গণিত অলিম্পিয়াড ও কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার পৃষ্ঠপোষকতা চাই
শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গণিত প্রভৃতি জ্ঞানের ধারক ও বাহকই শুধু নয়, বরং বলা যায় একটি দেশের সভ্যতার প্রতীক। আর এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব ক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেয় যাতে সে দেশের শিল্প, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, গণিত প্রভৃতি ক্ষেত্রে মেধার বিকাশ ঘটে। কেননা, এসব ক্ষেত্রের মেধাবীদের ওপরই নির্ভর করছে একটি দেশের উন্নতি। বলা যেতে পারে শিল্প-সাহিত্য-বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে জাতি যত এগিয়ে বা উন্নত, সেই জাতি তত সভ্য ও উন্নত। আর এ কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিভাবানদের উৎসাহী করতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন হতে দেখা যায়, যেখানে পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না।
আমাদের দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবানদের উৎসাহ দানের জন্য বা জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন হতে দেখা যায়। যেমন- ক্ষুদে গান রাজ, ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, সেরা সুন্দরীর অনুসন্ধান হয়ে থাকে প্রতি বছর। আর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিজয়ীদের দেয়া হয় মোটা অঙ্কের পুরস্কারসহ নানা উপহার। আমি এর বিরোধিতা করি না বরং এ জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই এবং প্রত্যাশা করি এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক বছরের পর বছর।
আগেই বলা হয়েছে, একটি দেশের সভ্যতার ও দেশের জনগণের উন্নততর জীবনমানের বহিঃপ্রকাশ শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আমাদের দেশে প্রায় সব ক্ষেত্রেই তরুণ মেধাবীদের উৎসাহদান ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম লক্ষ করা গেলেও বিজ্ঞান ও গণিতের ক্ষেত্রে তরুণ মেধাবীদের অনুসন্ধান ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য দুয়েকটি ঘটনার ব্যতিক্রম ছাড়া তেমন খুব একটা চোখে দেখা যায় না।
তরুণ যুব সমাজের অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য আয়োজিত হয় বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। এসব ক্ষেত্রেও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবছরই বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি আয়োজনসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে আসছে, যার প্রত্যাশিত ফল খুব একটা চোখে পড়ে না। তারপর এসব ক্ষেত্রে উৎসাহ বা প্রেরণা দেবার কমতি লক্ষ করা যায় না। আমি এর বিরোধিতা করছি না। আমি মনে করি, এর দরকার আছে। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো সভ্যতার অন্যতম ধারক ও বাহক গণিত। আর গণিতের মেধাবীদের উৎসাহ ও প্রেরণা দেয়ার জন্য তেমন কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যায় না শুধু গণিত অলিম্পিয়াড ছাড়া।
গত কয়েক বছর ধরে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের উৎসাহে এবং কিছু সংগঠনের সহায়তায় এটি এখন জনমনে বেশ আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। অবশ্য এর পেছনে রয়েছে তরুণ মেধাবী গণিতবিদদের আন্তর্জাতিক সাফল্য। তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই গণিতবিদেরা আমাদের দেশের জন্য বয়ে এনেছে কিছু সাফল্যের তিলক। এসব গণিতবিদকে যদি এখন থেকে ভালোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, তাহলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস তারা আমাদের জন্য যথেষ্ট সম্মান যেমন বয়ে আনতে পারবে, তেমনি আমরাও বিশ্বের মানচিত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এক সভ্য জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবো, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
গণিতের সাথে সাথে আরো একটি ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ ঈর্ষণীয়। আর সেটি হলো কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। এক্ষেত্রটিও গণিত অলিম্পিয়াডের মতো অনেকটা অবহেলিত। এক্ষেত্রেও মুষ্টিমেয় কয়েকজনের উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রটিও আমাদের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে।
আমাদের দেশে অনেক সংগঠন রয়েছে, যেগুলো নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিভাবানদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। আমি প্রত্যাশা করি, এসব ক্ষেত্রের পাশাপাশি গণিত ও কমপিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় এমনভাবে বিভিন্ন সংগঠন অব্যাহতভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করবে, যাতে গণিত ও প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি, কেননা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চল প্রাকৃতিকভাবে মেধাবী, শুধু দরকার যথাযথভাবে পৃষ্ঠপোষকতা। এক্ষেত্রে আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো যেমন বিসিএস, বেসিস এবং আইএসপিএবি ইত্যাদি বরাবরের মতো নির্বিকার না থেকে বরং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে উদ্যোগী হবে, তা আমাদের সবার প্রত্যাশা। কমপিউটার জগৎ পরিবারের সবার প্রতি রইলো ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
বদরুদ্দীন মুন্সী
কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
...........................................................................................
নতুন আইসিটি মন্ত্রণালয় যেনো হয় সব পেশাজীবীর সম্মিলন
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা এদেশের জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে, সৃষ্টি করে এক নতুন কর্মপ্রেরণা। অবশ্য এ নিয়ে ব্যঙ্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি অনেকেই। অবশ্য এজন্য দায়ী সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কাজের ধীরগতি, সমন্বয়হীনতা ও অতিকথন।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের অঙ্গীকারের প্রতি যে তিনি আন্তরিক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি নিয়ে তার কর্মকান্ড যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, সেটি তিনি আবারো প্রমাণ করলেন।
সরকার এই মন্ত্রণালয়কে কার্যত ডিজিটাল বাংলাদেশ মন্ত্রণালয় হিসেবে দেখতে পারে। এতে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করার সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নীতিনির্ধারণ, নীতিমালা প্রণয়ন থেকে শুরু করে ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার বড় কাজগুলো করতে পারে এই মন্ত্রণালয়। তবে অবশ্যই বাস্তবতার ওপর ভর করে নতুন গঠিতব্য এ মন্ত্রণালয়কে হতে হবে আন্তরিক, যুগোপযোগী ও সক্রিয়।
আমাদের দেশের সরকারি কাজের যে গতি ও কর্মকান্ড সবসময় দেখে আসছি, বিশেষ করে মন্ত্রণালয়গুলোর তাতে কিছুটা শঙ্কাবোধ করছি যে নবগঠিত আইসিটি মন্ত্রণালয়টির কর্মকান্ড শুধু পোশাকি হাবভাব প্রদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না তো।
নবগঠিত আইসিটি মন্ত্রণালয় জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে না আনতে পারলে প্রধানমন্ত্রীর এই ঐকান্তিক চেষ্টা শুধু ব্যর্থই হবে না, জাতিকে যথেষ্টমাত্রায় হতাশায়ও ফেলবে। কেননা, তখন জাতির ঘাড়ে চাপবে একটি মন্ত্রণালয়ের বাড়তি খরচের বোঝা। তাই আগে থেকেই আমাদের সতর্কভাবে এগুতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের আকার যেনো কোনো অবস্থাতেই অতি বড় না হয়। মন্ত্রণালয়ের জনবল হবে এমন, যাতে জনবলের অভাবে কাজকর্মের স্বাভাবিক গতি না হারায়। অপরদিকে অতিরিক্ত জনবল যেনো মন্ত্রণালয়কে ভারাক্রান্ত না করে। নবগঠিত মন্ত্রণালয় যেনো অতিরিক্ত জনবল ও সরকারি চাটুকার-আমলানির্ভর না হয়ে বরং যোগ্য দেশপ্রেমিক ও মেধাবী পেশাজীবীর সম্মিলন যেনো ঘটে বেশি, সেদিকে সংশ্লিষ্টরা নজর দেবেন- এটা সবাই প্রত্যাশা করেন।
শ্যামল
বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম