• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ৩য় মত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মতামত
তথ্যসূত্র:
৩য় মত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
৩য় মত
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ইন্টারনেট

বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ইতোপূর্বে কোনো সরকার আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে কাজ করার উদ্যোগ নেয়নি। সে কারণে বর্তমান সরকার প্রযুক্তিবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সরকারের অবশ্যই এটা উল্লেখযোগ্য অর্জন। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ক্ষমতাসীন দলটি কমপিউটার ও এর যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়, যার ফলে দেশের সর্বত্র কমপিউটার নামের যন্ত্রের সাথে শিক্ষিত সাধারণ মানুষের পরিচয় ঘটে। এর ফলে নতুন পেশা সৃষ্টির মাধ্যমে যেমন দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের বড় এক অংশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, তেমনি বৈদেশিক অর্থ আয়ের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যায়।

তবে এক্ষেত্রে প্রথম থেকেই বড় বাধা হয়ে আছে দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা। বিটিআরসির মাধ্যমে কয়েক দফা ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হলেও তা দেশের সাধারণ মানুষের বিশেষ কোনো উপকারে আসেনি, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়েনি। তা শুধু দেশের আইএসপি ও মোবাইল টেলিফোন অপারেটরদের আর্থিক মুনাফা লাভের সুযোগ বাড়িয়েছে। বস্ত্তত ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের নাগালে না আসা পর্যন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া আর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন স্বল্পমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেশের সর্বত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে ইন্টারনেটের গতি অন্যতম সর্বনিমণ। উভয় ব্যবস্থাই ইন্টারনেট প্রসারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেয়ে সবদিক থেকে আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে আছি। ভারতে যেখানে ২৮ এমবিপিএস গতির বিজ্ঞাপন হরহামেশাই টিভিতে প্রচারিত হয়, সেখানে আমাদের বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত গতি সর্বোচ্চ ২, বড়জোর ৫ এমবিপিএস, অথচ দাম ভারতের সমান। এ অবস্থার উত্তরণে বিটিআরসি ও বিটিসিএল তথা সরকারি সংস্থাগুলোর ভূমিকাই সর্বাধিক।

বিশ্বের ২৩৬টি দেশের আইএসপিগুলোর ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে সর্বোচ্চ গড় গতির তালিকা প্রকাশ করেছে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংগঠনটি। এতে ১৭.৫ এমবিপিএস গড় গতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়াসহ এশিয়ার দেশগুলো শীর্ষস্থানে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থান তালিকায় ১১৪তম, বাংলাদেশের কথা তো বলাইবাহুল্য। এ অবস্থায় আর যাই হোক, ইন্টারনেটের দুরবস্থার অবসান না ঘটিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার আশা করা যায় না।

সরকার যদি ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর থেকে শতকরা ২৫ ভাগ শুল্ক প্রত্যাহারসহ ব্যান্ডউইডথের দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে বিটিআরসির মাধ্যমে ইন্টারনেটের গতিভেদে সর্বনিমণ ও সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয় এবং একই সাথে ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে, তাহলে তা দেশে ইন্টারনেটের প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। একই সাথে ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি বাড়ানোসহ আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবাদানের বাধ্যবাধকতা থাকাও প্রয়োজন।

দেশের মানুষকে উচ্চগতি দূরে থাক, মধ্যমগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির ব্যবস্থা না রেখে অনেকে আবার ব্যান্ডউইডথ রফতানির কথা বলেন। তাদের কাছে প্রশ্ন, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে জনপ্রতি ন্যূনতম ১ এমবিপিএস গতির আনলিমিটেড ইন্টারনেটের ব্যবস্থা কি আপনারা করে ফেলেছেন? মূলত দেশের মানুষের চাহিদা ও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা না করে শুধু সেমিনার আর চমক সৃষ্টিকারী বক্তৃতার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সরকারের দৃঢ় ইচ্ছা আর তা বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশনা। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা অবশ্যই বিটিআরসি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের। তাই তাদের বিবেচনার জন্য ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জরুরি (অবশ্যই আনলিমিটেড এবং ভ্যাটমুক্ত হতে হবে)। সেই সাথে বিটিআরসিকে একটা নীতিমালা অবশ্যই করতে হবে।

ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণের কাজটি সরকারি সংস্থা বিটিসিএলকে দিয়েই শুরু করতে হবে। বিটিসিএলের বর্তমান দামের তালিকা অন্য আইএসপিগুলোর তুলনায় কিছুটা কম হলেও তা গণমানুষের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে অবিলম্বে বিটিসিএলের মাধ্যমে ওপরে উল্লিখিত দামে ইন্টারনেট সেবাদানের ব্যবস্থা করা হলে তখন গ্রাহকদের চাপে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও কম দামে ভালো গতির ইন্টারনেট সেবাদানে বাধ্য হবে। আর এর মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। একই সাথে দেশে মোবাইল ব্রডব্যান্ডের প্রসারসহ থ্রিজি বা ফোরজি ইন্টারনেট সেবাদানের কার্যক্রম শুধু বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সব জটিলতার অবসান করে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

শরীফ মাহ্‌মুদ

মিরপুর, ঢাকা

....................................................................................................................................................................................................................................


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও সংযোগসহ ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হোক

বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেশের তরুণ প্রজন্মসহ সর্বসাধারণকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। বলা যায়, এ ঘোষণায় বর্তমান সরকারকে নির্বাচনে ব্যাপকভাবে বিজয়ী করে। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়ে যায়। অনেকের কাছে ডিজিটাল বাংলাদেশ অবাস্তব ও কল্পনাবিলাস হিসেবেও পরিগণিত হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্যঙ্গ-রসিকতা বা সমালোচনা যাই হোক না কেন, এ কথা সত্য- সরকার সে লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিছু কিছু কাজ করছে ঠিকই, তবে তা প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। সেজন্য সমালোচনা হতে পারে এবং হচ্ছেও। তারপরও বলব বর্তমান সরকারের এ মেয়াদে আগের সব সরকারের মেয়াদের চেয়ে বেশিই কাজ হচ্ছে ডিজিটালাইজিংয়ের ক্ষেত্রে, তা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করবেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিজ্ঞানে শিক্ষিত করে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের আওতায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি উপকরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ইন্টারনেট সংযোগসহ ২০ হাজার ৫শ’ মডেম দেয়া হবে। এর আগে গত জুন মাসে টেশিসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল ২০ হাজার ৫শ’ ল্যাপটপ সরবরাহের জন্য। আমরা এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

তবে এ কথা সত্য, বাংলাদেশে এমন অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ও অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুক্তি পর্যন্তই সব কর্মকান্ড। এর বেশি কিছু হতে দেখা যায় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং তা বাস্তবায়ন হতে এত দীর্ঘ সময় লেগে যায় যে তা হয়ে যায় মান্ধাতার আমলের পণ্য।

সুতরাং আমার দাবি- স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ইন্টারনেট সংযোগসহ মডেম দেয়া ও টেশিস থেকে ল্যাপটপ কিনে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরবরাহের কার্যক্রমটি যেনো খুব দ্রুত শুরু করা হয়। এক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় নেয়ার মানে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পুরনো মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহ করা, যার আবেদন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলা। সুতরাং এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুবিবেচনায় নেবে- এটা আজকের প্রত্যাশা ও দাবি।

চঞ্চল মাহমুদ
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস