বর্তমান সরকার আগেরবার ক্ষমতায় আসার আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তখন অনেক বিশ্লেষককে বলতে শোনা গেছে- ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিসূত্রেই আওয়ামী লীগ দেশের তরুণ সমাজকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। আর তাই এই প্রতিশ্রুতি বিজারকের ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বিজয়ে। সে যা-ই হোক, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশে ই-গভর্ন্যান্স বাসত্মবায়ন নিশ্চিত করা। আগের মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নের ব্যাপারে তোড়জোড় ছিল। কার্যত তা বাস্তবায়ন অনেকটা গতিহারা হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের জাতীয় জীবনে অধরাই থেকে যায় ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়ন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি খবরে এরই প্রতিফলন পাওয়া যায়। রিপোর্ট মতে- অধরাই থেকে গেল সরকারের ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়ন। বিগত মহাজোট সরকারের আমলে ই-গভর্ন্যান্স বাসত্মবায়নের জন্য কয়েকশ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। অর্থ ব্যয় হলেও এখনও প্রকল্প চালু হয়নি। মহাজোট সরকার আবার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি অসমাপ্ত প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও ই-গভর্ন্যান্সের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেল। এখনও এ কার্যক্রমের কোনো প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশ সচিবালয়ে সরকারের কোনো বিভাগ বা অধিদফতরে। এখন ঠিক আগের মতোই পুরনো পদ্ধতিতে চলছে ফাইল চালাচালি। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই দৈনিকটি আরও জানিয়েছে- মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসনে কিছু কার্যক্রম ডিজিটাল করা হলেও সচিবালয়সহ বিভাগ ও অধিদফতর এ কার্যক্রম থেকে এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ই-গভর্ন্যান্সের আওতায় ডিজিটাল ফাইল বা নথি চালু হওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের মূল পরিকল্পনা ছিল ডিজিটাল পদ্ধতিতে ‘অফিস নোট’ চালাচালি করা। এ ক্ষেত্রে কাগজের ফাইল চালাচালি অনেকাংশ বন্ধের পাশাপাশি সময়ক্ষেপণ কমে আসত। কমপিউটারে নোট লেখা এবং পাঠানো দেরি করতে পারতেন না। এর ফলে পুরো প্রশাসনে গতি আসত। সরকারের এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আলাদা কোড নাম্বার থাকবে। ফাইলগুলোতে আলাদা কোড নম্বর ব্যবহার করার কথা। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য থাকবে আলাদা সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি বিষয়ে ফাইল খুলে নোট লেখা যাবে। সার্ভারের মাধ্যমে নোটটি সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিবের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে উপসচিব, যুগ্মসচিব হয়ে সচিব পর্যন্ত যাবে। প্রত্যেকের আগেই স্ক্যানিং করে নিজ নিজ কমপিউটারে সংরক্ষিত থাকবে। নির্দিষ্ট কোড নম্বর ব্যবহার করে ‘কপি ও পেস্ট’ করে প্রত্যেক কর্মকর্তা স্বাক্ষর করবেন। সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা আগের কোনো ফাইল খুঁজতে চাইলে সফটওয়্যারের ফাইল ট্র্যাকার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোড নম্বর বের করে আনতে পারবেন। সরকারের ডিজিটাল প্রশাসন গড়ার শু্রু করার ঘোষণা দিয়ে ২০১০ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্রও জারি করা হয়েছিল।
ডিজিটাল নথি চালু করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাসত্মবতা হলো, কোনো মন্ত্রণালয় তা এখনও চালু করতে পারেনি। স্বচ্ছ ও গতিশীল প্রশাসনের সাথে ‘সচিবালয় নির্দেশমালা ২০০৮’-এর নির্দেশ ৪২(৭) অনুযায়ী এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের ডিজিটাল পদ্ধতির নথি ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এরপরও এখন পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পথে ডিজিটাল প্রশাসন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্থান সচিবালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শোভা পাচ্ছে কমপিউটার। কিন্তু কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনও কমপিউটার ব্যবহার শিখেননি। কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন- ডিজিটাল বললেই সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাবে না। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কমপিউটারে ফাইল চালাচালির পদ্ধতি চালু করতে হবে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে। নইলে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিগত আমলে টাস্কফোর্স গঠন করেও যে ব্যর্থতা ও গতিহীনতা বিরাজ করছে, তা অব্যাহতভাবে চলবে। আমাদের জোরালো তাগিদ- এবার অন্তত ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নে গতিশীলতা আনতে সংশ্লিষ্টজনেরা তৎপর হবেন।