• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেশে ই-কমার্সেও প্রসার দ্রুত বাড়ছে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: কজ
মোট লেখা:১০৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ই-কমার্স
তথ্যসূত্র:
ই-কমার্স
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেশে ই-কমার্সেও প্রসার দ্রুত বাড়ছে
ই-কমার্স সীমিত আকারে বাংলাদেশে ২০০০ সালের দিকে শুরু হয়েছিল। মুন্সিজি ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট সে সময়ে বেশ সাড়া ফেলেছিল। এছাড়া আরও কয়েকজন উদ্যোক্তা চেষ্টা করেছিলেন এবং তাদের কেউই সফল হননি নানা কারণে। অন্যতম কারণ ছিল, তখন অনলাইনে লেনদেনের কোনো মাধ্যম ছিল না এ দেশে। এছাড়া ইন্টারনেটের গতি ছিল খুবই কম এবং ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী কয়েক লাখের বেশি ছিল না।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয় এবং এর মধ্যে অন্যতম ছিল অনলাইনে লেনদেনের ব্যাপারটি সহজ করা। এ ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১২ সাল নাগাদ কিছু ই-কমার্স ওয়েবসাইট গড়ে ওঠে এবং এদিকে সত্যিকারের গতি সঞ্চারিত হয় ২০১৩ সালে। সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সাথে মিলে কমপিউটার জগৎ ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং লন্ডনে ই-কমার্স মেলার আয়োজন করে। এর ফলে সারাদেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়ে যায়।
তারই ধারাবাহিকতা ধরে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনেক অনলাইন শপিং সাইট গড়ে ওঠে। ফেসবুকের মাধ্যমেও পণ্য বেচাকেনার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দেশে এখন কতগুলো ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও এ সংখ্যা ৬শ’র মতো হবে। এছাড়া ফেসবুকের মাধ্যমে পেজ খুলে ২-৩ হাজার উদ্যোক্তা পণ্য ও সেবা বিক্রির চেষ্টা করছেন।
ক্রমবর্ধমান এই খাতের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু করে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং এখন (এপ্রিল ২০১৫) ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা ১২৫। এই সংখ্যা এ বছর নাগাদ ৪শ’ থেকে ৫শ’র মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরেও ই-কমার্স নিয়ে আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, কক্সবাজার, যশোর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিলস্না থেকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবে যোগ দিয়েছে। এ বছর নাগাদ দেশের প্রায় সব জেলাতেই ই-ক্যাবের সদস্য থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ই-কমার্স নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে অনেক লোক আগ্রহী। ই-ক্যাবের ফেসবুক পেজে প্রায় ৫ হাজার সদস্য রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংযুক্ত হয়েছেন। প্রতিদিন তারা ই-কমার্স খাতের অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও আপডেট পাচ্ছেন। গ্রুপের সদস্যরা মার্চ মাসে তিনবার বাস্তব জীবনে আড্ডা দিয়েছেন। এভাবে তারা একে অন্যের সাথে পরিচিত হচ্ছেন এবং এতে করে ব্যবসায় করতে সুবিধা হচ্ছে। তারাই চেষ্টা করছেন ই-কমার্স খাতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে।
ই-ক্যাব ব্লগে এ পর্যন্ত ১৬০টির বেশি লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং ই-কমার্সের বিভিন্ন দিক নিয়ে এখানে আর্টিকল রয়েছে। প্রায় সব লেখাই বাংলাভাষায় এবং এভাবে বাংলাভাষায় ই-কমার্স নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যভা-ার হলো এই ই-ক্যাব ব্লগ।
ই-ক্যাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ই-কমার্স সেবাকেন্দ্র। একটি ফোন নম্বরে ফোন করে ই-কমার্স নিয়ে সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
আমরা আইটির বিভিন্ন দিকে এর আগে অনেক হুজুগ সৃষ্টি হতে দেখেছি এবং এর ফলে অনেক তরুণ নানাভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু ই-ক্যাব গ্রুপ ও ব্লগের কারণে ই-কমার্স খাতে এখন পর্যন্ত কোনো হুজুগ তেমনভাবে ওঠেনি। ই-ক্যাব গ্রুপে নিয়মিত একথা বলা হয়, ই-কমার্স একটি ব্যবসায় এবং অন্য যেকোনো ব্যবসায়ের মতো এখানে লাভের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি লোকসানের ঝুঁকি ও রয়েছে। আর গুগল ও ফেসবুকে ই-কমার্স এবং বাংলাদেশের ই-কমার্স নিয়ে একটু সার্চ করলেই ই-ক্যাবের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ গ্রুপ এবং ব্লগ চলে আসে বিধায় বাংলাদেশে ই-কমার্স নিয়ে যারা আগ্রহী, তাদের অনেকেই এখন ই-ক্যাবের কথা জানেন।
বাংলাদেশে যারা ই-কমার্স উদ্যোক্তা হতে চান, তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, ই-কমার্স মানে শুধু একটি অনলাইন শপিং সাইট বানানো। ই-কমার্স আসলে অনেক বেশি কিছু। অবশ্যই অনলাইন শপিং সাইট বানানোর মতো টেকনিক্যাল জ্ঞান থাকা দরকার। কিন্তু এর সাথে আরও কয়েক ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা দরকার।
শুধু একটি ওয়েবসাইট থাকলেই চলবে না, সেখানে কি প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন আপনি? সেই পণ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন? পণ্যের সরবরাহ কীভাবে নিশ্চিত করবেন? কী দামে পণ্য কেনাবেচা করতে পারলে আপনার মুনাফা নিশ্চিত হবে। প্রোডাক্ট সোর্সিং তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পণ্য সংগ্রহ করার পর তা ওয়েবসাইটে সুন্দর ছবিসহ আপলোড করাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা, কিছু ফটোগ্রাফি কোম্পানি ই-কমার্সের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য সেবা দিয়ে থাকে। সুন্দর ছবিসহ প্রোডাক্ট আপলোড করা হলো। এর পরের চ্যালেঞ্জ হলো মানুষকে জানানো বা মার্কেটিং। কেউ কেউ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের দিকে গেলেও বাংলাদেশে এখন ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়া বা ফেসবুক মার্কেটিং বেশ জনপ্রিয়। এদিকেও একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তার জ্ঞান থাকা দরকার।
অনেকে অনলাইন শপিং সাইট থেকে কিনতে ভয় পান নানা কারণে। কোন সাইট থেকে কিনলে নিরাপদে কেনা যাবে, তা নিয়ে ভয় অনেকের। এছাড়া কেনার সময় ক্রেডিট কার্ডের তথ্য কতটা সুরক্ষিত এ শঙ্কাও অনেকের মনে। সর্বোপরি অনেকেই এখনও ই-কমার্সের সুবিধা নিয়ে সচেতন নন।
ই-কমার্সে যারা এগিয়ে আসছেন তাদের অনেকেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে এখন পর্যন্ত ই-কমার্স নিয়ে বিবিএ বা এমবিএ ডিগ্রি অফার করা হয় না। ফলে উদ্যোক্তা ও দক্ষ প্রফেশনাল দুই দিকেই ঘাটতি রয়েছে। এদিকে এখনই নজর দেয়া দরকার। কারণ, তা না হলে ভবিষ্যতে ই-কমার্স খাতে যে বিশাল চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে, তাতে বাংলাদেশী তরুণেরা পিছিয়ে পড়বে এবং শূন্যস্থান পূরণ করবে ভারত, শ্রীলঙ্কার পেশাজীবীরা।
ই-কমার্স খাতের এখনও বড় বাধা হলো- এটি অনেকটা ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেটে সীমিত পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পেলেও বাকি ৬১টি জেলা এখনও এদিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। এদিকেও সরকারসহ সবাইকে নজর দিতে হবে।
বর্তমান সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ই-কমার্স সেক্টর। এর কারণ হলো এটি এমন একটি প্লাটফর্ম, যা সারাদেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে এবং করছে। কক্সবাজারের শুঁটকি মাছ এখন দিনাজপুর যাচ্ছে এর মাধ্যমে। তাই অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রাণসঞ্চার করতে দরকার ই-কমার্সের আশীর্বাদকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া। এছাড়া জিডিপির প্রবৃদ্ধিটিতেও ব্যাপক অবদান রাখতে পারে ই-কমার্স। সাধারণ দোকানপাট, মার্কেট হয়তো ১০ ঘণ্টার মতো চালু থাকে এবং বাকি ১৪ ঘণ্টা কেনাবেচা বন্ধ থাকে। কিন্তু ই-কমার্সের মাধ্যমে বছরের ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘণ্টা কেনাবেচা অব্যাহত থাকে।
ই-কমার্সের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। অনলাইন শপিং সাইট, কনটেন্ট কোম্পানি, পেমেন্ট গেটওয়ে, কুরিয়ার সার্ভিস, ডোমেইন হোস্টিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিংসহ ই-কমার্সের সাথে জড়িত সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে একই ছাতার নিচে এনে এই খাতকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ই-ক্যাব। ই-কমার্স নিয়ে তথ্য দেয়া, সেবা দেয়া, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, জনসচেতনতা তৈরি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ- সব দিকেই ই-ক্যাব কাজ করার চেষ্টা করছে

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - এপ্রিল সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা