• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে মন ও মস্তিষ্ক!
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: তুহিন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করবে মন ও মস্তিষ্ক!

তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান মানুষের জীবনধারা কেমন বদলে দিয়েছে, তা এখন আর উল্লেখ করার বিষয় নয়। প্রতিটি মুহূর্ত এই দুটি বিষয় ছাড়া কল্পনা করা অসম্ভব! আর মানুষের এই জীবনধারা পাল্টে দেয়ার কাজটি থেমে নেই। গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণা চলছে নিরন্তর। আবিষ্কার করে চলেছেন নিত্যনতুন প্রযুক্তি। মানুষের আদলে তৈরি হয়েছে রোবট। মনের খবরও জানা সম্ভব হচ্ছে। সম্প্রতি মনের অবস্থা দেখা ও এক মস্তিষ্ক থেকে অন্য মস্তিষ্কে তথ্য স্থানান্তরের সফল গবেষণাও শেষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তেমনই কিছু গবেষণা নিয়ে এ লেখা, যা জীবনধারাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

মনের অবস্থা দেখাবে প্রযুক্তি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ডার্টমাউথ কলেজের দুই শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকায় এবং নির্ধারিত পাঠ অসমাপ্ত রাখায় অকৃতকার্য হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এতে তাদের শিক্ষাজীবন রীতিমতো হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু কেনো ওই দুই শিক্ষার্থীর এ অবস্থা হলো? তাদের স্মার্টফোনের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের স্বয়ংক্রিয় বিশেস্নষণে দেখা যায়, তারা দু’জনেই মানসিক চাপে ভুগছিল এবং বিষয়টি শিক্ষকদের জানায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনায় নেয় এবং তাদের দু’জনকে এফ গ্রেড (অকৃতকার্য) দেয়ার পরিবর্তে গ্রীষ্মকালীন ছুটির মধ্যে যাবতীয় পাঠ কার্যক্রম (কোর্সওয়ার্ক) সম্পন্ন করে আবার পড়াশোনায় ফিরে আসার সুযোগ করে দেয়। এ জন্য ওই দুই শিক্ষার্থীর ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার কমপিউটার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু ক্যাম্পবেল ও তার সহযোগীরা। এরা ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোনের তথ্য-উপাত্ত বিশেস্নষণ করে তাদের মানসিক অবস্থা নির্ণয় করার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন এবং ওই কলেজের ৪৬ জন ছাত্রছাত্রীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে সফল হন।

ক্যাম্পবেল বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো কারও স্মার্টফোন থেকে একটি পরোক্ষ ও স্বয়ংক্রিয় উপায়ে মানসিক অবস্থা-সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের প্রযুক্তি বের করেছি। এটি ওই ব্যক্তির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এটি ব্যবহার করে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়াশোনার বাড়তি চাপের মুখে ব্যায়ামাগারে যাতায়াত ও ঘুমানোর অভ্যাস পাল্টে ফেলে।

ক্যাম্পবেলের নেতৃত্বে গবেষকেরা খতিয়ে দেখেন, কেনো একদল ছাত্রছাত্রী একই যোগ্যতা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে আসার পরও কেউ কেউ অনেক ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে অথবা পড়াশোনা থেকে সম্পূর্ণ ঝরে যায়। ওই গবেষণায় শিক্ষার্থীদের ঘুমের পরিমাণ, সামাজিকতা, মানসিক অবস্থা, পড়াশোনার চাপ প্রভৃতির সমন্বিত প্রভাব যাচাই করা হয়। এরপর ক্যাম্পবেল তৈরি করেন স্টুডেন্টলাইফ নামে একটি অ্যাপ, যা সংবেদীর (সেন্সর) সাহায্যে স্মার্টফোনের বিভিন্ন তথ্য পর্যবেক্ষণ করে। এই অ্যাপ ১০ সপ্তাহে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীদের জীবনের যাবতীয় দিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে; যেমন- তাদের শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা, আলাপচারিতার অভ্যাস ও সময় এবং অবস্থান (জিপিএস)। এমনকি ক্যামেরার সাহায্যে দেখা হয়, রাতে তারা কখন শোবার ঘরের আলো নেভায়।

এই অ্যাপ প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর সুখ, বিষণ্ণতা, একাকিত্ব ও মানসিক চাপের মাত্রা নির্ণয় করতে পারে। এটি সম্ভব হয়েছে উদীয়মান ছাত্রছাত্রীদের কারণে। এরা অন্যদের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় মগ্ন থাকে। কিন্তু বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীরা তুলনামূলক কম কথাবার্তা বলে অথবা অতিরিক্ত সময় ঘুমিয়ে কাটায়। বাইরে যাওয়ার পরিবর্তে এরা ঘরের ভেতরেই বেশি সময় কাটায়। আবার ঘুমে ব্যাঘাত ও সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতার মতো বিষয়কে মানসিক চাপের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষকেরা এসব মানসিক অবস্থা এবং তাদের পড়াশোনায় পারদর্শিতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। এ ক্ষেত্রে তাদের অর্জিত গ্রেড বিবেচনায় নেয়া হয়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, শিক্ষাবর্ষ শুরুর সময় ছাত্রছাত্রীরা খোশ মেজাজে সবকিছু শুরু করে। তখন তারা অনেক কথাবার্তা বলে, ঠিকমতো ঘুমায় এবং নানা ধরনের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু মধ্য পর্যায়ে পড়াশোনার চাপ বাড়লে তারা ঘুম, আলাপচারিতা ও শারীরিক পরিশ্রম বাদ দিয়ে দেয়। ক্যাম্পবেল বিশ্বাস করেন, তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অব্যাহতভাবে কারও মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি ছাত্রছাত্রী ছাড়াও সব পেশার মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিটি আপত্তির মুখে পড়তে পারে। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সেসিলিয়া মাস্কোলো বলেন, এ ধরনের অ্যাপ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে এটির নিয়ন্ত্রণ বিশ্বস্ত কারও হাতে থাকতে হবে। তার পরও কারও মানসিক চাপ বা বিষণ্ণতা দূর করার চেষ্টায় বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সুরক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুছে ফেলা যাবে বেদনার স্মৃতি!

এখন থেকে আর কষ্টের স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে না। কোনো কিছু না পাওয়া বা প্রিয়জনকে হারানোর কষ্ট বুকে পাথর চেপে রাখতে হবে না। চাইলেই মুছে ফেলা যাবে প্রণয় ভাঙ্গার বেদনা, হৃদয়ের তটের প্রিয়জন হারানোর দাগ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকলিন হসপিটাল ইন ম্যাসাচুসেটসের গবেষকেরা তেমনই এক উপায় আবিষ্কার করেছেন। কমপিউটারের মেমরির মতোই কষ্ট মুছে ফেলার উপায় বের করেছেন তারা। তবে এটি সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো ইলেকট্রিক শক বা ব্রেন ওয়াশ পদ্ধতিতে নয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে জেনোন গ্যাস। প্রযুক্তিবিষয়ক অনলাইন সিনেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানে চেতনানাশক হিসেবে এবং রোগ নিরাময়ে জেনোন গ্যাসের ব্যবহার নতুন কিছু না হলেও স্মৃতি মুছতে এর ব্যবহারের উপায় বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক আবিষ্কার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক অবস্থায় গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ইতিবাচক ফলও পেয়েছেন তারা।

গবেষণাকর্মটির অন্যতম গবেষক অ্যাডওয়ার্ড জি মেলোনি এ ব্যাপারে বলেন, কষ্টের স্মৃতি কমিয়ে আনতে জেনোন গ্যাসের কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছি আমরা। পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসওর্ডার (পিটিএসডি) চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার হতে পারে এটি। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ম্যাকলিন হসপিটাল ইন ম্যাসাচুসেটসের গবেষক মেলোনির নেতৃত্বে গবেষক দলটি প্রাথমিক গবেষণা চালান ইঁদুরের ওপর। স্বল্পমাত্রায় জেনোন গ্যাস প্রয়োগের ফলে ইঁদুরগুলো ভয়ের স্মৃতি ভুলে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা। তারা জানিয়েছেন মানুষের ক্ষেত্রে রোগী শ্বাস নেয়ার সময় অক্সিজেনের সাথে জেনোন গ্যাস গ্রহণ করবেন এবং একই সময়ে কষ্টের স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করবেন। পুরনো স্মৃতি মনে করার সময় মানুষের মস্তিষ্ক সেই স্মৃতিগুলোকে আবার নতুন স্মৃতি হিসেবে তৈরি করে। আর জেনোন গ্যাস সেই নতুন স্মৃতি তৈরি হওয়ার পদ্ধতিটাই আটকে দেবে! কষ্ট ভোলাতে এটি খুবই কার্যকর একটি পদ্ধতি হবে বলে আশা করছেন এর গবেষকেরা

ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস