লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ই-কমার্সে কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের ৬ নিয়ম
ই-কমার্সে মার্কেটিং খুব জরুরি এক বিষয়। আর ই-কমার্স মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে কার্যকর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায়টি হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিং। ভোক্তাদের মনোভাব জানার জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ডিজিটাল কনটেন্টের ওপর বিশ্বব্যাপী এক জরিপ চালানো হয়। জরিপটি চালানো হয়েছিল বিশ্বের ৬টি দেশের ১২ হাজারেরও বেশি ভোক্তার ওপর। জরিপ থেকে জানার চেষ্টা করা হয়েছে ভোক্তাদের প্রত্যাশা এবং তারা কীভাবে বাজারজাত করার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেন ইত্যাদি সম্পর্কে। জরিপে যে পাঁচটি নিয়মের কথা উঠে আসে, সেগুলো ই-কমার্স ব্যবসায়ী বা কনটেন্ট মার্কেটারেরা অনুসরণ করে টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে সংযোগ বাড়াতে পারেন।
০১. মাল্টি স্ক্রিনের জন্য ডিজাইন : জরিপে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীরা মোট পাঁচ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে থাকেন। গড়ে ৮৩ শতাংশ মানুষ একই সময়ে ২.২৩টি ডিভাইস ব্যবহার করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একসাথে এত ডিভাইস ব্যবহারে ব্যবহারকারীরা মোটেই বিরক্ত হন না বরং তারা বিষয়টিকে বেশ উপভোগ করেন বলেই জানিয়েছেন। এত বেশি ডিভাইস ব্যবহার করার কারণে কনটেন্টের ওপর দেয়া মনোযোগ খুব সঙ্গত কারণেই সঙ্কুচিত হয়ে যায়। আর তখন ভালো ডিজাইন এবং কনটেন্ট অপটিমাইজেশন হয়ে ওঠে প্রধান নিয়ামক। ভোক্তাদের ৬৫ শতাংশ তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কনটেন্টের ভূমিকায় সেগুলো কীভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে, সেটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে রায় দিয়েছেন। ৫৪ শতাংশ ভোক্তা বলেছেন, সর্বোপরি ভালো ডিজাইন, যেমন- আকর্ষণীয় লেআউট ও ভালো ছবির গুরুত্বের কথা। বলা যায়, কনটেন্ট মার্কেটারেরা বা ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা চাইলেই ওয়ান সাইজ ফিট অল ধরনের কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করতে পারেন না। কারণ, এতে ভালো ডিজাইন এবং ভিন্ন ডিভাইসের জন্য অপটিমাইজড কনটেন্ট পাওয়া যাবে না।
০২. খুব বড় কিছু না লেখা : কনটেন্ট এক্সপেরিয়েন্সে বা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের অভিজ্ঞতার সূচক খুব নিমণমানের। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১০ জন ডিজিটাল ডিজাইস ব্যবহারকারীর ৯ জন তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কনটেন্টের গুণগত মান, কনটেন্টের দৈর্ঘ্য এবং ফরম্যাটের না হলে অন্য কনটেন্টে চলে যান অথবা সে কনটেন্ট দেখা বন্ধ করে দেন। ৬৭ শতাংশ ভোক্তা কনটেন্ট খুব বড় হলে তাতে সংযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী হন না এবং ৭৯ শতাংশ ব্যবহারকারী একই কাজ করেন যদি তারা দেখতে পান তাদের ডিভাইসে কনটেন্ট ভালোভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে না। তাই ই-কমার্সে মার্কেটার বা ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের খেয়াল রাখতে হবে যেন কনটেন্ট সঠিক ফরম্যাটে হয়, সঠিকভাবে অপটিমাইজড হয়। অন্যথায় ভোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে (আন সাবস্ক্রাইব করবে)।
০৩. কনটেন্টে হাস্যরসের ভূমিকা : হাস্যরস পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জরিপেও এই বিষয়টি উঠে এসেছে। ৭০ শতাংশ ভোক্তা স্বীকার করেন, হাস্যরস একটি কোম্পানিকে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু ব্যবসায় সংগঠনগুলো এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত খুব একটা আগ্রহী নয়। ফলে মাত্র ১৪ শতাংশ কোম্পানি বিনোদনমূলক কনটেন্ট তৈরি করে থাকে। সারা বিশ্বেই লোকজন হাসাতে পারাকে কনটেন্ট শেয়ার করার জন্য উঁচুমানের মোটিভেটর হিসেবে ধরা হয়। তাই ই-কমার্স কনটেন্ট মার্কেটিংয়ে হাস্যরস বহুল কনটেন্টের ওপর জোর দেয়া উচিত।
০৪. বিশ্বাস অর্জনে সুসম্পর্কের ভূমিকা : আজকের এই অতি সন্দেহের সময়ে আসল এবং খাঁটি শব্দগুলো দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভোক্তারা সব ধরনের কনটেন্টের সাথে সংযুক্ত থাকেন না, বরং যেসব কনটেন্টকে তারা বিশ্বাস করেন, সেগুলোর সাথে তারা যুক্ত হন। অনলাইনে পাওয়া বেশিরভাগ কনটেন্টই ভোক্তারা সন্দেহের চোখে দেখেন। এই কারণে ৫০ শতাংশ ভোক্তা সন্দেহ পোষণ করেন পণ্য বা সেবার রিভিউতে নেতিবাচক মন্তব্য বা রিভিউগুলো মুছে ফেলা হয়েছে কি না, ৪৯ শতাংশ সন্দেহ করেন পণ্য বা সেবার ইতিবাচক কমেন্ট বা রিভিউগুলো পেইড লেখকদের দিয়ে লেখানো হয়েছে কি না এবং ৪৮ শতাংশ কোনো নিউজ আর্টিকল কোনো পক্ষের হয়ে লেখা হয়েছে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। কনটেন্টের উৎস যদি শক্তিশালী হয়, তবে এ বিষয়টি আমূল বদলে যায়, অর্থাৎ তখন কনটেন্টের ওপর ভোক্তাদের বিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। অন্য কথায় আমরা আমাদের বন্ধু-বান্ধব বা আপনজনদের কথা অন্য যে কারও চেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাস করি। মাত্র ২৩ শতাংশ ভোক্তা প্রথমবারের মতো কোনো কোম্পানিকে বিশ্বাস করেন। এই হার দ্বিগুণ হয়ে যায়, যদি একই কোম্পানির তথ্য পরিচিত কেউ তাকে বলে বা রেফার করে। তাই যেকোনো ই-কমার্স কোম্পানির জন্য বিশ্বস্ত সম্পর্ক তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই সম্পর্কই পণ্যের প্রশংসা, স্পন্সরশিপ বা এফিলিয়েশন নিয়ে আসে।
০৫. সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় হওয়া : অনলাইনে আপনার উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া একটি অত্যাবশ্যকীয় উপায়। এখানে আপনি গুরুত্বপূর্ণ বা মূল্যবান কিছু শেয়ার করলে অন্যরা তা পড়ে, তারা সেটা শেয়ার করলে অন্যরা পড়ে, আবার তারা শেয়ার করলে অন্যরা পড়ে এভাবেই চলতে থাকে গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান বা মজার কোনো কনটেন্ট শেয়ার করা এবং পড়া। এই কারণে ক্রেতারা সক্রিয় থাকেন এমন সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনাকেও সক্রিয় থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ার সব প্ললাটফর্ম এক সাথে সমান গুরুত্ব বহন করে না। আমাদের দেশে ফেসবুকের একচেটিয়া দাপট থাকলেও অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তাই আপনি যদি জুয়েলারি বিক্রি করতে চান, তবে লিঙ্কডইন আপনার জন্য আদর্শ নয়, তার জন্য ইনস্টাগ্রাম হতে পারে ভালো একটি উপায়। সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ সেবা বিক্রি করলে আপনার জন্য আদর্শ প্লল্যাটফর্ম হতে পারে ফেসবুক এবং টুইটার। কখন কোন পস্ন্যলাটফর্ম বেছে নিতে হবে, সেটা জানা সাফল্য লাভের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যম বেছে নেয়ার পর সেখানে সময়, শক্তি এবং অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাই বেছে নেয়ার সময় সতর্ক থাকা খুবই জরুরি।
০৬. রুল অব থার্ড অনুসরণ করা : কনটেন্টের ধরন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাইট শুধু এক বা একাধিক ধরনের কনটেন্ট দিয়ে ভর্তি করে রাখলে হবে না। কনটেন্টের ধরন বাছাইয়ে রুল অব থার্ড অনুসরণ করা যেতে পারে। এই নিয়ম অনুযায়ী সব কনটেন্টের এক-তৃতীয়াংশ হতে হবে অরিজিনাল বা আসল, এক-তৃতীয়াংশ হতে হবে অনুমোদনপ্রাপ্ত, এক-তৃতীয়াংশ হতে হবে ব্যবহারকারীদের বানানো। এই নিয়মে বাইরে আপনি নিজের মতো করে নিয়ম বানিয়ে নিতে পারেন