• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-কমার্সে আপসেল ও ক্রসসেল
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আনোয়ার হোসেন
মোট লেখা:৭৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - ডিসেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কমার্স
তথ্যসূত্র:
ই-কমার্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-কমার্সে আপসেল ও ক্রসসেল
ই-কমার্সে পণ্য বিক্রির জন্য দুটি কৌশল হচ্ছে আপসেল ও ক্রসসেল। বিক্রি বাড়ার সাথে সাথে মুনাফাও বেড়ে যায়। তাই ই-কমার্সে পণ্য বিক্রির এ কৌশলগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রসঙ্গ আপসেল
ধরা যাক একজন ক্রেতা অ্যাপলের আইফোন ৭ কেনার জন্য কোনো ই-কমার্স ওয়েবসাইটের চ্যাট অপশন/ফোনে সাইটের বিক্রয়কর্মীর সাথে যোগাযোগ করেছেন। সাইটের বিক্রয়কর্মী চ্যাটে বা ফোনে সে ক্রেতাকে আইফোন ৭ পস্নাসের এমন সব ফিচারের কথা বললেন যে ক্রেতা ভাবলেন কিনবই যখন আর কিছু টাকা বেশি দিয়ে আইফোন ৭ না কিনে আইফোন পস্নাসই কেনা যাক। ভাব যখন নেব বেশি করেই নেই। ক্রেতা না হয় টাকা কিছু বেশি খরচ করে ভাব নিলেন। কিন্তু ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সেই বিক্রয়কর্মী জেনে বা না জেনে সেলসের একটি কৌশল ক্রেতার ওপর প্রয়োগ করেছেন, যার নাম আপসেলিং।
আপগ্রেডের আহবানের মাধ্যমে বিক্রয় আপসেলিং হচ্ছে এমন একটি বিক্রয় কৌশল, যেখানে একজন বিক্রেতা ক্রেতাকে আরও দামি আইটেম ক্রয় করতে, আপগ্রেড করতে অথবা অন্যান্য অ্যাড-অন ক্রয় করতে প্ররোচিত করেন। এটি করা হয় মূলত বিক্রয়কে আরও বেশি লাভজনক করার জন্য।
আপসেলিং বিক্রয়ের অপর কৌশল ক্রসসেলিং থেকে ভিন্ন। এখানে একজন ই-কমার্স বিক্রয়কর্মী অন্য একটি পণ্য বা আরও একটি পণ্য বিক্রি করে কমিশন পাওয়ার কথা ভাবেন না। ক্রেতা যে পণ্যটি কেনার জন্য ই-কমার্স ওয়েবসাইটের সাথে যোগাযোগ করেন, সাইট বিক্রয়কর্মী শুধু সে পণ্যের হাই এন্ড ভার্সনটি বিক্রি করতে চেষ্টা করেন। সাধারণত দেখা যায়, অটোমোবাইল বিক্রেতারা একই পণ্যের একাধিক ভার্সন দেখিয়ে আপসেলে নিযুক্ত থাকেন। প্রতিটি ভার্সনের একটি ভিত্তি মডেল থাকে এবং ধীরে ধীরে অতিরিক্ত ফিচারের সাথে সাথে আরও বিলাসবহুল মডেলের দিকে যেতে থাকে। নতুন কিছু ফিচার যোগ করে একটি নতুন ভার্সন তৈরি হয়। আগের ভার্সনের সাথে আরও কিছু ফিচার যোগ করে আরও একটি নতুন ভার্সন। খুব স্বাভাবিকভাবেই ফিচার বাড়ার সাথে সাথে ভার্সনগুলোর দামও বাড়তে থাকে।
প্রসঙ্গ ক্রসসেল
ক্রসসেল হচ্ছে এমন একটি বিক্রয়ের কৌশল, যেখানে একজন ই-কমার্স সাইটের বিক্রেতা ক্রেতা যে পণ্যটি কেনার জন্য তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন সেটি ছাড়াও অন্য কোনো পণ্য বিক্রি করার প্রচেষ্টা নিয়ে থাকেন। আগের উদাহরণ থেকে বলা যায়, ক্রেতা যদি আইফোন কেনার জন্য ই-কমার্স সাইটের সাথে যোগাযোগ করে আইফোনের সাথে যদি একটি আইপ্যাডও কিনে নেন।
ক্রসসেলিং হচ্ছে একটি বিক্রয়ের কৌশল, যেখানে ক্রেতাকে তার পছন্দের পণ্য বা সেবার বাইরে ভিন্ন ক্যাটাগরির কোনো পণ্য বা সেবা কিনতে প্ররোচিত করেন। ক্রসসেলিং সংগঠিত হয় তখনই, যখন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বিক্রেতার কাছে একাধিক শ্রেণীর পণ্য বা সেবা থাকে, যেগুলো বিক্রির মাধ্যমে বিক্রেতা লাভবান হতে পারেন। ব্যাংকিং বা অর্থনৈতিক সেবা খাতে ক্রসসেলিংয়ের বহুল প্রচলন লক্ষ করা যায়। দেখা গেল, একজন ব্যক্তি ব্যাংকে গেলেন শুধু একটি ব্যাংক হিসাব খোলার উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু ব্যাংকার তখন সে ব্যক্তিকে এটা-সেটা বুঝিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের উপায় যেমন- বন্ড বা রিটায়ারমেন্ট পলিসি কেনার জন্য প্ররোচিত করে সেগুলোর কোনো একটি বিক্রি করলেন। এটাই হচ্ছে ক্রসসেল। আজকের দিনে প্রায় সব ব্যাংকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু আছে। বিনিয়োগ ফার্মগুলো ঠিক একই কাজ করে থাকে। তারা তাদের ক্লায়েন্টদের বর্তমান অভাবের সাথে অতিরিক্ত অভাবগুলো চিহ্নিত করে, যেগুলো তাদের কোম্পানি পূরণ করতে পারবে।
ই-কমার্সে ক্রসসেল ও আপসেলের গুরুত্ব
ভ্রমণ বা ট্রাভেল শিল্পের একটি পরিসংখ্যান খেয়াল করলে দেখা যায়, ৪৮ শতাংশ এয়ারলাইন যাত্রী এবং ৫৯ শতাংশ হোটেল গেস্টরা আপগ্রেড সেবা নিতে বা অতিরিক্ত সেবা পেতে আগ্রহী। এই পরিসংখ্যান বলে, একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ী যদি তার শিল্পের জন্য আপসেল নিয়ে গবেষণা না করেন তবে তিনি আয় বাড়ানোর একটি উপায় হেলায় নষ্ট করলেন। এটি একটি বিক্রয়ের কৌশল, যার মাধ্যমে একজন ক্রেতার প্রাথমিক পণ্য বা সেবা কেনার সংখ্যাকে প্রলোভনের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেয়া হয়। ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন তাদের আয়ের ৩৫ শতাংশ করে ক্রসসেলের মাধ্যমে। তারা ক্রসসেলের জন্য যেসব ট্যাগ লাইন ব্যবহার করে, তার মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে ‘Frequently Bought Together’ ও ‘Customers Who Bought This Item Also Bought’।
এদের মাধ্যমে একজন ক্রেতা যেসব পণ্য অ্যামাজনের সাইটে ভিউ দেখেন সেসবের সাথে অন্য সব পণ্যের সাজেশন দিয়ে সেগুলোর প্রমট করা হয়। এ সংক্রান্ত আরও একটি উদাহরণ হচ্ছে ম্যাকডোনাল্ডের সেই ক্লাসিক প্রশ্ন ‘Would you like fries with that?’
