• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ই-কমার্স নীতি সম্মেলনে বক্তারা: ই-কমার্স নীতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিফলন থাকতে হবে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল
মোট লেখা:৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কমার্স
তথ্যসূত্র:
ই-কমার্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ই-কমার্স নীতি সম্মেলনে বক্তারা: ই-কমার্স নীতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিফলন থাকতে হবে
ই-কমার্স নীতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি মূল স্তম্ভ- ই-গভর্ন্যান্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দেশের সব জায়গায় উচ্চতর গতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়ন তথা শিল্প খাতকে গড়ে তোলার বিষয়ে প্রতিফলন থাকতে হবে। আগামী দশ বছরে কী হতে পারে, তা মাথায় রেখেই এই ই-কমার্স নীতি তৈরি করতে হবে। সে লক্ষক্ষ্য আইসিটি বিভাগ সাহায্য করতে প্রস্ত্তত। ই-ক্যাবের সুপারিশক্রমে আইসিটি বিভাগ সাইবার নিরাপত্তার ওপর ‘ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে’- ই-ক্যাব সম্মেলনের প্রধান অতিথি আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব কথা বলেন। তিনি এই পলিসি কনফারেন্স আয়োজনের জন্য ই-ক্যাবকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং বলেন, এটি বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়নের ক্ষক্ষত্রে একটি সময়োপযোগী পদক্ষক্ষপ। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ই-কমার্সের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। যথাযথ নীতি-প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদেরকে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর ই-ক্যাব রাজধানীর র্যাএডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। এ সম্মেলনের পস্নাটিনাম স্পন্সর ও সিলভার স্পন্সর ছিল যথাক্রমে ভিসা ও এসএসএল কমার্জ। আর এর নলেজ স্পন্সর ছিল কমপিউটার জগৎ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক সেজান সামস ও ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) নাছিমা আক্তার সবাইকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান। ই-ক্যাব উপদেষ্টা শমী কায়সার সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন।
এরপর মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল। তিনি বলেন, ‘এশিয়ার অন্যান্য দেশে ই-কমার্স খুবই দ্রুতগতিতে বাড়ছে, কিন্তু বাংলাদেশে ই-কমার্সের উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি নেই এবং এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ এ খাতে কোনো নীতিমালা নেই।’
ই-ক্যাব উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুলস্নাহ এইচ কাফি ই-কমার্স খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যত দ্রুত সম্ভব ভোক্তার কাছে পণ্য ও সেবা সরবরাহ করবে। সরবরাহ করা পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য, লেনদেন সম্পর্কিত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তাকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। মহিলা উদ্যোক্তাদের কীভাবে ই-কমার্সে সম্পৃক্ত করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করতে হবে। সরকারের কাছে কোন বিষয়ে সহায়তা প্রয়োজন, সে বিষয়ে খুবই সুনির্দিষ্টভাবে সুপারিশ করতে হবে।’
ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ বলেন, ‘দেশীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ই-কমার্স সম্পর্কিত কোর্স, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং ই-কমার্সের ওপর ডিগ্রি চালু করতে হবে। দেশীয় মিডিয়াগুলোকে ই-কমার্সের ওপর জোর দিতে হবে। বড়-ছোট সব ধরনের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যাতে ব্যবসায় করতে পারে, তার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন পত্রিকায় ই-কমার্সের ওপর একটি নির্দিষ্ট পাতা রাখতে হবে। টিভি চ্যানেলগুলোতে ই-কমার্সের ওপর নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে।’
ভিসার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার হেড অব প্রোডাক্ট রামা তারেপালিস্ন তার বক্তব্যে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করছে যেমন- অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ডেলিভারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ওয়েব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এদেরকে একসাথে কাজ করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে বলেন।
তার মতে, ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে পলিসিতে যেসব বিষয়ে জোর দিতে হবে সেগুলো হলো-
০১. ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা : একজন অনলাইন ক্রেতা যাতে সহজে ও আয়েশে অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারে, সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত রিটার্ন পলিসি প্রস্ত্তত করতে হবে।
০২. নিরাপত্তা : অনলাইনে তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
০৩. অবকাঠামো উন্নয়ন : ই-কমার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো যেমন- সাধ্যের মধ্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে।
০৪. ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট ব্যবহারে উৎসাহিত করা : দেশীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্ডে পেমেন্ট নেয়া এবং অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারি সংস্থাগুলো অনলাইনে লেনদেন করবে এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল, সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা যাতে অনলাইনে দেয়া হয় সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
০৫. অনলাইনে প্রতারণা : অনলাইনে পণ্য বা সেবা বিক্রির সময় ক্রেতা বা বিক্রেতা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। উন্নত রিটার্ন পলিসি তৈরি, বিক্রি করা পণ্য বা সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করা, ক্রেতা হয়রানি রোধ- এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
০৬. কার্ডে পেমেন্ট করতে উৎসাহিত করা : সাধারণ মানুষ যাতে কার্ডে পেমেন্ট করতে উৎসাহিত হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
