• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > রসন্যানো : সবকিছুই ন্যানো
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ন্যানো প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
ফিচার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
রসন্যানো : সবকিছুই ন্যানো


এক সময় রাশিয়ার অর্থনীতি মূলত ছিল জ্বালানি, ধাতু উৎপাদন ও রফতানিভিত্তিক। এখন সে অর্থনীতি সেখান থেকে সরে এসে নানামুখী হচ্ছে। এই নানামুখী অর্থনীতির একটি হচ্ছে Rosnano। এটি হচ্ছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। এটি একটি অলাভজনক কোম্পানি। এর প্রধান কাজ ন্যানোসায়েন্স ও ন্যানোটেকনোলজি প্রকল্পসমূহে অর্থ যোগান দেয়া। এর যাবতীয় কর্মকান্ড ন্যানোপ্রযুক্তির উন্নয়নকে ঘিরে। ফলে রসন্যানো’র সাথে ‘এভরিথিং ন্যানো’ শব্দযুগল জড়িয়ে আছে। সহজেই অনুমেয় Rosnano শব্দটি দিয়ে কার্যত ‘nano’ in Russia-ই বুঝানো হয়েছে। এটি অনেকটা তেমন, যেমনটি আমরা কয়েক বছর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে দেখেছি। সেখানে আমরা সুপ্রচলিত হতে দেখেছি nano-everything, nano-concrete, nano-bomb, nano-socks ইত্যাদি ধরনের শব্দ।

ন্যানোপ্রযুক্তির উন্নয়নে পর্যাপ্ত তহবিল রসন্যানোর রয়েছে। করারোপ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিপূর্ণ সুযোগ রয়েছে এ কোম্পানির। এ কোম্পানি গড়ে তোলা হয় ২০০৭ সালে। তখন রুশ সরকার এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ৪৭০ কোটি ডলার। এ কোম্পানির প্রধান আনাতোলি চুবাইসের মতে, ২০০৮ সালের বিশ্বমন্দার আঘাতের আগেই এ পরিমাণ তহবিল এ কোম্পানি বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ায় ন্যানোটেকনোলজির উন্নয়নে একটা প্রচারাভিযানও চালিয়ে যাচ্ছে এ কোম্পানি। সেখানে ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কে জনসচেতনতা যথাযথ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ ন্যানোটেকনোলজি সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে আগ্রহী। সেখানে এমনটি দেখা যাচ্ছে, কিছু কোম্পানি নামের পাশে ‘ন্যানো’ শব্দটি বসিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁকি দিচ্ছে, ধোঁকা দিচ্ছে-এর মাধ্যমে এরা তাদের পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়ার পথ বেছে নিয়েছে। এটা যেনো ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের সেই হুজুগ, যখন মানুষ পাগলের মতো ছুটেছিল রেডিও অ্যাক্টিভ টুথপেস্ট, চকোলেট ও সিগারেট কেনার জন্য। তখন সবেমাত্র রেডিও অ্যাক্টিভ ক্ষয়ের বিষয়টি আবিষ্কৃত হয়েছিল। তখন বিজ্ঞান-আবেশিতে সমাজে রেডিও অ্যাক্টিভিটি তথা তেজষ্ক্রিয়তা এক ধরনের বৈজ্ঞানিক খেপামির জন্ম দেয়।



রসন্যানোর সমর্থকদের দাবি রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনগুলোকে রুশ-অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও সাফল্যের সাথে কাজে লাগানো হচ্ছে। বড় ধরনের ও জটিল আকারের প্রকল্পে আনাতোলি চুবাইসের কাজ করার সূত্রে অর্জিত অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে। কেউ কেউ এখন আনাতোলিকে ‘ন্যানোতোলি’ নামেও ডাকতে শুরু করেছেন। রসন্যানোতে তার নিয়োগের আগে তিনি কাজ করেছেন RAO UES-এর প্রধান হিসেবে। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে বড় বড় জ্বালানি কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এসব কোম্পানির বিভাজন ও বিরাষ্ট্রীকরণ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু রসন্যানোতে ন্যানোটেকনোলজির ওপর বিনিয়োগ দিয়ে তিনি কী রুশ-অর্থনীতির চিত্রটা পাল্টে দিতে পারবেন? এখন সামনে উঠে এসেছে এ প্রশ্ন। তা নির্ভর করছে বেশকিছু বিষয়ের ওপর।

কোয়ান্টাম স্কেলের দুয়ারে আঘাত হানা

ন্যানোটেকনোলজি একটি বড় পরিধির পদবাচ্য। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিজ্ঞানের প্রচুরসংখ্যক শাখা। এ শব্দটি প্রথম চালু হয় ১৯৭৪ সালে। চালু করেন অধ্যাপক নোরিও ত্যানিগোচি। nano শব্দের অর্থ একশ’ কোটি ভাগের একভাগ। ন্যানোটেক শব্দের ক্ষেত্রে এর অর্থ এক মিটারের একশ’ কোটি ভাগের এক ভাগের সমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। এ মাত্রা হচ্ছে অণু-পরমাণুর মাত্রা। এই মাত্রায় কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা অর্জন করে পর্যাপ্ত প্রভাব, এর ফলে পাল্টে যায় বস্ত্তর কাজের ধরন। ন্যানোটেকনোলজি কাজ করে ১ ন্যানোমিটার থেকে ১০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্যের ওপর। সিলিকনের তিনটি অণু পাশাপাশি রাখলে এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ১ ন্যানোমিটার। আর একটি এইচআইভি ভাইরাসের দৈর্ঘ্য ৯০ ন্যানোমিটার।

প্রকৃতিতে রয়েছে ন্যানো-এফেক্টের নানা উদাহরণ। একটি টিকটিকি কিংবা অনুরূপ সরীসৃপ দেয়াল বেয়ে খাড়া উপরের দিকে উঠতে পারে, কারণ এর পায়ে রয়েছে লাখ লাখ ছোট্ট চুল, যার কাঠামো অনেকটা গাছের শীর্ষদেশের মতো। এর পায়ের উপরিতলের এলাকাটি দিয়ে যখন দেয়ালে চাপ দেয়া হয় তখন তা টিকটিকিটিকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এরচেয়ে কম সহজবোধ্য উদাহরণ হচ্ছে প্রোটিন সংশ্লেষণ। আমাদের শরীরের সব প্রোটিন সৃষ্টি হয় রাইবোসাম দিয়ে। একটি রাইবোসাম অপরিহার্যভাবেই একটি ন্যানোফ্যাক্টরি। এটি তথ্য পায় ডিএনএ থেকে এবং তৈরি করে প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিড থেকে। ন্যানোটেকনোলজির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা। এখন পর্যন্ত এমন কোনো উপায় উদ্ভাবিত হয়নি যাতে করে এ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্ত্ত পর্যবেক্ষণ করা যায়। ফলে ন্যানো-স্কেল গবেষকদের জন্য প্রধানত টেরা ইনকগনিটা বা অপরিচিত। এসটিএম বা স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরমাণু পর্যায়ে উপরিচিত্র অবলোকন সম্ভব। এসটিএম আবিষ্কার হয় ১৯৮১ সালে। এর আবিষ্কারক জার্ড রিনিং ও হেনরিখ রোহরার এর জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আজকের দিনে বিজ্ঞানীরা এসটিএমভিত্তিক একটি ডিজাইন ব্যবহার করেন। এর নাম অ্যাটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপ বা এএফএম। এটি এমনকি আলাদা পরমাণু উৎপাদনের ধরনের পাশে নড়াচড়া করতে এবং এর চিত্রও ধারণ করতে পারে।

অপরদিকে, ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার শতাব্দীপ্রাচীন। মধ্যযুগের কারিগরেরা রঙের ব্যবহার করেছেন গোল্ড ন্যানো-পার্টিক্যালের সাহায্যে গির্জার স্টেইন্ড গ্লাস উইন্ডো তৈরিতে। যখন কাঁচের ওপর সরাসরি সূর্যের আলো ফেলা হয়, পার্টিকলগুলো বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। গির্জাগুলো মাঝেমধ্যে হাসপাতাল হিসেবেই ব্যবহার হতো। মহামারীর চিকিৎসা কার্যত গির্জাতেই বেশি ফলপ্রসূ ছিল। অতএব, তা না জেনেই মানুষ রোগ ঠেকাতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে আসছিল।

আজকের দিনে আমরা এরই মধ্যে ন্যানো-পণ্যকে সাদরে গ্রহণ করছি। কমপিউটার প্রসেসর ও অন্যান্য মাইক্রোইলেকট্রনিক সার্কিট ২০০৩ সালেই ১০০ ন্যানোমিটারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এখন মাইক্রোপ্রসেসরের মৌল উপাদানগুলোর আকার মাত্র ৩২ ন্যানোমিটার। আশা করা যাচ্ছে, ২০১২ সালের মধ্যে এর আকার ২২ ন্যানোমিটারে নেমে আসবে। তা সত্ত্বেও একটি ছোট্ট সিলিকনভিত্তিক ট্রানজিস্টর কতটুকু ছোট হতে পারে, তার একটা সীমা আছে। আমরা আশা করছি, আগামী এক দশকের মধ্যে এক্ষেত্রে নতুন বস্ত্ত ও কৌশল আমাদের হাতের কাছে পাব। আজকের দিনে বেশকিছু ক্ষেত্র আছে, যেখন ন্যানো বয়ে আনতে পারে নাটকীয় উপকার। এসব ক্ষেত্রের মধ্যে আছে জ্বালানি, ওষুধ, বস্ত্তুবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিকস।

ন্যানোহিলেটিং গরিবতা ও শোষণ

মানুষ আজ জ্বালানির অভাবে অভাবী। প্রচুর ও সস্তা জ্বালানির সর্বশেষ ক্ষেত্র ছিল আণবিক শক্তি। কিন্তু তাও আশানুরূপ ফলোদয় করতে পারেনি। প্রচলিত ধরনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প খুবই ব্যয়বহূল এবং এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ জ্বালানি। অপরদিকে তাপ-পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ত্বরান্বিত করার বিষয়টি কয়েক বছরব্যাপী গবেষণা ও শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল।

এক্ষেত্রে ন্যানোপ্রযুক্তির সুবাদে সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে একটি বিকল্প। আজকের দিনের সৌর প্যানেলগুলো খুবই অকার্যকর। এগুলো আলোশক্তির মাত্র ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করে- বাকিটুকু তাপ বর্জ্য হিসেবে নষ্ট হয়ে যায়। এর চেয়ে আরো কার্যকর নকশা ব্যবহার হচ্ছে উপগ্রহে, যা এর চেয়ে দ্বিগুণ হারে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। দুর্ভাগ্য এগুলোতে ব্যবহার হয় দুষ্প্রাপ্য পদার্থ গ্যালিয়াম অথবা ইরেডিয়াম, এগুলো সাধারণ সিলিকনের মতো সস্তা নয়। কিন্তু কোয়ান্টাম ডটস নাটকীয়ভাবে সোলার প্যানেলের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কোয়ান্টাম ডট নামের সেমিকন্ডাক্টর ক্রিস্টালগুলোর ব্যাস মাত্র কয়েক ন্যানোমিটার। ভবিষ্যতের বাড়িঘরে ছাদের রোফ প্যানেলগুলো প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর মতো জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে। এবং তা হবে পরিবেশবান্ধবও। দেয়াল এবং মেঝেও আসবে পরিবর্তন। ন্যানো আকারের পার্টিকল ও ফুলারেন্স টিউব তথা বিস্ময়কর টেনসিল শক্তিসম্পন্ন সিলিন্ডার আকারের কার্বন অণু কংক্রিটও শংকরের সাথে মেশালে তা আরো শক্ত ও ক্ষয়রোধী হবে। তাছাড়া ছোট্ট ন্যানোইলেক্ট্রনিক সেন্সর মনিটর করবে নির্মাণ ত্রুটি ও বিপজ্জনক পীড়নের বিষয়টি।

এক্ষেত্রে আরেকটি সম্ভাব্য অগ্রগতি বিশুদ্ধ পানির সস্তাতর উৎপাদন। ন্যানোপ্রযুক্তি সুযোগ করে দেবে কার্যকর ফিল্টার তৈরির। এই ফিল্টার দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে পানির অণু। ফলে এ ছাকনিতে আটকা পড়ে আলাদা হয়ে যাবে যাবতীয় ময়লা ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বীজাণু তথা মাইক্রোঅর্গানিজম। এ থেকে খাদ্যশিল্পগুলোও উপকৃত হবে। এমনকি এখনই গোশত উৎপাদকেরা অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে সিলভার ন্যানোপার্টিকল পশুকে খাওয়ায়। আশা করা হচ্ছে, ধাতুর জীবাণুনাশক ক্ষমতা এতে অনেক বেড়ে যায়, রোগ-ব্যধি দূরে রাখে এই সিলভার ন্যানোপার্টিকল।

ন্যানোটেকনোলজি হতে পারে হাইড্রোজেনভিত্তিক গাড়ির মূল চাবিকাঠি। এখন গ্যাস মজুদ করা হয় প্রেসার ট্যাঙ্কে। এতে করে বড় ধরনের বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। একটি সচ্ছিদ্র ধাতু হাইড্রোজেনকে নিষ্ক্রিয় করে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে। দূষিত গ্যাসোলিন ও ডিজেল গাড়িকে অচল করে দিতে পারে। ন্যানোপ্রযুক্তি ক্যাটেলাইটিক কনভার্টার ও এক্সস্ট ফিল্টারের দাম বহুগুণে কমিয়ে দেবে, যা সংযোজিত হবে সব গাড়িতে।

আগামী দিনের ন্যানোপ্যাকেলেপসি

অবশ্য, ন্যানোপ্রযুক্তির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যেমন আছে, তেমনি এর কিছু দুর্বল দিকও আছে। ১৯৮৬ সালের দিকে ন্যানোপ্রযুক্তির অগ্রদূত এরিক ড্রেক্সলার তার লেখা বই Engines of Creation: ‘The Coming Era of Nanotechnology’-এ তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যে, Self replicating nanobots used for molecular assembly may eventually run out of control and consume all biomass on the Earth. রহস্যোৎঘাটনমূলক চিত্র হিসেবে সায়েন্স ফিকশনের যথাযথ স্থান রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ড্রেক্সলার স্বীকার করেছেন, এ ধরনের bot-এর প্রয়োজন নেই ন্যানোমাত্রার বৃহদাকার উৎপাদনে। কিন্তু এতে অন্যান্য ঝুঁকিও আছে, যে সম্পর্কে আমাদের অনুসন্ধিৎসু হতে হবে।

যখন কোনো বস্ত্তকে ন্যানো-আকারের পাউডারে পরিণত করা হয়, তখন অনেক বস্ত্তর গুণাগুণ বদলে যায়। এগুলোর বিক্রিয়াশক্তি বেড়ে যায়, তখন তা কোষপর্দার ভেতরে ঢুকে যেতে পারে এবং এর ওপর সৃষ্টি হয় অনেক কোয়ান্টাম এফেক্ট। নন-পাউডার বস্ত্তর পণ্য ইতোমধ্যেই অস্তিত্বশীল। যেমন ন্যানো-পার্টিকলব্যান্ডেজে আঘাতস্থল জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য ব্যবহার হচ্ছে সিলিডার। তা সেরে ওঠাও ত্বরান্বিত করে। এবং বিশেষ ধরনের ক্যালসিয়ামভিত্তিক দ্রবণ এখন তৈরির অপেক্ষায়, যা হাড়ভাঙ্গা সারাতে উপকার বয়ে আনবে। তবে অণুজীবের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। তাছাড়া সস্তাতর ও ক্ষুদ্রতর মাইক্রোচিপ ও সেন্সর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে। প্রত্যেক মানুষ অধিক থেকে অধিক হারে সে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে, তার ফলে নানা ঝামেলাকর পরিস্থিতির জন্ম হতে পারে।

অজানা ন্যানোরিয়েলিটি

ন্যানোটেকনোলজির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরম সত্যটি হচ্ছে, এসব পূর্বাভাস খুবই সম্ভবত ভুল। মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে যে প্রবণতাটুকু প্রকাশ করতে চায়, তা এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু বাস্তবতা নিয়মিতভাবে এমন কিছু সৃষ্টি করে চলেছে, যা পুরোপুরি নতুন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মানুষের প্রত্যাশা ছিল উড়োজাহাজ, তারা চায়নি বোয়িং ড্রিমলাইনার। ৫০ বছর আগে কেউ ভাবেনি পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যখন-তখন কথা বলার সুযোগ। মোবাইল ফোন সে সুযোগ করে দিয়েছে। একই ঘটনা ঘটবে ন্যানোটেকনোলজির বেলায়। রাশিয়া হতে চায় এই ন্যানোটেকনোলজি জগতের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়। সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে রসন্যানো। সেখানে বিনিয়োগ করছে শত শত কোটি ডলার। আমরা হয়তো সে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবো না। তবে সে কথা বলে নিজেদের ন্যানোপ্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নকর্ম থেকে দূরে সরিয়েও রাখা যাবে না। হতে পারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ নিয়েও ন্যানো গবেষণায় আমরা আমাদের দেশকে নিয়ে যেতে পারি সামনের সারিতে।

তাই তাগিদ, রসন্যানোর মতো বাংলাদেশেও গড়ে তুলতে হবে একটি ন্যানোপ্রযুক্তি গবেষণাগার ও যুগপৎভাবে একটি বিনিয়োগ কোম্পানি। এ গবেষণাগারের লক্ষ্য হবে আমাদের মতো করে ন্যানোপ্রযুক্তির পরিধিকে সম্প্রসারিত করা। কারণ জ্বালানি সমস্যা মেটানো থেকে শুরু করে চিকিৎসাক্ষেত্রসহ এমন ক্ষেত্র থাকবে না, যেখানে ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার হবে না। অতএব ন্যানোকে বাদ দিয়ে প্রযুক্তির উন্নয়ন বাস্তবসম্মত নয়। সেজন্য তাগিদ রসন্যানোর মতো বাংলাদেশের ন্যানোপ্রযুক্তি গবেষণাগার গড়ে তোলার। সে তাগিদের লক্ষ্যেই এই কলম ধরা।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : jagat@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা