রেয়ার নাম্বার : দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি
রেয়ার নাম্বারের কমপিউটেশন :
১০২০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোর মধ্যকার সব রেয়ার নাম্বার কমপিউট বা গণনা করে দেখা গেছে এ ধরনের ৮৪টি ননপ্যালিনড্রমিক রেয়ার নাম্বার রয়েছে। গণিতবিদেরা এই ৮৪টি সংখ্যার একটি তালিকাও তৈরি করেছেন। আরো লক্ষ করা গেছে, এই ৮৪টি সংখ্যার মধ্যে ১৮টি বিজোড় এবং বাকিগুলো জোড়।
ভারতের শ্যাম সুন্দর গুপ্ত ১৯৮৯ সাল থেকে এসব সংখ্যা খুঁজে বের করার কাজটি করে যাচ্ছেন। তিনি ফরট্রেনে একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন রেয়ার নাম্বার কমপিউটেশনের জন্য। বেশ কয়েক বছর ধরে কোড রিফাইনমেন্ট করার মাধ্যমে এই প্রোগ্রামকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে যে, ১০১৪ সংখ্যা পর্যন্ত রেয়ার নাম্বার একটি পেন্টিয়াম থ্রি পিসিতে এক মিনিটেরও কম সময়ে চেক করে দেখা যায়। পেন্টিয়াম কোর টু ডুয়ো পিসি দিয়ে তিনি কয়েক ঘণ্টায় ১০১৯ পর্যন্ত রেয়ার নাম্বার চেক করতে সক্ষম হন। যেহেতু উনিশ অঙ্কের চেয়ে বড় অঙ্কের রেয়ার নাম্বার কমপিউট করার জন্য তুলনামূলকভাবে UBASIC ব্যবহার সহজতর, তাই তিনি একটি UBASIC-এ একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে ২৯ অঙ্কের সংখ্যা পর্যন্ত রেয়ার নাম্বার কমপিউট করেন। এই কমপিউটার প্রোগ্রাম ডেভেলপ করার সময় আগে বর্ণিত রেয়ার নাম্বারের গুণাবলী ব্যবহার করা হয়।
রেয়ার নাম্বার কনজেকচার :
কনজেকচার হচ্ছে অনুমিত সত্য, যা এখনো সন্দেহাতীতভাবে সুপ্রমাণিত হয়নি। রেয়ার নাম্বারের এমনি কনজেকচার হচ্ছে :
০১. এমন কোনো রেয়ার নাম্বার নেই, যা একই সাথে মৌলিক সংখ্যা।
০২. ২০ অঙ্কের অর্থাৎ ১০২০ পর্যন্ত রেয়ার নাম্বার খুঁজে দেখা গেছে এমন কোনো রেয়ার নাম্বার নেই, যা একই সাথে মৌলিক সংখ্যা।
০৩. শেষের অঙ্ক ৫ নম্বর, শুধু তেমনি বেজোড় রেয়ার নাম্বারই মৌলিক সংখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ২০ অঙ্কের সংখ্যার চেয়ে ছোট সংখ্যাগুলোর মধ্যে এ ধরনের মাত্র ৬টি রেয়ার সংখ্যা পাওয়া গেছে। শেষের অঙ্ক ৭ কিংবা ৩, এমন সংখ্যার মধ্যে কোনো রেয়ার নাম্বার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লিখিত ৬টি বেজোড় রেয়ার নাম্বারের সবগুলোর শেষে ৭ রয়েছে এবং এগুলো মৌলিক সংখ্যা নয়।
০৪. রেয়ার নাম্বার কেনো মৌলিক সংখ্যা হবে না, এর কোনো যুক্তি নেই। তবে এ ধরনের রেয়ার প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা পাওয়ার কোনো চেষ্টাই সফল প্রমাণিত হয়নি।
অতএব ‘রেয়ার নাম্বারগুলোও মৌলিক সংখ্যা’- এমনটি প্রমাণ বা অপ্রমাণ করার বিষয়টি এখন নিশ্চিত করার অপেক্ষায়।
গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ
০১. যদি ক সংখ্যাটিতে জোড় সংখ্যক অঙ্ক থাকে, তখন ক + খ অবশ্যই ১১ দিয়ে বিভাজ্য। অতএব ১২১ অবশ্যই ক২-এর একটি উৎপাদক হবে।
০২. যদি ক সংখ্যাটিতে বিজোড় সংখ্যক অঙ্ক থাকে, তখন ক - খ অবশ্যই ১১ দিয়ে বিভাজ্য। যেহেতু ক - খ সব সময়ই ৯ দিয়ে বিভাজ্য। অতএব ১০৯৯ অবশ্যই খ২-এর একটি উৎপাদক হবে।
০৩. জোড় রেয়ার নাম্বারের চেয়ে বিজোড় রেয়ার নাম্বারের সংখ্যা কম।
০৪. ২০ অঙ্কের সংখ্যার চেয়ে ছোট কোনো রেয়ার নাম্বারের শেষে ৩ থাকতে দেখা যায়নি।
০৫. বিজোড় সংখ্যক অঙ্কের রেয়ার নাম্বারের সংখ্যা জোড় সংখ্যক অঙ্কের রেয়ার নাম্বারের চেয়ে কম।
০৬. বিজোড় সংখ্যক অঙ্কের বিজোড় রেয়ার নাম্বারের সংখ্যা জোড় সংখ্যক অঙ্কের রেয়ার নাম্বারের চেয়ে আরো কম।
বিকল্প নিয়মে বর্গফল নির্ণয়
দুই অঙ্কের অনেক সংখ্যা রয়েছে। যেমন ২৩ একটি দুই অঙ্কের সংখ্যা। তেমনি ৭৪ আরেকটি দুই অঙ্কের সংখ্যা। স্কুলে শেখা সাধারণ গণিতে আমরা এ ধরনের অনেক দুই অঙ্কের সংখ্যার বর্গফল বা স্কয়ার বের করেছি ওই সংখ্যাটিকে ওই সংখ্যাটি দিয়ে গুণ করে। যেমন :
২৫ ১৮
২৫ ১৮
১২৫ ১৪৪
৫০ ১৮
৬২৫ ৩২৪
২৫২ = ২৫ ২৫ = ৬২৫ ১৮২ = ১৮ ১৮ = ৩২৪
এভাবে দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার বর্গফল আমরা সহজেই বের করার কাজটি স্কুলে শিখেছি। এখানে এ ধরনের দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার বর্গফল নির্ণয়ের একটি সহজ বিকল্প নিয়ম শিখব।
স্কুলের বীজগণিতের ক্লাসগুলোতে দুইটি সংখ্যার যোগফলের বর্গ নির্ণয়ের একটি সুপরিচিত সূত্রও আমরা জেনেছি। সূত্রটি হচ্ছে : (a+b)2 = a2 + 2ab + b2। এই সূত্রটি ব্যবহার করে দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার বর্গফল বের করতে পারি।
যেমন : ২৫২ = (২০+৫)২ = ২০২ + ২ ২০ ৫ ৫২ = ৪০০ + ২০০ + ২৫ = ৬২৫
১৮২ = (১০ + ৮)২ = ১০২ + ২ ১০ ৮ + ৮২ = ১০০ +১৬০ + ৬৪ = ৩২৪
এখানে বিকল্প যে নিয়মটি কাজে লাগিয়ে সহজে দুই অঙ্কের সংখ্যার বর্গফল বের করার কথা শিখব, সেটিতে আসলে এই সূত্রটি মূল ধারণা মাথায় রেখেই কাজটি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে তিনটি ধাপে তিনটি সংখ্যা বের করে পরে সংখ্যা তিনটি যোগ করলে বর্গফল সহজেই পাওয়া যাবে। উদাহরণ দিলেই নিয়মটি সহজে বোঝা যাবে।
ধরা যাক, ২৫ সংখ্যাটির বর্গ নির্ণয় করতে হবে। অর্থাৎ বের করতে হবে ২৫২ = কত?
প্রথম ধাপে = ডান দিকের অঙ্কটির বর্গফল লিখতে হবে। এখানে ৫২ = ২৫
দ্বিতীয় ধাপে = অঙ্ক দুইটির গুণফলের দ্বিগুণ করে পাওয়া সংখ্যার ডানে একটি শূন্য বসাতে হবে।
এখানে সংখ্যাটি পাবো ২ ২ ৫ বা ২০-এর ডানে একটি শূন্য বসিয়ে ২০০।
তৃতীয় ধাপে = বামের অঙ্কটির বর্গফল বের করে এর ডানে দুইটি শূন্য বসাতে হবে।
এখানে ২২ বা ৪-এর ডানে দুই শূন্য বসিয়ে পাবো ৪০০।
এবার তিন ধাপে পাওয়া সংখ্যা তিনটি একসাথে যোগ করলেই দেয়া সংখ্যার (এখানে ২৫ সংখ্যাটির) বর্গফল পাওয়া যাবে :
প্রথম ধাপে পাওয়া সংখ্যা = ২৫
দ্বিতীয় ধাপে পাওয়া সংখ্যা = ২০০
তৃতীয় ধাপে পাওয়া সংখ্যা = ৪০০
সংখ্যা তিনটির যোগফল = ৬২৫
২৫-এর বর্গফল = ৬২৫
এবার ৩৬২ = কত বের করতে অনুরূপভাবে-
প্রথম ধাপের সংখ্যাটি হবে = ৬২ = ৩৬
দ্বিতীয় ধাপের সংখ্যাটি হবে = (২ ৩ ৬) বা ৩৬ ডানে একটি শূন্য = ৩৬০
তৃতীয় ধাপের সংখ্যাটি হবে ৩২ বা ৯-এর ডানে দুইটি শূন্য = ৯০০
এখন ৩৬২ = পাওয়া সংখ্যা তিনটির যোগফল = ৩৬ + ৩৬০ + ৯০০ = ১২৯৬
এভাবে ৪৮২ = কত, বের করতে
প্রথম সংখ্যাটি হবে = ৮২ = ৬৪
দ্বিতীয় সংখ্যাটি হবে = (২ ৪ ৮) বা ৬৪-এর ডানে একটি শূন্য = ৬৪০
তৃতীয় সংখ্যাটি হবে = ৪২ বা ১৬-এর ডানে দুইটি শূন্য = ১৬০০
৪৮২ = সংখ্যা তিনটির যোগফল = ৬৪ + ৬৪০ + ১৬০০ = ২৩০৪
এভাবে তিন ধাপে তিনটি সংখ্যা বের করে দুই অঙ্কের যেকোনো সংখ্যার বর্গফল সহজেই বের করা যাবে।
কজ ওয়েব