ই-কমার্সে আপসেল ও ক্রসসেলের কৌশল
প্রথমেই যেসব পণ্য ফিচার বা মডেলের ওপর আপসেল করা হবে, সেগুলো ঠিক করে নিতে হবে। অবশ্যই সেসব হতে হবে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে টাইমিং বা সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। ধরা যাক, একজন ক্রেতা একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ‘ক’ কিনবেন বলে নিশ্চিত করেন। এমন অবস্থায় সেই ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করতে হবে তিনি আর একটু প্রিমিয়াম ‘খ’ পণ্যটি পেতে ইচ্ছুক কি না যে পণ্যের সাথে আগের পণ্যের সব ফিচারের সাথে নতুন কিছু বাড়তি ফিচার যোগ হবে। উদাহরণস্বরূপ। যে ক্রেতা ২০ হাজার ডলারের একটি সেডান গাড়ি কিনতে ইচ্ছুক, তিনি আর যাই হোক ৫০ হাজার ডলারের স্পোর্টস কার কিনতে রাজি হবেন না। কিন্তু তিনি হয়তো ২৩ হাজার ডলারের সেডান গাড়ি কিনতে রাজি হবেন। ক্রেতার অভাব ও চাহিদার সাথে আপসেলকে এক সূত্রে গাথতে হবে যেন তিনি মূল পণ্যের অতিরিক্ত কিছু কিনতে রাজি হন।
পণ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা
কোনো ক্রেতাকে তার অভাব ও প্রয়োজন অনুসারে পণ্য বা সেবা সুপারিশ করার জন্য সবার আগে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। কোন পণ্য কোন ক্রেতার জন্য ভালো হবে, সেটা পণ্য সম্পর্কে ধারণা না থাকলে ক্রেতাদেরকে পণ্য সুপারিশ করা সম্ভব নয়। কেননা ভিন্ন ভিন্ন ক্রেতার চাহিদা, অভাব ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। সে অভাব বা চাহিদা পূরণের জন্য দরকার ভিন্ন ভিন্ন পণ্য। আপসেলের জন্য একটি পণ্যকে অন্যান্য পণ্যের সাথে তুলনা করতে হবে, অন্যান্য ক্লায়েন্টের সফলতার গল্প তুলে আনতে হবে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে যত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এর বাইরে যেসব কৌশল আপসেলের বা ক্রসসেলের জন্য দরকার, সেগুলো হচ্ছে ক্রেতাদের ডাটাবেজ নিয়ে রিসার্চ করা, সবচেয়ে বেশি এবং বারবার ক্রয় করা পণ্যের ওপর লক্ষ রাখা।
ক্রেতাদের ওপর লক্ষ রাখতে হবে
ক্রেতার কথা শোনার মানসিকতা থাকতে হবে- এতে তিনি (ক্রেতা) কত টাকা পর্যন্ত অর্থ খরচ করতে পারবেন, কী ধরনের পণ্য খুঁজছেন, অন্য কী ধরনের পণ্যের প্রতি আগ্রহ থাকতে পারে, তাদের ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা থাকলে সেটা কী ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। এই ধারণাগুলো আপসেল ও ক্রসসেলের জন্য খুবই জরুরি। একই সাথে এসব ধারণা বা ক্রেতা সম্পর্কে তথ্য নিয়ে বিক্রেতা ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, কোনো ভুল বোঝাবুঝি হওয়া এড়িয়ে চলতে পারেন।
পণ্য সুপারিশের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হতে হবে
একটি কার্যকর আপসেল বা ক্রসসেলের জন্য একজন ক্রেতাকে পাইকারি হারে পণ্য কেনার জন্য সুপারিশ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে উল্টো বিক্রি না বেড়ে, বিক্রি কমে যেতে পারে। যা করতে হবে তা হলো- ক্রেতার পছন্দ ও দরকারের সাথে মিলে যায় এমন টার্গেটেড কিছু পণ্যের সুপারিশ করা। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে অল্প সুপারিশ থেকেই সেল চলে আসবে। টাকার পরিমাণের ওপরও নজর রাখতে হবে। কেননা, টাকার পরিমাণ যদি ক্রেতার সাধ্যের বাইরে হয়, তবে সে আপসেল বা ক্রসসেল প্রচেষ্টা সফল না হওয়ারই কথা।
প্রশিক্ষিত ই-কমার্স বিক্রয়কর্মী
অনেক কোম্পানি আছে, যারা তাদের বিক্রয়কর্মীদেরকে কীভাবে কার্যকর আপসেল বা ক্রসসেল করতে হবে, কীভাবে ইনসেনটিভ অফার করতে হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এ ধরনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য খুবই যত্নবান হওয়া জরুরি। একটি সাধারণ আপসেল বা ক্রসসেল কৌশল হচ্ছে ক্রেতার ব্যাকগ্রাউন্ড, বাজেট, অন্যান্য বাজেট সম্পর্কে সচেতন থাকা।
আরেকটি কৌশল হচ্ছে পণ্য ক্রয়ের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া। এটি সাধারণত ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। এরকম ক্ষেত্রে বর্ধিত ওয়ারেন্টি অফার করলে ক্রেতার মনে প্রশান্তি নিয়ে আসবে


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - ডিসেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা