বর্ডারল্যান্ডস গেমটি ফাস্ট পারসন শূটার ও সেই সাথে রোল প্লেয়িং ধাঁচের গেম। গেমটির কাহিনী কাল্পনিক এক গ্রহ নিয়ে, যার নাম প্যানডোরা। গেমটি অন্যান্য সায়েন্স ফিকশন গেমের চেয়ে অনেকটা ভিন্নমাত্রার। গেমটি এক্সবক্স ৩৬০, উইন্ডোজ ও প্লে-স্টেশনের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। গেমটির নাম প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল গেম ইনফরমার নামের বিখ্যাত গেমিং ম্যাগাজিনে দুই বছর আগে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে, কিন্তু গেমটি বের হতে সময় লেগেছে কিছুটা বেশিই। অসাধারণ এ গেমটি ডেভেলপ করেছে গিয়ারবক্স সফটওয়্যার ও পাবলিশ করেছে টুকে গেমস। গেমটি তৈরি করতে আনরিয়েল ইঞ্জিন ৩-এর সহায়তা নেয়া হয়েছে। তাই গেমের গ্রাফিক্স হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত ও নিখুঁত। গেমটি সিঙ্গেল প্লেয়ার, কো-অপ মোড ও মাল্টিপ্লেয়ার মোডে খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গেমের পটভূমি গড়ে উঠেছে কাল্পনিক এক গ্রহ প্যানডোরাকে কেন্দ্র করে। মূল্যবান খনিজ পদার্থের লোভে নানা গ্রহ থেকে প্যানডোরাতে ছুটে আসে অন্য গ্রহের বাসিন্দারা। অনেকেই ফিরে যায় তাদের ঝুলিতে মূল্যবান বস্তু সংগ্রহ করে, কিন্তু কিছু প্রাণী সেখানেই আটকা পড়ে যায়। তারা হয়ে ওঠে দস্যু। গ্রহে নতুন আগন্তুকের আবির্ভাব হলেই তারা তাকে শিকার করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। প্যানডোরাতে এক ভল্ট রয়েছে বলে গুজব রটে যায়, যাতে রয়েছে মহামূল্যবান সব জিনিস। সবাই তা পাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে, অনেকেই অভিযান চালায়। কিন্তু কেউ তা খুঁজে পায় না। গেমে প্লেয়ারকে সেই ভল্ট খুঁজে বের করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল নামের এক পরী প্লেয়ারকে সাহায্য করবে সেই ভল্ট খুঁজে পাওয়ার ধাঁধাগুলো সমাধান করতে। প্লেয়ারকে একে একে সংগ্রহ করতে হবে ভল্টের চারটি চাবি। কিন্তু তার কাছে বাদ সাধবে আরো অনেকে। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর গেমের শেষের দিকে প্লেয়ার খুলতে সক্ষম হবে ভল্টের তালা। কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস! গুপ্তধনের পরিবর্তে ভল্ট থেকে বের হয়ে আসবে বিশালাকৃতির এক দানব, যার নাম ডিস্ট্রয়ার। ২০০ বছর আগে তাকে কিছু ক্ষমতাবান ভিনগ্রহবাসী এ ভল্টে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল। প্লেয়ারের ভুলের কারণে সে মুক্ত হয়ে যাবে। তাই ভুলের মাসুল দেয়ার জন্য প্লেয়ারকে লড়তে হবে সেই দানবের বিরুদ্ধে এবং তাকে হারিয়ে আবার বন্দী করতে হবে ভল্টে।
এটি একাধারে শূটিং ও রোল প্লেয়িং গেম বলে গেম নির্মাতারা একে দিয়েছেন নতুন নাম। তারা একে বলছেন রোল প্লেয়িং শূটার গেম। গেমটিতে গেমারকে চারটি চরিত্র থেকে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে, চারটি চরিত্রের একটি অপরটি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের আকার-আকৃতি থেকে শুরু করে তাদের কর্মদক্ষতা, অস্ত্রের ব্যবহার, যুদ্ধকৌশল সব কিছুতেই রয়েছে বিশাল পার্থক্য। চারটি চরিত্র হচ্ছে-সোলজার, হান্টার, সাইরেন ও বেসারকার। গেমে গেমারের কাজ হবে অনেকটা বাউন্টি হান্টারের মতো। বিভিন্ন মিশন সম্পন্ন করার জন্য গেমারকে এক্সপেরিয়েন্ট পয়েন্ট, অর্থ ও অন্যান্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। এক্সপেরিয়েন্স পয়েন্ট বাড়ার সাথে সাথে প্লেয়ারের দক্ষতাও বেড়ে যাবে। যেমন- হান্টারের ক্ষেত্রে স্নাইপার রাইফেল ব্যবহারে শত্রুর বেশি ক্ষতি করা যাবে বা সামনাসামনি লড়াইয়ের দক্ষতা বেড়ে যাবে। প্রথমে প্লেয়ার একসাথে দুইটি অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু পরে তা ৪-এ উন্নীত হবে। গেমে পাওয়া অন্যান্য বাড়তি অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্লেয়ারের ব্যাকপ্যাকে জমা করে রাখা যাবে। ব্যাকপ্যাকে রাখা জিনিসপত্র অস্ত্র বিক্রেতার কাছে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে অন্য কিছু কিনে নেয়া যাবে। আশ্চর্যের বিষয়, গেমটির সিস্টেমে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ভিন্নধর্মী অস্ত্র জেনারেট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাই গেমে অসংখ্য অস্ত্র পাওয়া যাবে, যার প্রতিটির ক্ষমতা, রঙ ও ডিজাইন ভিন্ন। এমনটি অন্য কোনো গেমে নেই বললেই চলে। বিপুল অস্ত্রের সমাহার ছাড়াও গেমে ব্যবহার করা হয়েছে ভিন্নধর্মী শত্রুপক্ষ ও তাদের আক্রমণ কৌশল। তারা বিভিন্ন কৌশলে আক্রমণ চালাতে সক্ষম, যা গেমারকে অবাক করে দিতে সক্ষম।
গেমের চরিত্রগুলোর মাঝে সবারই সমান প্রাধান্য রয়েছে। কেউ কারো চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। প্লেয়ারের ক্ষমতা ও দক্ষতার মাঝে যে ব্যতিক্রম রয়েছে তা অন্য গেমে খুব কমই নজরে পড়বে।
ব্রিক নামের বিশালাকার যোদ্ধা রয়েছে, যার রয়েছে অসুরিক শক্তি। খালি হাতেই শত্রুপক্ষকে পিষে ফেলা তার জন্য চাট্টিখানি ব্যাপার। হাতাহাতি লড়াইয়ে তাকে কাবু করা বেজায় কষ্টকর। বিপরীত পক্ষের আঘাতে তার ক্ষতি হয় কম এবং সে এক্সপ্লেvসিভ অর্থাৎ বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারে পটু।
লিলিথ নামে জাদুবিদ্যায় পারদর্শী এক তরুণীর ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, দ্রুতগতিতে ছোটা, দ্রুত গুলি ছুড়তে পারা, নিখুঁত নিশানা ইত্যাদি। কিন্তু তার জীবনীশক্তি দ্রুত কমে যায় বিপরীত পক্ষের আঘাতে।
মরডেকাই নামের শীর্ণকায় শিকারির দক্ষতা হচ্ছে নানারকম অস্ত্রবিদ্যায় তার পারদর্শিতা। মেশিনগান, পিস্তল, শটগান, স্নাইপার, গ্রেনেড-সব কিছু ব্যবহার করতে সে বেশ সিদ্ধহস্ত। তার রয়েছে পোষা এক বাজ, যার সাহায্যে সে দূরের শত্রুকে সহজেই ঘায়েল করতে সক্ষম। সে একই সাথে অনেকজনকে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে, কারণ সে দক্ষ হাতিয়ারবাজ।
রোল্যান্ড নামের এক সৈন্যও রয়েছে প্লেয়ারের তালিকায়, সে উচ্চ মিলিটারি দীক্ষায় দীক্ষিত। তার ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে আঘাতের হাত থেকে বাঁচা, সহজেই জীবনীশক্তি ফিরে পাওয়া, অন্যকে সুস্থ করে তোলা এবং গোলাবারুদের ব্যাপারে তার জ্ঞান অন্যদের তুলনায় প্রখর।
গেমে দারুণ এক যুদ্ধযানের ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে দুইজন যাত্রা করতে পারবে। একজন থাকবে চালকের আসনে, আরেকজন বাহনের পেছনে অস্ত্র সামাল দিতে পারবে। একা খেলার সময় গাড়ি চালানোর সময়ও গুলি করে শত্রুপক্ষকে নাস্তানাবুদ করা যাবে সহজেই। গাড়ির বেলায় গোলাবারুদ ফোরানোর কোনো ভয় নেই, তাই ইচ্ছেমতো তা ব্যবহার করা যাবে। নিজের ইচ্ছেমতো গাড়ির রং পাল্টানো যাবে এবং সেই সাথে গাড়ির অস্ত্র মেশিনগান নাকি রকেট লঞ্চার হবে তা নির্দিষ্ট করা যাবে। কন্সোলে খেলার সময় দুইজন একসাথে দুই পর্দায় ভাগ করে গেমটি উপভোগ করতে পারবেন। আবার মাল্টিপ্লেয়ার মোডে ল্যান বা অনলাইনে গেমটি খেলা যাবে চারজন প্লেয়ার নিয়ে। গেমে অনেক মিশন রয়েছে, যা দুইজন প্লেয়ার একসাথে না হলে খেলা যাবে না। সেক্ষেত্রে সিঙ্গেল প্লেয়ার মোডে কিছু মিশন খেলা যাবে না, তা খেলার মজা উপভোগ করা শুধু কন্সোলেই সম্ভবপর হবে।
গেমটি চালানোর জন্য লাগবে ২.৪ গিগাহার্টজের ইন্টেল পেন্টিয়াম ৪ মানের প্রসেসর বা সমমানের এএমডি অথলন প্রসেসর। এছাড়া লাগবে ১ গিগাবাইট মেমরির র্যা ম, ন্যূনতম ৭.৫ গিগাবাইট ফাঁকা স্থান ও পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সমর্থিত গ্রাফিক্স কার্ড। গেমটির প্রাণবন্ততা ও ঝকঝকে গ্রাফিক্সের ছোঁয়া পেতে ডুয়াল কোরের প্রসেসর ও ভালোমানের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে হবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_15@yahoo.com