• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিটকয়েন : ভার্চ্যুয়াল ডিজিটাল কারেন্সি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ভার্চুয়ালাইজেশন
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিটকয়েন : ভার্চ্যুয়াল ডিজিটাল কারেন্সি
বিটকয়েন হচ্ছে এমন একটি মুদ্রাব্যবস্থা, যেখানে নিজের স্বাধীন ইচ্ছে মতো বিটকয়েন নামের ভার্চুয়াল ডিজিটাল কারেন্সির মালিক হওয়া ও যখন ইচ্ছে প্রয়োজন মতো অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মতো স্থানান্তর করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক বা অন্য কোনো ধরনের ক্লিয়ারিং হাউসে যাওয়ার দরকার নেই। এখানে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখাশোনা বা তদারকির জন্য কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন হয় না। কেউ তা নিয়ন্ত্রণ করে না। বিটকয়েন সৃষ্টি ও ধারণ করা হয় ইলেকট্রনিক উপায়ে। সাতোশি নাকামোতো (Satoshi Nakamoto) নামের জনৈক সফটওয়্যার ডেভেলপার একটি গাণিতিক প্রোগ্রামের ওপর ভিত্তি করে একটি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে বিটকয়েন প্রস্তাব করেন। এটি তার ছদ্মনাম। তার এই ধারণার মূলে ছিল এমন একটি কারেন্সি বা মুদ্রা তৈরি করা, যা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ মুক্ত, ইলেকট্রনিক উপায়ে হসত্মামত্মরযোগ্য এবং কমবেশি তাৎক্ষনিক করা যাবে ও খুবই কম খরচে চলবে এর লেনদেন (to produce a currency independent of any central authority, transferable electronically, more or less instantly with very low transaction fees)।

বিটকয়েন ডলার, ইউরো বা টাকার মতো ছাপানো নোট বা ভৌত কোনো মুদ্রা নয়। বিটকয়েন সৃষ্টি করা হয় ডিজিটাল উপায়ে। অতএব ছাপানোর দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরও আস্তিত্ত এখানে নেই। বিশ্বজুড়ে প্রচুরসংখ্যক মানুষ কমপিউটার চালিয়ে এই বিটকয়েন উৎপাদন করে। যেকোনো লোক এই বিটকয়েন কমিউনিটিতে যোগ দিতে পারে। একটি ডিস্ট্রিবিউটেড নেটওয়ার্কে কমপিউটিং পাওয়ার ব্যবহার করে বিটকয়েনগুলো মাইনিং করা হয়। এই নেটওয়ার্ক বিটকয়েন লেনদেন তথা ট্র্যানজেকশন কার্যকরভাবে প্রসেস করে। এ ক্ষেত্রে এরা এমন সফটওয়্যার ব্যবহার করে, যা গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম। এটি ক্রমবর্ধমান এমন এক ধরনের মুদ্রা, যা ক্রিপটোকারেন্সি নামে পরিচিত।

বিটকয়েন হচ্ছে এমন একটি ডিজিটাল ভার্চু্যয়াল কারেন্সি, যা আপনি ট্রান্সফার করতে পারবেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে। অন্য কোনো মুদ্রা এভাবে ট্রান্সফার করা যায় না। নেটের সাহায্যে এক ব্যক্তি অন্য আরেক ব্যক্তির কাছে বিটকয়েন পাঠাতে পারেন। এর অর্থ বিটকয়েন পাঠানোর খরচ কম। কোনো ধরনের প্রতিনিধি বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ না করে আপনি এই কারেন্সি যেকোনো দেশে পাঠাতে পারবেন। সেজন্যই বলা হচ্ছে, বিটকয়েন বিশ্বের প্রথম ডিসেন্ট্র্যালাইজড ডিজিটাল কারেন্সি।

ইলেকট্রনিক উপায়ে বিটকয়েন দিয়ে নানা জিনিস কেনা যায়। এ বিবেচনায় এটি প্রচলিত ডলার, ইউরো, ইয়েন ও আমাদের টাকার মতোই। এগুলোর কেনাবেচাও চলে ডিজিটাল উপায়ে। তবে আমাদের জানা প্রচলিত সব মুদ্রা থেকে বিটকয়েনকে যে বিষয়টি আলাদা বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছে, তা হলো- এটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড বা বিকেন্দ্রায়িত। কোনো একক প্রতিষ্ঠান বিটকয়েন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি কিছু মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য করে তোলে। কারণ কোনো একটি বড় ব্যাংক এসব লোকের অর্থ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

প্রচলিত মুদ্রার ভিত্তি হচ্ছে স্বর্ণ অথবা রূপা। তাত্ত্বিকভাবে আমরা যদি নির্দিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সে দেশের ভৌতমুদ্রা- ডলার, ইউরো, ইয়েন, রম্নপি, টাকা ইত্যাদি যদি ফেরত দিই, তবে ওই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমমূল্যের স্বর্ণ বা রূপা ফেরত দিতে বাধ্য, যদিও আসলে এর প্রায়োগিক অনুশীলন নেই। সে যা-ই হোক, কিটকয়েন কিন্তু সেভাবে স্বর্ণ বা রূপাভিত্তিক নয়। বরং এটি গণিতভিত্তিক। বিশ্বজুড়ে মানুষ গাণিতিক ফর্মুলা মেনে সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করছে বিটকয়েন তৈরি করতে। এই গাণিতিক ফর্মুলা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেকেউ তা চেক করতে পারে। এর সফটওয়্যারটিও ওপেন সোর্স।

বিটকয়েনের বৈশিষ্ট্য

প্রথমত, এটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড : কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বিটকয়েন নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করে না। বিটকয়েন মাইনিং ও ট্র্যানজেকশন প্রসেস করার প্রতিটি মিশিনই এই নেটওয়ার্কের অংশ। সবগুলো মেশিন একযোগে কাজ করে। এর অর্থ হচ্ছে, তাত্ত্বিকভাবে একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ মুদ্রানীতি নিয়ে বেপরোয়া হতে পারবে না। প্রচলিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো বিটকয়েন মুদ্রা জনগণের কাছ থেকে তুলে নিয়ে যেতে পারবে না।

দ্বিতীয়ত, এটি সেটআপ করা সহজ : প্রচলিত ব্যাংকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে আপনাকে বেশ কয়েকটি বলয় পার হতে হবে। পাওনা পরিশোধ করার জন্য মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা আরেক ঝামেলার কাজ। আছে আমলাতান্ত্রিক ঝুটঝামেলা। কিন্তু আপনি একটি বিটকয়েন অ্যাড্রেস সেটআপ করতে পারবেন কয়েক সেকেন্ডে। কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না। কোনো ফি লাগবে না।

তৃতীয়ত, এটি বেনামি : ব্যবহারকারীরা ধারণ করতে পারবেন মাল্টিপল অ্যাড্রেস। এর সাথে লাগবে না কোনো নাম-ঠিকানা কিংবা ব্যক্তি সম্পর্কিত কোনো পরিচিতিমূলক তথ্য।

চতুর্থত, এটি পুরোপুরি স্বচ্ছ : বিটকয়েন নেটওয়ার্কে ঘটা প্রতিটি একক লেনদেন বা ট্র্যানজেকশনের বিসত্মারিত বিষয় জমা রাখা হয় একটি ব্যাপক জেনারেল লেজারের সংস্করণে। এই জেনারেল লেজারের নাম বস্নকচেইন। বস্নকচেইন আমাদের সবকিছু জানিয়ে দেয়। আপনার যদি পাবলিকলি ইউজড বিটকয়েন অ্যাড্রেস থাকে, তবে যেকেউ বলতে পারবেন এই অ্যাড্রেসে কত পরিমাণ বিটকয়েন জমা আছে। তবে এরা শুধু জানেন না, এই অ্যাড্রেসটি আপনার। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে যেকেউ বিটকয়েন নেটওয়ার্কে তার কর্মকা- আড়ালে রাখতে পারেন। যেমন : তিনি অব্যাহতভাবে একই বিটকয়েন অ্যাড্রেস ব্যবহার না-ও করতে পারেন। একটি একক বিটকয়েন অ্যাড্রেস থেকে প্রচুর বিটকয়েন ট্র্যান্সফার না-ও করতে পারেন।

পঞ্চমত, ট্র্যানজেকশন ফি খুবই কম : ব্যাংক থেকে একটি ইন্টারন্যাশনল ট্র্যান্সফারের জন্য যেখানে ফি লাগতে পারে হাজার টাকা, সেখানে বিটকয়েনে কোনো ফি লাগবে না।

ষষ্ঠত, এটি দ্রুত : বিটকয়েনের মাধ্যমে আপনি অর্থ পাঠাতে পারেন যেকোনো স্থানে। বিটকয়েন প্রসেস করার কয়েক মিনিটের মধ্যে তা প্রাপকের কাছে পৌঁছে যাবে।

সপ্তমত, এটি অস্বীকৃতি জানানোর অযোগ্য : কেউ বিটকয়েন একবার পাঠালে তা ফেরত আনার কোনো সুযোগ নেই, যদি না প্রাপক তা নিজে ফেরত না পাঠান। ধরে নিতে হবে, পাঠানো টাকা চলে গেছে খরচের খাতায়।
বিটকয়েন দিয়ে যা কেনা যাবে।

আমাদের দেশে এখনও বিটকয়েন চালু না হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেশি থেকে বেশিসংখ্যক মার্চেন্ট তাদের পণ্য ও সেবার দাম হিসেবে বিটকয়েন গ্রহণ করতে শুরম্ন করেছেন। তবে এসব মার্চেন্ট পাওয়ার সর্বোত্তম স্থান হচ্ছে মার্কেটপ্লেস ও অ্যাগ্রিগেটর সাইটগুলো। এসব সাইটে সংগ্রহ করা বিপুলসংখ্যক সহায়ক প্রতিষ্ঠান একসাথে পাওয়া যায়। আছে অনেক ধরনের পেস্নস- অনলাইন ও অফলাইন। এসব প্লেসে গিয়ে আপনার বিটকয়েন খরচ করতে পারবেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অচিরেই আমাদের হাতের নাগালে আসবে না, তেমনটি ভাবা ঠিক নয়।

বিটকয়েন গাম্বলিং সাইট : পিপল’স বিটকয়েনের জন্য সবচেয়ে বড় সাইটগুলোর অন্যতম ডেস্টিনেশন হচ্ছে অনলাইন গাম্বলিং। সোজা কথায় অনলাইনে জুয়াখেলা। এর মাধ্যমে যেমন দ্রম্নত আয় করা যায়, তেমনি লোকসানও গোণা যায়। বাজি ধরা শুরম্ন করা যায় তুলনামূলক ছোট অঙ্ক দিয়ে। যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে সহজে প্রমাণ করা যায়, বাজিটা সঠিক- বস্নকচেইনে পেআউট চিহ্নিত করে কিংবা বহ্যিক প্রমাণ ব্যবহার করে। SatoshiDice বরাবর একটি জনপ্রিয় অনলাইন গাম্বলিং সাইট। ব্যবহারকরীরা সেট করা অ্যাড্রেসগুলোর যে কোনো একটিতে অর্থ মেইল করে। এর বিনিময়ে এরা বাজি জেতার সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে একটি পেআউট পায়। অন্যান্য সাইটগুলোর মধ্যে আছে চববৎইবঃ, এটি বিটকয়েন ছাড়াও ক্রিপটোকারেন্সিও গ্রহণ করে। এ ধরনের সাইটের মাঝে আরও আছে Just-Dice, Betcoin Dice এবং Satoshi Circle.

বিটকয়েন দিয়ে ভৌতপণ্য কেনা : অনলাইনে সেবা কেনার জন্য বিটকয়েন খুবই উপযুক্ত। তাই বলে বিটকয়েন দিয়ে ভৌতপণ্য বা ফিজিক্যাল গুডস কেনা যাবে না, তা নয়। ভৌতপণ্য বিক্রির নানা ধরনের সাইট রয়েছে, যদিও এরা প্রধানত পাওনা আদায় করে ইন্টানেটের মাধ্যমে। অনলাইনে কিছু ডিরেক্টরি পাওয়া যায়। এগুলোতে আছে এমন মার্চেন্টদের সুদীর্ঘ তালিকা, যারা বিটকয়েন গ্রহণ করেন। তা সত্ত্বেও আরও কিছু অনুসন্ধানের পর জানতে পারেন পেমেন্ট অপশন হিসেবে এসব সাইটের রয়েছে টেস্টেড বিটকয়েন, কিন্তু এখন আর ব্যবহার হয় না। একইভাবে একটি ভৌগোলিক এলাকায় সীমিতসংখ্যক পণ্য এরা বিক্রি করছে।

কোনো কোনো সময় আপনি খুঁজতে পারেন এমন একটি প্লেস, যা আপনার খরচ করতে চাওয়া বিটকয়েন গ্রহণ করবে। সাধারণত কেউ চাইবেন কোনো পণ্য কিনতে, যেখানে তার প্রত্যাশা হবে মার্চেন্টের পণ্যের বিনিময়ে বিটকয়েন গ্রহণ করা। সে ধরনের ইউটোপিয়া থেকে আমরা এখনও অনেক দূরে। যারা চাইবে না, তালিকার শত শত তাদের চাহিদার পণ্যটি বের করতে, তাদের জন্য আছে বিকল্প উপায়। অনেক সাধারণ ই-কমার্স সাইট আছে, কোনো বিশেষ ধরনের বা ক্যাটেগরির বহু পণ্য বিক্রি করছে এবং ক্রস-ক্যাটেগরির বিক্রির সুযোগ দিচ্ছে।

Bitcoinshop.us-এ সুযোগ আছে এয়ারকন্ডিশনার থেকে ঘড়ি পর্যমত্ম নানা পণ্য কেনার। সব পণ্যের দাম নেয়া হয় বিটকয়েনে। এটি শুধু পণ্য বিক্রি করছে আমেরিকা মহাদেশের ভেতরেই। BitcoinStore পড়স বিক্রি করে ইলেকট্রনিক পণ্য। এরা বিক্রীত পণ্য পাঠায় আমত্মর্জাতিকভাবে। কিন্তু অর্ডার দেয়ার আগে আপনার দেশে পাঠানোর জন্য শিপিং খরচ কত, তা চেক করে নিতে হবে আপনাকে। Memory Dealers বহন করে নানা ধরনের নেটওয়ার্কিং ইকুইপমেন্ট ও কমপিউটার মেমরি। এটি শুরম্ন থেকেই ছিল বিটকয়েন রিসিভার। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে আছে কিছু স্থানীয় ই-কমার্স সাইট, যারা বিটকয়েন গ্রহণ করে। যেমন : যুক্তরাষ্ট্রের Keystone Pet Place জোগায় আপনার পোষাপ্রাণীর চাহিদা। আপনার কাছে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ থেকে শিপিং করবে কফিদানা। আর Persian Shoes আপনার কাছে ইরান থেকে বিক্রি করছে হাতে তৈরি জুতা ও ব্যাগ। এ ছাড়া অনেক মার্চেন্টও আপনার কাছ থেকে শুধু বিটকয়েন নিচ্ছে, নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না কোনো ফ্ল্যাট কারেন্সি। সুখবর হচ্ছে, আজকাল শত শত ছোট খুচরা বিক্রেতাও বিটকয়েন গ্রহণ করছেন। Spendbitcoins.com এবং UseBitcoins,info এসব শপিং ডেস্টিনেশনের হালনাগাদ ডাটাবেজ সংরক্ষন করছে।

বিটকয়েন গিফটকার্ড : আপনি যদি সরাসরি বিটকয়েন গ্রহণ করার মতো কোনো বাসত্মব দোকান না পান, তবে এ ক্ষেত্রে সহজ উপায় হচ্ছে গিফটকার্ডের মাধ্যমে আপনার ডিজিটাল কারেন্সিকে রিয়েল-ওয়ার্ল্ড গুডস ও সার্ভিসে (বাসত্মব জগতের পণ্য ও সেবায়) রূপান্তর করা। গিফটকার্ড গ্রহণ করার মতো প্রচুর পরিমাণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব গিফটকার্ড ব্যবহার করা যাবে ওয়ালমার্ট, টার্গেট ও নাইকের মতো বেশকিছু খুচরো চেইন স্টোরে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহকদের জন্য আছে Gyft, eGifter, iTradeBTC I GiftCardZen-এর মতো বহু কোম্পানি। অ্যামাজন ডটকমের গিফটকার্ডের জন্য রয়েছে GiftcardBTC-র মতো কিছু কার্ড বিক্রির সুনির্দিষ্ট স্টোর। ব্যতিক্রমী কিছু পানশালা ও রেসেত্মারাঁ রয়েছে, যেগুলোতে বিটকয়েন গৃহীত হয়। আপনি যদি আপনার ডিজিটাল কারেন্সি খরচ করে এক প্লেট মাছ-ভাত, চিপ কিংবা কোল্ড-বিয়ার পান করতে চান, তবে তখন সহজেই জানতে পারেন কোথায় কোথায় যেতে হবে।

Bitcoin.Travel একটি মর্যাদাসম্পন্ন সাইট। এটি আপনার সামনে হাজির করছে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকালীন থাকার জায়গা, অ্যাপার্টমেন্ট, আকর্ষণীয় স্থান, পানশালা, রেস্তোরাঁ ও বিউটি সেলুনের সুদীর্ঘ তালিকা। Coinmap-এ আছে বিশ্বব্যাপী ট্র্যাভেল এস্টাবলিস্টমেন্টের ডাটাবেজ। লন্ডনে বসবাস করলে আপনি সুপরিচিত হতেন Pembury Tavern-এর সাথে, তেমনি সিডনিতে থাকলে সুপরিচিত হতেন Old Fitzroy পানশালার সাথে। জাপানে বিটকয়েন খরচ করে খাওয়ার সুযোগ পাবেন The Pink Cow থেকে। এমনকি রেস্তোরাঁ গুলোতে সরাসরি বিটকয়েন গ্রহণ না করলেও বিটকয়েন দিয়ে খাদ্য ও পানীয় কেনার আরও অনেক উপায় রয়েছে। Foodler সাইটে সুযোগ আছে ব্রাউজ করে অর্ডার দিয়ে বিশ্বজুড়ে ৩১৫০টি শহরের ১৩ হাজার রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনার। বিটকয়েনের বিনিময়ে আপনি পেতে পারেন Bitcoin Credits, যা এসব রেস্তোরাঁর যেকোনোটিতে ব্যবহার করতে পারবেন। মজার ব্যাপার, আমরা নতুন নতুন অনেক বিটকয়েন-ফ্রেন্ডলি প্রতিষ্ঠান দেখতে পাচ্ছি।

অনলাইন বিটকয়েন মার্কেটপেস্নস ও অকশন : বিটকয়েন খরচ করার আরেকটি উপায় হচ্ছে অনলাইন মার্কেটপেস্নস। এগুলো কার্যকর ক্লিয়ারিং হাউস। এগুলোর মাধ্যমে যেকোনো জনের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারে। এর শুরম্ন আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট প্লেস এর মাধ্যমে। সিল্ক রোড মানুষকে বিটকয়েন ব্যবহার করে অবৈধ পণ্য ও সেবা বিক্রির সুযোগ করে দেয়। এই সাইটে শুধু Tor অ্যানোনিমাস তথা বেনামি ব্রাউজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ঢোকা যায়। সিল্ক রোড ২০১৩ সালের অক্টোবরে বন্ধ করে দেয়ার এক মাস পরই আবার খুলে দেয়া হয়। অবৈধ পণ্য ও সেবা বিক্রি করা আপনার কাজ না হলে আরও অনেক বৈধ মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে আপনি বিটকয়েন খরচ করতে পারবেন। এসব মার্কেটপ্লেসের বেশিরভাগই এখন প্রতিশ্রুতি পর্যায়ে। এখনও সীমিতসংখ্যক পণ্য বিক্রি হচ্ছে এসব মার্কেটপ্লেসে। Bitcoin Market এবং Cryptothrift হচ্ছে ক্যাটেগরি-ড্রিভেন সাইট, যদিও এটি এখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। Flibbr আপনাকে দেবে নাম ধরে সীমিত পণ্য সার্চের সুযোগ। Reddit -এর রয়েছে Bitmarket নামের সাবথ্রেড, রেডিট পোস্ট হিসেবে মানুষকে তাদের পণ্য তালিকা করার সুযোগ দেয়। আরও অনেক বিশেষায়িত সাইট আসছে। BitPremier একটি এসক্রো সার্ভিস ব্যবহার করে বিটকয়েন দিয়ে বিক্রি করবে উঁচুমানের বিলাসপণ্য। এর মাধ্যমে কেনা যাবে বিলাসী গাড়ি, প্রমোদতরী, ঐতিহ্যপণ্য, শিল্পকর্ম এমনকি একটি দ্বীপ।

অনলাইন বিটকয়েন সার্ভিস : বিটকয়েন সম্পর্কিত টেকনিক্যাল নো-হাউয়ের জন্য কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। কারণ, বিটকয়েন এরই মধ্যে অনলাইন সার্ভিসেস কমিউনিটি থেকে প্রচুর সহায়তা ভার গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে হোস্টিং কোম্পানিগুলো আগ্রহী হয়ে উঠেছে আপনার ওয়েবসাইট বা সার্ভারে বিটকয়েন এক্সচেঞ্জের জায়গা করে দিতে। বিটকয়েন উইকি’র একটি লিস্ট রয়েছে। WordPress হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভিজিবল ও পপুলার সাইটগুলোর একটি। এটি আপনাকে সুযোগ করে দেবে ক্রিপটোকারেন্সি পেমেন্টের জন্য একটি বস্নগিং প্রেজেন্স অনলাইন। স্টান, স্পটিফাই, এক্সবক্সলাইভ, পেস্নস্টেশন নেটওয়ার্ক এবং এয়ারভিপিএনের ক্রেডিট কেনার জন্য আপনারা যেতে পারেন BitcoinCodes-এ। ডোমেইন সার্ভিস কেনার জন্য Namecheap সরাসরি বিটকয়েন গ্রহণ করে। আপনি যদি আরেকটু বেশি প্রাইভেসি অনলাইন চান, তবে কিছু ক্রেডিটকার্ড কোম্পানি ও পেপল থেকে বস্নকড হওয়ার পর বেশ কিছু ভিপিএন (ভার্চু্যয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) প্রোভাইডার এখন শুধু বিটকয়েন গ্রহণ করে।
কল্যাণকর্মে বিটকয়েন দান : চাইলে যেকোনো কল্যাণকর কাজেও বিটকয়েন দান করতে পারেন। যেমন : আপনি বিটকয়েন দান করতে পারেন ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও অসহায় মানুষের সহায়তায় নিয়োজিত লন্ডনভিত্তিক এনজিও ‘দ্য শ্রীলঙ্কা ক্যাম্পেইন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস’-কে। কিংবা ফ্লোরিডার পেনসাকোলায় গৃহহীনদের আশ্রয়দানের কাজে নিয়োজিত Sean’s Outpost-এ বিটকয়েন দান করা যেতে পারে। তা ছাড়া কারও কোনো ভালো কাজ বা মমত্মব্যের জন্য দিতে পারেন বিটকয়েন পুরস্কার।
যেভাবে কেনা যাবে বিটকয়েন নিশ্চয় আপনার উপলব্ধিতে এসেছে, বিটকয়েন হচ্ছে ভবিষ্যতের উপায়। অতএব পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে : কীভাবে পাবেন বিটকয়েন? নিচে তারই একটি গাইডলাইন দেয়ার প্রয়াস।

এক. যেখান থেকে কিনবেন বিটকয়েন : রেগুলেটেড এক্সচেঞ্জেস কিংবা সরাসরি এমন লোকদের কাছ থেকে, যারা বিটকয়েন বিক্রি করে। বিভিন্ন উপায়ে বিটকয়েনের দাম পরিশোধ করতে পারেন। হার্ড ক্যাশ থেকে শুরম্ন করে ওয়্যার ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে এই পেমেন্ট চলতে পারে, তবে তা নির্ভর করবে কারা বিটকয়েন কিনছেন এবং কোথায় আপনি বাস করছেন। অবাক ব্যাপার, ক্রেডিট কার্ড বা পেপল দিয়ে বিটকয়েন কেনা প্রায় অসম্ভব। এর কারণ, এ ধরনের লেনদেন সহজেই পাল্টে দেয়া যায় কার্ড কোম্পানিতে একটি ফোনকল করে। যেমন ‘চার্জবেকস’ হচ্ছে এমন একটি সমস্যা, যা বিটকয়েন সমাধান করতে পারে না। যেহেতু বিটকয়েন ট্র্যান্সফারের ক্ষেত্রে পণ্যের হাতবদলের বিষয়টি প্রমাণ করা খুবই কঠিন, তাই বিটকয়েন এক্সচেঞ্জগুলো এসব পেমেন্ট পদ্ধতি এড়িয়ে চলে। একই কাজটি করে বিটকয়েনের বেশিরভাগ প্রাইভেট সেলারেরা।

দুই. প্রথমেই নিন আপনার ‘ওয়ালেট’ : প্রয়োজন এমন একটি জায়গা, যেখানে জমা করবেন আপনার নতুন বিটকয়েন। বিটকয়েন জগতে এর নাম wallet। এই ওয়ালেটকে ভাবতে পারেন অনেকটা একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো। এখানে আছে দুটি অপশন বা বিকল্প : ০১. আপনার কমপিউটারের হার্ডড্রাইভে জমা রাখা একটি সফটওয়্যার ওয়ালেট অথবা ০২. ওয়েবভিত্তিক একটি অনলাইন সার্ভিস। উভয় অপশনেরই আছে কিছু সমালোচনা। যদি বিটকয়েন স্থানীয়ভাবে আপনার কমপিউটারে জমা করেন, তাহলে ক্র্যাশের ক্ষেত্রে নিয়মিত আপনার হার্ডড্রাইভের ব্যাকআপ নিশ্চিত করছেন। আর অনলাইন ওয়ালেটের বেলায় নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন মাত্রার সিকিউরিটি। সিকিউরিটি পর্যাপ্ত কিংবা অপর্যাপ্ত হতে পারে। এটি আপনার ব্যাপার- আপনি গুড সিকিউরিটি না পুওর সিকিউরিটির ওপর বেশি নির্ভর করবেন। CoinBase হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ওয়ালেট সার্ভিস। এটি বিটকয়েনের জন্য ডলারও ট্রেডিং করে। এর রয়েছে ওয়েব ও মোবাইল (অ্যান্ড্রয়িড) অ্যাপস। Blockchain.info হচ্ছে আরেকটি জনপ্রিয় অনলাইন ওয়ালেট অপশন। এটি কোনো fiat বা আদেশী এক্সচেঞ্জ করে না। কিন্তু এর রয়েছে শুধু অ্যান্ড্রয়িড এবং ওএসের জন্য মোবাইল সল্যুশন।

তিন. এক্সচেঞ্জ/অনলাইন ওয়ালেট : এ ক্ষেত্রে নতুন নতুন বাজারে নতুন নতুন বিজনেস আসার সাথে সাথে অপশনের পরিধিও মনে হয় সপ্তায় সপ্তায় বাড়ছে। পেপার ফিয়েট কারেন্সি ও নানা ধরনের ডিজিটাল কারেন্সির মধ্যে ট্রেডের জন্য আছে কিছু ফুল-বস্নউন এক্সচেঞ্জ। অন্য এক্সচেঞ্জগুলো সীমিত পরিসরের ট্রেডিং সুবিধার সরলতর ওয়ালেট সার্ভিস। অনেক এক্সচেঞ্জ অনেকটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো আপনার হয়ে ডিজিটাল ও ফিয়েট বা আদেশী কারেন্সি জমা রাখবে। যদি রেগুলার ট্রেডিং ও স্পেকুলেশনে নিয়োজিত থাকতে চান, পুরোপুরি বেনামী হতে না চান, তবে ওয়ালেট বা এক্সচেঞ্জগুলো হচ্ছে আপনার জন্য সর্বোত্তম বিকল্প। আপনি কোথায় আছেন তার ওপরও নির্ভর করে কোনটি আপনার জন্য বেস্ট অপশন। এই সময়ে সবার জন্য প্রবেশযোগ্য বড় বড় ফুল-ট্রেডিং এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে আছে : Mt. Gox (Japan), Bitstamp (US), BTC-c (Bulgaria) Ges Kraken ( US) শুধু চাইনিজ ইউয়ান কিংবা রেনমিনবি’র জন্য BTC China বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ।
একবার যদি আপনার অ্যাকাউন্ট সেটআপ করে থাকেন, সম্ভবত আপনার দরকার হবে একটি বিদ্যমান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা এবং এই অ্যাকাউন্ট ও আপনার নয়া এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্টের ওয়্যার ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে তহবিল চালনার একটি ব্যবস্থা করা। এর সাথে অপরিহার্যভাবে আছে একটি ফি। কিছু এক্সচেঞ্জ আপনাকে সুযোগ দেবে ব্যক্তিগতভাবে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডিপোজিটের (হিউম্যান টেলারের মাধ্যমে, এটিএম নয়)। বেশিরভাগ দেশের মানুষ অর্থ স্থানামত্মর করতে পারেন বৈদেশিক অ্যাকাউন্টে।

চার. এক্সচেঞ্জ, ওয়ালেট ও ব্যাংক সম্পর্কে সতর্কতা : আইডেন্টিটি প্রুফের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও মনে রাখবেন এক্সচেঞ্জ ও ওয়ালেটগুলো ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রিত নয়। আপনার অ্যাকাউন্টের কোনো বীমা নেই, যদি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায় বন্ধ করে দেয় কিংবা হ্যাকার তা ডাকাতি করে নেয়। বিশ্বের বেশিরভাগ জায়গায় কারেন্সি হিসেবে বিটকরেন আদৌ বৈধ মুদ্রা নয়। এবং কর্তৃপক্ষ আসলে জানে না, কী করে চুরি বন্ধ করতে হবে। কিছু বড় এক্সচেঞ্জ গ্রাহকের তহবিল রিপ্লেস করেছে চুরির পর, যদিও এক্সচেঞ্জ আইনীভাবে তা করতে বাধ্য নয়। নিজের দোষে নিরাপত্তা ও পাসওয়ার্ডের অভাবে যদি আপনার ব্যক্তিগত ওয়ালেট থেকে একটি চুরি সংঘটিত হয়, তবে তহবিল ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিছু কিছু ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সিকে তাদের বিজনেস মডেলের জন্য একটি হুমকি হিসেবে দেখে। এসব ব্যাংক এক্সচেঞ্জ বিশেষের ফান্ড ট্র্যান্সফারে আপত্তি জানাতে পারে। এবং বিটকয়েনের কথা উল্লেখ করে কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে। তাই প্রথমেই তালিকা থেকে জেনে নিন আপনার ব্যাংক এসব ব্যাংকের কোনো একটি কি না। সুরক্ষার জন্যই এমন একটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলুন, যেটি বিটকয়েনবান্ধব।

পাঁচ. ফেস-টু-ফেস অথবা ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) ট্রেড : যদি কোনো বড় শহরে বসবাস করেন, বেনামী থাকতে চান অথবা ব্যাংকের ঝামেলায় যেতে না চান, তবে বিটকয়েন অর্জনে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে লোকাল ট্রেডারের সাথে সামনা-সামনি (ফেস-টু-ফেস) ট্রেড করা। LocalBitcoins হচ্ছে মূল সাইট, যেখানে এ ধরনের লেনদেন ও এ বিষয়ে ফয়সালা হয়। এই সাইট উভয় পক্ষর জন্য সুরক্ষার আরেকটি অতিরিক্ত স্তর হিসেবে এসক্রো সার্ভিসের সুযোগ দেয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের ব্যাপারে সিকিউরিটি বিবেচ্য রয়েছে, বিশেষ করে ট্রেডটি যদি হয় বড় মাপের। সব সময় সামনা-সামনি সাক্ষাৎ করবেন জনসমাগমস্থলে, কোনো প্রাইভেট হোমে নয়। বেশি পরিমাণ নগদ অর্থ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করম্নন। মনে রাখবেন, কোথাও সামনা-সামনি সাক্ষাতে গেলে, প্রযোজন বিটকয়েন ওয়ালেটে অ্যাক্সেস থাকা। ট্র্যানজেকশন নিশ্চিত করতে আপনার প্রয়োজন লাইভ ইন্টারনেট আ্যাক্সেস- তা হোক স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা ল্যাপটপের মাধ্যমে।

যদি ওয়ান-অন-ওয়ান ট্রেড আপনার বিষয় না হয়, তাহলে meetup.com চেক করুন। যদি দেখেন আপনার এরিয়ার একটি বিটকয়েন মিটআপ চেক গ্রুপ রয়েছে, যেখানে সব কাজ সারতে পারেন একটি গ্রুপ সেটিংয়ে এবং এই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য সদস্যের কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারেন। এসব মিটআপ বিকশিত হয় ২০১৩ সালের শেষার্ধে। কিছু কিছু বড় শহরে এমনকি ‘সাতোশি স্কয়ার্স’ নামের ওপেন-এয়ার ইভেন্টস রয়েছে। সেখানে আপনি সরাসরি চলে যেতে পারেন, কিনতে পারেন কিছু বিটকয়েন, কেনা হলে বাড়ি ফিরে আসতে পারেন। ফেস-টু-ফেস ট্রেডে এক্সচেঞ্জের প্রাইভেসির জন্য সেলারের ওপর নির্ভর করে দিতে পারেন ৫-১০ শতাংশ প্রিমিয়াম। সুপরিচিত ট্রেডারেরা দামদর ঠিক করে মিট করার আগেই। কিন্তু অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করবে না, যখন বিটকয়েনের মূল্যে আরেকটি নাটকীয় পরিবর্তন আসে। কিছু সেলার আপনাকে পেপল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেয়। পরিশোধের সুযোগ দিতে পারে, যদিও বেশিরভাগ সেলার নন-রিভার্সেবল ক্যাশকেই অগ্রাধিকার দেয়। প্রথমেই এ বিষয়টি পরীক্ষা করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ, আপনার এলাকায় এ ধরনের ট্রেড বৈধ কি না। পাবলিক প্লেসে বিটকয়েন এক্সচেঞ্জে একটি ঝামেলা হতে পারে, যদি পুলিশ সন্দেহ করে আপনি অবৈধ কিছু লেনদেন করছেন।

ছয়. মাইনিং : বলতে শোনা যায়, আপনি নিজে নিজে আপনার বিটকয়েন সৃষ্টি করতে পারবেন। ‘মাইনিং’ শব্দটি কারও কাছে শুনে থাকতে পারেন, কিংবা কোনো বিজ্ঞাপনে দেখে থাকতে পারেন। বিজ্ঞাপনে হয়তো বলা আছে, পিসি অথবা শক্তিশালী গ্রাফিকস কার্ড দিয়ে আপনার বিটকয়েন মাইনিং করম্নন। বহু আগে এটি সত্য ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে বিটকয়েনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রেক্ষাপটে বিটকয়েন নেটওয়ার্কে নিয়ে এসেছে আরও শক্তিধর মাইনিং-স্পেসিফিক ডিভাইসেস, যার নাম এআইসিএস। এসবের অর্থ এক বছরের আগের মতো মাইনিং এখন আর কস্ট-এফেক্টিভ নয়। বিটকয়েন থেকে যা পাওয়া যায়, অনেক সময় হার্ডওয়্যার ও বিদ্যুতের খরচকে তা ছাড়িয়ে যায়। আজকের দিনের বেশিরভাগ মাইনিং হচ্ছে ‘গিল্ড’ নামের বড় মাইনিং গ্রুপ ডোমেইন। এবং বিশেষত মাইন করার জন্য গঠিত কোম্পানিগুলো। আপনি চাইলে এসব গিল্ড বা কোম্পানি থেকে শেয়ার নিতে পারেন। কিন্তু আগের মতো নিশ্চিতভাবেই আর শখের কোনো বিষয় নয়। কেউ যদি এই ২০১৪ সালে আপনাকে বলেন, একটি সাধারণ পিসি কিংবা শক্তিশালী গ্রাফিকস কার্ড দিয়ে বিটকয়েন মাইন করতে পারেন, তবে হয় তিনি হালনাগাদ তথ্যসমৃদ্ধ নন, নয়তো তিনি আপনার কাছে আউট-ডেটেড ইকুইপমেন্ট বিক্রি করতে চাচ্ছেন। অতএব সতর্ক থাকুন।

সাত. একটি ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট : আপনি যদি মনে করেন বিটকয়েন বিপুল পরিমাণে কিনে নিরাপদে জমা করার ধারণা পছন্দ নয়, তবে বিটকয়েন ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট তথা বিআইটি’র মতো যেতে পারেন একটি ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টে। এই ট্রাস্ট একামত্মভাবেই বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে। শেয়ারহোল্ডারদের হয়ে এই ট্রাস্ট বিটকয়েন নিরাপদে জমা রাখতে ব্যবহার করে একটি স্টেট-অব-দ্য-আর্ট প্রটোকল।

আট. বিটকয়েন এটিএম : অনেক নতুন ধারণা এসেছে, কিন্তু বেশিরভাগই অস্তিত্ব হারিয়েছে। অবশ্য কিছু ধারণা জনপ্রিয় হয়েছে এবং এগুলো ব্যবহারও সহজ। বিভিন্ন ভেন্ডরের কাছ থেকে ফেস-টু-ফেস এক্সচেঞ্জের মতো আরও নতুন নতুন ধারণা আসছে। কিন্তু একটি মেশিনের সাহায্যে আপনি আপনার ক্যাশ ইনসার্ট করেন এবং কোডওয়ালা একটি কাগুজে রসিদ পান ওয়ালেটে আপনার বিটকয়েন ঢুকাতে। আবার আপনার প্রয়োজন হবে লোকালি কিংবা অনলাইনে জমা একটি ওয়ালেট এটিএম ব্যবহারের জন্য। ২০১৩ সালের নভেম্বরের দিকে কানাডার ভেঙ্কুভারে একটি অপারেশনাল রোবোকয়েন বিটকয়েন এটিএম দেখা গেছে। তুরস্কের একটি এয়ারপোর্টে আপনি ট্র্যাভেলার্স বক্স দিয়ে একটি মেশিন ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা বিটকয়েনে পরিবর্তন করতে পারবেন।

অতএব নতুনেরা যতটা প্রত্যাশা করেন, বিটকয়েন কেনা ততটা সহজ নয়। সুখবর হলো অপশনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি ওয়ালেট কিংবা ইন্টারনেট অ্যাক্সেসেরও প্রয়োজন নেই। অন্যান্য বিকল্পের মধ্যে আছে বিটকয়েন কার্ড (শিগগিরই আসছে), ভৌত বিটকয়েন ‘কয়েন’ এবং স্টোরড ভ্যালু কার্ড।

ডেস্কটপ বিটকয়েন ওয়ালেট
আপনি যদি এরই মধ্যে অরিজিন্যাল বিটকয়েন ক্লায়েন্ট (Bitcoin-Ot) ইনস্টল করে থাকেন, তাহলে একটি ওয়ালেট চালু রেখেছেন। কিন্তু আপনি তা না-ও জানতে পারেন। নেটওয়ার্কে ট্র্যানজেকশন রিলে করা ছাড়াও এই সফটওয়্যার আপনাকে সুযোগ করে দেয় ভার্চুয়াল কারেন্সি পাঠানো ও গ্রহণ করার জন্য একটি বিটকয়েন অ্যাড্রেস ক্রিয়েট করার। আরও সুযোগ দেয় এর জন্য প্রাইভেট কী স্টোরের। আলাদা ফিচারের অন্যান্য ডেস্কটপ ওয়ালেটও রয়েছে। Multibit চলে উইন্ডোজ, ম্যাক ওএসএক্স এবং লিনআক্সে। ঐরাব হচ্ছে অ্যাপস্টোর ওয়ালেটসহ কিছু অনন্য ফিচারসমৃদ্ধ একটি ওএসএক্সভিত্তিক ওয়ালেট। এই অ্যাপস্টোর সরাসরি বিটকয়েন সার্ভিসগুলোর সাথে সংযুক্ত করে, যদিও এই রেখা তৈরির সময় এই ওয়ালেট নিয়ে বেটা টেস্টিং চলছিল কিছু ক্যাটেগরির ওয়ালেটে। অন্যগুলো জোর দেয় অ্যানোনিমিটি বা বেনামিতার ওপর। Dark Wallet এখনও গড়ে তোলার পর্যায়ে। এটি একটি হালকা ওজনের ব্রাউজার পস্নাগ-ইন ব্যবহার করে জোর দেবে বেনামিতার ওপর। তা ছাড়া এতে থাকছে কয়েন মিক্সিং সুবিধা, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর
কয়েন এক্সচেঞ্জ করা যাবে অন্যদের হয়ে, যাতে অন্য কেউ ট্র্যাক করতে না পারে।

মোবাইল ফোনে ওয়ালেট
ডেস্কটপভিত্তিক ওয়ালেট খুবই ভালো। তবে এগুলো তেমন উপকারী নয়, যদি আপনি রাস্তায় থেকে কোনো ফিজিক্যাল স্টোর থেকে কিছু কিনে এর দাম পরিশোধ করতে চান। এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয় মোবাইল ওয়ালেট। স্মার্টফোনে একটি অ্যাপ চালানোর মতো ওয়ালেট মজুদ বা স্টোর করতে পারে আপনার বিটকয়েন অ্যাড্রেসের প্রাইভেট কী। এর ফলে আপনি সরাসরি ফোন করে কোনো কিছুর দাম পরিশোধ করতে পারবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটি ওয়ালেট এমনকি একটি স্মার্টফোনের এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) ফিচার সুবিধা কাজে লাগাতে পারে, যাতে রয়েছে একজন রিডারের বিপরীতে ফোন ট্যাপ করার এবং কোনো ইনফরমেশনে প্রবেশ না করেই বিটকয়েন দিয়ে পাওনা পরিশোধের সুবিধা।

মোবাইল ওয়ালেটের একটি সাধারণ সুবিধা হচ্ছে, এগুলো ফুল বিটকয়েন ক্লায়েন্ট নয়। একজন ফুল বিটকয়েন ক্লায়েন্টকে পুরো বিটকয়েন বস্নকচেইন ডাউনলোড করতে হয়, যা সব সময় বেড়েই চলেছে এবং মাল্টিপল গিগাবাইট সাইজের। এটি আপনার মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অনেক ফোনের মেমরিতে বস্নকচেইন ধারণ করতে সক্ষম হবে না। এর বদলে এসব ফোন ডিজাইন করা হয়েছে এসপিভি (সিমপিস্নফাইড পেমেন্ট ভেরিফিকেশন) বিবেচনা মাথায় রেখে। এগুলো ডাউনলোড করে বস্নকচেইনের খুবই একটি সাবসেট এবং যথাযথ ইনফরমেশন পাওয়ার জন্য নির্ভর করে বিটকয়েন নেটওয়ার্কের অন্যান্য নোডের ওপর। Bitcoin wallet, Mycelium এবং Blockchain হচ্ছে মোবাইল ওয়ালেটের উদাহরণ।

অনলাইন বিটকয়েন ওয়ালেট
ওয়েবভিত্তিক ওয়ালেট আপনার কমপিউটারে প্রাইভেট কী স্টোর করে অনলাইনে, যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ও অন্য কারও মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এ ধরনের বেশ কিছু অনলাইন সার্ভিস পাওয়া যায় এবং এগুলোর কিছুর লিঙ্ক রয়েছে মোবাইল ও ডেস্কটপ ওয়ালেটের সাথে। ওয়েবভিত্তিক ওয়ালেটের একটি সুবিধা হলো, এতে যেকোনো স্থান থেকে ঢুকতে পারেন। আপনি কোন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছেন, সেটা কোনো বিবেচ্য নয় এখানে। তা সত্ত্বেও এর বড় ধরনের একটি অসুবিধাও আছে। যথাযথভাবে বাসত্মবায়িত না হলে আপনার প্রাইভেট কী পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে তা বিটকয়েন আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।

বিটকয়েন কী নিরাপদ?
বিষয়টি নির্ভর করে আপনার ব্যবস্থাপনার ওপর। আপনার ওয়ালেটে স্টোর করা প্রাইভেট কী হচ্ছে বিটকয়েনের অ্যাড্রেসে জমা থাকা ট্র্যাকজেকশন ডাটায় অ্যাক্সেসের একমাত্র উপায়। আপনি যদি তা হারিয়ে ফেলেন, তবে হারাবেন আপনার বিটকয়েন। অতএব, এগুলো ততক্ষণ নিরাপদ, যতক্ষণ এসব ডাটায় অন্যের প্রবেশ না ঘটে।
বিটকয়েন ওয়ালেট নিরাপদ রাখার বেশ কিছু উপায় আছে : এটিকে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে এনক্রিপ্ট করে, ব্যাকআপ দিয়ে এবং অফলাইনে নিয়ে ওয়ালেটকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। কিছু লোক হার্ডওয়্যার ওয়ালেট ডেভেলপ করছেন যেগুলো প্রাইভেট কী ইলেকট্রনিক উপায়ে ধারণ করে পেমেন্ট সুবিধা দেয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান দুই খেলোয়াড় হচ্ছে ‘ট্রেজর’ ও ‘মাইসেলিয়াম’।

বিটকয়েন কী বৈধ?
এখন পর্যমত্ম কোনো দেশের সরকার বিটকয়েন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে সুস্পষ্ট অভিপ্রায় ঘোষণা করেনি। তবে ২০১৪ সালের শুরম্নর পর্যমত্ম সময়ে কোনো কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাত্রায় সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে বৈ কি। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে : ‘বি কেয়ারফুল, বিটকয়েন ইজ নাইদার রেগুলেটেড নর অফিসিয়্যালি অ্যা কারেন্সি’। আবার কেউ এর প্রভাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। কারও অভিমত, বিটকয়েনের ব্যাপক ব্যবহার অর্থ ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে, বিশেষ করে এর দাম যখন ভলেটাইল। ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইউর ব্যাংক রেগুলেটর ইবিএ (ইউরোপিয়ান ব্যাংকিং অথরিটি) বিটকয়েন ইনভেসমেন্ট রিস্কের কথা উলেস্নখ করে সকর্তবাণী জারি করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে বিটকয়েন না বৈধ, না অবৈধ- এমনি একটি অবস্থার মাঝে রয়েছে। মোটামুটি বেশিরভাগ দেশ এই কারেন্সিকে পর্যবেক্ষণের পর্যায়ে রেখেছে। তাই এর বৈধতার প্রশ্নটি পুরোপুরি মীমাংসা হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা