• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সরকার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
নীতিপ্রসঙ্গ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল সরকার

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী গ্রহণ করা ও সরকারের অঙ্গীকারনামার মাঝে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কথা থাকায় এখন এই কর্মসূচী কোথায় কোথায় বাস্তবায়ন করা হবে সেটি ভাবনা-চিন্তার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমি আগেও বলেছি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির প্রথম সিঁড়ি হলো ‘ডিজিটাল সরকার’।

বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থা পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য জনগণের সমৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্র কায়েম করে। এর কোনো জবাবদিহিতা নেই। এটি অথর্ব, অদক্ষ এবং অকার্যকর। সেজন্যই এই সরকার পদ্ধতি বদল করতে হবে। প্রথমেই উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের প্রশাসনের কাজ করার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রচলিত পদ্ধতি বদলে ফেলার। এই সংস্কারের কাজ করার পদ্ধতির নাম ‘ডিজিটাল সরকার’। আমার মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই দরকার ডিজিটাল সরকার। লোকে একে কখনো কখনো ই-গভর্নমেন্ট বলে ভুল করে থাকে। এই বিভ্রামিত্মটি তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক কিছু পন্ডিতও করে থাকেন। তারা প্রধানত বিগত শতকের ই-গভর্নমেন্ট এবং ডিজিটাল সরকারকে এক করে ফেলেন। বিগত শতকে কিছু লোক ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে সবকিছুকেই ই বা ইলেকট্রনিক করার কথা ভেবেছিলো। তারা সাধারণ ডাককে ই-মেইল, সাধারণ ব্যবসায়কে ই-কমার্স, প্রচলিত সরকারকে ই-গভর্নমেন্ট ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলতো। সেজন্যই সরকারের কিছু তথ্য ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে প্রকাশ করা বা কিছু তথ্য ই-মেইলে আদানপ্রদান করাটাকে ই-গভর্নমেন্ট বলা হতো। যখন তথ্যযুগ প্রিমিটিভ পর্যায়ে ছিলো তখন এসব কথা শুনতে ভালোই লাগতো। কিন্তু এখন তথ্যযুগ সেই পর্যায়ে নেই। একজন আমলা কারো কাছে একটি মেইল পাঠালেন এবং একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু তথ্য ইংরেজি ভাষায় ওয়েব পেজে রাখা হলো, তাতে সরকারের কাজ করার চরিত্র বদলায় না। ২০০১-০৬ সালের বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সেই চেষ্টাই করেছে। তারা শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওয়েব পেজ তৈরি করেছে। এর বিনিময়ে কিছু লোক পেয়েছে কোটি কোটি টাকা। এসব অর্থহীন ওয়েব পেজের ভাষা আবার ইংরেজি। ফলে সেগুলো মানুষের কোনো কাজে লাগে না। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতে সেখানকার শতকরা ৫ জনের বেশি ইংরেজি বোঝে না। আমাদের দেশের শতকরা ১ ভাগও ইংরেজি বোঝে না। এজন্য বাংলা দরকার। সেজন্য আমরা কোনোভাবেই বেগম খালেদা জিয়ার এসআইসিটির নেতৃত্বে শুরু করা ই-গভর্নমেন্ট কার্যক্রমকে ডিজিটাল সরকার তৈরির কাজ বলে মনে করি না। এটি আসলে জনগণের সাথে প্রতারণা করার জন্য করা হচ্ছিলো। আমরা ডিজিটাল সরকার বলতে একটি ওয়েব পেজ প্রকাশ করা বা কিছু ফরম সিডিতে বিতরণ করাকে বুঝাই না। প্রকৃতার্থে ডিজিটাল সরকার এবং ই-গভর্নমেন্ট এক জিনিস নয়।

আমরা ডিজিটাল সরকার বলতে সরকারের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, সরাসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন রিয়েলটাইম যোগাযোগ এবং সরকারের সব কাজ করাকে বুঝাই। এজন্য সরকারের থাকবে একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও ন্যাশনওয়াইড নেটওয়ার্ক। সরকারের সব তথ্য থাকবে কেন্দ্রীয় বা বিকেন্দ্রীকৃত ডাটাবেজে। কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় ডাটাবেজটির সব তথ্য স্তরভিত্তিক বিন্যস্ত হবে।

সরকারের সব অফিস, বিভাগ, মন্ত্রণালয়, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসনের সব স্তর এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে। এমনকি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের হিসেব পর্যন্ত এই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যখন খুশি ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব না করে ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। বর্তমানে সরকারের যে প্রশাসন আছে তার আমূল পরিবর্তন করতে হবে।

