লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ক্রেতার অভিযোগ যেভাবে কমিয়ে আনবেন
কেউই অশুভ সংবাদ শুনতে চায় না, বিশেষ করে সেটা যদি হয় কাস্টমারদের অভিযোগ বিষয়ে। কিন্তু আপনি চাইলেই ক্রেতাদের অভিযোগ আসা বন্ধ হয়ে যাবে না, যদি না আপনি ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জনে কাজ না করেন। শুধু আশা করলেই হবে না, সে অনুযায়ী কাজও করতে হবে। কেমন হবে, যদি অভিযোগ আসার আগেই সেগুলো বন্ধ করে দিতে সক্ষম হন? এখানে অবশ্য অভিযোগ আসার পথ বন্ধ করতে বলা হচ্ছে না। বরং বল হচ্ছে, ক্রেতাদের জন্য কিছুটা সহানুভূতি ও দূরদর্শিতা দেখানোর কথা। এখানে ক্রেতাদের অভিযোগের সবচেয়ে সাধারণ কিছু উৎস এবং তাদের সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে ক্রেতারা হতাশ হওয়ার আগেই আপনার সাইট থেকে খুব ভালো কেনাকাটার পরামর্শ নিতে পারেন।
অভিযোগ মানেই খারাপ বা বিরক্তিকর কিছু মনে করার কারণ নেই। কেননা, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অভিযোগ হতে পারে খুবই উপকারি একটি টুল, যার মাধ্যমে আপনার ব্যবসায়ের ঠিক কোথায় উন্নতি করতে হবে বা কোথায় পরিবর্তন আনতে হবে বা কোথায় আরও পরিমার্জন করতে হবে- এসব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। একই সাথে ক্রেতাদেরকে হতাশ না করে অভিযোগের সমাধান দিতে পারলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো।
ক্রেতারা কেনো অভিযোগ করেন?
খুব স্বাভাবিক এক প্রশ্ন। আপনি নিজেকে একজন ক্রেতার আসনে বসিয়ে দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। ভেবে দেখুন, আপনি কখন অভিযোগ করেন বা কেনো করেন। তবে আমরা বলতে পারি, সাধারণভাবে একজন ক্রেতা হতাশ হলেই অভিযোগ করেন। তার মানে এটা ভেবে নিলে হবে না, ক্রেতারা কোনো কিছু করতে না পারলেই অভিযোগ ঠুকে দেন। হতাশা আসতে পারে যেকোনো সময়। কোনো কাজের ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী না হলে হতাশার জন্ম হয়। অর্থাৎ আপনি কোনো একটা কাজ করে যেমন ফলাফল প্রত্যাশা করেছিলেন সে রকমটা পেলেন না। বলা যায়, এটিই হতে পারে আপনার মাঝে হতাশার মূল কারণ।
এই হতাশার মুহূর্তগুলো আপনার ক্রেতাদের মাঝে যেকোনো অবস্থাতেই চলে আসতে পারে। যেমন সেটা হতে পারে এমন- ক্রেতা তার অর্ডার করা পণ্যের ডেলিভারি না পেয়ে থাকলে বা আপনার বিরক্তিকর প্রোডাক্ট পেজের কারণে। আসলে একজন ক্রেতা হতাশ হতে পারেন যেকোনো জায়গা থেকেই। আর এ কারণেই আপনাকে ধারণা রাখতে হবে ক্রেতারা কোন কোন কারণে হতাশ হতে পারেন এবং সেগুলোকে দূর করার উপায় যাতে ক্রেতারা আপনার কাছ থেকে পেয়েই পণ্য কেনেন এবং কোনো ধরনের অভিযোগ না করেন।
ক্রেতাদের অভিযোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এমন কিছু প্রধান বিষয় আছে, যেগুলো সঠিকভাবে চালাতে না পারলে ক্রেতারা হতাশ হন। যদি সেসব বিষয়কে সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেন তাহলে বলা যায়, আপনি অভিযোগের পরিবর্তে পাবেন ক্রেতা-সন্তুষ্টি। অনেকেই মনে করেন, ক্রেতাদের সুখী রাখা সবচেয়ে কঠিন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি সঠিক হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক নয়। ক্রেতাদের প্রত্যাশাকে সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারাই হচ্ছে ক্রেতাদেরকে সুখী রাখার উপায়। বেশিরভাগ ক্রেতার অভিযোগের কারণ হলো তাদের প্রত্যাশা এবং বাস্তবতার মধ্যে কোনো ধরনের সংযোগ না থাকা। তাই আপনাকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার পণ্য বা সেবার উপযোগিতার সাথে মিল রেখে ক্রেতার প্রত্যাশা বণ্টনের জন্য কাজ করতে হবে।
নিচে ক্রেতাদের অভিযোগের সবচেয়ে সাধারণ কিছু কারণ দেখানো হয়েছে, যেগুলো সমাধান করে অভিযোগবিহীন সন্তুষ্ট ক্রেতাদের পেতে পারেন।
শিপিং এবং ইনভেন্ট্রি বিষয়
‘আমার অর্ডার করা পণ্য কোথায়?’ এটি বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সবচেয়ে সাধারণ একটি প্রশ্ন। কেননা আমাদের ডেলিভারি সিস্টেম এখনও অনেক দুর্বল। তাই সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি না হওয়া আমাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। আপনি যদি এই ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তবে বোধকরি নিরাপদে এবং সময়মতো আপনার ক্রেতাদের কাছে পণ্য ডেলিভারি করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। ক্রেতারা অনেক বিশ্বাস করেই আপনার কাছ থেকে পণ্যের অর্ডার করেন। যদি এমনটা দেখা যায়, ক্রেতারা আপনার কাছে তাদের অর্ডার করা পণ্য সময়মতো পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তাহলে এই অনিশ্চয়তাই নিয়ে আসতে পারে অভিযোগের পর অভিযোগ।
এ থেকে যদি মুক্ত থাকতে চান, তাহলে সম্ভব হলে আপনার ক্রেতাদেরকে তাদের অর্ডার করা পণ্য ট্র্যাক করার সুবিধা অফার করতে পারেন। আপনার ক্রেতারা যদি তাদের অর্ডার করা পণ্যটি ঠিক কোথায় অবস্থান করছে বা কখন তাদের হাতে এসে পৌঁছবে জানতে পারেন, তাহলে এটি তাদেরকে পণ্য পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেবে, যা ক্রেতা-অভিযোগ কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। শপিফাই স্টোর মালিকেরা তাদের ক্রেতাদের অর্ডার করা পণ্যের ট্র্যাক করার সুবিধা দিয়ে থাকেন। যদি আপনার ক্রেতাদেরকে তাদের অর্ডার করা পণ্যের প্যাকেজটির লাইভ আপডেট দিতে পারেন, তাহলে একজন ক্রেতা খুব সহজেই সন্তুষ্ট থাকবেন। ফলে অভিযোগও কম আসবে বা আসবে না।
বেশ কিছু অ্যাপ আছে, যেগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন কুরিয়ার কোম্পানি ডেলিভারির রিয়েল টাইম ম্যাপসহ ক্রেতাদের অর্ডারের সম্পূর্ণ আপডেট দেয়। সে ধরনের একটি অ্যাপ হচ্ছে ট্র্যাক্টর।
সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পণ্য ফুরিয়ে যাওয়া বা আউট অব স্টক হয়ে যাওয়া আরেকটি মাথাব্যথার বিষয়। এমনটা যাতে না হয় তার জন্য আপনাকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। শপিফাই তাদের ব্যবহারকারীদের জন্য আউট অব স্টক নোটিফিকেশন নামে একটি অ্যাপ অফার করে থাকে, যার সাহায্যে স্টক বা পণ্য মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়।
এ ছাড়া কিছু অ্যাপ আছে, যেগুলো আপনাকে স্টক শেষ হয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। যেমন- ভিজিবিলিটি ম্যানেজার এবং ওয়াপ আউট নামের অ্যাপ দুটি আপনার স্টোরের কোনো পণ্য শেষ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই পণ্যের ছবি সাইট থেকে সরিয়ে দেবে, এতে ক্রেতা ফুরিয়ে যাওয়া পণ্য অর্ডার করে বিরক্ত হবেন না, আপনিও অভিযোগ পেয়ে বিব্রত হবেন না। কোনো ক্রেতা যখন কোনো পণ্য পছন্দ করে কেনার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু সেটা কিনতে না পারেন বা পণ্যটি হাতে পান না, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা অনেক হতাশ হন। আর এমনটা হলে অভিযোগের সংখ্যাও হয় অনেক বেশি।
পণ্যের ছবি এবং বর্ণনা ঠিক না থাকা
‘এই সাইজটা ঠিক নেই।’ পুরো বিষয়টাকে ক্রেতাদের পক্ষ থেকে দেখতে হবে। আপনি নিজে অনলাইনে কোনো কিছু অর্ডার করার আগে কী কী বা কোন কোন বিষয় জানতে চাইতেন? কোন পণ্য অর্ডার করার পর ৫-৭ দিন বা তারও বেশিদিন অপেক্ষা করার পর যদি দেখেন সেটা আপনার সাথে যাচ্ছে না বা ফিট হচ্ছে না, তখন আপনার কেমন লাগবে? অনলাইনে একজন ক্রেতা তার অর্ডার করা পণ্যটি দেখতে পান না, ছুঁতে পান না বা অনুভব করতে পারেন না। ফলে তার জন্য পণ্য হাতে পেয়ে হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ছবি সবসময় সঠিক তথ্য দিতে সক্ষম হয় না। ফলে একজন ক্রেতা ছবি দেখে যে পণ্যটি অর্ডার করবেন বাস্তবে সেটা হাতে পেলে তিনি হয়তো ছবির পণ্যের সাথে মিলের চেয়ে বেশি অমিল খুঁজে পেতে পারেন। আর সেরকম হলে হতাশ হয়ে অভিযোগ আসবেই। তাই ই-কমার্স সাইটে পণ্য প্রদর্শনের সময় এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে যেন বাস্তবে পণ্যটি যেমন, ছবির পণ্যটির ছবিও যেন তেমনই আসে। একই সাথে সে পণ্যের বর্ণনাতেও সেসব তথ্য দিতে হবে, যাতে বাস্তব পণ্যটির চেয়ে বেশি কিছু বলা না হয়ে যায়। ক্রেতা পণ্যটির ছবি দেখে বা বর্ণনা পড়ে যদি পণ্য সম্পর্কে ভুল ধারণা হয় বা পণ্যের বাস্তব ভ্যালুর চেয়ে বেশি ভ্যালু প্রত্যাশা করা হয়, তবে ক্রেতার হতাশ না হওয়ার কারণ নেই। পণ্যের মাত্রা, উপাদান এবং সাইজ চার্ট হচ্ছে কোনো পণ্য সম্পর্কে বর্ণনা দেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়। ফলে ক্রেতারাও কোনো পণ্য অর্ডার দেয়ার আগে ধারণা পেয়ে থাকেন তারা সেই পণ্য থেকে ঠিক কী কী আশা করতে পারবেন।
ক্রেতাদের মাঝে সবসময়ই স্বচ্ছ থাকার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- যদি এমন হয় আপনার কাছে কোনো পণ্যের ছোট বা বড় সাইজ না থাকে, তবে ক্রেতাদেরকে সেটা স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে। এতে আপনার সততা সম্পর্কে ক্রেতাদের মাঝে বিশ্বাস স্থাপনে সহায়তা করবে। পণ্যের ইমেজ ঠিক না হলে সেটাও হতে পারে ক্রেতাদের মাঝে হতাশা উৎপাদনের অন্যতম উৎস।
ক্রেতাদের জন্য কোন পণ্যটি সঠিক তা ক্রেতারা যাতে সহজেই বুঝতে পারেন সেই কাজটিই করবেন। এজন্য আপনার করণীয় কাজটি হলো, প্রোডাক্ট পেজের সাথে কাস্টমার রিভিউ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ফিড সংযুক্ত করে দেয়া। এটি দ্বিধায় থাকা একজন ক্রেতাকে পণ্য অর্ডার করতে প্ররোচিত করবে এবং একই সাথে অন্য ক্রেতারা একই পণ্যের ব্যাপারে কী ভাবছেন সে বিষয়েও ধারণা পাবেন, যা তাদের কেনার সিদ্ধান্তে সহায়ক হবে।
ওয়েবসাইটকে রেসপনসিভ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে হবে
‘আপনার সাইটটি খুবই বাজে’- চেষ্টা করতে হবে আপনার সাইটটি যেন বাস্তব জীবনের একটি স্টোরের সামনের দিকের মতো হয়। আপনার ক্রেতারা কি সহজেই আপনাকে খুঁজে পান? আপনার স্টোরটি কি খবুই বিরক্তিকর একটি সাইট? আপনার সাইট থেকে পণ্য কেনা কি খুবই ঝামেলাপূর্ণ? আপনার সাইট হতে হবে পরিষ্কার, পরিছন্ন, সুসংগঠিত এবং সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন ফিচারসমৃদ্ধ। ক্রেতাদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকার জন্য আপনার সাইটটি হতে হবে মোবাইল রেসপনসিভ। অর্ধেকের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। আপনার সাইটটি যদি লোড হতে বেশি সময় নেয় বা কোনো কিছু খুঁজে পেতে সমস্যা হয়, তবে তারা তাৎক্ষণিকভাবে আপনার সাইট থেকে বের হয়ে যাবেন। দেখা গেছে, কোনো সাইট লোড হতে তিন সেকেন্ডের বেশি সময় নিলে ৪০ শতাংশের বেশি ব্যবহারকারী সে সাইট থেকে বের হয়ে যান।
অতএব উপরের বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে নিয়ে কাজ করলে ক্রেতা-অভিযোগ কমে আসবে।