এসএসএল ওয়্যারলেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনলাইনে যারা পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন তাদেরকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সার্টিফিকেট দিতে হবে যে, তারা ই-কমার্সের উপযুক্ত।’
সেমিনার
দিনব্যাপী এই নীতি-সম্মেলনে উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশন ছাড়াও দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ’ বিষয়ক সেমিনারটি শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। ই-ক্যাব সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক জামী সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এরপর এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যাতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে তার ওপর কাজ করতে হবে। কীভাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ করতে পারে তার ওপর একটি বিনিয়োগ নীতিমালা প্রস্ত্তত করতে হবে। অনলাইনে কী ধরনের পণ্য বিক্রি করা যায় ও অনলাইনে লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাসহ অন্য যারা আছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতারণা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ই-কমার্সে বিরাজমান বিভিন্ন ধরনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ই-কমার্সকে প্রমোশন করতে হবে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ই-কমার্সের ওপর নিয়মিত প্রচারণা চালাতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ বিষয়ে নীতিমালা প্রস্ত্তত করতে হবে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদেরকে রক্ষা করতে হবে, যাতে তারা আরও ভালো করতে পারে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শুভাশীষ বসু বলেন, ‘দেশের তরুণ সমাজের দক্ষতা বাড়াতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং তাদের দক্ষতা বুঝে কাজে লাগাতে হবে। স্পেশাল ইকোনমিক জোন নির্মাণ এবং এই জোনে বিভিন্ন ধরনের আইটি ও আইটিইএস সেবা দিতে হবে। সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানের জন্য কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।’
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিইএবি) প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বাধা রেখে দিতে হবে। তারা যাতে অবাধে বিনিয়োগ করতে না পারে। ই-কমার্স খাতে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। বিনিয়োগের দেশী-বিদেশী শেয়ারের অনুপাত হবে ৫১:৪৯। ৫১ শতাংশ হতে হবে বাংলাদেশী বা নন- রেসিডেন্সিয়াল বাংলাদেশী এবং ৪৯ শতাংশ বিদেশী। মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ই-কমার্সে বিনিয়োগ না করে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিডিজবস ডটকমের সিইও ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বাধা রেখে দিতে হবে। তারা যাতে অবাধে বিনিয়োগ না করতে পারে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সার্ভিস সেক্টরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজেক্ট পুনঃঅর্থায়ন ফান্ডে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫০০ কোটি টাকার একটি বরাদ্দ রাখতে হবে। সরকার ও সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান মিলে বিনিয়োগ নিয়ে আসার ব্যাপারে কাজ করতে হবে। গবেষণা পরিচালনা করার জন্য ফান্ড জোগাড় করতে হবে।’
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এনডিসি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের সাথে ই-ক্যাব মিলে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে এ দুটি প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের উন্নয়নে কাজ করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ও অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টে কাজ করে, তারা হাইটেক পার্কে আসতে পারে। ই-কমার্সের উন্নয়নে গবেষণা ও জরিপ পরিচালনা খুবই জরুরি। ই-কমার্স খাতে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে এবং হাইটেক পার্ক এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। দেশজুড়ে হাইটেক পার্ক কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন মেলা ও সেমিনারে ই-ক্যাব ও এর সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ই-কমার্স সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পারে।’
ই-ক্যাবের উপদেষ্টা মো: নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশীয় ই-কমার্স খাতের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের ওপর জোর দিতে হবে। কনটেন্টের ওপর জোর দিতে হবে। কনটেন্ট অ্যাসোসিয়েশন প্রস্ত্তত করতে হবে। দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগের জন্য তাদের কাছে ই-কমার্স খাতকে প্রমোট করতে হবে। শিক্ষা খাতে ই-কমার্সের ওপর জোর দিতে হবে এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে হবে।’
বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ‘অনলাইনে অর্থ পরিশোধ ও লেনদেন’ বিষয়ক দ্বিতীয় সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ই-কমার্স সেক্টর গড়ে তুলতে সব ধরনের সহায়তা করতে রাজি। ই-কমার্স এখন আর বিলাসিতার বস্ত্ত নয়। ই-ক্যাবের কাছ থেকে প্রাপ্ত যাবতীয় সুপারিশ ও পরামর্শ আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করব।’
ভিসার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার হেড অব প্রোডাক্ট রামা তারেপালিস্ন বলেন, ‘অনলাইনে লেনদেনের ক্ষক্ষত্রে নিরাপত্তা খুবই জরুরি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে অনলাইনে লেনদেন বাংলাদেশে জনপ্রিয় হবে না।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মাস্টার কার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। তিনি বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে অনলাইন লেনদেনকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য গ্রামের প্রতিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য একটি ডেবিট কার্ড বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে।’
সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে হবে। ভোক্তারা কার্ড কী কী কাজে ব্যবহার করবেন, অনলাইনে বিদেশ থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কী করবেন, তা তাদেরকে জানাতে হবে। ব্যাংকগুলো কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে বা বাজারে তাদের কার্ড ছাড়ার ক্ষেত্রে কী কী গাইডলাইন ফলো করবে, তা উল্লেখ করতে হবে ই-কমার্স পলিসিতে।’
এসএসএল ওয়্যারলেসের চিফ অপারেটিং অফিসার আশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। অনলাইনে প্রতারণা রোধে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ভোটার আইডি কার্ড ব্যবহার করতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, যেমন- ওয়াসা, ডেসা, ডেসকোকে কার্ডের মাধ্যমে বিল নেয়া শুরু করা উচিত। তাতে লোকে কার্ড ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ বলেন, ‘বিভিন্ন পেমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে ইন্টার অপারেবিলিটি বাড়াতে হবে। পলিসির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করতে পারে, তা আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলা হোক। ই-ক্যাবের বিভিন্ন সুপারিশ আমরা বিবেচনা করব।’
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) পলিসি অ্যাডভাইজার আনির চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক, এটুআই, বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্স, প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপার্স ও বিশ্বব্যাংকের সিজিএপি- এই কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মিলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পেমেন্ট আর্কিটেকচার প্রস্ত্তত করছে। এর মাধ্যমে গভর্নমেন্ট-টু-পিপল (জি-টু-পি) সরকার তার কর্মচারীদের বেতন, বয়স্ক ভাতাসহ অন্য যেসব টাকা দিয়ে থাকে সেগুলো অটোমেটাইজ হবে, একই সাথে বিভিন্ন ধরনের বিল মেটানো যাবে।
লিডস কর্পোরেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আজিজ বলেন, ‘অনলাইনে যারা পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন তাদের পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডাটা সিকিউরিটি সিস্টেমের (পিসিআইডিএসএস) সাথে কমপস্নায়েন্ট হতে হবে। এতে করে তারা অনলাইনে পণ্য বিক্রির জন্য উপযুক্ত বলে ঘোষিত হবে।’
সংলাপ
দুপুর ২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ‘বিজনেস লিডারশিপ ডায়ালগ অন ই-কমার্স’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাসেল টি আহমেদ সংলাপটির সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন।
এ সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি। তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বিটিসিএলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা ই-কমার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের সবাইকে নিয়ে বসতে হবে এবং কাজ করতে হবে। ই-কমার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের ওপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রস্ত্তত করতে হবে এবং সেই নীতিমালায় ই-কমার্সের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সরকারের কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থা তদারক, নিয়ন্ত্রণ বা পর্যবেক্ষণ করবে এবং উদ্ভূত সমস্যাগুলোর সমাধান করবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দিতে হবে। যেমন- ই-কমার্সে উদ্ভূত বিরোধ কোন মন্ত্রণালয় বা সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান নিষ্পত্তি করবে? পণ্য রিটার্ন পলিসি, প্রতারণা রোধে কী কী করা হবে এবং সরকারের কোন কোন প্রতিষ্ঠান অনলাইন প্রতারণা নিয়ে কাজ করবে? অনলাইনে সম্পাদিত লেনদেনগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে সরকারের কোন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান? ই-কমার্স নীতিমালা প্রণয়নে মন্ত্রণালয়ের কাছে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ দিতে হবে। ই-কমার্সের সাথে মহিলাদের উন্নয়নকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ৯,৯৮৬টি পোস্ট অফিসকে ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারির উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। অনলাইন পেমেন্টের ক্ষেত্রে ইন্টার অপারেবিলিটি নিশ্চিত করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্ত্তত।’
সিটিও ফোরামের সভাপতি তপন কান্তি সরকার বলেন, ‘আইসিটি ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো ব্যাংক ও আইসিটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে।’
দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘এফবিসিসিআই সব ব্যাংকের পরিচালকদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আইসিটি ও ই-কমার্স খাতে বিনিয়োগ ও বিরাজমান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবে। ব্যাংকের বাইরেও অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো যাতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্য) সভাপতি আহমেদুল হক ববি বলেন, ‘দেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে দেশের ভেতরে পণ্য এনে অনলাইনে বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিষ্কার থাকতে হবে। ক্রেতা যাতে অনলাইনে কেনা পণ্য দ্রুত খালাস করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইনে ডিজিটাল পণ্যের বিক্রির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্বকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুলস্নাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করতে প্রস্ত্তত।’
অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘গ্রামে ই-কমার্সকে ছড়িয়ে দেয়ার ওপর কাজ করতে হবে। গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে সরাসরি বিক্রি করতে পারলে মধ্যস্বত্বভোগীদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাবেন।’
আইসিটি ডিভিশনের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘পলিসি প্রণয়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে হবে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাবের উপদেষ্টা শমী কায়সার, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিইও আবরার এ আনোয়ার, ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ, ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল, ভিসার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার হেড অব প্রোডাক্ট রামা তারেপালিস্নস্ন এবং এসএসএল ওয়্যারলেসের চিফ অপারেটিং অফিসার আশীষ চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক অনু, ই-ক্যাবের ডিরেক্টর (ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স) তানভির এ মিশুক ও ই-ক্যাবের ডিরেক্টর (কমিউনিকেশন) মো: আফজাল হোসেন


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস