ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এবং আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন তথা আইটিইউ’র উদ্যোগে ভারতের হায়দ্রাবাদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে ২৫ মে-৪ জুন, ২০১০ সময় পরিধিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৫ম ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স তথা ডব্লিউটিডিসি-১০। এবারের সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল : টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করা। সদস্য দেশ ও খাতের সদস্যরা পরবর্তী চার বছরে হায়দ্রাবাদ অ্যাকশন প্ল্যানের ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি নিয়ে আইটিইউ টেলিযোগাযোগ উন্নয়ন খাতে কাজ করবে। সম্মেলনে ১৪০টি রাষ্ট্রের সরকারি প্রতিনিধি, মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত, বেসরকারি খাতসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২০০ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ভারতের টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের সচিব পিজে থমাস সম্মেলনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভারত সরকারের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এ. রাজা সমবেত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, তথ্যপ্রযুক্তি যেকোনো দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক খাতে দ্রুত উন্নয়নে সহায়তা করে। উদ্বোধনী অধিবেশনে আইটিইউ মহাসচিব হামাদুন আই তুরে বক্তব্য রাখেন। সবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির কানেকটিভিটি ২০১৫ সালের মধ্যে পৌঁছাতে সবাই একযোগে কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমদ রাজুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ১১ সদস্যের একটি সরকারি প্রতিনিধিদল এ সম্মেলনে অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, জেনেভাস্থ বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারসহ পররাষ্ট্র, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটর অব বাংলাদেশ তথা এমটবের একটি প্রতিনিধিদলও এ সম্মেলনে অংশ নেয়। সম্মেলনের প্রথম ৩ দিনে একাধিক অধিবেশনে অংশ নিয়ে সদস্য দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা পলিসি নির্ধারণে আলোচনা করেন। প্রতি চার বছর পর পর WTDC অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলনে বিষয়গুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল :
* একটি স্কুল ও একটি সমাজ সংযোগ গড়ে তুলুন।
* ব্রডব্যান্ড সংযোগ।
* ডিজিটাল সম্প্রচার।
* উন্মুক্ত সফটওয়্যার।
* সাইবার নিরাপত্তা।
* E-accessibility for people with disabilities প্রতিবন্ধীদের জন্য ই-প্রবেশের সুযোগ।
* মানব সক্ষমতা সৃষ্টি।
* ই-স্বাস্থ্য।
* জরুরি যোগাযোগ।
* আইসিটি নীতিমালা ও বিধিবিধান।
প্রথম ডব্লিউটিডিসি অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে ২১-২৯ মার্চ, ১৯৯৪। দ্বিতীয় ডব্লিউটিডিসি অনুষ্ঠিত হয় মাল্টার ভ্যালেটায়। তৃতীয় ডব্লিউটিডিসি অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ২০০২ সালে। সম্মেলন ১৮ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হয় ২৭ মার্চ। চতুর্থ সম্মেলন ২০০৬ সালের ৭-১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় কাতারের দোহায়। এসব সম্মেলনে পূর্ববর্তী সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
হায়দ্রাবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ৪-২২ অক্টোবর, ২০১০-এ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিতব্য Plenipotentiary Conference (PP-10)-এ আইটিইউ কাউন্সিল পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালায় এবং আইটিইউ সদস্য দেশসমূহের উপস্থিত প্রতিনিধিদের সামনে গত ২৫ মে স্থানীয় হোটেলে এক নৈশভোজের আয়োজন করে। সম্মেলন থেকে দেশে ফিরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি জানান, বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনের প্রতিটি সেশনে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী একটি অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। প্রতিনিধিদল আইটিইউ মহাসচিব ড. হামাদুন আই তুরে, ভারতের আইসিটিমন্ত্রী, আইটিইউ’র টেলিকমিউনিকেশন ডেভেলপমেন্ট ব্যুরোর পরিচালক সামি আল বাশেরসহ অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সাথে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
২০১৪ সালে পরবর্তী ডব্লিউটিডিসি অনুষ্ঠিত হবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mizan010168@yahoo.com