লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
আহমেদ ওয়াহিদ মাসুদ
মোট লেখা:৯৮
লেখা সম্পর্কিত
ফটোশপ সিএস ৬
যারা ছবি এডিট এবং বিভিন্ন গ্রাফিক্সের কাজ করেন, তারা সবাই জানেন- ছবি এডিটের জন্য এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার হলো ফটোশপ। ফটোশপের সর্বশেষ ভার্সন সিএস ৬। এ লেখায় সিএস ৬-এর বিভিন্ন নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
লিকুইফাই ফিল্টার অ্যানহ্যান্সমেন্ট : ফটোশপের ক্রিয়েটিভ ক্লাউড আপডেটে লিকুইফাই ফিল্টার আগের সংস্করণের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুততর। লিকুইফাই ফিল্টার এখন স্মার্ট অবজেক্ট সাপোর্ট করে। এ ছাড়া ভিডিও লেয়ারসহ স্মার্ট অবজেক্ট, স্মার্ট ফিল্টার হিসেবেও এটি প্রয়োগ করা হয়।
লিকুইফাই ফিল্টারের আরেকটি অ্যানহ্যান্সমেন্ট হলো রিকনস্ট্রক্ট টুল হিসেবে ব্যবহার করা। ইউজার যখন অল্টার (উইন্ডোজ) বা অপশন (ম্যাক ওএস) কী চেপে ওয়ার্পের মধ্য দিয়ে টুলটিকে ড্র্যাগ করে, তখন টুলটি ওয়ার্পকে স্কেল না করে অথবা মুছে না ফেলে বরং তাকে আরও মসৃণ করে তোলে।
স্মার্ট ফিল্টার হিসেবে বস্নার ইফেক্ট ব্যবহার করা : বস্নার গ্যালারির ফটোগ্রাফিক বস্নার ইফেক্ট এখন স্মার্ট অবজেক্ট সাপোর্ট করে এবং এটি ক্ষতিগ্রস্ত না করে স্মার্ট ফিল্টারের মতো করে ব্যবহার করা যাবে। একই সাথে এই ফিচারটি স্মার্ট অবজেক্ট ভিডিও লেয়ারও সাপোর্ট করে।
শেপ অথবা টেক্সট লেয়ার থেকে সিএসএস প্রোপার্টি কপি করা : কপি সিএসএস অপশনটি কোনো শেপ অথবা টেক্সট লেয়ারের সিএসএস জেনারেট করতে পারে। এটি বিভিন্ন ভ্যালু যেমন সাইজ, পজিশন, ফিল কালার (গ্রাডিয়েন্টসহ), স্ট্রোক কালার এবং ড্রপ ডাউন শ্যাডো। টেক্সট লেয়ারের জন্য কপি লেয়ার অপশনটি অন্যান্য অনেক অপশন্স ক্যাপচার করে, যেমন ফন্ট ফ্যামিলি, ফন্ট সাইজ, ফন্ট ওয়েইট, লাইন হাইট, আন্ডারলাইন, স্ট্রাইক থ্রু, সুপার স্ক্রিপ্ট, সাবস্ক্রিপ্ট এবং টেক্সট অ্যালাইনমেন্ট। সিএসএস ক্লিপ বোর্ডে কপি হয়ে যায় এবং এটি অন্য কোনো সিএসএসে অথবা অন্য যেকোনো জায়গায় পেস্ট করা যাবে। যারা সিএসএসের বিষয় তেমন জানেন না তাদের জন্য বলা দরকার- সিএসএস হলো এমন একটি স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা বিভিন্ন এলিমেন্টকে সাজানোর জন্য ব্যবহার হয়। এটি মূলত ওয়েব ডেভেলাপিংয়ের জন্য ব্যবহার হয়। ফটোশপ দিয়ে যেহেতু ওয়েবসাইটের অনেক এলিমেন্ট ডিজাইন করা হয়, তাই ফটোশপ সিএস ৬-এ সরাসরি সিএসএস কপি করার অপশন রাখা হয়েছে, যাতে প্রোগ্রামারকে কষ্ট করতে না হয়, ফটোশপেই যেনো সম্পূর্ণ ডিজাইন তৈরি করতে পারে এবং তা সরাসরি ওয়েব ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার করতে পারে।
কন্ডিশনাল অ্যাকশন : কন্ডিশনাল অ্যাকশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজের মতো করে কাস্টম টাস্ক বা কাস্টম অ্যাকশন তৈরি করতে পারেন। প্রথমে ইউজারকে একটি কন্ডিশন সিলেক্ট করতে হবে। এরপর একটি অ্যাকশন সিলেক্ট করতে হবে, যা ওই কন্ডিশন পূরণ হওয়ার পর কার্যকর হবে। একই সাথে ওই কন্ডিশন যদি পূরণ হতে ব্যর্থ হয়, তার জন্যও একটি অ্যাকশন সিলেক্ট করে দিতে হবে।
হাই ডিপিআই ডিসপ্লে সাপোর্ট : নতুন ফটোশপে হাই ডিপিআই ডিসপ্লের জন্য সাপোর্ট দেয়া হয়েছে, যেমন রেটিনা ডিসপ্লে। হাই রেজ্যুলেশন ডিসপ্লের সাথে কাজ করার সময় অনেক ধরনের সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে, যার মাঝে একটি হলো ডকুমেন্টের ভিউ খুব দ্রুত শতকরা ২০০ ভাগ করা সম্ভব। ২০০ ভাগ ডকুমেন্ট তৈরি করার জন্য তিনটি পদ্ধতি রাখা হয়েছে। ০১. ভিউ ট্যাবে গিয়ে পছন্দমতো স্কেল সিলেক্ট করা, ০২. জুম টুল আইকনে কন্ট্রোল বাটন (উইন্ডোজ)/কমান্ড বাটন (লিনআক্স) চেপে ডাবল ক্লিক করা, ০৩. শিফট ও কন্ট্রোল বাটন (উইন্ডোজ)/শিফট এবং কমান্ড বাটন (লিনআক্স) চেপে জুম টুলে ডাবল ক্লিক করলে সবগুলো ডকুমেন্ট ২০০ ভাগে দেখা যাবে।
ভিউ অপশন পরিবর্তন : জুম টুল ও হ্যান্ড টুল অপশন বারে যে বাটনের মাধ্যমে ইমেজ প্রকৃত আকারে দেখা যায়, তাকে এখন শতকরা ১০০ ভাগ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বার দুটিতে আগের মতো প্রিন্ট সাইজের জন্য কোনো বাটন রাখা হয়নি। একই সাথে ভিউ মেনুর প্রকৃত পিক্সেল কমান্ড পরিবর্তন করে ১০০ ভাগ করা হয়েছে।
ক্রপ টুলের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন : ফটোশপের নতুন ভার্সনে ক্রপ টুলে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমত, এ টুলের অনেক ধরনের বাগ ফিক্স করা হয়েছে। অর্থাৎ এ টুলটি আগের চেয়ে এখন আরও ভালোভাবে কাজ করবে। টুলটিতে যে অতিরিক্ত অপশন সংযোজন করা হয়েছে তা হলো : ০১. অ্যাসপেক্ট রেশিও মেনুতে ফ্রন্ট ইমেজ এবং নতুন প্রিসেটের অপশন আনা হয়েছে। ০২. ডাবল অ্যারো আইকনে ক্লিক করলে তা ক্রপ ওরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করে, অর্থাৎ তা প্রস্থ ও উচ্চতাকে একে অপরের সাথে বদল করে দেয়। এটি রোটেট ক্রপ বক্স বাটনকে প্রতিস্থাপন করে। ০৩. অ্যাসপেক্ট রেশিও মেনু থেকে প্রস্থ বাই উচ্চতা বাই রেজ্যুলেশন সিলেক্ট করলে অপশন বারে একটি রেজ্যুলেশন ফিল্ড দেখায় এবং তা প্রস্থ এবং উচ্চতার মান নিজে থেকেই ঠিক করে নেয়। ০৪. ক্লিয়ার বাটনে ক্লিক করলে তা অপশন বারের প্রস্থ এবং উচ্চতার মান মুছে দেয়। আর যদি রেজ্যুলেশন ফিল্ড থাকে, তবে তার মানও মুছে যাবে। ০৫. ফ্রন্ট ইমেজের ক্রপ টুল এবং পারস্পেকটিভ ক্রপ টুলের কিবোর্ড শটকার্ট কি ঋ থেকে পরিবর্তন করে। চিত্র : ১-এ অপশনগুলো দেখানো হলো।
ডিফল্ট স্টাইল : কোনো ডকুমেন্টের ক্যারেকটার এবং প্যারাগ্রাফ স্টাইলকে ডিফল্ট স্টাইল হিসেবে সেভ করা যাবে। যখন একটি নতুন ফটোশপ ডকুমেন্ট তৈরি করা হবে, তখন ক্যারেকটার স্টাইল এবং প্যারাগ্রাফ স্টাইল প্যানেলে এই ডিফল্ট স্টাইলগুলো নিজে থেকেই লোড হবে। এ ছাড়া কোনো ডকুমেন্ট ওপেন করার পরও ইউজার চাইলে তার জন্য এই ডিফল্ট স্টাইলগুলো লোড করতে পারেন। এর জন্য একটি কমান্ড ব্যবহার করতে হবে, যার নাম লোড টাইপ স্টাইলস।
কালার রেঞ্জে ফেস ডিটেকশনের আপগ্রেড : ফটোশপে সিলেকশনের জন্য অনেক ধরনের টুল এবং অপশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, এর মাঝে একটি হলো কালার রেঞ্জ। অর্থাৎ ইউজার একটি রেঞ্জের মাঝে কালার সিলেক্ট করে দেবেন আর ছবির যে অংশে সেই কালার থাকবে, সেই অংশগুলো সিলেক্ট হয়ে যাবে। এই কালার রেঞ্জ সিলেকশন কমান্ড এখন স্কিন টোন সিলেকশন নামে একটি প্রিসেট সেভ করতে পারে। একই সাথে যখন স্কিন টোন অথবা স্যাম্পল কালার সিলেক্ট করা হয়, তখন এটি ডিটেক্ট ফেস অপশনের সেটিংগুলোও সেভ করতে পারে।
এইচটিএমএল, সিএসএস এবং এসভিজি ফাইল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা : সোয়াচ প্যানেলে (যেখানে বিভিন্ন কালার স্যাম্পল রাখা যায়) এইচটিএমএল, সিএসএস এবং এসভিজি ফাইলে বর্ণিত কালারও অ্যাড করা যায়। যদি ডকুমেন্টে কোনো কালারের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে ওই কালারের ইনস্ট্যান্সগুলোর মাঝে শুধু একটি ওই প্যানেলে যুক্ত হবে। এ ফিচারটি নিম্নবর্ণিত এইচটিএমএল/সিএসএস কালার সিন্ট্যাক্স পড়তে পারে, #112233, #123, rgb(1,2,3), rgba(1,2,3,4), hsb(1,2,3), and hsba (1,2,3,4) ।
থ্রিডি আপগ্রেড ও পরিবর্তন : ফটোশপের নতুন ক্রিয়েটিভ ক্লাউড ভার্সনে অনেক নতুন অপশন এবং পরিবর্তন সংযোজন করা হয়েছে। এসব পরিবর্তন দেখার জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখা।
বড় ফাইল সাপোর্ট : নতুন ভার্সনে এখন অনেক বড় ঔচঊএ ডকুমেন্ট (৬৫, ৫৩৫ পিক্সেলের প্রস্থ অথবা উচ্চতার) ওপেন অথবা সেভ করা যায়।
কালার প্যানেল : কালার প্যানেল এখন রিসাইজ করা সম্ভব। ইউজার চাইলে তা সরিয়ে অন্য জায়গায় অথবা অন্য উইন্ডোতেও রাখতে পারেন।
কনটেন্ট অ্যাওয়ার মুভ টুল : এই টুলটি ফটোশপের নতুন একটি বিশেষ টুল। সিএস ৫-এ প্রথম এ টুলটি আনা হয়। এ টুলের মাধ্যমে ইউজার খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ছবি রিকম্পোজ করতে পারেন এবং তাতে কোনো জটিল লেয়ারিং অথবা প্রিসাইজ সিলেকশনের দরকার হয় না। এক্সটেন্ড মোড সহজেই কোনো অবজেক্ট যেমন চুল, গাছ অথবা বিল্ডিংকে এক্সপান্ড অথবা কন্ট্রাক্ট করতে পারে। আর মুভ মোডের মাধ্যমে ইউজার কোনো অবজেক্টকে অন্য স্থানে সহজেই সরিয়ে নিতে পারেন এবং মজার বিষয় হলো এ ক্ষেত্রে মূল ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড একই থাকে।
কনটেন্ট অ্যাওয়ার প্যাচ টুল : সিএস ৬-এর আপডেটেড প্যাচ টুলে একটি নতুন কনটেন্ট অ্যাওয়ার অপশন রাখা হয়েছে, যা ছবির অপ্রয়োজনীয় এলিমেন্টগুলোকে আশপাশের এলিমেন্টের সাহায্যে মুছে দেয়। ফলাফল অনেকটা কনটেন্ট অ্যাওয়ার ফিলের মতো, কিন্তু পার্থক্য হলো প্যাচ টুল ইউজারকে সিলেক্ট করতে দেয় কোন এরিয়া থেকে ফিল নেয়া হবে। টুলবারে স্পট হিলিং ব্রাশ ক্লিক করে প্যাচ টুল সিলেক্ট করতে হবে।
রিডিজাইন্ড ক্রপ টুল : রিডিজাইন্ড ক্রপ টুল ইউজারকে একটি ইন্টারঅ্যাক্টিভ প্রিভিউ দেখায়, যাতে ইউজার টুলের ফলাফল আরও ভালোভাবে বুঝতে পারেন। ক্রপ টুল যখন ইমেজে কার্যকর থাকবে, তখন ইউজার স্ট্রেইটেন টুল এবং অ্যাসপেক্ট রেশিও কন্ট্রোল অ্যাডজাস্ট করতে পারেন এ অপশনগুলো একটি টুলবারে থাকলে।
ফটোশপ সিএস ৬-এ অনেক নতুন টুল ও অপশন যুক্ত করা হয়েছে। এসব টুল ব্যবহার করে ইউজার খুব সহজে ও অল্প সময়ে অনেক জটিল এডিট সম্পন্ন করতে পারেন
ফিডব্যাক : wahid_cseaust@yahoo.com