এখন থেকে দুটি পর্যায়ে বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তন হবে। প্রথম পর্যায়ে ডিজিটাল পদ্ধতির পাশাপাশি কাগজের ব্যাকআপ থাকবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করার পর কাগজের ব্যাকআপ ফাইল (প্রিন্ট করে) তৈরি করে রাখা হবে। দ্বিতীয় স্তরে কাগজের ব্যাকআপ বিলুপ্ত হবে। আমরা ধারণা করতে পারি বিদ্যমান কর্মীরা কোনো ওরিয়েন্টেশন ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করার দক্ষতা রাখেন না। ফলে তাদের নতুন করে শিক্ষা গ্রহণ করার দরকার হবে। সরকার স্বখরচে এদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে। যারা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী হবে না বা প্রশিক্ষণ নেবার পরও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না তাদের পক্ষে সরকারের কাজ করা সম্ভব হবে না। তারা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অবসরে যাবে এবং তদস্থলে নতুন কর্মীবাহিনী কাজে যোগ দেবে। সরকারের নতুন রিক্রুটমেন্ট হবে ডিজিটাল সরকার চালনায় সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্য থেকে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মাঝে দুর্নীতি থাকতে পারবে না। কারণ ফাইল আটকে রাখা বা তথ্য গোপন করার কোনো পথ এতে খোলা থাকবে না। বরং তথ্যের অবারিত প্রবাহ থাকবে বলে সরকারের পক্ষে যে কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে।

প্রশাসন হবে বিকেন্দ্রীকৃত এবং প্রশাসনের সব স্তর ডিজিটাল পদ্ধতিতে একে অপরের সাথে তাৎক্ষণিক বা সর্বক্ষণিকভাবে যুক্ত থাকবে। সরকারের সব অগোপনীয় তথ্য সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনগণ সরকারের যেকোনো স্তর পর্যন্ত যোগাযোগ বা আবেদন করতে পারবে এবং আবেদনের ফল জানতে পারবে। সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে পেশ করা আবেদন বিবেচনা করবে এবং তথ্য প্রকাশ ও বিতরণ করবে। সম্প্রতি ভোটার আইডি কার্ড সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি সরকারের কাছে একটি সুপারিশমালা জমা দিয়েছে। এই সুপারিশমালায় দেশের ভোটারদের একটি অনন্য পিন নং এবং ছবি ও বায়োমেট্রিক্স তথ্যসহ ডাটাবেজ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ডাটাবেজটি থেকেই ডিজিটাল সরকার যাত্রা শুরু করতে পারে। ভোটার ডাটাবেজ থেকে এটি ন্যাশনাল ডাটাবেজ হতে পারে। এরপর সেই ডাটাবেজটির সাথে সরকারের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ তৈরি হতে পারে। এই ডাটাবেজটি সরকারের সব তথ্যকে ডিজিটালি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে।

একটি প্রমিত ডাটাবেজ সফটওয়্যারের আওতায় সরকারের তথ্যাদি সংরক্ষণ-যোগাযোগ, ব্যবস্থাপনাসহ সব কর্মাদি সম্পন্ন করা হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় তাদের অতীত তথ্য ডিজিটাইজ করবে ও ডাটাবেজে রূপান্তর করবে। প্রস্ত্ততি কাজ সম্পন্ন করার পর কোনো একটি সময় থেকে সরকার ফাইলবিহীন ডিজিটাল সরকার হিসেবে কাজ শুরু করবে। অন্যদিকে পুরনো রেকর্ডের তথ্য ডিজিটাল হয়ে নতুন ডাটাবেজে যুক্ত হতে থাকবে।

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র একটি স্থবির, অদক্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ, অথর্ব এবং ঔপনিবেশিক ছকে বাধা প্রতিষ্ঠান। একে আমূল সংস্কার করতে হবে।

ডিজিটাল সরকারের কাজ করার পদ্ধতিও বদলে যাবে। প্রশাসনিক পদ্ধতির সংস্কার করে জনগণের ইচ্ছার সরকার পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে। এতে নিচু স্তর বা উপরের স্তর থেকে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে মেইল পাঠানো হবে, ফলে গোপনে কিছু করার সুযোগ থাকবে না।

ই-গভর্নমেন্ট ও বাংলাদেশ : তথ্যপ্রযুক্তির বেশ কিছু সাফল্যের কথা বলার পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে যে এখানে সরকারি কর্মকান্ড তেমন সফলতা পায়নি কখনোই। বিগত কয়েক বছরে দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপিউটার গেছে-কিন্তু সেসব কমপিউটার তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি। ১৮৭ কোটি টাকার ভোটার আইডি কার্ড প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট জন্মের আগেই মারা যায়। সরকারের নিজের কাজেও তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। কমপিউটার সরকারি অফিসে টাইপরাইটারের জায়গা দখল করছে মাত্র।

ডিজিটাল সরকারের চরিত্র কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বলা যায়, Because government is not a monolithic entity but a collection of thousands of jurisdictions and agencies sharing responsibility for the public good, infrastructure must be extended to situations at both the largest and smallest scales of operation for both government and civil society. Every community from the largest state to the smallest municipality needs to be connected in useful and affordable ways to a robust and flexible cyberinfrastructure. These problems of scaling up and scaling down, in both technical and economic terms, deserve close attention.

http://www.digitalgovernment.org/library/library/pdf/dg_Cyberinfrastructure.pdf| (সূত্র : আমেরিকার ডিজিটাল সরকার সংক্রান্ত কার্যপত্র থেকে)। এতে বোঝা যায়, ডিজিটাল সরকার মানে কেবল ওয়েব পেজ প্রকাশ করা বোঝায় না। এটি এমন এক কার্যক্রম যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো কানেক্টিভিটি স্থাপন করা। এজন্য তোপখানা রোডের সচিবালয় থেকে গ্রাম পর্যন্ত একটি ডিজিটাল সংযোগসূত্র স্থাপন করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এখনো এটি উপলব্ধিই করেনি।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mustafajabbar@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা