বর্তমান সময়টা ইন্টারনেটের যুগ। একটা সময় ছিল যখন ডেস্কটপের যুগ। তখন ডেস্কটপের অ্যাপ্লিকেশন আর মাল্টিমিডিয়া নিয়েই ছিল বেশি মাতামাতি। ক্লাউড কমপিউটিংয়ের যুগে ডেস্কটপ এখন নগণ্য ব্যাপার। এখন ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্রাউজিংই দৈনন্দিন কমপিউটিং। তাই অপারেটিং সিস্টেম যাই হোক না কেন, ব্রাউজার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ভালো ও ইউজার ফ্রেন্ডলি ব্রাউজারের কোনো বিকল্প নেই এখনকার দৈনন্দিন কমপিউটিংয়ে। এখন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, ফায়ারফক্স, অপেরা এবং সাফারি খুব জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার। অবশ্য লিনআক্সে ফায়ারফক্স ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। উইন্ডোজে এগুলোর সব ব্যবহার করা যায়। আর ম্যাকের জনপ্রিয় ব্রাউজার হচ্ছে সাফারি। তবে লিনআক্সে এগুলো ছাড়াও কয়েকটি ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করা যায় যেগুলো বেশ কাজের।
ভবিষ্যতে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের ব্যবহার এত বেড়ে যাবে যে ব্রাউজার ইনস্টলেশন নিয়ে ব্যবহারকারীদের বিপদে পড়তে হবে না। অনলাইনে সব দেয়া থাকবে শুধু ইন্টারনেটে লগইন করেই কাজ করা সম্ভব হবে। এখন কমপিউটিং অনেকটাই ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে গেছে। এজন্যই ইন্টারনেট ব্রাউজারের সুবিধা-অসুবিধা এখন অনেক মুখ্য। লিনআক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এই অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার আলাদাভাবে ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না। অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকল্প সফটওয়্যার আছে যাতে করে লিনআক্স কমপিউটিংয়ে সমস্যা না হয়। তাই নবীনদের কিছুটা সমস্যা হলেও যারা নিয়মিত লিনআক্স ব্যবহার করেন তাদের সমস্যা হয় না। এমন একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে লিনআক্সে ব্রাউজার সমস্যা। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং মজিলা ফায়ারফক্স এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার। যদিও ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার সব অপারেটিং সিস্টেমে সাপোর্ট করে না। তারপরও এটি বেশ জনপ্রিয়, কারণ উইন্ডোজভিত্তিক। এই ব্রাউজারের জনপ্রিয়তা পাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে এই অপারেটিং সিস্টেম এখনো বহুল এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত। শুধু ক্রস প্লাটফর্ম সাপোর্ট করার কারণে মজিলা ফায়ারফক্স ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
লিনআক্সের সব ডিস্ট্রিবিউশনেই মজিলা ফায়ারফক্সের সাপোর্ট আছে। লিনআক্সের যেসব ডিস্ট্রিবিউশনের সাথে ফায়ারফক্স দেয়া নেই সেগুলোতেও খুব সহজেই মজিলা ফায়ারফক্স ইনস্টল করে নেয়া যায়। তবে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের সুবিধার্থে এগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটি জনপ্রিয় ব্রাউজার আছে যেগুলো বেশ কাজের। এগুলো হচ্ছে গ্যালিয়ন ও কনকোয়েরর। লিনআক্সের একেক ডিস্ট্রিবিউশনের সাথে একেকটি ব্রাউজার দিয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে কোনোটিতে গ্যালিয়ন দিয়ে দেয়া হয়, আবার কোনোটিতে কনকোয়েরর দিয়ে দেয়া হয়। শুধু না জানার কারণে বা এগুলো কি কাজে লাগে সেটা না জানার কারণে ব্যবহারকারীদের মধ্যে এই ব্রাউজারগুলোর ব্যবহার কম দেখা যায়।
গ্যালিয়ন মূলত মজিলা ফায়ারফক্স ইঞ্জিন ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়েছে। সাধারণত জিনোমভিত্তিক লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশনেই এই ব্রাউজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লিনআক্সের ডিস্ট্রিবিউশনে বিল্ট ইন অবস্থায় এই ব্রাউজার পাওয়া যায়। স্মার্ট বুকমার্ক সবার আগে এই গ্যালিয়নেই ব্যবহার করা হয়। শুরুতে এই ব্রাউজার বেশ সিস্টেম হাঙ্গরি ছিল। তবে সিস্টেম হাঙ্গরি হলেও এটি অন্যান্য ফিচারের দিক থেকে বেশ এগিয়ে ছিল। ২০০০ সালে প্রথম গ্যালিয়ন ছাড়া হয়। পুরনো অনেক ডিস্ট্রিবিউশনেই এই ব্রাউজার দেখা যায়। ২০০৮ সালের পর থেকে এই ব্রাউজারের কোনো আপডেট বের করা হয়নি।
মজিলা ছাড়া লিনআক্সভিত্তিক ব্রাউজারগুলোর মধ্যে সদর্পে এখনো যার ব্যবহার দেখা যায় সেটি হচ্ছে কনকোয়েরর ওয়েব ব্রাউজার। কনকোয়েরর বেশ উন্নতমানের ওয়েব ব্রাউজার এবং প্রতিনিয়ত এর উন্নয়ন হচ্ছে। মজার ব্যাপার হলো, কনকোয়েরর শুধু ওয়েব ব্রাউজার নয়। এটাকে ব্রাউজার বলা হয়। তার কারণ, এটি একইসাথে ওয়েব ব্রাউজার এবং ফাইল ব্রাউজারও বটে। কেডিইভিত্তিক লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশনে একে দেখা যায়। কেডিইভিত্তিক লিনআক্স ডিস্ট্রিবিউশনে এই ব্রাউজার নিজে নিজেই ইনস্টল হয়ে যায়। তবে জিনোমভিত্তিক অনেক লিনআক্সের ডিস্ট্রিবিউশনেও কনকোয়েরর ব্রাউজার ইনস্টল করা যায়।
এই ব্রাউজারটি লেখা হয়েছে সি++ ভাষায়। গত সংখ্যায় দেখানো হয়েছিল লিনআক্সে অপেরা ব্রাউজারের ব্যবহার। অপেরা ব্রাউজার তৈরি করা হয়েছে জাভা ভাষায়। ব্রাউজারের ইতিহাসেও কনকোয়েরর বেশ পুরনো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কনকোয়েরর শুধুই লিনআক্সে চলে তা কিন্তু নয়। এটি প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে। আর এটি জিএনইউ সাপোর্ট করে বলে এই ব্রাউজার পুরোপুরি ফ্রি।
কনকোয়েরর যেসব প্রোটোকল সাপোর্ট করে তা হচ্ছে- এফটিপি, সাম্বা, এইচটিটিপি, আইএমএপি মেইল ক্লায়েন্ট, আইএসও সিডি ইমেজ ভিউ ইত্যাদি। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দৈনন্দিন কমপিউটিংয়ের জন্য যে যে প্রটোকল সাপোর্ট করার দরকার তার সব কনকোয়েরর সাপোর্ট করে। একই সাথে দুটি ব্রাউজার সপোর্ট করার কারণে সব কাজ করা যায়। এর ফলে কমপিউটিংয়ের অনেক সুবিধা হয়।
এই ব্রাউজারটি পাওয়া যাবে www.konqueror.org সাইট থেকে। এখান থেকে ডাউনলোড করে সিস্টেমে ইনস্টল করে নিলেই অপারেটিং সিস্টেম থেকে এই ব্রাউজার চালানো যাবে। ইনস্টলেশন ফাইল মূলত কমপ্রেস অবস্থায় থাকে। এই কমপ্রেসড ফাইল রাইট বাটনে ক্লিক করে ডিকমপ্রেসড করতে হবে। ডিকমপ্রেসড হয়ে গেলে ফোল্ডারের মধ্যে install.sh নামে একটি ফাইল পাওয়া যাবে। এই ফাইলের রাইট বাটন ক্লিক করে রান ইন টার্মিনাল সিলেক্ট করে দিলে ইনস্টলেশন শুরু হবে।
ইনস্টলেশনের শুরুতেই জানতে চাইবে পাথ ঠিক আছে কি না। এক্ষেত্রে চেপে এন্টার চাপতে হবে। তাহলে পুরো ইনস্টলেশন শেষ হবে। ইনস্টল হয়ে গেলে ডেস্কটপ থেকেই অপেরা চালিয়ে ব্রাউজ করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে, আগামী দিনে ক্লাউড কমপিউটিং পুরোটাই চলবে এ ধরনের একই ব্রাউজার দিয়ে, সব কাজ করা যায় এমন পদ্ধতিতে। আর এ কাজটিই অত্যন্ত সহজভাবে করে দিয়েছে কনকোয়েরর ব্রাউজার। গুগল যে ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম বানাচ্ছে সেটাও হবে অনেকটা এমন ধরনের। তাই ভবিষ্যতের ব্রাউজিং সিস্টেমের সাথে তাল মেলানোর জন্য কনকোয়েরর বেশ ভালো উপায় হতে পারে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com