লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
বিটুজি : স্মার্ট ওএস পরিবারের নতুন সদস্য
সেপ্টেম্বর ২০১০। সিবার্ড নামের মজিলার ওপেন ওয়েব স্মার্টফোনের রূপকল্পের একটি টুডি ও থ্রিডি অ্যানিমেশন চিত্র প্রকাশ করা হয়। চিত্রটিতে মজিলা ফোনের বিভিন্ন ফিচার যেমন ৮এমপি ক্যামেরা, ৪৫ লুমেন্স ডুয়াল পিসিও প্রজেক্টর, ওয়্যারলেস চার্জিং, মিনি ইউএসবি ছাড়াও এতে আছে হ্যাপ্টি ক্লিকিং পদ্ধতিতে কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের সুবিধা। অর্থাৎ এর সাথে যুক্ত আছে একটি ব্লুটুথ ডঙ্গল, যা ফোন সেট থেকে সহজে আলাদা করে এর কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় অনেকটা মাউসের মতো। ফোনটি এক্সটারনাল একটি ডকে স্থাপন করলে এর ডুয়াল প্রজেক্টর দুই দিকে আলোকচিত্র প্রদর্শন করবে। এর একদিকে প্রজেক্টর স্ক্রিন এবং অন্যদিকে থাকে ল্যাপটপ কিবোর্ড ও টাচপ্যাডের মতো অবয়ব। সব মিলিয়ে এটি একটি আলোছায়ার কমপিউটারে পরিণত হবে। হার্ডওয়্যার ছাড়াও এতে মজিলা ওএসের সাধারণ কিছু ফিচার দেখানো হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উল্লিখিত ফিচারগুলো পরিচালনার জন্য ব্যবহার করা হবে মজিলার বুট টু জ্যাকো তথা বিটুজি অপারেটিং সিস্টেম। চলতি বছরের মধ্যেই বাজারে আসবে বিটুজির ফোন। তখনই পরিষ্কার হবে এই ফোনটি কী অ্যাপলের অ্যান্ড্রয়িড ও আই ফোনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম কি হবে না?
মজিলা ল্যাবের অধীনে সিবার্ড মোবাইলের ধারণার গ্রাফিক্যাল বর্ণনার ভিডিও তৈরি করেন আমেরিকার প্রখ্যাত প্রোডাক্ট ডিজাইনার বিলি মে অ্যানিমেশন চিত্রটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিশেজ্ঞ মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, বিলি মে উত্তর আমেরিকাভিত্তিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ডিজাইন প্রতিষ্ঠান লাইফটাইম ব্র্যান্ডে প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। ভিডিও চিত্রটিতে ফোনটির বিভিন্ন ফিচার বিশেষ করে এর বিটুজি অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। অনেকটা এভাবে বলা যায়, বর্তমান স্মার্টফোনের বাজারে জনপ্রিয় যে দু’টি ওএস রয়েছে, তার সব গুরুত্বপূর্ণ ফিচারই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নতুন এই স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমে।
উল্লিখিত বিটুজি একটি ভবিষ্যতের স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেম, যার উন্নয়নের পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে মুক্ত সফটওয়্যারের অগ্রদূত মজিলা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির এই ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ওএস গুগলের অ্যান্ড্রয়িড স্মার্টফোন।
এরই মধ্যে অ্যান্ড্রয়িড ও আইওএস অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বাজারে এদের দখলে রয়েছে যথাক্রমে শতকরা ৪৬ ও ৩০ ভাগ। অন্য দু’টি ওএস উইন্ডোজ ও ব্ল্যাকবেরি যা অনেকটা নিষ্প্রাণ। প্রতিযোগিতার এই বাজারে মজিলার আগমন অনেকটা সময় পর। কিন্তু যথাসময়ে সময়োপযোগী ফিচার সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উপস্থাপন করলে নিঃসন্দেহে তা গ্রহণ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্মার্ট ওএস ধারায় মজিলা ও এর বুট-টু-জেকোর উপস্থিতি প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দু’য়ের একচ্ছত্র প্রভাবকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করবে। আর মজিলার ব্যবসায়িক দর্শন অনেকটা এরকম।
মজিলা স্মার্ট ওএস ধারায় আগমনের কারণ ব্যাখ্যা দিতে গেলে কিছুটা পেছনে ফিরে দেখতে হবে। ১৯৯৮ সালে মজিলা প্রথমে একটি সফটওয়্যার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করলেও পরে এটি ফাউন্ডেশনে রূপ নেয়। আর এর মূল্যনীতি হলো মুক্ত প্রযুক্তি বিস্তারে বিশ্বাস এবং একচেটিয়া বাজার দখল করা করপোরেট পণ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও বিকল্প পণ্য নিয়ে আসা। গত শতাব্দীর শেষ দিকে অর্থাৎ ৯০-এর দশকে মাইক্রোসফটের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে বাজার দখল করে। আর এই অবস্থার পরিবর্তন আসে মুক্ত সফটওয়্যার মজিলার ফায়ারফক্স ব্রাউজার বাজারে আনার মধ্য দিয়ে। ঠিক একইভাবে মোবাইল ফোন বাজারে এখন রয়েছে গুগল ও অ্যাপলের আধিপত্য। যেহেতু মজিলা সবসময় মুক্ত সফফটওয়্যারে বিশ্বাসী আর এ সময় তাদের নিশ্চয়ই চুপ থাকার কথা নয়। এ সময় তারা বিটুজি মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপের চিন্তা করে। রোডম্যাপ অনুসারে এই ওএসের নমুনা এ মাসের মধ্যেই বাজারে আসবে। শুধু তাই নয়, গুগল ও অ্যাপলের আধিপত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একই সাথে কাজ করার জন্য এরই মধ্যে অনেক মোবাইল ফোন প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস তথা এমডব্লিউসিতে মজিলা তাদের নতুন ওএসের নমুনা প্রদর্শন করে। একই সাথে সহযোগী হিসেবে স্পেনভিত্তিক বড় ব্রডব্যান্ড ও টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি টেলিফোনিকার নাম ঘোষণা করে।
বুট টু গ্যাকো ওএস সম্পূর্ণভাবে ওয়েবভিত্তিক প্লাটফরমের। অন্যান্য মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সাধারণভাবে এর কোনো পার্থক্য নেই। আসলে পুরো বিষয়ই ফোন ডায়ালারঅ্যাপ, ক্যামেরাঅ্যাপ, গ্যালারিঅ্যাপের মতো পরিচিত অ্যাপ্লিকেশনের সমন্বয়ে গঠিত একটা বড় ব্রাউজার। যদিও পাম ওয়েব ওএসের সাথে এর কিছুটা মিল পাওয়া যায়। তারপরও এটি অনেক বেশি ব্যবহারবান্ধব। ওএসটি ডেভেলপ করার ক্ষেত্রে এইচটিএমএল৫-কে ব্যবহার করা হলেও কোন মতেই বোঝা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু বিটুজি ওয়েবভিত্তিক কাঠামোতে তৈরি, তাই এক্ষেত্রে হার্ডওয়্যারবিষয়ক সমস্যা কম হবে। অর্থাৎ ওএসটি কম দামী মোবাইল ফোনে ব্যবহার করতে কোনো সমস্যা হবে না। মজিলা ও সহযোগী টেলিফোনিকা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রথমে কম মানসম্পন্ন কিছু মোবাইল ফোন বাজারে ছাড়বে। যেহেতু ওএস প্লাটফরম ওপেনস্ট্যান্ডার্ড সফটওয়্যারের মানদন্ড ঠিক রেখে চলছে, সুতরাং যেকোনো মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একে তাদের সুবিধামতো কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবে।
মজিলার স্মার্টফোন ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে আরো যুক্ত করছে মজিলা মার্কেটপ্লেস। এই মার্কেটপ্লেসে স্মার্টফোন ডেভেলপাররা তাদের তৈরি অ্যাপসগুলো রাখতে পারবেন বিক্রির জন্য। যদিও অ্যাপলের আইওএস ফ্রি নয়। একই সাথে গুগলের অ্যান্ড্রয়িড ডেভেলপের ক্ষেত্রে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হলেও ডেভেলপারদের জন্য কোনো সুবিধাই নেই। মজিলা ঠিক এই দুর্বল দিকটা কাজে লাগানোর জন্য চালু করেছে মজিলা মার্কেটপ্লেস।
এ কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই যে মজিলা বিটুজি বাজারে এনে মোবাইল ওএস যুদ্ধে শামিল হয়েছে যেখানে অ্যান্ড্রয়িড ও আইওএস বাজারে পুরোপুরিভাবে প্রতিষ্ঠিত ও সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। একই সাথে উইন্ডোজ ফোনগুলো নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮ ভার্সনে শক্তি নিয়ে বাজারে আসছে, সেখানে মজিলা কী পারবে এর সাথে টিকে থাকতে? পুরো বিষয়টা প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে অন্যভাবে দেখলে একথা স্পষ্ট, মজিলা অন্যান্য ওএস নির্মাতার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তে স্মার্টফোন প্লাটফরমে ওয়েবভিত্তিক ওএস ধারণার অবতারণা করছে।
তথ্যসূত্র :
http://www.youtube.com/watch?v=oG3tLxEQEdg [বিলি মে'র ভিডিও চিত্র]
http://bits.blogs.nytimes.com/2012/02/23/why-mozilla-is-entering-the-smartphone-war/
https://wiki.mozilla.org/B2G
http://www.pcmag.com/article2/0,2817,2389125,00.asp
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : animesh@letbd.com