সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধ হোক
যেকোনো ক্ষেত্রেই মেধাবী ও প্রতিভাবানদের বিকাশ ও ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটানো সম্ভব হয় যথাযথ মূল্যায়ন, সম্মান ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে। আর এ চির সত্য বাক্যটি অন্য সব ধরনের পণ্যের মতো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রেও আরো প্রকটভাবে বাস্তব হয়ে উঠেছে। কেননা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের পেছনে রয়েছে প্রচন্ড মেধাবীদের দীর্ঘদিনের নিরলস প্রচেষ্টা। সফটওয়্যার ডেভেলপারদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যায় যখন তাদের সফটওয়্যার অবৈধভাবে দেদার সর্বত্র ব্যবহার হতে থাকে। ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপাররা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, অন্যদিকে তেমনই ভোগেন হতাশায়। এর ফলে সফটওয়্যার ডেভেলপাররা নতুন কোনো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে উৎসাহবোধ করেন না। এমন অবস্থার পরিত্রাণ হতে পারে সফটওয়্যার পাইরেসি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে। লক্ষণীয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে সফটওয়্যার পাইরেসির হার অনেক বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি বিজনেস সফটওয়্যার অ্যালায়েন্স তথা বিএসএ’র পরিচালিত এক সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১০ সালে ব্যক্তিগত কমপিউটারে ব্যবহৃত ৯০ শতাংশ সফটওয়্যারই অবৈধ, যার বাজার মূল্য ১৩ কোটি ৭০ লাখ ইউএস ডলার। অবশ্য ২০০৯ সালের তুলনায় এ পরিমাণ ১ শতাংশ কম। তাই বলে উৎসাহিত হওয়ার মতো তেমন কিছুই নয়।
এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চুরি হওয়া সফটওয়্যার ব্যবহারের বাণিজ্যিক মূল্য প্রায় ১৮ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার অবৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে। তারপরও অবৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারের এ প্রবণতা এখনো এ দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি বিকাশের ক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতা বা চ্যালেঞ্জ বলা যায়।
এ দেশে সফটওয়্যার পাইরেসির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সফটওয়্যারের চড়া দাম, সফটওয়্যারের বিক্রয়োত্তর সেবা অপ্রতুল, সচেতনতার অভাব ও মনমানসিকতা। সফটওয়্যারের দাম যদি সাধারণের নাগালের মধ্যে হতো তাহলে পাইরেসির হার অনেক কমে যেত। এ দেশের অনেকেই লাইসেন্স করা সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, কিন্তু এসব সফটওয়্যারের তাৎক্ষণিক কোনো সেবা দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই লাইসেন্স করা সফটওয়্যারের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তা ছাড়া লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যে অন্যায় এই বোধটুকু অনেক ব্যবহারকারীর মধ্যেই নেই। কারণ আমরা অনেকেই কমপিউটার কেনার সময় যে সফটওয়্যার কিনতে হয় তা জানি না। কেননা কমপিউটার বিক্রেতারা কমপিউটার বিক্রির সময় ক্রেতাকে অনেক সময় না জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ইনস্টল করে দেন। তাছাড়া কেউ যদি বিশেষ কোনো সফটওয়্যারের জন্য দাবি জানায়, তাহলে বিক্রেতা সেই সফটওয়্যার লাইসেন্স ভার্সন নাকি ফ্রি ভার্সন হবে সে সম্পর্কে কোনো কিছু ক্রেতাকে অবহিত না করেই খুশীমনে ক্রেতার চাহিদামতো সফটওয়্যার দিয়ে দেন। কেননা ক্রেতার সন্তুষ্টিই হলো বিক্রেতার লক্ষ্য। হোক না তা পাইরেটেড বা অবৈধ সফটওয়্যার।
এমন এক করুণ অবস্থায় বাংলাদেশে সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধের ক্ষেত্রে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সরকারের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের অটোমেশন প্রকল্প, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অটোমেশন প্রকল্প, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপিউটার ল্যাব স্থাপন, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি নানা প্রকল্পে বৈধভাবে প্রচুরসংখ্যক সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশে সফটওয়্যার পাইরেসি কমবে বলে আশা করা যায়। তা ছাড়া আমাদের দেশের আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে পাইরেসি বন্ধে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের বোঝাতে হবে কোন সফটওয়্যার ফ্রি এবং কোন সফটওয়্যার লাইসেন্স করা। লাইসেন্স করা সফটওয়্যার ব্যবহার করলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে এবং পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করলে কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে তাও ব্যবহারকারীকে বোঝাতে হবে। এ ধরনের কার্যক্রমে সফল হলেই আমরা আশা করতে পারি এ দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি আরো বিকশিত হবে এবং বিশ্ব দরবারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে নিতে পারবে।
অসীম কুমার সাহা
মীরসরাই, চট্টগ্রাম
............................................................................................................................................................................
কবে পাবো ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপ?
আমি কমপিউটার জগৎ-এর একজন নিয়মিত পাঠক। এ পত্রিকার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া আমার পক্ষে সম্ভব না হলেও ‘কমপিউটার জগতের খবর’-এর জন্য বরাদ্দ করা আট পৃষ্ঠা পড়া এবং বিজ্ঞাপনের পাতাগুলো আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। কেননা আমি আইসিটি পণ্যসামগ্রী ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।
গত এক-দেড় বছর ধরে কমপিউটার জগতের খবর বিভাগে কিছুদিন পরপরই একটি খবর প্রায় প্রকাশিত হতে দেখে আসছি, যা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কথিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। আর এ খবরটি হলো বাংলাদেশের তৈরি ১০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ পাওয়া যাওয়ার বিষয়সংশ্লিষ্ট। আমার ধারণা কমপিউটার জগৎ পত্রিকায় খবর বিভাগে এ যাবৎকালে প্রকাশিত যত খবর আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে প্রকাশিত হয়েছে এ খবরটি ।
১০ হাজার টাকায় ল্যাপটপ পাওয়ার আশায় অনেকেই প্রহর গুনছেন এবং নতুন করে ঘোষিত দিনক্ষণের অপেক্ষায় থাকছেন। প্রযুক্তিপ্রেমীদের ১০ হাজার টাকার ল্যাপটপ প্রাপ্তির আশা কবে যে পূরণ হবে বা আদৌও হবে কি না তা কে জানে? আর যদি হয়, তবে দেখা যাবে সেই কমপিউটারের কনফিগারেশন প্রায় বাতিল হয়ে গেছে বা হওয়ার পথে এবং ক্রেতারা সেই কমপিউটার কিনতে উৎসাহ বোধ করবে না স্বাভাবিক কারণেই। ফলে সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ শুধু ব্যর্থই হবে না বরং বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিও হবে। আমার মনে এমন সন্দেহ হওয়ার কারণ কমপিউটার জগৎ-এর আগস্ট ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত এক খবর, যার শিরোনাম ছিল দেশী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ দোয়েল উৎপাদন শুরু।
এতদিন এ সংশ্লিষ্ট খবরগুলো এমনভাবে প্রকাশ করা হতো যে বাংলাদেশে ১০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপের উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে, যা বাজারে ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। মাঝে মাঝে উল্লেখ থাকত নির্দিষ্ট কোনো মাস থেকে এই ল্যাপটপগুলো পাওয়া যাবে, যেখানে থাকবে একাধিক মডেল, দাম ও কনফিগারেশন। অথচ আগস্ট ২০১১-এ প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ছিল দেশী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ‘দোয়েল’-এর উৎপাদন শুরু। ১০ হাজার টাকা দামের ল্যাপটপের আশায় দাঁত ধার করতে করতে দাঁত ক্ষয় করে ফেললাম, আর এখন শুনি দেশী ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের উৎপাদন মাত্র শুরু। এতদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে এখন বলা হচ্ছে উৎপাদন শুরু! তাহলে বাজারে পাওয়া যাবে কবে? আর কতদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে? এমন যদি হয় গতি, তাহলে ‘ভিশন ২০২১’-এর লক্ষ্য পূরণ হবে কবে? নাকি তাও ঢাকঢোল পেটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
চৈ চাকমা
বান্দরবান
কজ ওয়েব