• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিতের অলিগলি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গণিতদাদু
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
গণিতের অলিগলি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিতের অলিগলি



কৌশলী গণিতের খেলা

এখানে একটি গণিতের কৌশলী খেলার উল্লেখ করছি৷ খেলাটি সহজ৷ তবে খেলাটির মধ্যে সুযোগ রয়েছে সংখ্যাতত্ত্বের রহস্য উদ্‌ঘাটনের৷ আগ্রহীরা ভেবে দেখতে পারেন, সংখ্যাতত্ত্বের সে রহস্যের সন্ধান পাওয়া যায় কি না৷ তবে সবার আগে খেলার নিয়মকানুন জেনে নিই৷ আর হ্যাঁ, এ খেলা খেলতে প্রয়োজন দুজন খেলোয়াড়, এক প্রস্থ কাগজ আর পেন্সিল বা কলম৷

এখন বলছি কিভাবে খেলতে হবে

০১. উভয় খেলোয়াড় নিজ নিজ ইচ্ছেমতো দুটি সংখ্যার কথা ভাবনে৷ সংখ্যা দুটি ১ থেকে ৫০-এর মধ্যে যেন থাকে৷ এখন উভয় খেলোয়াড় তাদের বেছে নেয়া সংখ্যা দুটি পেন্সিল বা কলম দিয়ে কাগজের ওপর পাশাপাশি লিখবেন৷ ০২. এরপর সিদ্ধান্ত নিন কে আগে খেলা শুরু করবেন৷ পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে তা ঠিক করতে না পারলে লটারি করে তা ঠিক করে নিন৷ পয়সা ছুড়ে মেরে এ কাজটা সেরে নেয়া যাবে৷ ০৩. এখন উভয় খেলোয়াড় পালা করে কাগজের ওপর লেখা সংখ্যার পার্থক্য পাশাপাশি লিখে যাবেন৷ ০৪. কোনো মতেই এ পার্থক্য নম্বর যেন এক না হয়৷ অর্থাৎ আগে লেখা হয়েছে এমন কোনো পার্থক্য নম্বর পরে আর লেখা যাবে না৷ ০৫. পালা করে এই পার্থক্য সংখ্যা লিখতে গিয়ে যিনি অনন্য অর্থাৎ সম্পূর্ণ ভিন্ন সংখ্যা লিখতে ব্যর্থ হবেন, তিনিই খেলায় হেরে যাবেন৷

খেলাটি কিভাবে খেলা হয় তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি

ধরুন, খেলোয়াড় দুজন হছেন ফাহাদ ও খালেদ৷ ফাহাদের বেছে নেয়া সংখ্যা ৫, আর খালেদের ৩৷ এরা কাগজের ওপর লিখলেন ৫ ও ৩৷ এবার ফাহাদ আগে খেলতে শুরু করলেন৷ ৫ থেকে ৩ বিয়োগ করলে পাই ২৷ অতএব ফাহাদ কাগজে ৫ ও ৩-এর পরে লিখলেন ২৷ এখন কাগজে পেলাম তিনটি সংখ্যা ৫, ৩, ২৷ খালেদ দেখলেন ৫ থেকে ২ বিয়োগ করলে পাওয়া যায় ৩, কিন্তু এরই মধ্যে ৩ সংখ্যাটি লেখা হয়ে গেছে৷ অতএব এই ৩ আর লেখা যাবে না৷ আবার ৩ থেকে ২ বিয়োগ করলে পাওয়া যায় ১, যা আগে লেখা হয়নি৷ অতএব খালেদ ৫, ৩ ও ২-এর পর লিখলেন ১৷ এখন কাগজে লেখা হলো চারটি সংখ্যা ৫, ৩, ২, ১৷ এবার ফাহাদের পালা৷ ফাহাদ দেখলো ৫ থেকে ১ বিয়োগ করলে পাওয়া যায় ৪৷ কিন্তু এর আগে কেউ ৪ সংখ্যাটি লেখেনি৷ অতএব ফাহাদ কাগজে এই ৪ সংখ্যাটি লিখতে পারেন৷ ফাহাদ তাই করলেন৷ এবারে কাগজে লেখা হয়ে গেল ৫টি সংখ্যা ৫, ৩, ২, ১ এবং ৪৷ এবার এলো খালেদের সংখ্যা লেখার পালা৷ কিন্তু খালেদ কাগজে ৫টি সংখ্যার মধ্যে যে কোনো দুটি সংখ্যার এমন বিয়োগফল খুঁজে পাননি, যা ইতোমধ্যেই কাগজে লেখা সংখ্যাগুলো থেকে আলাদা৷ অতএব খেলায় হেরে গেলেন খালেদ৷ জয়ী হলেন ফাহাদ৷

