হতাশার মাঝে আশার আলো আয়কর মেলা ২০১১
আমরা সবাই জানি, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার, যা ব্যাপকভাবে তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে। শুধু তাই নয়, বরং বলা যায় বিপুলভাবে ভোটে বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম এক প্রধান নিয়ামক হিসেবেও কাজ করে।
বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনার অর্থাৎ শাসনকালের প্রায় ৩ বছর হতে চলল। কিন্তু দেশের জনগণ বহুল প্রত্যাশিত সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুস্পষ্ট কোনো আলামত দেখতে পাচ্ছে না, দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন আলামত ছাড়া। বলা যেতে পারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর প্রত্যাশার মাঝে দিন দিন বাড়ছে শত শত হতাশার আলামত। এসব হতাশার মাঝে আশার আলো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সম্প্রতি শেষ হওয়া আয়কর মেলা ২০১১।
আমরা জানি, আয়কর বা রাজস্ব আদায় পৃথিবীর যেকোনো দেশের অর্থনীতির জন্য তথা দেশের সার্বিক জীবন-মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই দেশের জনগণ যদি ঠিকভাবে আয়কর না দেয়, তাহলে সেই দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না যথাযথ রাজস্ব আদায় না হওয়ার কারণে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। কেননা, ১৫ কোটি জনগোষ্ঠীর এ দেশে আয়কর দেন মাত্র মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। দেশের জনগণের দেয়া আয়করই যেকোনো দেশের প্রধান চালিকাশক্তি এই বোধটুকু আমাদের দেশে কেউই জানেন না। আর যারা দেন তাদের মধ্যে অনেকেই আবার কিছুটা বাধ্য হয়েছেন। তা ছাড়াও রয়েছে আয়কর দেয়ার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা ও ভয়ভীতি। এসব কারণেও এ দেশের আয়কর দিতে ইচ্ছুক অনেক লোকই কর দিতে উৎসাহ বোধ করেন না।
তাই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আয়কর দেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো এবং আয়কর পরিশোধে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এ আয়কর মেলা। এবারের আয়কর মেলায় ব্যবহার করা হয়েছে বেশকিছু ডিজিটাল প্রযুক্তিপণ্য। বলা যায়, এসব ডিজিটাল প্রযুক্তিপণ্য যেমন স্মার্ট কিউ, স্ট্যাটাস ডিসপ্লে, অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটর, জুরিসডিকশন ফাইন্ডার, অনলাইন স্ট্রিমিং ইত্যাদি ব্যবহার হওয়ায় এ আয়কর মেলা বহুলাংশে সফল করেছে। অর্থাৎ এবারের আয়কর মেলার সফলতার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তির কিছু সঠিক ব্যবহার বা প্রয়োগ।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ফলে আয়কর দেয়া যেমন বেশ সহজ ও দ্রুততর হয়েছে, তেমনি হয়েছে ঝামেলামুক্ত। এর ফলে বিপুলসংখ্যক লোক আয়কর দিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে এবং আগের যেকোনো বছরের চেয়ে অনেক বেশি লোক এ বছর আয়কর দিয়েছেন কোনো ঝামেলা ও জটিলতা ছাড়াই। বলা যায়, এবারের আয়কর মেলা বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের হতাশার মাঝে এক আলোর ঝিলিক। আমরা আশা করব, সরকার অন্যান্য মেকানিজমেও আয়কর মেলার আদলে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটিয়ে সেবার মান উন্নতকরণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে।
ধন্যবাদ কমপিউটার জগৎকে শত শত ব্যর্থতার মাঝে আশা জাগানোর মতো সময়োপযোগী প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘আয়কর মেলা যেনো এক ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রকাশের জন্য। ধন্যবাদ কমজগৎ ডটকমকে, যারা আয়কর মেলা ২০১১-এর ওয়েব কাস্ট করেছে।
আমরা কমপিউটার জগৎ-এর কাছে সমালোচনামূলক লেখার পাশাপাশি গঠনমূলক ও আশা জাগানিয়া লেখা আরো বেশি করে চাই, যাতে আমরা বুঝতে পারি দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ‘ভিশন ২০২১’-এর দিকে। তাছাড়া বিভিন্ন মিডিয়াতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নেতিবাচক খবর। এত নেতিবাচক খবর ও প্রতিবেদনের মধ্যে এ ধরনের লেখা সত্যিকার অর্থে আমাদেরকে প্রেরণা জোগাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
প্রিয়মত্মী
মিরপুর, ঢাকা
............................................................................................................................................................................
আর কত পেছাব?
প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে বর্তমান সরকার এক প্রযুক্তিবান্ধব সরকার। এই সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি ছিল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। দেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করে দেশকে প্রথমে একটি মধ্যম আয়ের দেশে, তারপর একটি উন্নত দেশে রূপ দেয়াই ছিল এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য।
সুতরাং সব মহলেরই প্রত্যাশা ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে আগের যেকোনো সরকারের তুলনায় তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে অনেক বেশি গতি আসবে। সরকারের কিছু কিছু কর্মকান্ড দেখে মনে হবে বাংলাদেশ সত্যি সত্যিই ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, আসলেই কী তাই?
২০১১ সালে বিশ্বের তুলনামূলক তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এ সরকারের আমলেই পিছিয়ে গেছে, যারা ঘোষণা দিয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। আইসিটি ডেভেলপমেন্টের ইনডেক্স তথা আইডিআই অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৩৭তম। ২০০৮ সালে তা ছিল ১৩৫তম। তুলনামূলক তথ্যানুযায়ী, গত তিন বছরে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও কাজ হলেও বিশ্ব উন্নয়ন প্রবৃত্তির বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন তথা আইটিইউ এ তথ্য গত মাসে প্রকাশ করেছে। ‘মেজারিং দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি ২০১১’ শিরোনামে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে আইটিইউ তুলে ধরে বিশ্বের ১৫২টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তির একটি তুলনামূলক চিত্র।
১৩৭তম স্থানে থাকা বাংলাদেশের নিচে আছে তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা ও আফ্রিকার দেশগুলো। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ১০৫, ভারত ১১৬, ভুটান ১১৯, পাকিস্তান ১২৩ ও নেপাল ১৩৪তম স্থানে রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী টেলিফোন ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমে যাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তিতে সবাই কমবেশি অগ্রসর হয়েছে। জিডিপির প্রবৃত্তির সাথে সার্বিক নীতিমালা প্রণয়ন করা গেলে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি উন্নয়ন করা যেতে পারে। পৃথিবীর কিছু কিছু দেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারে সস্তা ও সহজলভ্য করে দিয়ে বেশ এগিয়ে গেছে। বলা যায়, যাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট যত বেশি শক্তিশালী, তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। এখানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখনো সাধারণের নাগালের বাইরে এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার এখনো অপ্রতুল হওয়ায় আমাদের এ পিছিয়ে পড়া। একথা সত্য, গত কয়েক বছরে এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও প্রয়োগ বেড়েছে অনেক, তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইসিটি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সাম্প্রতিক প্রবণতার তুলনায় যথেষ্ট নয়, আর এ কারণেই আইসিটি ডেভেলপমেন্টের ইনডেক্সে তথা আইডিআই অনুযায়ী বাংলাদেশের এই পিছিয়া পড়া।
সুতরাং, আমরা প্রত্যাশা করি এ দেশের নীতিনির্ধারক ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো আইটিইউর সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মনোযোগের সাথে দেখে নিয়ে এর আলোকে দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করবে। শুধু দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বসে থাকলেই হবে না, বরং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে সংশ্লিষ্ট সবাই- তা আমাদের সবার প্রত্যাশা।
জামাল উদ্দীন
কজ ওয়েব