লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ছোট ব্যবসায়ের বুক কিপিং এবং অ্যাকাউন্টিং
ই-কমার্স ব্যবসায়ে আপনি হয়তো নতুন, সব কিছু গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শুরু থেকেই যদি নিজের ব্যবসায়ে হিসাব-নিকাশ সঠিক উপায়ে না রাখেন, তবে সেটা ব্যবসায়ের জন্য ভালো হবে না। লাভ হওয়ার কথা এমন ব্যবসায়েও দেখা যাবে ক্ষতি হচ্ছে, আর লাভজনক নয় এমন ব্যবসায় হয়তো অচিরেই বন্ধ করে দিতে হবে। ক্ষতি কমাতে বা ব্যবসায় বন্ধ হওয়া এড়াতে আপনাকে কিছু ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। যেমন- ব্যবসায় নিবন্ধন করা, ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ের অর্থনৈতিক কার্যক্রম আলাদা করা, ব্যবসায় ব্যাংক হিসাব খোলা, খরচ চিহ্নিত/নথিবদ্ধ করার পদ্ধতি গড়ে তোলা, বুককিপিং সমাধান বেছে নেয়া ইত্যাদি।
ব্যবসায় নিবন্ধন করা
নিবন্ধনের বিষয় এলে প্রথমেই যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো হচ্ছে ব্যবসায়ের ধরন, অর্থাৎ ব্যবসায়টি কি এক মালিকানা, যৌথ মূলধনী, কর্পোরেশন, নাকি অংশীধারী ব্যবসায়।
এক মালিকানা
এই ধরনের ব্যবসায় হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসায় ধরনের একটি এবং একই সাথে এ ধরনের ব্যবসায়ের গঠনও তুলনামূলকভাবে সহজ। এ ধরনের ব্যবসায় নিবন্ধনের জন্য সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স। লাইসেন্স নেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, আপনি ঠিক যে ধরনের ব্যবসায় করতে চান লাইসেন্সটি যেন সে শ্রেণীর হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ই-কমার্সের জন্য আলাদা করে কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই।
আর ব্যবসায়ের নামের জন্য আপনি যেমন চাইবেন তেমন নামও ঠিক করে দিতে পারেন। এক মালিকানা ব্যবসায়ের জন্য আপনি কারও কাছে দায়বদ্ধ নন। একই সাথে ব্যবসায়ের সব দায়ের জন্য আপনি এককভাবে দায়বদ্ধ। অর্থাৎ লাভ বা লোকসান সব আপনি একাই বহন করবেন।
লিমিটেড কোম্পানি
এই ধরনের সীমাবদ্ধ দায়ের কোম্পানিগুলোয় মালিকদের দায় সীমিত। মালিক কোম্পানির লাভ বা লোকসান দুটোর জন্যই একা দায়ী থাকেন। এ ধরনের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মালিক তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবসায়ের দায় মেটাতে ব্যবহার করা থেকে মুক্ত থাকেন। এক মালিকানার ক্ষেত্রে যেটা সম্ভব নয়।
ব্যক্তিগত আর্থিক কর্মকা- আলাদা করা
ব্যবসায় ও আপনি দুটো আলাদা সত্তা বিবেচনায় নিতে হবে। তাই আপনি ব্যক্তিগতভাবে যা খরচ করবেন, সেগুলোকে ব্যবসায়ের খরচ থেকে আলাদা রাখা খুবই জরুরি। আলাদা রাখার সুবিধা অনেক। আপনি যদি লিমিটেড বা যৌথ মুলধনী কোম্পানি পরিচালনা করেন, তবে আলাদা হিসাব সংরক্ষণ করলে তা আপনার ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে ব্যবসায়ের দায় থেকে দূরে রাখবে। এর বাইরে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন ব্যবসায়ে টাকা কোন কোন খাত থেকে আসছে বা টাকা কোন খাতে খরচ হচ্ছে। এগুলো আপনার ব্যবসায়ের ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে এক ঝলক চোখ বুলিয়েই বুঝতে পারবেন। এ ছাড়া আলাদা হিসাব রাখলে অনেক সময় ও শ্রম বাঁচাতে পারবেন। এতে আপনার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব বিবরণী থেকে খুঁজে খুঁজে ব্যবসায় লেনদেন বের করার ঝামেলা পোহাতে হবে না।
ব্যবসায় ব্যংক হিসাব খোলা
এক মালিকানা ব্যবসায় না হলে আপনার ব্যবসায় ও ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেন বা হিসাব আলাদা রাখার জন্য আপনাকে একটি ব্যবসায় ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। এমনকি আপনি যদি এক মালিকানা ব্যবসায়ও পরিচালনা করেন, তাহলেও পরামর্শ থাকবে ব্যবসায় কার্যক্রমের জন্য আলাদা একটি ব্যাংক হিসাব খুলে নেয়ার, যাতে ব্যবসায় হিসাব আলাদা রাখা সম্ভব হয়।
ব্যাংক পছন্দ করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন-
ঙ কী ধরনের ব্যাংক হিসাব আপনার দরকার।
ঙ ব্যাংকের এটিএম বুথ এবং শাখার অবস্থান।
ঙ ব্যাংক চার্জের পরিমাণ।
ব্যয় চিহ্নিত করা
আপনি হয়তো আপনার ব্যবসায়ের সব খরচের ভাউচার কোনো সুবক্সড সাইটে রেখে নিশ্চিন্ত আছেন যে সব খরচের নথি আপনি সংরক্ষণ করছেন। এটাও সহায়তা করবে অর্থ ব্যয়ের খাতগুলো সম্পর্কে জানতে। ব্যয়খাতগুলো জানা এবং তাদের নথি সংরক্ষণ করা থাকলে সেগুলো কর রেয়াতের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে।
ব্যয় চিহ্নিত করার সুবিধা
হিসাব সংরক্ষণ করলে দুইদিক দিয়ে সুবিধা পাবেন। যেমন- এর ফলে আপনার কর সংক্রান্ত হিসাব বের করা সুবিধাজনক হবে। একই সাথে আপনার ব্যবসায়ের আর্থিক লেনদেন সঠিকভাবে দেখাশোনা করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি আপনি যদি ব্যয় সংক্রান্ত সব হিসাব রাখেন, তবে আপনার ব্যবসায়টি হবে সুসংগঠিত, যা আপনাকে ভবিষ্যতে ঝামেলামুক্ত ব্যবসায় করতে ও জীবনযাপনে সাহায্য করবে।
কর সংক্রান্ত দলিল কত সময়ব্যাপী সংরক্ষণ করবেন?
সাধারণত কর রিটার্ন ফাইল করার দিন থেকে তিন বছর পর্যন্ত কর রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। আইআরএস অনুযায়ী এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কীভাবে কর হিসাব সংরক্ষণ করবেন
সুবক্স সাইট খরচের সব নথি রাখার ধারণা কর রিটার্ন দাখিলের সময় আপনাকে অতিরিক্ত কাজ এবং খুব যন্ত্রণা দেবে। আপনার সব প্রাপ্তি এবং প্রদানের নথি পুরনো পদ্ধতি অর্থাৎ ফাইলিং করে রাখতে পারেন। তবে যেহেতু আপনি একজন আধুনিক ই-কমার্স ব্যবসায়ী, তাই পেপারলেস হিসাব সংরক্ষণকে বেছে নিতে পারেন এবং সব নথি ইলেকট্রনিক্যালি সংরক্ষণ করতে পারেন। আইআরএসের কাছে ডিজিটাল নথি গ্রহণযোগ্য, তবে প্রয়োজনে শুধু নথিগুলো প্রিন্ট করে নেয়ার ব্যবস্থা থাকলেই হবে। অনলাইনে আপনি সব নথি রাখতে পারেন ড্রপবক্স (www.dropbox.com), গুগল ড্রাইভ বা এভারনোটের (evernote.com) মতো ক্লাউড স্টোরেজ সিস্টেমে অথবা ব্যবহার করতে পারেন সুবক্সড (shoeboxed.com)-এর মতো সেবা। আপনার সব নথির অবশ্যই ব্যাকআপ কপি সংরক্ষণ করতে ভুলবেন না।
কী ধরনের ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ করবেন
প্রথমেই আপনার ট্যাক্সের রিটার্ন দাখিলের জন্য দরকারি সব ব্যয়ের নথির কথা মাথায় রাখতে হবে। ছোট ব্যবসায়ের কর কর্তনযোগ্য হিসাবের তালিকা করে নিতে পারেন। এর বাইরে আপনাকে যেসব হিসাবের ট্র্যাক রাখতে হবে সেগুলো হলো-
ঙ প্রাপ্তিসমূহ; ঙ ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ড বিবরণী; ঙ বিল; ঙ বাতিল হওয়া চেক; ঙ ইনভয়েস; ঙ প্রম্নফ স্টেটমেন্ট; ঙ আপনার বুক কিপারের কাছ থকে পাওয়া আর্থিক বিবরণী; ঙ আগের বছরের ট্যাক্স রিটার্ন; ঙ এ ছাড়া যেকোনো নথি যা কোনো আয়, ব্যয়, ধার গ্রহণ, প্রদান বা কর প্রদানকে সমর্থন করে
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তালিকা চূড়ান্ত কিছু নয়। আপনার ব্যবসায়ের ধরনের সাথে সাথে এর পরিবর্তন আসতে পারে