আরেকটি সহজ উদাহরণ দেয়া যাক

ফাহাদ প্রথম বেছে নিলেন ৮, খালেদ নিলেন ৬৷ কাগজে লেখা হলো ৮ ও ৬৷ খালেদকে দিয়ে খেলা শুরু৷ খালেদ সংখ্যা দুটোর পার্থক্য ২ কাগজে লিখলেন৷ কাগজে লেখা হয়ে গেল তিনটি সংখ্যা ৮, ৬ ও ২৷ এবার ফাহাদ ৬ ও ২-এর পার্থক্য ৪ কাগজে লিখলেন৷ লেখা হলো ৪টি সংখ্যা ৮, ৬, ২ ও ৪৷ এবার খালেদের পালা৷

কিন্তু এরই মধ্যে খেলা শেষ৷ কারণ, এই চারটি সংখ্যার যেকোনো দুটি সংখ্যার পার্থক্যই নিন না কেন, তা আনে এরই মধ্যে লেখা হয়ে গেছে৷ অতএব নতুন কোনো অনন্য সংখ্যা লেখার সুযোগ খালেদ পাবেন না৷ অতএব খালেদ হেরে গেলেন এবারের খেলায়৷ আবার বিজয়ী ফাহাদ৷

এই খেলাটি খেলার সময় কিছু মজার প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে

০১. দুই খেলোয়াড়ের বেছে নেয়া সংখ্যা দুটি যখন কাগজে লেখা হয়ে গেল, তখন কি বলা যাবে শেষ পর্যন্ত খেলায় কে জিতবে? ০২. খেলাটি কে আগে শুরু করলেন, তা বিবেচনার বাইরে রেখে প্রথম সংখ্যা দুটি লেখার কি এমন কোনো কৌশল অবলম্বন সম্ভব, যা দিয়ে খেলায় জয়ী হওয়া যায়? ০৩. উপরের প্রথম উদাহরণের বেলায় নেয়া প্রথম দুই সংখ্যা ৫ ও ৩ নিয়ে দেখা গেল ১ থেকে ৫ পর্যন্ত সব সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কাগজে পালাক্রমে লেখা সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু খেলাটি দ্বিতীয় উদাহরণে শুরুর সংখ্যা ৬ ও ৮ লেখার পর সর্বশেষ চারটি সংখ্যা লেখা সম্ভব হয়েছে৷ এ সংখ্যাগুলো ২, ৪, ৬ ও ৮৷ এখন ১ থেকে প্রথম বেছে নেয়া সর্বোচ্চ সংখ্যা শেষ পর্যন্ত সব সংখ্যাগুলো লেখা হবে কি হবে না, তা কিসের ওপর নির্ভর করে? যদি সব সংখ্যা লেখা সম্ভব না হয়, তবে কোনগুলো লেখা সম্ভব, আর কোনগুলো লেখা সম্ভব নয়?

প্রশ্নগুলো নিয়ে একটু ভাবলেই উত্তর পেয়ে যাবেন নিশ্চয়ই৷ প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন৷ গণিত নিয়ে আপনার ভাবনার রাজ্য সম্প্রসারণের জন্যই খোলাখুলি উত্তরগুলো এখানে দেয়া হলো না৷ বলে দিই, এ খেলাটি ইউক্লিডের অ্যালগরিদমের এবং নেয়া সংখ্যা দুটির গসাগুর সাথে সম্পর্কিত৷

বিক্রয় প্রতিনিধি সমস্যা

ধরুন, আপনি একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বা সেলসম্যান৷ বাংলাদেশের বিশটি জেলা সদরে গিয়ে আপনাকে একবার করে আপনার পণ্য বিক্রি করতে হবে৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-কিভাবে কোন শহর থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে কোন শহরের পর কোন শহরে গেলে সবচেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করে আপনি এই ২০টি শহরে একবার করে যেতে পারবেন?

এ প্রশ্নের জবাবটা হচ্ছে, এর সরল কোনো উত্তর নেই৷ একজন বুদ্ধিমান সেলসম্যান বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলী উপায় অবলম্বন করে সবচেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করে জেলা শহর বিশটি একবার করে ঘুরে আসতে পারবেন৷ তা সত্ত্বেও একটি মাত্র উপায় আছে সবচেয়ে কম দূরত্বের পথটি খুঁজে বের করার৷ তা হলো সম্ভাব্য সব পথ এক এক করে লিখে নিয়ে হিসেব করে দেখা কোনটি সবচেয়ে কম দূরত্বের পথ৷ কিন্তু এ ধরনের বিভিন্ন বিকল্প পথ লিখতে হলে আমাদের কতগুলো পথ এক এক করে লিখতে হবে? সে পথ সংখ্যা বের করতে পারি নিচের উপায়ে :

প্রথম শহরে যাওয়ার জন্য আপনার হাতে থাকবে ২০টি বিকল্প পছন্দ৷

দ্বিতীয় শহরে যাওয়ার পর আপনার কাছে থাকবে ১৯টি বিকল্প পথ৷ কারণ, এক্ষেত্রে আপনি আর প্রথম শহরটিতে যেতে পারবেন না৷

তৃতীয় শহরে যাওয়ার পর আপনার হাতে থাকবে ১৮টি বিকল্প পছন্দ৷

চতুর্থ শহরে যাওয়ার পর আপনার হাতে থাকবে ১৭টি বিকল্প পছন্দ৷ এভাবে ক্রমে ক্রমে কমতে কমতে সর্বশেষ শহরটিতে গিয়ে আপনার হাতে থাকবে ১টি বিকল্প পছন্দ৷ তাহলে মোট পছন্দের সংখ্যা দাঁড়ালো :
২০ x ১৯ x ১৮ x ১৭ x ১৬ x ... x ২ x ১টি
= ২, ৪৩২, ৯০২, ০০৮, ১৭৬, ৬৪০, ০০০টি৷

এ সংখ্যাটি এত বড় যে যদি আপনার কমপিউটার প্রতি সেকেন্ডে ১০ লাখ পছন্দের পথ চেক করে দেখতে পারে, তবে সব পথ চেক করে দেখতে সময় লাগবে ৭৭ হাজার বছর৷ অতএব আপনার মতো একজন সেলসম্যানের পক্ষে সবচেয়ে কম দূরত্বের পথটি বের করা মোটেও সহজ হবে না৷ কি, শুরুতে কি ভাবতে পেরেছিলেন এত বিশাল অঙ্কের বিকল্প পথ এক্ষেত্রে থাকতে পারে?

গণিতদাদ
....................................................................................।

বলুন তো কার ছবি : ৩১



ছবির এই গণিতবিদের জন্ম আয়ারল্যান্ডে, মৃত্যু ইংল্যান্ডে৷ তিনি তার ভিসকোটি ল-এর মাধ্যনে প্রতিষ্ঠা করেন পানি গতিবিদ্যা৷ তিনি ১৮৪২-৪৩ সালের দিকে প্রকাশ করেন অসঙ্কোচনযোগ্য ফ্লুইডের গতিবিষয়ক প্রবন্ধ৷ ১৮৪৯ সালে হন ক্যামব্রিজে গণিতের লুকাসিয়ান অধ্যাপক৷ ১৮৫১ সালে রয়েল সোসাইটিতে নির্বাচিত হন এবং ১৮৫৪-৮৪ সময়ে ছিলেন এর সেক্রেটারি৷ এরপর তিনি এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷ তিনি আলোকতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন৷ ভৌত সমস্যাসমূহের গাণিতিক কৌশল আবিষ্কার করেন৷ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন Geodesy Secince৷ গাণিতিক পদার্থবিদ্যার প্রভূত উপকার সাধন করেন তিনি৷ তার গণিত ও পদার্থবিষয়ক লেখালেখি ৫টি খণ্ডে প্রকাশিত হয়৷ বলুন তো ছবির এই গণিতবিদ কে?
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
পাঠকের মন্তব্য
১৯ অক্টোবর ২০১০, ১০:১০ AM
আপনার লেখা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।আপনাকে গণিত পাঠশালা.কম এর পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। গণিত পাঠশালা.কম হলো বাংলা ভাষায় প্রথম এবং একমাত্র গণিত বিষয়ক পূর্নাঙ্গ ব্লগ সাইট যার উদ্দেশ্য গণিতের মজার বিষয়গুলো সুন্দর ভাবে সবার কাছে উপস্থাপন করা এবং সবাইকে গণিতে আগ্রহী করা।আপনি এখানে আপনার লেখা প্রকাশ করতে পারেন। আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে
http://www.gonitpathshala.com/ সাইটটা দেখে এটি সম্পর্কে মতামত জানানোর জন্য।
আমাদের সাথে যোগাযোগ এর ঠিকানাঃ admin@gonitpathshala.com
২০০৮ - অক্টোবর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস