘স্পুফিং’ করে ডিএমপির এক ওসিকে ফোন করে আসামি ছাড়িয়ে নেয়ায়। অভিযোগ উঠছে, স্পুফিং ও সিম ক্লেলানিং করে অপরাধ জগতে গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন ডালপালা। মোবাইল সিম/রিম ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে বৈদেশিক কল বিনিময় করে ফাঁকি দেয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। অভিযোগগুলো এমনভাবে পল্লবিত হচ্ছে, যেনো গণআদালতের কাঠগড়ায় আসামির মতো ঋজু হয়ে আছে সিম। স্বাভাবিকভাবেই সবার দৃষ্টি পড়ছে মোবাইল অপারেটরদের ওপর। আবার প্রাযুক্তিক জ্ঞান ও দক্ষতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণের গলার কাঁটা হয়ে যায় এই ‘সিম’। তবে দেরিতে হলেও অবসান ঘটতে যাচ্ছে এই অব্যবস্থার, দুর্দশার। দীর্ঘদিন শূন্য থাকা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এই কার্যক্রমে সারথী হয়েছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। দীর্ঘ দরবার শেষে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার থেকে গ্রাহকের তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে ছয় মোবাইল অপারেটর। আর নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুরো প্রক্রিয়ায় ছায়া হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
সিম নিবন্ধনে যত কা-
২২ সেপ্টেম্বর। সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে ছয় মোবাইল ফোন অপারেটরের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন ডাক ও টেলিযোগযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম। বৈঠকের শুরুতেই তার চোখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। কপালে স্পষ্ট হয়ে ওঠে দুশ্চিমন্তার ভাঁজ। অনেকটা বিরক্তির সুরে তিনি জানালেন সিম নিবন্ধনের তুঘলকি কা--র কথা। একে এক তুলে ধরলেন দেশজুড়ে বিভিন্ন অপারেটরের মোট গ্রাহকসংখ্যা ও প্রাপ্ত ডাটার এবং সেই সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে নিবন্ধনের তথ্য। মন্ত্রণালয়ে মোবাইল অপারেটরদের প্রধান নির্বাহী, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ সেলের (এনটিএমসি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে এ বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের তারানা হালিম জানালেন, গ্রাহকের হাতে থাকা প্রায় ১৩ কোটি সিমের মধ্যে ১ কোটির তথ্য সরকার হাতে পেয়েছে, যার ৭৫ শতাংশই ‘সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়’। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া নিবন্ধনের মাত্রা এতটাই বেশি যে, শুধু একটি এনআইডি দিয়েই ৬ হাজার ৮৫৮টি সিম নিবন্ধন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এনআইডি নম্বরটি হলো ‘১৯৮৪৪৪২৫৮৮৩৬৯৮৭১২’। এর বাইরে ৫০টি জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে গড়ে ২ হাজার সিম নিবন্ধিত হয়েছে।
এই ভয়াবহ তথ্যের আবহ নিয়ে তারানা হালিম জানালেন, সিম নিবন্ধনের তথ্যের গরমিলের বিষয়ে এমন আরও তিনটি এনআইডি পাওয়া গেছে, যেগুলোর বিপরীতে ১১ হাজার ৮৬৬, ১১ হাজার ৩২৮ ও ৬ হাজার ১৭৯টি সিমের নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন অপারেটরের সিম রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে এয়ারটেল, জিপি, সিটিসেল, রবি, টেলিটক, বাংলালিংকের নিবন্ধনের চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। ছয় অপারেটরের মাধ্যমে সিম নিবন্ধনে মাত্র ৬ হাজার ১৭৯টি পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি গ্রাহকের নিবন্ধন যাচাই করা হয়েছে। এর মধ্যে সঠিকভাবে নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬৮০টি। বৈঠকে সব জাল নিবন্ধিত বা অবৈধ সিম ব্যবহারে বড় ধরনের অপরাধ হতে পারে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করে সব অপারেটরকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
সূত্র মতে, ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপারেটরেরা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ সিমের তথ্য দিয়েছিল। এর মধ্যে এয়ারটেল ১৪ লাখ ৪ হাজার ৯৩৮ জন, বাংলালিংক ২৩ লাখ ৫৫ হাজার, সিটিসেল ৪ লাখ ১৪ হাজার, রবি ১৮ লাখ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক ১৬ লাখ গ্রাহকের তথ্য দিয়েছে। আর দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন তাদের ৫ কোটির বেশি গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ২২ লাখের নিবন্ধনের তথ্য দিয়েছে। এই হিসাব অনুযায়ী জমা দেয়া তথ্যের মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যার ৯৫ দশমিক ০২ শতাংশ সিমই অনিবন্ধিত। তবে প্রতিদিনই অপারেটরগুলো এনআইডি কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ লাখ গ্রাহকের তথ্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে অ্যামটব।
সিম নিবন্ধনের এই নাজুক অবস্থা নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির জানালেন, ২০১২ সাল থেকে সিম নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই এর আগে যেসব সিম বেচা হয়েছে, সেগুলোর একটি বড় অংশই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধিত হয়নি। এতদিন এনআইডির তথ্যভা-ারে তথ্য যাচাই করার সুযোগ মোবাইল অপারেটরদের ছিল না। এই চুক্তি হয়ে গেলে সিম নিবন্ধন নিয়ে আর অনিয়ম হবে না। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই অপারেটরেরা এনআইডি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় সব দলিল দাখিল করেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই দ্বিপাক্ষেক চুক্তি সম্পন্ন হবে। চুক্তি হলেই গ্রাহকের তথ্য যাচাইয়ের অধিকার লাভ করবে অপারেটরেরা। এতে শুরু থেকেই সিম নিবন্ধনের বিষয়ে অপারেটরদের যে অসহায়ত্ব ছিল, তা কিছুটা হলেও কমবে।
সিম অনিবন্ধনে জরিমানা
সিম নিয়ে এমন তুঘলকি কা--র অবসান ঘটিয়ে টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেছেন তিনি। এর ফলে তিন বছর পর আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে অনিবন্ধিত বা অবৈধ সিমের জন্য নির্ধারিত জরিমানার বিধান। চলমান সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের (বিটিআরসি) নিবন্ধনবিহীন সিমে ৫০ ডলার জরিমানার বিধান। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর অনিবন্ধিত বা অবৈধ সিমের জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের ৫০ ডলার জরিমানার বিধান করে বিটিআরসি। বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) জিয়া আহমেদ এই বিধান তৈরি করলেও তার অকাল মৃত্যুর তিন দিন পর নিয়োগ পাওয়া বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস এটি জারি করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বিধানটি এতদিনেও কার্যকর হয়নি।
অবশ্য দায়িত্ব নিয়েই এসব অমীমাংসিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তৎপর হয়েছেন তারানা হালিম। তিনি জানিয়েছেন, সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষে যদি আবারও অবৈধ (অনিবন্ধিত) সিম পাওয়া যায় তাহলে প্রতি সিমের জন্য নির্ধারিত ৫০ ডলার জমিরমানার বিধান কার্যকর করা হবে। অপরদিকে সিম নিবন্ধনবিষয়ক সব দায় শুধু অপারেটরদের ওপর দেয়া অবিবেচনাপ্রসূত একটি অভিযোগ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, জরিমানা বা আইনি শাসিত্ম দিয়ে এ খাতে শৃঙ্খলা আনা দুষ্কর। এজন্য দরকার সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা। ঘর তৈরির আগে বারান্দা সাজানোর চেয়ে এর ভিত কীভাবে মজবুত করা যায় সেদিকেই নজর দেয়া সময়ের দাবি। এ বিষয়ে অপারেটরেরা বলছে, এরা শুধু সবার মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে যোগাযোগ স্থাপনের একটি পথ তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে যারা সিমটি গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন তাদের যেমন দায় আছে, তেমনি যিনি নিচ্ছেন তারও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এখানে সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই। এটি একটি সমন্বিত কার্যক্রম। ব্যবসায়িক স্বার্থেই অপারেটরেরা এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে পেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেউ যদি ভুল তথ্য দিয়ে সিম নেয় তা যাচাই করা আমাদের কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। কেননা, এখন পর্যন্ত নাগরিকদের তথ্যের সমৃদ্ধ কোনো ডাটাবেজ যেমন গড়ে ওঠেনি, তেমনি তা যাচাই করার মতো সহজ কোনো পথ এখানে নেই। উপরন্তু ভোটার পরিচয়পত্র হিসেবে তৈরি জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন, হালনাগাদকরণ ইত্যাদি বিষয় যদি নাগরিকের হাতের নাগালে নিয়ে আসা না হয়, তবে পদে পদে হোঁচট খেতেই হবে।
সিম পুনঃনিবন্ধন : অসম মিশন
ষোল কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মানুষের হাতে থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা এখন ১৩ কোটি। আগস্ট মাসের শেষে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ছিল (বিক্রি হওয়া সিম সংখ্যার ভিত্তিতে) ১৩ কোটি ৮ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা জুলাই থেকে ১১ লাখ বেড়ে আগস্ট শেষে ৫ কোটি ৫০ লাখ হয়েছে। বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ৪ লাখ বেড়ে ৩ কোটি ২৮ লাখ, রবির ৪ লাখ বেড়ে ২ কোটি ৮৩ লাখ, এয়ারটেলের ৪ লাখ বেড়ে ৯৪ লাখ হয়েছে। তবে দেশের একমাত্র সিডিএমএ অপারেটর সিটিসেলের গ্রাহক ২৭ হাজার কমে ১১ লাখ ৩৪ হাজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি টেলিটকের গ্রাহক প্রায় দেড় লাখ কমে ৪০ লাখ ৭৯ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অনিবন্ধিত কয়েক কোটি সিম নিবন্ধনের আওতায় আনতে সরকারের উদ্যোগের মধ্যেই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ৩১ সেপ্টেম্বর মোবাইল গ্রাহকসংখ্যার হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এসব সিমের ৭৫ শতাংশই সঠিকভাবে নিবন্ধিত নয়।
তাই সিম নিয়ে তুঘলকি কা- রোধে সিম পুনঃনিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় শনাক্তকরণ কার্ড দিয়ে সিম পুনঃনিবন্ধন করা হচ্ছে। অথচ ১৩ কোটি মোবাইল সিম গ্রাহক থাকলেও জাতীয় পরিচয় রয়েছে ৯ কোটি নাগরিকের হাতে। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রতিটি অপারেটর তাদের নিজ নিজ সার্ভিস সেন্টার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু করছে। আর চূড়ান্তভাবে কার্যক্রম শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর। অপারেটরদের সিম নিবন্ধন তথ্যের সঙ্গে এনআইডি ডাটাবেজের তথ্য মিলিয়ে দেখে বৈধভাবে নিবন্ধিত সিম যাচাইয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অপারেটর ও সরকার সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
এর আগে সিম নিবন্ধন নিয়ে ‘ভয়ঙ্কর’ অব্যবস্থাপনা রুখতে জাতীয় পরিচয়পত্রের অধীনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করে সরকার। এজন্য চলতি মাস থেকেই জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভা-ার থেকে তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ দেয়া হচ্ছে মোবাইল অপারেটরদের। পাশাপাশি এসএমএস ও আইভিআরের মাধ্যমে ২০১২ সালের আগে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া প্রাপ্ত বা অনিবন্ধিত গ্রাহকদের একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকের নাম, সঠিক জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখের তথ্য জানতে চাওয়া হবে।
এর বাইরে একটি নির্দিষ্ট কোডে এসএমএস করে ফিরতি বার্তায় প্রত্যেক গ্রাহকই তার সিম নিবন্ধন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন। তথ্য ভুল থাকলে সংশ্লিষ্ট অপারেটরদের সেবাকেন্দ্র থেকে তা শুদ্ধ করা যাবে। আর যারা তা করবেন না এক পর্যায়ে তাদের সিম বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিলেই আবার নম্বরটি চালু করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সিম নিবন্ধনের ভয়াবহ পরিস্থিতি সামাল দিতে আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের আগে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া যেসব সিমের নিবন্ধন হয়েছে মোবাইল অপারেটরেরা সেসব গ্রাহককে এসএমএস পাঠাবে। আইডি নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে চাইবে। একটি কোড থাকবে। গ্রাহকদের দেয়া তথ্য অপারেটরেরা পাঠাবে এনআইডিতে। সেখানে হবে যাচাই-বাছাই। এরপর চূড়ান্ত নিবন্ধন। তারানা বলেন, অপারেটরেরা যদি না দিতে পারে তাহলে সেই কোডে গ্রাহকেরা তাদের এনআইডি নম্বর ও নাম দিয়ে এসএমএস করে নিবন্ধনের তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন এবং তার এনআইডিতে কতটি সিম নিবন্ধন রয়েছে তাও জানতে পারবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি কোডসহ অন্য এসএমএসে যেকোনো সময় গ্রাহকই চাইলে নিজের সিমের তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন। তার সিমটি আর কোথাও কেউ নিবন্ধন করেছে কি-না সেটিও নিজের নিরাপত্তার জন্য জেনে নেয়া যাবে। তিনি বলেন, আমি গ্রাহকদের শেষ পর্যন্ত সময় দিতে চাই। অবৈধ বা অনিবন্ধিত সিম বন্ধের কোনো সময়সীমা জানাচ্ছি না, তবে এ প্রক্রিয়া শেষে অবশ্যই এ ধরনের সিম বন্ধ হয়ে যাবে এবং বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তারানা হালিম জানান, একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে যাদের একাধিক সিম আছে, তারা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। সচেতন গ্রাহকদের নিজেদের সিম সঠিকভাবে নিবন্ধন করার আহবান জানিয়ে তারানা বলেন, আশা করি গ্রাহকেরা নিজ উদ্যোগে সিমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। আর ১৮ বছরের নিচের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদেরকে অভিভাবকের এনআইডির বিপরীতে সিম নিবন্ধন করতে হবে। আর ওই সিম দিয়ে কোনো অপরাধ হলে, সে দায়ও পরিচয়পত্রের মালিককেই নিতে হবে।
এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে মোবাইল সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথম পর্যায়ে গ্রাহকেরা ৬ মাস সময় পাচ্ছেন। এরপর কী হবে- ছয় মাস পর তা ঠিক করা হবে। তবে অনিবন্ধিত সিম সহসাই বন্ধ হওয়ার ‘সম্ভাবনা নেই’। দেশের প্রায় ১৩ কোটি সিমের সবই এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত সব সিম পুনঃনিবন্ধন না হয়, ততদিন এ প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। অনিবন্ধিত সিম যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে কি না প্রশ্নের জবাবে নুরুল কবির বলেন, অনিবন্ধিত সিম অবশ্যই এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কবে নাগাদ তা করা হবে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগ এবং অপারেটরেরা বসে ঠিক করবে। চলতি মাসের প্রথম দিকেই সব অপারেটরের ওয়েবসাইটে সিম পুনঃনিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে জানিয়ে নুরুল কবির বলেন, সিম পুনঃনিবন্ধন নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে সহযোগিতা করার জন্যই এসব উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাও চালানো হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে গ্রাহক তথ্য যাচাই করতে ইতোমধ্যে ৬টি অপারেটর চুক্তি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহকপ্রতি তথ্য যাচাইয়ে অপারেটরদের ২ টাকা করে দিতে হবে। তবে এ খরচ কমানো যায় কি-না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
সিম নিবন্ধনের বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে নুরুল কবির বলেন, সিম নিবন্ধনের সময় একজন গ্রাহক সঠিক তথ্য দিচ্ছেন কি-না, তা জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তথ্যভা-ারের সাথে যাচাই করার সুযোগ এতদিন ছিল না। এজন্য ২০০৮ সালে একই উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি সফল হয়নি। তবে এবার এই উদ্যোগ সফল হওয়ার যথেষ্ট সহায়ক উপাদান লক্ষণীয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সব মিলিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে আঙ্গুলে ছাপ নিয়ে তবেই চূড়ান্ত করা হবে সিমের মালিকের পরিচয়। তবে তা না করে ইতোমধ্যেই অনেকটা অপরিকল্পিতভাবেই শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি। আর পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে ব্যবসায়িক স্বার্থ। গ্রাহকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য অপারেটরদের কাছ থেকে দাবি করা হয়েছে ২ টাকা করে। টাকার অঙ্কটা খুবই সামান্য মনে হলেও প্রকারান্তরে দেখা যাবে এই দায় গিয়ে বর্তাবে গ্রাহকের ঘাড়েই। অবশ্য ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র/ভোটার পরিচয়পত্র (নির্বাচনকে সামনে রেখেই তৈরি হয়েছিল) নেই বা তথ্যগত ত্রুটি রয়েছে তারা কী করবেন? এছাড়া অপারেটরদের যেসব সেবাকেন্দ্র রয়েছে তা পর্যাপ্ত কি না? সিম পুনঃনিবন্ধন করতে গ্রাহকদের সশরীর উপস্থিতি কতটা স্বত:স্ফূর্ততা পাবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রাজ্ঞজনেরা মনে করেন, এই এক ধাক্কাতেই সরকার যদি ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির উদ্যোগ নিত তবে কাজটি যেমন সহজতর হতো, একই খরচে মিলত দুই ফসল।
অনলাইনে সিমের তথ্য হালনাগাদ
অনলাইনে সিমের তথ্য হালনাগাদ সুবিধা চালু করেছে মোবাইল অপারেটরেরা। ইতোমধ্যেই মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়ে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হালনাগাদ ও যাচাই করার এই সুবিধা চালু করেছে বাংলালিংক। গ্রাহদের কাছে পাঠানো ওই বার্তায় তথ্য হালনাগাদ করতে একটি অনলাইন লিঙ্ক দেয়া হয়েছে। লিঙ্কটিতে (banglalink.com. bd/bn/customer-care/banglalink-self-care/update-your-information) গ্রাহক তার সদ্য তোলা ছবি এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি সংযুক্ত করে ঘরে বসেই সিম পুনঃনিবন্ধন করাতে পারবেন
সিম ভয়ঙ্কর : ক্লোনিং/স্পুফিং
৩ সেপ্টেম্বর। ঢাকা মেট্রোপলিটনের একটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ফোন। ফোনটি আসে খোদ পুলিশ প্রধানের দাফতরিক মোবাইল সিম নম্বর থেকে। ফোনে অপর প্রান্ত থেকে অল্প কিছু দিন আগে আটক করা এক আসামিকে ছেড়ে দিতে বলা হয়। আর ছেড়ে না দিলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে মর্মে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়। এর আগে একই ধরনের ফোনকল পান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। চাকরিতে বদলির বিষয়ে তার গ্রামীণফোন নম্বরে ফোন করা হয়। একই ঘটনার শিকার হন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এবং তার ব্যক্তিগত সহকারী। তাদের সিম নম্বর ‘স্পুফিং’ করে করিমগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কল করে বিভিন্ন তদবির করে একটি চক্র। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রেল সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিনের নম্বর ‘স্পুফিং’ করে চট্টগ্রামের একজন রেল কর্মকর্তার কাছে তদবির করা হয়েছে। সিম নম্বর জালিয়াতির এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন নেত্রকোনার সংসদ সদস্য বেগম রোকেয়া মোমিনও। এছাড়া গত আগস্ট মাসে টাঙ্গাইল-৬ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল বাতেনের মোবাইল ফোন নম্বর ‘স্পুফিং’ করে স্থানীয় নাগরপুর ও দেলদুয়ারের সব ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোন করা হয়। ফোনদাতা সবাইকেই অভিন্ন ভাষায় বলেন, এটি এমপি সাহেবের নম্বর। তিনি এখন সচিবালয়ে আমার কক্ষে বসা আছেন। আমি তার ফোন থেকে মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব বলছি। আপনার ইউনিয়ন পরিষদের নামে শিগগিরই গম বরাদ্দ দেয়া হবে। বেশি বরাদ্দ পেতে হলে কিছু টাকা বিকাশ করে দেন। এমপির নম্বর থেকে ফোন পাওয়ার পর প্রায় সব ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশে তাৎক্ষণিক টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কেউ ১০ হাজার, কেউ আবার ২০ হাজার করে টাকা বিকাশ করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মামলা করা হয় দেলদুয়ার থানায়। তদন্তে জানা যায় প্রতারণার বিষয়টি। তদন্ত শেষে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইলের এমপির ঘটনার সূত্র ধরে ১০ জনের একটি প্রতারক চক্র দেশব্যাপী এ প্রতারণা করে চলেছে। যেসব বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে টাকা নেয়া হয়েছে সেগুলোকেও শনাক্ত করেছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত ১২৬টি বিকাশ অ্যাকাউন্টকে শনাক্ত করা হয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে এ চক্রটি প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইলের এমপির মোবাইল নম্বর ও আইজিপির মোবাইল নম্বর স্পুফিংকারী প্রতারকদের পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে প্রভাবশালীদের বাইরেও অনেক সাধারণ মানুষ এমন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা তিনি বিষয়টি শেরেবাংলা নগর থানায় জিডি করলে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পুলিশের আইজি শহীদুল হকের মোবাইল নম্বর ‘স্পুফিং’ করে ডিএমপির এক ওসিকে ফোন করে প্রতারণার মামলার এক আসামিকে ছাড়িয়ে নেয়ার পর। একই অবস্থা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নম্বর ক্লোন করার ঘটনায়ও। আর এসব ঘটনামাত্রই মোটা দাগে সব দায় যেনো গিয়ে পড়ে ওই মোবাইল সিমের ওপর। তদন্ত হয়। মুখরোচক সংবাদও ছাপা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে গণসচেতনতার পাশাপাশি ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগত উন্নয়নের বিষয়টি বরাবরই থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারণা বা অপরাধের চেয়ে প্রযুক্তি তথা সিম, মোবাইল ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলোই যেন বড় হয়ে দেখা দেয়। কিন্তু এ ধরনের অপরাধ মোকাবেলায় প্রাযুক্তিক দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা যেমন আলোচনার বাইরে থাকে; একইভাবে ঘটনার দায় একে অপরের ওপর চাপিয়ে দেয়ার একটি প্রচ্ছন্ন ভাবও প্রস্ফুটিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেস স্টাডির বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। গণসম্পৃক্ততার বিষয়টিও গৌণ হয়ে পড়ে। দফায় দফায় মিটিং-সিটিং হয়। কিন্তু যারা এই দুর্ঘটনার শিকার হন তাদেরকে প্রতিকার উদ্যোগের সঙ্গে কীভাবে আরও নিবিড় করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা খুব একটা হয় না। ফলে একটি সমস্যা সমাধানে নীতিমালা প্রণয়ন বা উদ্যোগ নিতে নিতে দেখা যায় নতুন আরেকটি সমস্যায় নাকাল হতে হচ্ছে। চলে হ্যাকিং-ফিশিং খেলা। কাজের সরলীকরণ না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের মতে, প্রযুক্তি নিরাপত্তা বিধানে একাগ্রতার বিকল্প নেই। প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহারে মানুষকে সচেতন করে তুলতে না পারলে যত কিছুই করা হোক না কেন পদে পদে হোঁচট খেতেই হবে। আর মোবাইল শিল্প খাতে একটি টেকসই অগ্রগতি আনতে দেরিতে হলেও সিম পুনঃনিবন্ধনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা টানেলের শেষ প্রান্তে আশার আলো জ্বেলেছে বলেই অভিমত বিশিষ্টজনদের।
সিম ক্লোনিং/স্পুফিং কা-
সাম্প্রতিক সময়ে নাগরিক জীবনে আতঙ্ক তৈরি করছে সিম ক্লোন শব্দটি। সিমকার্ডে ব্যবহারকারীকে শনাক্তকরণ তথ্যগুলো ব্যবহার করেই মূলত সিম ক্লোন করা হয়ে থাকে। তথ্যগুলো হলো- ০১. ICCID : Integrated Circuit Card ID
8988012345678912345F এরকম একটি কোড। এটি সিমের গায়ে লেখা থাকে। ০২. IMSI : International Mobile Subscriber Identity 470-01 084930321003457820 এরকম একটি কোড। ০৩. KI : Authentication Key A8-0B-FF-6F-0C-28-D5-37-00-E1-40-2A-0E-0A-E9-BA এরকম একটি হেক্সাডেসিমাল কোড। একটি সিমের সিম রিডারের মাধ্যমে বিশেষ সফটওয়্যারে এই তথ্যগুলো দিয়ে সিম ক্লোন করা হয়। সাধারণত চুরি করা এসব তথ্য নিয়ে তৈরি করা ক্লোন সিম দিয়ে সহজেই ফোনকল করা, টেক্সট মেসেজ পাঠানো যায়। এতে করে পরিচয় গোপন রেখে অপরাধ করে পার পেয়ে যেতে পারে অপরাধীরা। অর্থাৎ আপনার সিম যদি অন্য কেউ ক্লোন করে ফেলে তবে সিমটি আপনি যেমন ব্যবহার করবেন তেমনি সেও ব্যবহার করতে পারবে। এভাবে আপনার নম্বরটির অপব্যবহার হতে পারে, যা আপনি হয়তো বুঝবেনও না। মনে করুন একসাথে একই সিমের একাধিক কপি চালু আছে। এ সময় কেউ ওই নম্বরে কল করলে সবশেষ যে সিমটি অন করা হয়েছে বা সবশেষ যেটি থেকে কল করা হয়েছে সেখানে কল যাবে। অন্যগুলোতে নেটওয়ার্ক থাকবে, কিন্তু সেগুলোতে কল আসবে না। আবার একটিতে কেউ কথা বলার সময় অন্যটি থেকে যদি কেউ কল করে তবে প্রথমটি বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্বিতীয়টি কাজ করা শুরু করবে। তবে একই জায়গায় (একই বিটিএসের কাভারেজে) থেকে একটিতে ভয়েস আরেকটিতে ডাটার কাজ করা যায়। কোনো সমস্যা হয় না। তবে একই সাথে আরেকটিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে প্রথমটিতে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং আলাদা আলাদা বিটিএসের কাভারেজে থাকলে ভয়েস এবং ডাটা আলাদা ব্যবহার করা যাবে না। আপনার সিমটি যদি গ্রামীণের ০১৭১১, ০১৭১২, ০১৭১৬ এবং ০১৭১৩ ও ০১৭১৫ এমন সিরিয়ালের হয় এবং আপনি যদি ২০০৩ সালের পর আর সিম রিপ্লেস না করে থাকেন তবে আপনার সিমটি ভি১ সিম। বাংলালিংকের ০১৯১১, ০১৯১২, ০১৯১৩, ০১৯১৪ সিমগুলো ভি১ সিম। এ ধরনের সিমে ক্লোন ঝুঁকি বেশি। এখন আপনার সিমটি যদি কেউ ক্লোন করে ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে, তবে আপনি সিম রিপ্লেস করে নিলে আর আগের সিম বা ক্লোন কোনোটাই কাজ করবে না। কারণ, নতুন সিমে সম্পূর্ণ ভিন্ন ইনফরমেশন থাকবে এবং আপনি পাবেন ভি২ রিপ্লেসমেন্ট। এই সিম আপাতত ক্লোন করা দুরূহ। এছাড়া আপনি যদি সুপার সিম ব্যবহার করে থাকেন অবশ্যই সিমে পিনকোড দিয়ে রাখবেন যেন হারিয়ে গেলে সবগুলো রিপ্লেস করা না লাগে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু ফোন নম্বর বা টেক্সট মেসেজই নয়, ক্লোনিং দল মোবাইল ফোন থেকে ছবি, ভিডিওসহ যেকোনো নথিপত্র কপি করে ফেলতে পারে। আর বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের হার বাড়ছে বলেই সিম ক্লোনিং বেড়ে চলেছে।
এদিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নতুন ধরনের এক প্রতারণার বিষয় ধরা পড়েছে। এটিকে বলা হচ্ছে ‘স্পুফিং’। অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ভইলো ডায়ালরের মতো ফান সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তির মোবাইল নম্বর হুবহু নকল করে তা থেকে ফোনকলও করা যায়। যার মোবাইলে ফোনটি আসছে তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারবেন না ফোনটি আসল ব্যক্তি করেছেন না ‘স্পুফিং’ করে অন্য কেউ করেছেন। সম্প্রতি মন্ত্রী, এমপি, সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, পুলিশ প্রধানসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর ‘স্পুফিং’ করে অর্থাৎ হুবহু একই নম্বর নকল করে সেখান থেকে কল করে বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, বদলির তদবির, টেন্ডারবাজিসহ ধরনের জালিয়াতি করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞেরা। গত কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর হুবহু নকল করে সেখান থেকে কল করে তদবির করা হচ্ছে। কোথাও নেয়া হয়েছে চাঁদা। চাকরির বদলি বা নিয়োগের ক্ষেত্রে এ কাজ বেশি করা হচ্ছে। টেন্ডারবাজি বা ঠিকাদারির কাজেও নম্বর ‘স্পুফিং’ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের প্রতারণা করা হচ্ছে তার নাম ‘স্পুফিং’। এটি মূলত একটি মজা করার (ফান সফটওয়্যার) প্রযুক্তি। সারাবিশ্বে সাধারণত বন্ধুবান্ধব বা প্রিয়জনকে আচমকা ভড়কে দিয়ে স্রে্রফ মজা করার জন্যই এটি ব্যবহার হয়ে থাকে; কিন্তু বাংলাদেশে প্রতারক চক্র এটিকে প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যেহেতু ফোনকলটি প্রযুক্তির সহায়তায় করা হয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই ফিরতি কলে ওই নম্বর বন্ধ পাওয়া যাবে। তাই এ ধরনের কল রিসিভ করার পর তা কলব্যাক করে যাচাই করে নেয়া উচিত। এরপরই বিষয়টি দ্রুত পুলিশকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে জিডিও করা যেতে পারে।
জানুয়ারির মধ্যে এমএনপি
সিম নিয়ে ধুন্ধুমার কা--র মধ্যেই নম্বর না বদলেই অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। আগামী জানুয়ারি মাস নাগাদ মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে এই সুবিধা পেতে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা। ইতোমধ্যেই বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল নম্বর পোর্ট্যাবিলিটি বা এমএনপি সুবিধা আগামী জানুয়ারি নাগাদ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করতে নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তিন মাসের মধ্যে এমএনপি সেবা চালুর জন্য সব অপারেটরকে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে হবে। কনসোর্টিয়াম-পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে মোবাইল নম্বর পোর্ট্যাবিলিটি সিস্টেম (এমএনপিএস) গড়ে তুলতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা কাজ করবে। এটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে এক মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এমএনপি সেবা চালু করবে কনসোর্টিয়াম। এ হিসেবে আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পরিপূর্ণভাবে এমএনপি সেবা চালু করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, এমএনপি বাস্তবায়নে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খরচ হবে কনসোর্টিয়ামের। এ নির্দেশনা বাস্তবায়িত হলে যেকোনো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী তার বর্তমান নম্বরটি অপরিবর্তিত রেখেই অপারেটর বদল করতে পারবেন। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে স্বচ্ছ ও কার্যকর প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা চালু হচ্ছে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অ্যাক্ট, ২০০১-এর ২৯ (বি) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। জানা গেছে- এসএমএস, ই-মেইল ও অথবা মুদ্রিত ফরম পূরণ করে অপারেটর বদলানোর আবেদন করা যাবে। তিন দিনের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এর জন্য খরচ হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। অপারেটর বদলের পর ন্যূনতম ৪৫ দিন তার সাথেই থাকতে হবে। অর্থাৎ ৪৫ দিনের মধ্যে আর অপারেটর বদলানো যাবে না। এমএনপি চালু হলে ফোন ব্যবহার হবে আরও সাশ্রয়ী, স্বাচ্ছন্দ্যময়। ধরা যাক, আপনি ‘ভিআইপি টেলিকমের’ গ্রাহক, আপনার নম্বর ০১২৩৪৫৬৭৫০০, এদের কলচার্জ প্রতিমিনিট ১ টাকা ৩৫ পয়সা। অন্যদিকে ‘জগত টেলিকম’-এর কলচার্জ ১ টাকা ১০ পয়সা। নম্বর বদলের ভয়ে আপনি ভিআইপি টেলিকম ছেড়ে জগত টেলিকমের সেবা নিতে পারছেন না অথবা জগতের সাশ্রয়ী কলরেটের সুবিধা নিতে তাদেরও একটি ফোন নম্বর নিয়েছেন। বয়ে বেড়াচ্ছেন দুই দুটি ফোনের ঝক্কি। কিন্তু নতুন পদ্ধতি চালু হলে আপনি আপনার আগের নম্বরটি অর্থাৎ ০১২৩৪৫৬৭৫০০ বহাল রেখেই ‘ভিআইপি টেলিকম’ ছেড়ে ‘জগত টেলিকম’-এর সেবা নিতে পারবেন।