• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > রোগ চিকিৎসায় ডিজিটাল ডাক্তার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
রোগ চিকিৎসায় ডিজিটাল ডাক্তার

ই-মেডিসিনের ক্ষেত্রে চাঞ্চল্যকর অগ্রগতি হয়েছে। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে এখন তা নিশ্চিত হতে আর আপনাকে ডাক্তারের কাছে ছুটে যেতে হবে না। আপনার পকেটে থাকা স্মার্টফোনই বলে দেবে আপনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার কি না এবং এ পর্যায়ে আপনাকে ঠিক কী করতে হবে। এই চাঞ্চল্যকর বিষয়টির উদ্ভাবন হওয়ায় এখন হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার অনেক কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন হার্ট অ্যাটাকের ফলে সৃষ্ট বুকের ব্যথা অনুভব হওয়ার আগেই পকেটে থাকা স্মার্টফোন সারা দেহ স্বয়ংক্রিয় উপায়ে স্ক্যান করে ফেলবে এবং হৃদযন্ত্রের সার্বিক পরিস্থিতি অবগত ও রেকর্ড করবে। একই সাথে সতর্কবার্তা পাঠাবে জরুরি বিভাগে, যারা হার্ট অ্যাটাকের আগমনীবার্তা পেয়ে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবেন।

যখন আপনি হাসপাতালে পৌঁছবেন তখন আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যতথ্য এবং অন্যান্য ডাটা স্মার্টফোন থেকে নিয়ে চিকিৎসক তার ট্যাবলেট পিসিতে বিশ্লেষণ করে দেখবেন। আপনার কব্জিতে থাকা আরএফআইডি ব্রেসলেটে থাকবে আপনার পরিচিতি এবং ভাইটাল সাইন তথা অত্যাবশ্যক লক্ষণ বিষয়ক অন্য সব তথ্য। আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে পুরো স্ক্যান করা হবে এবং ফলাফলের থ্রিডি ইমেজ পাঠিয়ে দেয়া হবে স্বশাসিত একটি রোবট সার্জনের কাছে। এই রোবট কাজ করে ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে। পাঁজর পুরোপুরি না কেটেই সে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র করে চিকিৎসার কাজটি করবে। তারপর আপনাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে বাড়িতে। তার আগে আপনাকে দেয়া হবে চিপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক। একটি রোবট সর্বক্ষণিকভাবে আপনাকে মনিটর করবে। হাই ডেফিনিশন টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আপনার লিভিং রুমেই চেকআপের কাজটি করা হবে। রক্তচাপ মনিটর করা হবে ওয়্যারলেস প্রযুক্তিতে। পরে প্রাপ্ত সব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা হবে আপনি যথাযথভাবে সেরে উঠছেন কি না। এসব কিছুর পরও যদি দ্বিতীয় দফা হার্ট অ্যাটাক ফেরানো না যায়, তাহলে আপনার ওয়্যারলেস ডিফাইব্রিলেটর এ ব্যাপারে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ব্যবস্থা নেবে, যা হার্ট অ্যাটাকস্থলেই আপনার জীবন বাঁচাবে।

পুরো বিষয়টি পড়ে পাঠকের হয়তো মনে হতে পারে, এগুলো ভবিষ্যতের কথা। অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন দিন আসবে, যখন কেউ আর হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবেন না। অ্যাটাক হওয়ার সাথে সাথেই স্মার্টফোন কিংবা রোবট গোছের কেউ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। ফলে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে জীবন। এক অর্থে পাঠকের ভাবনা পুরোপুরি ভুল বলা যাবে না। কারণ সত্যিকার অর্থেই এখনো মেডিসিনের ক্ষেত্রে হাই-টেকের ব্যবহার অন্য ক্ষেত্রগুলোর মতো ব্যাপক হয়নি। তবে লো-টেক থেকে ক্রমেই মেডিসিন উন্নীত হচ্ছে হাই-টেকের দিকে। এর নজির পেতে শুরু করেছেন উন্নত বিশ্বের মানুষরা।

হাই ডেফিনিশন সার্জারি :

উন্নত বিশ্বের হাসপাতালগুলোতে ছোট-বড় সব ধরনের রোবটই ইতোমধ্যে চিকিৎসকের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে শল্যচিকিৎসায় তাদের সহায়তার ভূমিকা অনবদ্য। এদের মধ্যে ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে রোবট দ্য ভিঞ্চি। এটি সার্জিক্যাল সহায়তাকারী। তার রয়েছে যন্ত্রপাতি বহনের জন্য তিনটি রোবটিক বাহু এবং একটি বাহু বহন করে থ্রিডি ক্যামেরা। অপারেশন টেবিলের অন্য পাশে অবস্থান নেয়া একজন মানুষ সার্জন নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করেন রোবট বাহুগুলোকে। রোবটের এই বাহুগুলো ব্যবহার করে অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজও করা সম্ভব। এসব কাজ করতে গিয়ে চিকিৎসকদের হাত অনেক সময় কেঁপে উঠলেও রোবট বাহুর ক্ষেত্রে সে সমস্যা নেই। তাই অপারেশন হয় অত্যন্ত নিখুঁত ও সূক্ষ্মভাবে। তাছাড়া আগে অপারেশনের সময় যেখানে কাটতে হতো অন্তত ১০০ মি.মি., সেখানে এখন কাটা লাগে মাত্র ১২ মি.মি.। রোগীর আরোগ্য লাভে সময়ও লাগে আগের চেয়ে অনেক কম। তাই হাসপাতালে অবস্থানের মেয়াদ কমে এবং একই সাথে সাশ্রয় হয় মূল্যবান অর্থ ও সময়ের।

কিছু সার্জিক্যাল রোবট রয়েছে, যারা দেহে কোনোরকম কাটাকাটি ছাড়াই শল্যচিকিৎসার কাজটি করে থাকে। দ্য মাস্টার অ্যান্ড স্লেভ ট্রান্সলুমিনাল অ্যান্ডোসকপি রোবট সংক্ষেপে মাস্টারের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে, যার ফলে এটি দেহে কোনো কাটাকাটি না করে কেবল মুখের ভেতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে পাকস্থলী থেকে টিউমার অপসারণ করতে পারে।

এদিকে কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় হার্টল্যান্ডার নামে একটি মিনিয়েচার অর্থাৎ ক্ষুদ্র মোবাইল রোবট তৈরির কাজ করছে, যেটিকে একটি ছিদ্রের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হবে হৃদযন্ত্রের পৃষ্ঠে। সেখান থেকে এটি হার্টের পরিস্থিতি মনিটর করবে এবং স্বশাসিতভাবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে।

সাহায্যকারী রোবট :

সব রোবটই কিন্তু সার্জন নয়। বেশিরভাগ হাসপাতালে ব্যবহৃত রোবট মূলত চিকিৎসকের সাধারণ কাজ করে দেয়ার সাহায্যকারী মাত্র। আইডিসি বিশ্লেষক জন ডুফে বলেছেন, নরডিক হাসপাতালগুলোতে সাহায্যকারী রোবট থাকা খুবই সাধারণ ঘটনা। এলিভেটরে আপনার জন্য কোনো রোবট অপেক্ষায় থাকলেও অবাক হবেন না। জাপানের গবেষকেরা প্রশিক্ষণার্থী দন্ত চিকিৎসকদের জন্য নারীর মতো দেখতে একটি রোবট তৈরি করছেন। প্রশিক্ষণার্থী যখন সেই রোবটকে ব্যথা দেয় বা ভুল স্থানে আঘাত করে তখন রোবটটি যন্ত্রণা পাওয়ার আওয়াজ করে। তখন প্রশিক্ষণার্থী বুঝতে পারে যে তার কাজটি সঠিক হচ্ছে না।

টেলিডায়াগনসিস :

বুকের ওপর ক্ষুদ্র রোবট ওঠার আগে আপনার প্রয়োজন হবে ডায়াগনসিস করানোর। প্রচলিত নিয়মে এটি করাতে গেলে পোহাতে হবে নানা যন্ত্রণা। এ থেকে মুক্তি দিতে পারে টেলিকনফারেন্সিং ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরাও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাবেন। তাই তারা হাসপাতালের পরিবর্তে বাসায় বসেই পাবেন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা।

সাহায্যকারী হ্যান্ডসেট :

স্টিভ জবসের মনে নিশ্চয়ই মোবাইল হেল্থকেয়ারের বিষয়টি ছিল। তার কাজের অগ্রগতি সেই ইঙ্গিতই দেয়। তার স্মার্টফোনই হয়তো একদিন হয়ে উঠবে স্বাস্থ্য নিরীক্ষক এবং রোগ নির্ণায়ক। স্মার্টফোনের ডাটা ওয়েবের মাধ্যমে চিকিৎসকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। এখন কিছু কোম্পানি হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে স্যাম্পল সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে ভাবছে।

ডায়াবেটিস রোগীরা ইতোমধ্যেই তাদের আইফোন ব্যবহার করে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করতে পারছেন। আইবিজিস্টার নামে একটি গ্লুকোমিটারও বাজারে এসেছে। নিজে নিজেই যাতে যৌন সংক্রমণ পরীক্ষা করা যায় তার জন্য একটি যন্ত্র উদ্ভাবনের কাজও এগিয়ে চলেছে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি কনসোর্টিয়াম এজন্য ৫৭ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে। এই যন্ত্রের প্ল্যাগ থাকবে হ্যান্ডসেট কিংবা পিসির সাথে যুক্ত। এর ফলে স্পর্শকাতর এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের মুখোমুখি হতে হবে না। চিকিৎসক রোগীর কাছ থেকে পাওয়া ডাটার ভিত্তিতেই চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন। মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে এই স্মার্টফোন।

অভ্যন্তরীণ ডায়াগনসিস :

মেডিক্যাল ডাটা শুধু স্মার্টফোনের মাধ্যমেই সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। এটি পুরোপুরিভাবে পেতে হলে প্রয়োজন ওয়্যারলেস ডিভাইস, যা দেহের বাইরে থেকেই রক্তচাপ এবং দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এ ধরনের যন্ত্র উদ্ভাবনে কাজ করছেন।

তাই এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, এমন দিন দূরে নয়, যখন চিকিৎসাসেবা দেয়ার যন্ত্র থাকবে পকেটে বা হ্যান্ডব্যাগের ভেতরে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস